স্টুডিও ব্যবস্থা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হলিহডের স্বর্ণযুগ

স্টুডিও ব্যবস্থা (যা হলিউডের স্বর্ণযুগ এর সময়ে ব্যবহৃত হত) হলিউড এর অল্প সংখ্যক প্রধান স্টুডিওর দ্বারা চলচ্চিত্র নির্মাণ ও বিতরণের একটি ভূতপূর্ব বহুল জনপ্রিয় পদ্ধতি। যদিও এই শব্দদ্বয় আজও বড় স্টুডিওগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং কৃতকাজ সম্পর্কিত একটি ইঙ্গিত হিসাবে ব্যবহৃত হয়, ঐতিহাসিকভাবে এই কথাটি দ্বারা মূলত ১৯২০-১৯৬০ সালের মাঝে স্টুডিওগুলোর (ক) নিজস্ব চলচ্চিত্র নির্মাণ এর স্থান ব্যবহারপূর্বক সৃজনশীল মননদের সাথে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে চলচ্চিত্র তৈরি এবং (খ)উলম্ব সংযুক্তিকরণ এর মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী-র উপর প্রভাব বিস্তার করা যেমন-ব্লক বুকিং এর‍ মতো কৌশলগত বুকিংয়ের মাধ্যমে ছায়াছবিগুলোর অতিরিক্ত বিক্রি নিশ্চিতকরা ও পরিবেশন এর মালিকানা বা কার্যকর নিয়ন্ত্রণকে বোঝায়।

১৯৪৮ সালের মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে যুক্তরাষ্ট্র বনাম প্যারামাউন্ট পিকচারস নামক মোকদ্দমায় প্রতিযোগিতা আইন এর অধীনে একটি রায় 'স্টুডিও ব্যবস্থাকে' প্রশ্নের সম্মুখীন করে, যা চলচ্চিত্র তৈরিকে এর বিতরণ ও প্রদর্শনী থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে এবং স্টুডিও ব্যবস্থার সমাপ্তি ত্বরান্বিত করে এই জাতীয় অনুশীলনগুলো শেষ করে। ১৯৫৪ সালে, যখন দর্শকরা টেলিভিশনের প্রতি বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছিল এবং একটি বড় প্রযোজনা স্টুডিও এবং থিয়েটার চেইনের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কগুলো ভাঙা হলো তখনই স্টুডিও ব্যবস্থার ঐতিহাসিক যুগ শেষ হয়ে গিয়েছিল।

শব্দযুক্ত চলচ্চিত্র এর সূচনা থেকে শুরু করে স্টুডিও পদ্ধতির ধ্বংসের সূচনা পর্যন্ত ১৯২৭-১৯৪৮ সালের সময়টিকে কিছু চলচ্চিত্র ইতিহাসবিদ হলিউডের স্বর্ণযুগ বলে উল্লেখ করেছেন। স্বর্ণযুগ সম্পূর্ণরূপে একটি প্রযুক্তিগত ধারণা এবং ক্লাসিকাল হলিউড চলচ্চিত্র হিসাবে পরিচিত চলচ্চিত্র সমালোচনার ধারণার সাথে এটিকে মিলিয়ে ফেললে চলবে না, যা আমেরিকান চলচ্চিত্রের একটি বিশেষ ধরন যা ১৯১৭ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত বিকশিত হয়েছিল। তথাকথিত স্বর্ণযুগের সময়, আটটি সংস্থা বড় স্টুডিও গঠন করেছিল যা হলিউডের স্টুডিও ব্যবস্থা শুরু করেছিল। এই আটটির মধ্যে পাঁচটি ছিল সম্পূর্ণ সংহত সংস্থা, এদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন একটি প্রোডাকশন স্টুডিওর মালিকানা, বণ্টন বিভাগ, থিয়েটার চেইন এবং অভিনয় ও চলচ্চিত্র তৈরির ব্যক্তিদের সাথে চুক্তি এসব মিলিয়েই এরা প্রভাব বিস্তারকারী হয়ে উঠেছিল: ফক্স ফিল্ম কর্পোরেশন (বর্তমানে টুএন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্স), লো'স ইনকর্পোরেটেড (আমেরিকার বৃহত্তম থিয়েটার সার্কিটের মালিক এবং মেট্রো-গোল্ডুইন-মেয়ার এর পিতৃসংস্থা), প্যারামাউন্ট পিকচারস, আরকেও রেডিও পিকচারস এবং ওয়ার্নার ব্রস। আরও দুটি প্রধান স্টুডিও ইউনিভার্সাল পিকচারস এবং কলম্বিয়া পিকচারস - একইভাবে সংগঠিত হয়েছিল, যদিও তাদের ছোট থিয়েটার সার্কিটের চেয়ে বেশি কিছু ছিল না। অষ্টম প্রধান সংস্থা, ইউনাইটেড আর্টিস্ট কয়েকটি থিয়েটারের মালিক ছিল এবং এর নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারী দলের সদস্যদের মালিকানাধীন দুটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সুবিধা পেয়েছিল। তবে এটি মূলত পরোক্ষ বিতরণকারী হিসাবে কাজ করেছিল, স্বতন্ত্র নির্মাতাদের লোন দিয়েছিল এবং তাদের চলচ্চিত্র প্রকাশ করেছিল ।

