প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো
পরিচালকসন্দীপ রায়
প্রযোজকশ্রীকান্ত মোহতা
মহেন্দ্র সোনি
রচয়িতাসত্যজিৎ রায়
চিত্রনাট্যকারসন্দীপ রায়
কাহিনিকারসত্যজিৎ রায়
উৎসসত্যজিৎ রায় কর্তৃক 
নাকুর বাবু ও এল ডোরাডো
শ্রেষ্ঠাংশেধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়
শুভাশিষ মুখোপাধ্যায়
সুরকারসন্দীপ রায়
চিত্রগ্রাহকসৌমিক হালদার
সম্পাদকসুব্রত রায়
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকশ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস
মুক্তি২০ ডিসেম্বর ২০১৯
স্থিতিকাল৯৬ মিনিট
দেশভারত
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়প্রায় ₹১০ কোটি[১][২]
আয়প্রায় ₹৩ কোটি[৩]

প্রোফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো ২০১৯ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক চলচ্চিত্র। সন্দীপ রায়ের পরিচালনায় এটি সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কু কাহিনীর প্রথম চলচ্চিত্রায়ন। ১৯৮০ সালে লিখিত নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো কাহিনী অবলম্বনে, শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রযোজনায়[৪] এই ছবিতে প্রোফেসর শঙ্কুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়।[৫][৬] ছবিটি এখন পর্যন্ত প্রায় ₹৩ কোটি টাকা আয় করেছে প্রেক্ষাগৃহ থেকে।

কাহিনী[সম্পাদনা]

গিরিডিতে থাকার সময়ে প্রফেসর শঙ্কুর কাছে তার আবিষ্কারগুলো নিয়ে এক প্রদর্শনীর প্রস্তাব আসে সাও পাওলো থেকে। আর সেই সময়ই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন নকুড়বাবু নামক এক ব্যক্তি যিনি অতীন্দ্রীয় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি আগে থেকে ভবিষ্যত দেখতে পান। তার মতে শঙ্কুর এই যাত্রা সুখকর হবেনা, সামনে ভয়াবহ বিপদ। নকুড়বাবুকে নিয়ে বিদেশ রওনা হন শঙ্কু। তার সঙ্গে যোগ দেয় তার দুই বন্ধু ক্রোল আর সন্ডার্স। আর সাওপাওলোতে গিয়ে শঙ্কুর আলাপ হয় ধনকুবের সলোমন ব্লুমগার্টেনের সঙ্গে। যে টাকার জোরে শঙ্কুর সব আবিষ্কারের স্বত্ত্ব কিনে নিতে চায়। শঙ্কু রাজি না হলে অন্য একজনকে ঘুষ দিয়ে হাতিয়ে নেয় শঙ্কুর সব আবিষ্কারের ফর্মুলা।[৭]

অভিনয়[সম্পাদনা]

  • ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায় - প্রোফেসর শঙ্কু
  • শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় - নকুড়বাবু
  • উদয়শঙ্কর পাল - প্রহ্লাদ
  • রিকার্দো দান্তাস - জেরেমি সন্ডার্স
  • রনি ফাকিনি - উইলহেলম ক্রোল

নির্মাণ[সম্পাদনা]

শুরু[সম্পাদনা]

উন্নয়ন[সম্পাদনা]

দৃশ্যধারণ[সম্পাদনা]

ছবিটির দৃশ্যধারণ করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের গিরিডি এবং ব্রাজিলের সাও পাওল, মানাউস শহর ও আমাজনের গভীর জঙ্গলে। ছবির উস্রির ঝর্নার দৃশ্য'সহ কিছু দৃশ্য গিরিডিতে ধারণ করা হয়। ছবির গল্পের প্রয়োজনে ব্রাজিলের সাও পাওল শহরে দৃশ্য ধারণ করা হয়। এখানেই শঙ্কুর বন্ধুদের সঙ্গে প্রথম দেখা যায় ছবিতে। আমাজনে ভ্রমণের দৃশ্য সহ নকুড়বাবুর এল ডোরাডো অভিযানের কিছু দৃশ্য মানাউস শহর ও আমাজনের জঙ্গলে ধারণ করা হয়। আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ছবির প্রয়োজনে ব্রাজিলের সাও পাওলোতে দু'বার কলকাতা থেকে ছবির কলাকুশলী ও কর্মীরা দৃশ্য ধারণের জন্য যেতে হয়। এর ফলে ছবি নির্মাণের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১০ কোটিতে পৌছায়।[১][২]

