এডওয়ার্ড রাইট

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
এডওয়ার্ড রাইট
এডওয়ার্ড রাইটের সার্টাইন এরর ইন নেভিগেশন এর প্রথম সংস্করণের শিরোনাম পৃষ্ঠা (১৫৯৯)
জন্ম
গার্ভেস্টন, নরফোলক, ইস্ট এ্যাঙ্গলিয়া, ইংল্যান্ড
মৃত্যুনভেম্বর ১৬১৫ (সম্ভবত ৫৪ বছর বয়সে)
লন্ডন, ইংল্যান্ড
জাতীয়তাইংলিশ
মাতৃশিক্ষায়তনগোনভিল এন্ড কাইয়াস কলেজ, কেম্ব্রিজ
পরিচিতির কারণসার্টাইন এরর ইন নেভিগেশন এর রচয়িতা (১৫৯৯) যা সর্ব প্রথম মেরকেটর প্রক্ষেপণের গাণিতিক ভিত্তিকে ব্যাখ্যা করেছিল, রাইট – মলিনিক্স মানচিত্র (১৫৯৯) তৈরি করেছিল এবং লগারিদমে জন নেপিয়ারের রচনা অনুবাদ করেছিলেন যা ১৬১৬ সনে লগারিদমের প্রশংসনীয় সারণির বিবরণ হিসাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রগণিত; নেভিগেশন; মানচিত্রাঙ্কণবিদ্যা
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেনএড্রিয়ান মেথিউস,রিচার্ড নরউড, উইলিব্রোর্ড স্নেলিয়াস

এডওয়ার্ড রাইট ছিলেন একজন ইংরেজ গণিতবিদ এবং মানচিত্রাঙ্কণবিদ। তিনি তার বিখ্যাত বই "সার্টেন এরর ইন নেভিগেশন"এর জন্য সমাধিত। যা প্রথমবারের মত মেরকেটর অভিক্ষেপ এর গাণিতিক ভিত্তিকে ব্যাখ্যা করেছিল। এটি একটি রেফারেন্স সারণি প্রস্তুত করেছে যা লিনিয়ার স্কেলের গুণমানের কারণকে অক্ষাংশের ফাংশন হিসাবে প্রদান করে। এক্ষেেত্রে প্রতি মিনিটের চাপের জন্য ৭৫° অক্ষাংশ পর্যন্ত গণনা করা হয়। এটি প্রকৃতপক্ষে অবিচ্ছেদ্য ছেদক-ফাংশনের মানের একটি সারণী ছিল এবং এটি মেরকেটের চার্ট তৈরি ও নেভিগেশনে ব্যবহার উভয়কেই ব্যবহারিক করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল।

রাইট গারভেস্টনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কেমব্রিজের গনভিলে এবং কাইয়াস কলেজে পড়াশোনা করেন। যেখানে তিনি ১৫৮৭ থেকে ১৫৯৬ পর্যন্ত সহকর্মী ছিলেন। ১৫৮৯ সালে প্রথম এলিজাবেথের অনুরোধে কলেজ তার ছুটি মঞ্জুর করে। এই সময়টায় তিনি স্প্যানিশ গ্যালেন দখল করার জন্য আর্ল অফ কম্বারল্যান্ডের দ্বারা আযোরসে পরিচালিত অভিযানে ন্যাভিগেশন গবেষণা পরিচালনা করেন। অভিযানের পথটি রাইটের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী প্রস্তুত করা প্রথম মানচিত্রের আলোচ্য বিষয় ছিল, যা ১৫৯৯ সালে "সার্টেন এরর ইন নেভিগেশন" এ প্রকাশিত হয়েছিল। একই বছর, রাইট ইংল্যান্ডে প্রস্তুতকৃত প্রথম বিশ্ব-মানচিত্র তৈরি করেছিলেন এবং তা প্রকাশও করেছিলেন। এর জন্য তিনি ১৫৬৯ সালে প্রকাশিত জেরার্ডাস মার্কেরেটরের মূল মানচিত্রের মারকেটরের অভিক্ষেপ ব্যবহার করেছিলেন।