শব্দগ্রহণ এবং 'বিগ ফাইভ'[সম্পাদনা]

১৯২৭ এবং ১৯২৮ এর বছর দুটিকে সাধারণত হলিউডের স্বর্ণযুগের সূচনা এবং আমেরিকান চলচ্চিত্র ব্যবসায়ে স্টুডিও ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত বড় পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হয়। ১৯২৭ এ দ্যা জ্যাজ সিঙ্গার এর সাফল্য, প্রথম বৈশিষ্ট্যযুক্ত পূর্ণদৈর্ঘ্যের "টকি" (বাস্তবে এর বেশিরভাগ দৃশ্যেই সরাসরি-রেকর্ডকৃত শব্দ ছিল না) তৎকালীন মাঝারি মানের 'ওয়ার্নার ব্রোস স্টুডিও' তে একটি বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করে। পরের বছর পুরো ইন্ডাস্ট্রি শব্দের সাধারণ পরিচিতি এবং ওয়ার্নার্সের আরও দুটি বড় সাফল্য উভয়ই দেখেছিল:দ্য সিংগিং ফুল, জ্যাজ সিঙ্গারের আরও বেশি লাভজনক প্রতিচ্ছবি এবং হলিউডের প্রথম "অল-টকিং" বৈশিষ্ট্যযুক্ত চলচ্চিত্র লাইটস অফ নিউইয়র্ক। ঠিক ততটাই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল পর্দার পেছনের বিকাশ। ওয়ার্নার ব্রোস, তখন আয়ের চরমে পৌঁছে, ১৯২৮ সালের সেপ্টেম্বরে নামকরা স্ট্যানলি থিয়েটার চেইনটি কিনে নিয়েছিল। এক মাস পরে, এটি ফার্স্ট ন্যাশনাল পিকচার্স প্রযোজনা সংস্থায় একটি নিয়ন্ত্রক নিয়ামক কিনে নিয়েছিল, যা ওয়ার্নার্সের চেয়ে বেশি উচ্চশ্রেণীর ছিল। যার সাথে কেবল ১৩৫ একর (০.৫৫ বর্গ কিমি) স্টুডিও এবং শুটিং এর স্থান-ই আসে নি বরং এর সাথে সিনেমা থিয়েটারগুলোর আরও একটি বড় চেইন ছিল। ওয়ার্নার্সের তখন সুসময় চলছে।

১৯২৮ সালে স্বর্ণযুগের "বিগ ফাইভ" হলিউড সংস্থাগুলোর শেষটি প্রকাশিত হয়েছিল:আরকেও। রেডিও কর্পোরেশন অফ আমেরিকা (আরসিএ), ডেভিড সার্নোফ এর নেতৃত্বে সিনেমার শব্দের পেটেন্টগুলো কাজে লাগানোর উপায় সন্ধান করছিল, তার মূল সংস্থা জেনারেল ইলেক্ট্রিকের মালিকানাধীন নতুন ট্রেডমার্ককৃত আরসিএ ফোটোফোন এর মাধ্যমে। শীর্ষস্থানীয় চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থাগুলো সকলেই যেখানে প্রযুক্তিগত সুবিধার জন্য ওয়েস্টার্ন ইলেকট্রিক এর সাথে একচেটিয়াভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আরসিএ নিজেই চলচ্চিত্রের ব্যবসায় ঢুকে গিয়েছিল। জানুয়ারিতে, জেনারেল ইলেকট্রিক ফিল্ম বুকিং অফিসেস অফ আমেরিকা(এফবিও) এর একটি বড় শেয়ার অর্জন করেছিল যা একটি বিতরণকারী এবং ছোট প্রযোজনা সংস্থা যোসেফ পি. কেনেডি-র, যিনি ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডি-র পিতা। অক্টোবরে, স্টক ট্রান্সফারের একটি সেটের মাধ্যমে, আরসিএ এফবিও এবং কীথ-আলবি-অর্ফিয়াম থিয়েটার চেইন উভয়ের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে; দুটিকে একক উদ্যোগে একত্রিত করে একটি বোর্ডের সভাপতিত্বে সার্নোফ রেডিও-কিথ-অরফিয়াম কর্পোরেশন তৈরি করেন। ফক্স, প্যারামাউন্ট, এবং লো এর সাথে যোগদানের জন্য আরকেও এবং ওয়ার্নার ব্রোস ত্রিশ বছর ধরে যে বিগ ফাইভ থাকবে তার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।

