আবদুল হামিদ কাদেরী বদায়ুনী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মাওলানা আবদুল হামিদ কাদেরী বদায়ুনী (নভেম্বর ১১, ১৮৯৮ – ২০ জুলাই, ১৯৭০) একজন ইসলামি পণ্ডিত, সুফি শিক্ষক, কবি এবং পাকিস্তানি নেতা ছিলেন। তিনি করাচিতে অবস্থিত ইসলামি কলেজ জামিয়া- তালিমাত-এ-ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা।

পারিবারিক পটভূমি[সম্পাদনা]

বদায়ুনী ব্রিটিশ ভারতের দিল্লীতে ১৮৯৮ সালের ১১ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাকিম আবদুল কাইয়ুম তার জন্মের ২০ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন। তার পিতা দাদা আবদুল মজিদ কাদেরী, কাদেরী সুফি ত্বরিকার একজন শায়খ ছিলেন। তিনি তার চাচা আবদুল কাদির থেকে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং হাকিম আজমল খানের সাথে দিল্লীতে ইসলামি মেডিসিনে অধ্যয়ন করেন।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

বদায়ুনী মাদ্রাসা কাদিরিয়া এবং কানপুরের মাদ্রাসা ইলাহিয়াতে ইসলামি বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন।

গোষ্ঠীর নেতা[সম্পাদনা]

খেলাফত আন্দোলনে তিনি বোম্বেয়ের কেন্দ্রীয় খেলাফত কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি হিন্দু আর্য সমাজীরা ভারতীয় মুসলমানদের হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য যে শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। আবদুল হামিদ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং শুদ্ধি আন্দোলনের বিরোধিতা করতে মারকাজি তাবলীগ আল-ইসলাম' এ যোগ দিয়েছিলেন এবং নঈম উদ্দিন মুরাদবাদী, আবদুল হাফিজ কাদেরী, পীর সৈয়দ জামাত আলী শাহ এবং সৈয়দ আবু আল-হাসনাত আল কাদেরীর সাথে হিন্দু ধর্মে মুসলমানদের প্রত্যাবর্তন রোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছিলেন।

মুসলিম লীগের সাথে সহযোগিতা[সম্পাদনা]

১৯৩৭ সালে তিনি নিখিল মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে সিলেট ও ​​বাংলায় প্রো-কংগ্রেস দেওবন্দী আলেম হুসেন আহমদ মাদনির প্রভাবকে নিরপেক্ষ করেছিলেন। পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাবটি ১৯৩০ সালের ২৩ শে মার্চ গৃহীত হয়েছিল। লাহোরের মিন্টো পার্কে তিনি এই প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য রাখেন। ১৯৪৬ সালে বেনারসে অনুষ্ঠিত অল ইন্ডিয়া সুন্নি কনফারেন্স এবং পীর জামাত আলী শাহ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে একজন মুসলিম ঘোষণা করেন ও মাওলানা আবদুল হামিদ সৈয়দ জামাত আলী শাহকে সমর্থন করেছিলেন এবং কায়েদ-ই-আজম ও মুসলিম লীগের সমর্থনে ৩ ঘণ্টারও বেশি সময় বক্তব্য রাখেন।[১][২] বদায়ুনি ১৯৪৬ সালে মুহাম্মদ আবদুল আলিম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে হিজাজে গিয়েছিলেন এবং সৌদি সরকারকে হজ ট্যাক্স সমাপ্ত করার অনুরোধ জানাতে এবং একটি স্বাধীন পাকিস্তান গঠনের জন্য মুসলিম লীগের মিশনের বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য অনুরোধ জানান। তিনি ২২ বার হারামাইন শরীফাইন সফর করেছেন এবং বহু মুসলিম নেতার সাথে সাক্ষাত করেছেন। তিনি ইসলামী মতাদর্শ কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তানের সভাপতি পদেও অধিষ্ঠিত ছিলেন যা পাকিস্তানে সুন্নি বেরলভী আন্দোলনের বিশিষ্ট সংস্থা ছিল। তিনি মজলিস-এ তাহাফুজ-ই-খতমে নবুওয়াতের শীর্ষস্থানীয় ছিলেন এবং করাচিতে তিন মাসের জন্য জেল খাটছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, অমুসলিমদের কোনও ইসলামী জাতির মন্ত্রী করা উচিত নয়।[৩] তিনি পাকিস্তানকে একটি ইসলামী জাতি হিসাবে গড়ে তোলার দাবি উত্থাপন করেছিলেন এবং উলামাদের মতামতকে ধর্মনিরপেক্ষ আইনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।[৪] তিনি আহমদিয়াদের উপর পীড়ন চালিয়ে সর্বাগ্রে ছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে আহমদিদের অমুসলিম ঘোষণা করা উচিত,[৫] এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের মাধ্যমে তিনি দাবি করেছিলেন যে আহমদিয়াদেরকে মুসলিম লীগের সদস্য না করা উচিত।[৬]

কাজ[সম্পাদনা]

তিনি উর্দু, আরবি এবং ইংরেজিতে অনেক বই রচনা করেছেন এবং ভক্তিমূলক কবিতাও লিখেছেন।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

বদায়ুনী ১৯৭০ সালের ২০ জুলাই (১৫ জমাদিউল উলা ১৩৯০ হিজরী) করাচিতে মৃত্যুবরণ করেন এবং মাঙ্গোপির রোডস্থ ইসলামি কলেজের মাঠে তাকে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mujahid e Millat Maulana Abdul Hamid Badayuni RA ke Milli wa Siasi Khidmat, Zahooruddin Khan Amritsri published by Idara-e-Pakistan Shanasi lahore [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে
  2. "Pioneer of Freedom (Series)"। pakpost.gov.pk। ২০১৫-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৮-২১ 
  3. Sukhawant Singh Bindra (১৯৮৮)। Determinants of Pakistan's Foreign Policy। Deep & Deep Publications। পৃষ্ঠা 158–। আইএসবিএন 978-81-7100-070-8 
  4. M. G. Chitkara (১৯৯৭)। Human Rights in Pakistan। APH Publishing। পৃষ্ঠা 158–। আইএসবিএন 978-81-7024-820-0 
  5. Wilson John (২০০৯)। Pakistan: The Struggle Within। Pearson Education India। পৃষ্ঠা 96–। আইএসবিএন 978-81-317-2504-7 
  6. Ayesha Jalal (৪ জানুয়ারি ২০০২)। Self and Sovereignty: Individual and Community in South Asian Islam Since 1850। Routledge। পৃষ্ঠা 447–। আইএসবিএন 978-1-134-59937-0 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • তাযকিরা আকাবির আহলে সুন্নাত, মুহাম্মদ আবদুল হাকিম শরফ কাদেরী
  • মাওলানা আবদুল হামিদ কাদেরী বদায়ুনী: হায়াত অউর কাওমি ওয়া মিল্লি খিদমত, মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফারুক আহমদ কাদেরী
  • হায়াত মুজাহিদ এ মিল্লাত, ড. নাসিরুদ্দিন সিদ্দিকী
  • মুজাদ্দিদ এ মিল্লাত মাওলানা আবদুল হামিদ বদায়ুনী কে মিল্লি ওয়া সিয়াসি খিদমত, জাহুর উদ্দিন খান আমরাতাসরী

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]