১৬০০ সনে রাইট নিউ রিভার প্রকল্পের সমীক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। এর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ওয়েয়ার, হার্টফোর্ডশায়ার থেকে ইসলিংটন লন্ডনে পরিষ্কার পানি আনতে একটি নতুন মানবসৃষ্ট চ্যানেলের পথ তৈরীর প্রকল্প সফলভাবে পরিচালনা করেছিলেন। একই সময়ের মধ্যেই তিনি বাণিজ্যিক নাবিকদের জন্য গণিতের উপর বক্তৃতা দিতেন এবং ১৬০৮ বা ১৬০৯ সাল থেকে হেনরি ফ্রেডরিকের গণিতের শিক্ষক নিযুক্ত হন। হেনরি ফ্রেডরিক ছিলেন জেমস প্রথম এর পুত্র অর্থাৎ ওয়েলসের রাজপুত্র এবং প্রকৃত উত্তরাধিকারী। তিনি ১৬১২ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি এডওয়ার্ড রাইটের কাছে গণিতের পাঠ নিতেন। রাইট গাণিতিক উপকরণগুলির একজন দক্ষ ডিজাইনার ছিলেন। তিনি প্রিন্স হেনরির জন্য একটি এ্যস্ট্রোল্যাব, একটি প্যান্টোগ্রাফ এবং সামরিক গোলক তৈরি করে দিয়েছিলেন। "সার্টেন এরর ইন নেভিগেশন" এর ১৬১০ সালের সংস্করণে তিনি "সমুদ্রের-আংটি" এর মতো বিষয়গুলো বর্ণনা করেছিলেন। যা সমুদ্রগামী নাবিককে কম্পাসের চৌম্বকীয় প্রকরণ, সূর্যের উচ্চতা এবং দিনের যে কোনও সময় অক্ষাংশটি জানা থাকলে চিহ্নিত করতে সক্ষম করেছিল এবং একটি যন্ত্রের বর্ণনা করেছিলেন যা মেরু নক্ষত্রের উচ্চতা ব্যবহার করে মাধ্যাহ্নিক না থাকা অবস্থায় অক্ষাংশ সন্ধানে উপযোগী ছিল।

তিনি বেশ কয়েকটি বই এবং পত্রপত্রিকা ছাড়াও জন নেপিয়ারের রচিত "মিরিকিফির লোগারিথমোরাম ক্যানোনিস ডেসক্রিপটো"(১৬১৪) অনুবাদ করেছিলেন। যা লাতিন থেকে ইংরেজিতে লগারিদমের ধারণা প্রবর্তন করেছিল। এটি রাইটের মৃত্যুর পরে ১৬১৬ সনে "ডিসক্রিপশন অব দ্যা এডমিরেভল টেবল অব লোগারিদম" নামে প্রকাশিত হয়েছিল। রাইটের কাজ অনেককেই প্রভাবিত করেছিলো। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বলেন ডাচ জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদ উইলবর্ড স্নেলিয়াস, হল্যান্ডের জ্যামিতি ও জ্যোতির্বিদ অ্যাড্রিয়ান মেটিয়াস এবং ইংরেজ গণিতবিদ রিচার্ড নরউড। রিচার্ড নরউড রাইটের প্রস্তাবিত পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথিবীর একটি বৃহত্তর বৃত্তে একটি ডিগ্রির দৈর্ঘ্য গণনা করেছিলেন।

পরিবার এবং শিক্ষা[সম্পাদনা]

হিলিয়ার্ড জর্জের প্রতিকৃতি, আর্ল অফ কম্বারল্যান্ড (১৫৯০)। রাইট তাঁর "সার্টেন এরর ইন নেভিগেশন"(১৫৯৯) তাকে উৎসর্গ করেছিলেন