যদিও আরকেও ব্যতিক্রম ছিল, পশ্চিম উপকূলে স্টুডিওর প্রধান, 'মুভি মোগুলস' কয়েক বছর ধরে উক্ত পদে ছিলেন: এমজিএম এ লুই বি মায়ার, ওয়ার্নার ব্রোস এ জ্যাক এল ওয়ার্নার, প্যারামাউন্টে অ্যাডলফ জুকর,ফক্স এ ড্যারিল এফ. জানাক, ইউনিভার্সালে কার্ল ল্যামেল এবং কলম্বিয়াতে হ্যারি কোহান

প্রধান স্টুডিওগুলোর রাজত্ব এবং প্রথম পতন[সম্পাদনা]

লাভের দিক থেকে বিগ ফাইভের র‌্যাঙ্কিং (বাজারের শেয়ারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত) স্বর্ণযুগে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধ্রুব ছিল: এমজিএম ১১ বছর ধরে(১৯৩১–৪১) থেকে শীর্ষে ছিল। প্যারামাউন্ট, প্রথম দিকের শব্দ যুগের সবচেয়ে লাভজনক স্টুডিও (১৯২৮-৩০) পরবর্তী দশকের উন্নত অংশের জন্য ম্লান হয়ে যায় এবং এমজিএমের রাজত্বকালে ফক্সই ছিল দ্বিতীয় স্থানে। প্যারামাউন্ট ১৯৪০ সালে একটি সুস্থিত উন্নতি শুরু করে, অবশেষে দু'বছর পরে এমজিএমকে তারা অতিক্রম করে ফেলে; ১৯৪৯ সালের আগ পর্যন্ত এটি বিগ ফাইভের মধ্যে সবচেয়ে আর্থিকভাবে সবচেয়ে সফল স্টুডিও ছিল। ১৯৩২ সাল ব্যতীত — যখন এমজিএম বাদে বাকি সব স্টুডিও লোকসান করেছিল এবং আরকেও তার প্রতিযোগীদের তুলনায় কিছুটা কম হারিয়েছিল। গৌণ মেজরের মধ্যে, লিটল থ্রি, ইউনাইটেড আর্টিস্টরা নির্ভরযোগ্যভাবে শক্ত অবস্থান ধরেছিল, ১৯৩০ এর দশকে কলম্বিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী এবং ১৯৪০ এর দশকের বেশিরভাগ অংশে ইউনিভার্সাল এগিয়ে ছিল।[১]

মহামন্দা এর সময়ে হলিউডের সাফল্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, কারণ খুব সম্ভবত চলচ্চিত্রগুলো শ্রোতাদের তাদের ব্যক্তিগত হতাশা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেছিল। শার্লি টেম্পল সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট বলেছিলেন, "এই হতাশার সময়ে যখন মানুষের চেতনা অন্য সময়ের চেয়ে কম থাকে, তখন এটি একটি চমকপ্রদ বিষয় যে কেবল পনেরো পয়সার মাধ্যমে একজন আমেরিকান কোনও সিনেমাতে যেতে পারে এবং একটি শিশুর হাসিমুখের দিকে তাকাতে পারে এবং তার কষ্টগুলো ভুলে যেতে পারে"।[২] ১৯৩৯ সালের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৫,০০০ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহ ছিল, ব্যাংকের চেয়েও বেশি; মাথাপিছু প্রেক্ষাগৃহগুলোর সংখ্যা ১৯৮০ এর দশকের মধ্যবর্তী সময়ের দ্বিগুণ ছিল। সিনেমা শিল্প অফিস মেশিনের শিল্পের চেয়েও বড় ছিল। যদিও রাজস্বের ভিত্তিতে এটি কেবল ১৪ তম বৃহত্তম ছিল, লাভের পরিমাণের দিক দিয়ে তা দ্বিতীয় স্থানে ছিল।বিং ক্রসবি এবং ক্লডেট কলবার্ট দের মত বড় তারকারা বার্ষিক ৪ লাখ ডলার(বর্তমান ৭২,০৪,৭৮৫ ডলার৭৩৫২১৫৩ today[৩]) এর বেশি পারিশ্রমিক পেতেন।[৪]