সমস্যা

ছবির দৃশ্য ধারণে সবচেয়ে সমস্যার ছিল আমাজনের জঙ্গলে দৃশ্য ধারণ। দৃশ্য ধারনের জন্য কর্মী ও কলাকুশলীদের জঙ্গলের গভীরে যেতে হয়েছিল, যেখানে বন্য জন্তুদের থাকার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। ছবির অন্যতম অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায় জানান প্রাতরাশ শেষে এক বিশালাকার লঞ্চে রিও নেগ্রো নদী পার হয়ে যেতে হত আমাজ়নে। গভীর সে নদী কুমির, পিরানহার মতো রাক্ষুসে মাছের আস্তানা। একদিন স্থানীয় টেকনিশিয়ানরা সেই পিরানহা ধরেছিলেন। তীরে পৌঁছে জঙ্গলের অনেকটা ভিতরে গিয়ে শুরু হত শুটিং। পোকামাকড়ে ভরা সে জঙ্গলে অভিনয় করাও ছিল নতুন অভিজ্ঞতা। পরিচালক সন্দীপ রায় অবশ্য বললেন, ‘‘তেমন কোনও হিংস্র জন্তু জানোয়ারের সম্মুখীন হতে হয়নি। বরং বিদেশি কলাকুশলী নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল একদম অন্য রকম।’’

শুভাশিস বলেন, ‘‘শট দেওয়ার আগে ভাল করে চারপাশ দেখে নিতাম, কোনও জন্তু জানোয়ার বেরিয়ে এল না তো?’’ লাঞ্চ ব্রেকে জঙ্গলেই খাওয়াদাওয়া হত। কখনও বা খাবারবোঝাই দোতলা লঞ্চের ছাদেও মধ্যাহ্নভোজ সারতেন তাঁরা। রোদ পড়ে এলে সব গুটিয়ে লঞ্চে ফিরতে ফিরতে অন্ধকার নেমে আসত নদীর বুকে। অন্ধকারে সেই লঞ্চে নদী পারাপারের অভিজ্ঞতাও রোমাঞ্চকর। মাঝে মাঝে তা আটকে যেত খাঁড়িতে। ঝড়ঝঞ্ঝার সম্মুখীনও হতে হয়েছে।[৮]

প্রচারণা ও বড় পর্দায় মুক্তি[সম্পাদনা]

ছবিটির একটি মোশন পোস্টার ২০১৯ সালের ২ মে সত্যজিতের জন্মদিনেই প্রকাশিত হয়। 'প্রফেসর শঙ্কু ও এল ডোরাডো'র পোস্টার ৪ অক্টোবর ২০১৯ সালে আনল ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রকাশ করে। চলচ্চিত্রটির আনুষ্ঠানিক ট্রেইলার ৭ নভেম্বর ২০১৯ সালে মাধ্যমে মুক্তি পায়। ইউটিউবে মুক্তির ২ মাসের কমসময়ে মধ্যে ৭ লাখের বেশি বার দর্শকেরা দেখেন এটি।

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

আয়[সম্পাদনা]

ছবিটি ১০০ টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। ছবিটিপ্রথম দিনে ₹১২ লাখ টাকা আয় করে এবং সপ্তাহান্তে ₹৬২ লাখ টাকা আয় করে প্রেক্ষাগৃহ থেকে। ২৫ ডিসেম্বরে ৬তম দিনে প্রায় ₹০.৫১ কোটি টাকা আয় করে, যা ছবিটির একদিনের হিসাবে সর্বোচ্চ আয়। প্রথম সপ্তাহে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহ থেকে মোট ₹২ কোটি টাকা আয় করে। প্রথম সপ্তাহে শুধু মাত্র কলকাতা থেকে ১.৬ কোটি টাকা আয় করে ছবিটি।[৩] ছবিটি পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার বাইরে হুগলীদুর্গাপুরের প্রেক্ষাগৃহ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থ আয় করে।[৩] পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বেঙ্গালুরুমুম্বাই থেকে সবচেয়ে বেশি আর্থ আয় করে।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "বাংলা ছবির হালহকিকত: এ বছরের উল্লেখযোগ্য ৫"। আনন্দবাজার পত্রিকা। ২১ ডিসেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২০ 
  2. পারমিতা সাহা (১৫ ডিসেম্বর ২০১৯)। "বাবা যে সব জায়গায় যেতে পারেননি, শঙ্কুকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  3. https://in.bookmyshow.com/movies/box-office/professor-shanku-o-el-dorado-box-office-collections/EG00051070
  4. "সন্দীপের হাত ধরে শঙ্কু যাবেন 'এল্ ডোরাডো'! সঙ্গে নকুড় বাবুও"Eisamay। ২০১৭-১১-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১০ 
  5. "সত্যজিতের জন্মদিনেই প্রকাশিত 'প্রফেসর শঙ্কু'র পোস্টার"Indian Express Bangla। ২০১৯-০৫-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১০ 
  6. Singh, Shiv Sahay (২০১৭-১২-০৯)। "Satyajit Ray's Prof. Shonku is ready for the big screen"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১০ 
  7. "শঙ্কু আবার আমাজনে"আজকাল। ২০২১-১০-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-২৬ 
  8. নবনীতা দত্ত (১৯ ডিসেম্বর ২০১৯)। "শঙ্কুর সঙ্গে আমাজ়ন সফরে"। আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]