হেনরি এবং মারগারেট রাইট এর ছোট ছেলে

এডওয়ার্ড রাইট পূর্ব এ্যাঙ্গলিয়ার নরফোলক এর গার্ভেস্টন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] ৮ই অক্টোবর ১৫৬১ সনে তার বাপ্তিস্ম হয়। । এটা ধারণা করা হয় যে তিনি তার বড় ভাই থমাসের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন এবং তিনি হার্ডিংহাম স্কুলে অধ্যায়ন করতে গিয়েছিলাম।[২] তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন[৩] এবং তিনি ১৫৭৬ সালের ৮ই ডিসেম্বর সাইজার হিসাবে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গনভিল এবং কায়াস কলেজে ম্যাট্রিকুলেশন করেন। সাইজার মূলত সেই সব সীমিত সংখ্যক ছাত্র যারা কম ফি প্রদান করতে পারত এবং গবেষণার সময় বিনামূল্যে খাদ্য, বাসস্থান এবং অন্যান্য সহায়তা পেত। তবে এর বিনিময়ে কলেজের জন্য কাজও করে দেওয়া লাগতো।

রাইট ১৫৮০-১৫৮১ সালে কলা বিভাগ থেকে স্নাতক (বি.এ.) হন। এরপরও তিনি কায়াসেই শিক্ষাবৃত্তিিতে রয়ে যান এবং ১৫৮৪ সেখান থেকে তার স্নাতকোত্তর (এম.এ.) পেয়েছিলেন এবং ১৫৮৭ এবং ১৫৯৬ এর মধ্যে ফেলোশিপ করেছিলেন। কেমব্রিজে তিনি রবার্ট দেভেরাক্সের নিকটতম বন্ধু ছিলেন। যিনি পরবর্তীকালে এসেক্সের দ্বিতীয় আর্ল ছিলেন। এমনকি তারা ১৬০০-১৬০১ এ এলিজাবেথের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কয়েক সপ্তাহ আগেও পড়াশুনা নিয়ে আলোচনা করার জন্য দেখা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি গণিতবিদ হেনরি ব্রিগেস সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন; এবং সৈনিক এবং জ্যোতিষী ক্রিস্টোফার হাইডন সম্পর্কেও জেনেছিলেন। যিনিও দেভেরাক্সের বন্ধু ছিলেন। রাইট হাইডনের জন্য যন্ত্রপাতি তৈরি করেছিলেন যা দিয়ে হাইডন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

বিদেশে অভিযান[সম্পাদনা]

রাইট মের্কেটর প্রক্ষেপণটিকে একটি ফাঁকা সিলিন্ডারের অভ্যন্তরে মূত্রাশয়ের মতো স্ফীত গোলকের মত করে ব্যাখ্যা করেছিলেন।[৪] গোলকটি সমানভাবে প্রসারিত হয়। যাতে পৃথিবীর মধ্যরেখা সমান্তরালগুলির সমান অনুপাতে প্রসারিত হয়। যতক্ষণ না প্রসারিত গোলাকার পৃষ্ঠের প্রতিটি বিন্দু সিলিন্ডারের অভ্যন্তরের সংস্পর্শে আসে।