ব্যবস্থার সমাপ্তি এবং আরকেও এর মৃত্যু[সম্পাদনা]

স্টুডিও ব্যবস্থাকে সমর্থন করার জন্য ব্যবহৃত কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হল ব্লক বুকিং, একসাথে একটি নির্দিষ্ট থিয়েটারে একাধিক চলচ্চিত্র বিক্রি করার ব্যবস্থা। ১৯৪০ এর দশকে বেশিরভাগ স্টুডিও দ্বারা পাঁচটি চলচ্চিত্র একসাথে বিক্রির অনুশীলন প্রচলিত ছিল — সাধারণত এই প্যাকেজে একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অন্তর্ভুক্ত থাকতো, বাকীগুলো হতো কম মানের এ-বাজেটের এবং বি-চলচ্চিত্র।[৫] ১৯৫৭ সালে 'লাইফ' ম্যাগাজিনটি স্টুডিও ব্যবস্থার প্রতিবেদনে লিখেছিল,"এটি ভাল মানের বিনোদন ছিল না এবং এটি শিল্প ছিল না এবং নির্মিত বেশিরভাগ সিনেমাগুলোর একটি অভিন্ন সাদৃশ্য ছিল, তবে একইসাথে সেগুলো যথাযথ লাভজনক ছিল ... মিলিয়ন ডলারের ব্যবস্থাটি হলিউডের মেরুদণ্ড হয়ে উঠেছিল।"[৬]

১৯৪৮ সালের ৪ মে,যুক্তরাষ্ট্র বনাম প্যারামাউন্ট পিকচারস নামক মোকদ্দমা, যেটি সম্পূর্ণ 'বিগ ফাইভ' এর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল, সেটিতে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্টভাবে ব্লক বুকিং কে নিষিদ্ধ করে দেয়। স্টুডিও এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে আইনের লঙ্ঘন করেছে বলে ধরে রেখে বিচারপতিরা কীভাবে এই দোষটির প্রতিকার করতে হবে সে সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত ছিলেন, তবে মামলাটি নিম্ন আদালতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, যেখান থেকে এটি এমন রায় নিয়ে এসেছিল যে — প্রযোজক-বিতরণকারী কার্যকলাপ থেকে প্রদর্শনীর নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ পৃথকীকরণ করা। বিগ ফাইভ যদিও বছরের পর বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ বলে মনে হয়েছিল কারণ তারা ইতিমধ্যে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছিল, যেহেতু প্যারামাউন্ট মামলাটি মূলত ২০ জুলাই, ১৯৩৮ সালে দায়ের করা হয়েছিল।

তবে, আরকেও-র পর্দার পিছনে, দীর্ঘকালীন আর্থিক সমস্যার পরও আদালতের রায়টিকে স্টুডিওর সুবিধার্থে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন একটি বিষয় হিসাবে দেখা হয়েছিল। একই মাসে যে সিদ্ধান্তটি হস্তান্তরিত হয়েছিল, সেটি দ্বারা কোটিপতি হাওয়ার্ড হিউজ এই সংস্থায় একটি নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছিলেন। আরকেও যেহেতু বিগ ফাইভের যে কোনও সংখ্যক প্রেক্ষাগৃহকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল তাই হিউজ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে প্রেক্ষাগৃহ হতে বিচ্ছেদ প্রভাব শুরু করলে সেটি তার স্টুডিওকে তার প্রতিযোগীদের সাথে আরও সমান পদক্ষেপে রাখতে সহায়তা করতে পারে। হিউজ তার চলচ্চিত্রের ব্যবসা ভেঙে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে ফেডারেল সরকারকে সম্মতি আজ্ঞা দেওয়ার বিষয়ে তার ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়। চুক্তির আওতায় হিউজ তার স্টুডিওটিকে দুটি সত্তা, আরকেও পিকচার কর্পোরেশন এবং আরকেও থিয়েটার কর্পোরেশন এ ভাগ করে দেবেন বলে উল্লেখ করেন এবং একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তার যেকোনো একটি অংশ বিক্রি করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিচ্ছেদকে স্বীকার করার হিউজের সিদ্ধান্ত বাকী বিগ ফাইভের আইনজীবীদের এই যুক্তিটিকে ক্ষুণ্ন করেছিল যে এই জাতীয় ভাঙ্গন অগ্রহণযোগ্য ছিল।

যদিও এখন অনেকে মে মাসের আদালতের রায়কে ইঙ্গিত করেন, তবে সেটি ছিল হিউজ এর ফেডারেল সরকারের সাথে ৮ ই নভেম্বর, ১৯৪৮ এ স্বাক্ষরিত চুক্তি, যেটি হলিউডের স্বর্ণযুগকে সত্যই মৃত্যুমুখে ফেলে দেয়। প্যারামাউন্ট শীঘ্রই পরবর্তী ফেব্রুয়ারিতে অনুরূপ সম্মতির আজ্ঞা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। দীর্ঘদিন ধরে বিভক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে আসা স্টুডিওটি ৩১ ডিসেম্বর, ১৯৪৯-এ বিভক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করে নির্ধারিত সময়ের আগেই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করে। ঐ সময়ে আমেরিকাতে ১৯,০০০ চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ ছিল।[৭]

ফেডারেল কর্তৃপক্ষের সাথে হিউজ এর এবং অন্যান্য স্টুডিওর চুক্তির পরও স্টুডিও ব্যবস্থাটি আরও অর্ধ দশক ধরে স্থায়ী ছিল। সর্বাধিক সাফল্যের সাথে যে স্টুডিওটি নতুন পরিস্থিতির সাথে তাৎক্ষণিকভাবে মানিয়ে নিয়েছিল তা হল ক্ষুদ্রতম, ইউনাইটেড আর্টিস্টস; ১৯৫১ সালে একটি নতুন ব্যবস্থাপক দলের অধীনে এটি পিকফোর্ড-ফেয়ারব্যাঙ্কস প্রযোজক প্রতিষ্ঠানের সাথে তার ইজারা ব্যবস্থা বন্ধ করে অপ্রয়োজনীয় সম্পর্ক ভেঙে ফেলে এবং স্বতন্ত্র প্রযোজকদের সাথে নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তখন তারা সরাসরি বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে সুস্থিত করে, এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল যা হলিউড ক্রমবর্ধমানভাবে অনুকরণ করে পরবর্তী বছরগুলোতে। তিন দশক ধরে চলচ্চিত্র শিল্পটি যে স্টুডিও ব্যবস্থাটিকে সংগঠিত সংগঠিত হয়েছিল তা অবশেষে ১৯৫৪ সালে শেষ হয়েছিল, যখন শেষ হল তখন লো'রা এমজিএমের সাথে সমস্ত কার্যকর সম্পর্ক ছিন্ন করে।

হিউজের জুয়া খেলা স্টুডিও সিস্টেমটিকে ভাঙ্গতে সহায়তা করেছিল, কিন্তু আরকেওর ক্ষেত্রে এটি খুব একটা প্রভাব ফেলেনি। হিউজের দুর্বল নেতৃত্ব - টেলিভিশন এর দিকে শ্রোতাদের ঝুঁকে পড়া পুরো চলচ্চিত্রশিল্পকে প্রভাবিত করে স্টুডিওগুলোকে ক্ষতির সম্মুখীন করে ফেলে - যা হলিউড পর্যবেক্ষকদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছিল। ১৯৫২ সালে যখন হিউজ তার আরকেওর বাইরে যেতে চেয়েছিল, তখন তাকে শিকাগো-ভিত্তিক সিন্ডিকেটের সাহায্য নিতে হয়েছিল যা গতিময় চিত্রের অভিজ্ঞতাহীন ব্যবসায়ীদের দ্বারা চালিত । চুক্তিটি সফল হয়নি, তাই হিউজকে আবার নিজ দায়িত্বে পদার্পণ করতে হয়েছিল যখন শেষ পর্যন্ত আরকেও থিয়েটার চেইন ১৯৫৩ সালে আদেশ অনুসারে বিক্রি হয়ে যায়। সেই বছর, জেনারেল টায়ার এবং রাবার কোম্পানি, যা তার ছোট ও দশক পুরাতন সম্প্রচার বিভাগকে সম্প্রসারণ করছিল, হিউজকে যোগাযোগ করে প্রোগ্রামিংয়ের উদ্দেশ্যে আরকেওর ফিল্ম লাইব্রেরির ব্যাপারে। হিউজ ১৯৫৪ সালের ডিসেম্বরে আরকেও পিকচারসের প্রায়-সম্পূর্ণ মালিকানা অর্জন করেন এবং পরের গ্রীষ্মে পুরো স্টুডিওটি জেনারেল টায়ারের সাথে বিক্রয় করে দেন।