১৫৮৯ সালে, তার ফেলোশিপে নিযুক্ত হওয়ার দুই বছর পর, তাকে এলিজাবেথ প্রথম অনুরোধ করেন যে তিনি যেন আর্ল অফ কুম্বল্যান্ডের আয়োজকদের দ্বারা পরিচালিত আজোরে পাঠানো স্পেনীয় গ্যালিলনগুলি আটকানোর জন্য একটি অভিযান পরিচালনা করেন। রানী কাইয়াস কলেজ কর্তৃপক্ষকে কার্যকরীভাবে এই উদ্দেশ্যে তাকে অনুপস্থিতিতে ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ তার এই অভিযানকে "রাজকীয় আদেশ"-এ বিশ্রাম আখ্যায়িত করে আরও কূটনীতিকভাবে প্রকাশ করেছিল।[৫] রাইট ফ্রান্স, পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশদের থেকে "আইনসম্মত" পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। কাইয়সে তার এক সহকর্মী ডেরিক ইনগ্রাম তার সম্বন্ধে বলেছিলেন, "কাইয়াস থেকে জলঅভিযানে জড়িত থাকা সর্বকালের একমাত্র শিক্ষক যিনি বিশ্রাম নামাঙ্কিত ছুটি পেয়েছিলেন"।[৫] রাইট ৮ই জুন ১৫৮৯ সালে কম্বারল্যান্ডের সাথে প্লাইমাথ থেকে ভিক্টোরিতে নৌযাত্রা করেছিলেন; একই বছরের ২৭শে ডিসেম্বর তারা ফ্যালামথে ফিরে আসেন।[২] এই অভিযানের একটি ঘটনা রাইটের "সার্টেন এরর ইন নেভিগেশন"(১৫৯৯)-এ বর্ণিত আছে। যদিও এটি তৃতীয় ব্যক্তির রচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল তবুও এটি বিশ্বাস করা হয় যে এটি তারই লেখা। [৬]

তিনি আজোর অভিযানের অন্যতম সদস্য হিসাবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। এই অভিযানে রাইটের বিবরণি অনুসারে তিনি ছিলেন "ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ডি কেয়ারলেস ওরফে রাইট, যিনি এস ফ্রান্সিস ড্রেকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ অভিযানে ছিলেন ক্যাপ্টেন অফ দ্য হোপ ।" রাইট তার অন্য আর একটি রচনা দ্য হ্যাভেন-ফাইন্ডিং আর্ট(১৫৯৯)-এ বলেছিলেন যে, "সমুদ্রে আমার প্রথম চাকরির সময়টি এখন থেকে দশ বছর আগে শুরু হয়েছিল।"।[২] অক্সফোর্ড ডিকশনারি অফ ন্যাশনাল বায়োগ্রাফির ভাষ্য মতে এই অভিযানের সময় রাইট নিজেকে "ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ডি কেয়ারলেস" বলে অভিহিত করেছিলেন। আবার তিনিই ১৫৮৫-১৫৮৬ সনে স্যার ফ্রান্সিস ড্রেকের ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমুদ্রযাত্রায় ক্যাপ্টেন অফ দ্য হোপ ছিলেন। এই অভিযানের ফলে স্যার ওয়াল্টার রালেহের কলোনী নিরাপদে ভার্জিনিয়াতে সরে এসেছিল।


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. E.J.S. Parsons; W.F. Morris (১৯৩৯), "Edward Wright and His Work", Imago Mundi, 3: 61–71, জেস্টোর 1149920, ডিওআই:10.1080/03085693908591862 
  2. Parsons & Morris, p. 61.
  3. Paul J. Lewi (১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৬), "Mercator, Wright and Mapmaking" (পিডিএফ), Speaking of Graphics: An Essay on Graphicacy in Science, Technology and Business, Turnhout, Belgium: DataScope, পৃষ্ঠা 24, ১৫ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা, Edward Wright was born in 1561 at Garveston, near Norfolk, in a family with modest income (mediocris fortunae) 
  4. Parsons & Morris, p. 63; see also Marie Boas Hall (১৯৯৪), "The Uses of Mathematics [ch. 7]", The Scientific Renaissance 1450–1630, New York, N.Y.; London: Dover Publications; Constable, পৃষ্ঠা 197–237 at 208, আইএসবিএন 0-486-28115-9 
  5. Derek Ingram (২০০১), "The First Caian Engineer and the First Caian Pirate", The Caius Engineer, 13 (1), ২ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০০৮ 
  6. A.J. Apt; B. Harrison (২০০৪)। "Oxford Dictionary of National Biography"। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি (অনলাইন সংস্করণ)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। ডিওআই:10.1093/ref:odnb/30029  (সাবস্ক্রিপশন বা যুক্তরাজ্যের গণগ্রন্থাগারের সদস্যপদ প্রয়োজন।)