নতুন মালিকরা ক্রয়ের সাথে সাথেই সিঅ্যান্ডসি টেলিভিশন কর্পোরেশন যা একটি পানীয় সংস্থার সংযুক্ত কোম্পানি, তাদেরকে গ্রন্থাগার এর টিভি অধিকার বিক্রি করে তাদের কিছু অর্থ ফেরত পেয়েছিল। (আরকেও জেনারেল টায়ার এর নিয়ে আসা কয়েকটি টিভি স্টেশন এর উপর অধিকার বজায় রেখেছিল) এই চুক্তির আওতায় চলচ্চিত্রগুলো সিএন্ডসি স্থানীয় স্টেশনগুলোতে প্রেরণের আগে তাদের আরকেও পরিচয় মুছে দিয়েছিল; স্টুডিওর অন্যান্য চিহ্নগুলোর মতো তার গ্লোব এবং রেডিও টাওয়ার এর মত বিখ্যাত উদ্বোধনী লোগোটি সরানো হয়েছিল।

হলিউডে, আরকেওর নতুন মালিকরা চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবসায় খুব কম সাফল্যের মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং ১৯৫৭ সালের মধ্যে জেনারেল টায়ার প্রযোজনা বন্ধ করে দেয় এবং লুসিল বল এবং ডেসি আর্নাজ এর প্রযোজনা সংস্থা ডেসিলু-র কাছে আরকেও এর মূল জমিগুলো বিক্রি করে‌ দেয়। ইউনাইটেড আর্টিস্টদের মতো এই স্টুডিওতেও এখন আর কোনো স্টুডিও ছিল না; তবে ইউনাইটেড আর্টিস্টদের প্রতিমুখে এটি সবেমাত্র নিজের পুরানো সিনেমাগুলোর মালিকানাধীন ছিল এবং নতুন সিনেমা তৈরিতেও তারা কোনো লাভ দেখেছিল না। ১৯৫৯ সালে এটি পুরোপুরি সিনেমার ব্যবসা ত্যাগ করে।

ইউরোপ এবং এশিয়ায়[সম্পাদনা]

স্টুডিও ব্যবস্থাটি মূলত আমেরিকান পদ্ধতি হিসাবে চিহ্নিত হলেও অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থাগুলো মাঝে মাঝে হলিউডের বিগ ফাইভের মতো একই পদ্ধতিতে সংহতি অর্জন করেছিল ও বজায় রেখেছিল। ইতিহাসবিদ জেমস চ্যাপম্যান যেমন বর্ণনা করেছেন,

ব্রিটেনে কেবলমাত্র দুটি সংস্থা সম্পূর্ণ উলম্ব সংযুক্তকরণ অর্জন করেছিল (দ্য র‌্যান্ক অর্গানাইজেশন এবং অ্যাসোসিয়েটেড ব্রিটিশ পিকচার কর্পোরেশন)। অন্যান্য দেশগুলোতে ১৯২০ এর দশকে‌ জার্মানিতে (ইউনিভার্সাম ফিল্ম আকটিঞ্জেসেলসচাফট বা উফা), ১৯৩০ এর দশকে ফ্রান্সে (গাউমন্ট-ফ্রান্কো-ফিল্ম-অবার্ট এবং পাথে-নাটান) এবং জাপানে(নিক্কাটসু, শোচিকু এবং তোহো)। হংকংয়ে শ ব্রাদার্স ১৯৫০-৬০ এর দশকে তার য়্যুকসিয়া চলচ্চিত্রগুলোর জন্য স্টুডিও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। ভারতীয় চলচ্চিত্র তার নিজের এবং এশীয় বিস্তৃত বাজার উভয় ক্ষেত্রেই আধিপত্যের কারণে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রশিল্পের একমাত্র গুরুতর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে। তবে তারা কখনও উলম্ব সংকুক্তিকরণ পদ্ধতি গ্রহণ করেনি।[৮]

উদাহরণস্বরূপ, ১৯২৯ সালে জাপানের প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রেক্ষাগৃহ নিক্কাটসু বা শোচিকু, সেই সময়ের দুটি বৃহত্তম স্টুডিওর সাথে সংযুক্ত ছিল।[৯]

ব্যবস্থার পরবর্তী সময়[সম্পাদনা]