আধুনিক দর্শন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আধুনিক দর্শন হলো দর্শনের একটি শাখা, যার বিকাশ ঘটেছে আধুনিক কালে ও এটি আধুনিকত্বের সাথে সম্পর্কিত। এটি কোনো মতবাদ বা শিক্ষা নয় (একে আধুনিকতার সাথে মেলানো উচিত নয়)। আধুনিক দর্শনে এমন কিছু ধারণা আছে, যা একে আগের আমলের দর্শন থেকে পৃথক করেছে।[১]

সপ্তদশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর অগ্রভাগকে আধুনিক দর্শনের সময়কাল বলে ধারণা করা হয়। নবজাগরিক চিন্তাভাবনা গ্রহণ করা উচিত কী না তা বিতর্কের বিষয়; একই রকমভাবে আধুনিকতাকে বিংশ শতাব্দীতেই শেষ করা উচিত কি উচিত না, একে আধুনিকতা পরবর্তী ধারণা প্রতিস্থাপন করা উচিত কি উচিত না, কীভাবে একজন এসব প্রশ্নের উত্তর ভাববে সেটা হল, তার আধুনিক দর্শনকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা।

আধুনিক পশ্চিমা দর্শন[সম্পাদনা]

ফ্রান্সিসকো সুয়ারেজ, যিনি মধ্যযুগীয় দার্শনিক পদ্ধতির সাথে আধুনিক দার্শনিক পদ্ধতির যোগসূত্র টেনেছিলেন।[২]

কতখানি পুনর্জাগরিক চিন্তাভাবনা আধুনিক দর্শনের অঙ্গ, এটা বিতর্কের বিষয়।[৩] পঞ্চদশ শতাব্দীর দর্শনকে কম আধুনিক এবং ষোড়শ শতাব্দীর দর্শন থেকে অধিকতর মধ্যযুগীয় বলে ধরা হয়ে থাকে। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে মনের দর্শন, জ্ঞানতত্ত্ব ও অধিবিদ্যাকে দুইটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ফ্রান্সজার্মানির অধিকাংশ যুক্তিবাদীরা মত প্রকাশ করেন যে, সমগ্র জ্ঞানের চিন্তাচেতনা মনের সহজাত ধ্যানধারণা থেকে আসবে। এই ধারার প্রধান ব্যক্তিরা হলেন র‍্যনে দেকার্ত, বারুখ স্পিনোজা, গট‌ফ্রিড লাইব‌নিৎস এবং নিকোলা মালব্রাঁ। অপরদিকে, অভিজ্ঞতাবাদীরা মনে করেন যে, মানুষ প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানলাভ করবে। এই ধারার প্রধান ব্যক্তিরা হলেন জন লক, জর্জ বার্কলি এবং ডেভিড হিউম (এটা অতীত সম্পর্কীয় বিভাগ ও এ ধারায় কান্টের অবসান বিদ্যমান)। এসব দার্শনিকরা নিজস্বভাবে নীতিশাস্ত্রে অবদান রাখলেও নীতিশাস্ত্র ও রাজনৈতিক দর্শনকে সাধারণত এই বিভাগে আলোচনা করা হয় না। রাজনৈতিক দর্শনে কাজ করা অন্যান্য বিখ্যাত ব্যক্তিরা হলেন টমাস হব্‌সজঁ-জাক রুসো

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইমানুয়েল কান্ট দর্শনে যুগান্তকারী অবদান রাখেন এবং যুক্তিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের মাঝে সমন্বয় সাধন করেন। তিনি যুক্তিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের বিতর্ক নিরসনের জন্য কাজ করলেও তিনি পুরোপুরিভাবে সফল হন নি। তার কাজ ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জার্মানিতে আলোড়ন সৃষ্টি করে ও জার্মান ভাববাদের জন্ম দেয়। ভাববাদের মূলনীতি হল পৃথিবী ও মনকে একইভাবে বুঝতে হবে; এটা বোঝা যায় হেগেলের কাজের মাধ্যমে। তিনি বলেছেন, "বাস্তবই যুক্তিসঙ্গত, যুক্তিসঙ্গতই বাস্তব।"

হেগেলের যে বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন, সে বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে তার অনুসারী ও সমালোচকেরা কাজ চালিয়ে যান। কার্ল মার্ক্স হেগেলের "ঐতিহাসিক দর্শন" ও এবং ব্রিটেনের অভিজ্ঞতাজনিত দর্শনকে জুতসই করে তোলেন। তিনি হেগেলের ধারণাকে বস্তুবাদী ধারণায় রূপান্তরিত করেন। তার কাজ সামাজিক বিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করে। অপরদিকে, সোরেন কিয়ের্কেগার্ড প্রথাগত দর্শনের চিন্তাচেতনাকে নাকচ করে দেন। তার মতে এগুলো জীবন যাপনের জন্য অপর্যাপ্ত। তার মতে, জীবন হল বেঁচে থাকার জন্য, কোনো রহস্য সমাধানের জন্য নয়। তিনি আর্থার শোপেনহাওয়ারের ভাববাদকে গ্রহণ করেছিলেন। আর্থারের মতে, দুনিয়া অগণিত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার পারস্পরিক ক্রিয়া ছাড়া কিছুই না। নাস্তিকতা ও দুঃখবাদের পক্ষে মতামত প্রদান করেন তিনি। ফ্রিডরিখ নিৎশে শোপেনহাউয়েরের ধারণা পরবর্তীকালে চর্চা করেন। তিনি "ঈশ্বর মৃত" দর্শন প্রচার করেন। তিনি এই দর্শনের মাধ্যমে বলেন যে, দুঃখবাদ কোন হতাশার বিষয় না, এটা স্বাধীনতার এক নতুন মাত্রা।

ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ দর্শন নব্য-হেগেলীয় দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকে। তখন বারট্রান্ড রাসেল ও জর্জ এডওয়ার্ড মুর বিশ্লেষণী দর্শনের দিকে ধাবিত হতে থাকেন। বিশ্লেষণী দর্শন ছিল ঐতিহ্যবাহী প্রয়োগবাদের আধুনিক রূপ এবং জার্মাণ গণিতবিদ গট্‌লব ফ্রেগের দর্শনের আধুনিকতর রূপের সংমিশ্রণ।

রেনেসাঁ দর্শন[সম্পাদনা]

রেনেসাঁ মানবতাবাদ মানবতাবাদকে গুরুত্ব প্রদান করে (দেখুন ওরাশন অন দ্য ডিগনিটি অব ম্যান) এবং মতান্ধতাবাদ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্যাভিমানের বিরুদ্ধে মতামত প্রদান করে। এর দরুন নিক্কোলো মাকিয়াভেল্লির দ্য প্রিন্স রচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উন্নতি সাধন হয়।[৪] মানবতাবাদীরা মধ্যযুগীয় পণ্ডিতদের থেকে আলাদা ছিলেন। তারা দুনিয়াকে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য দেখতেন না। তারা দুনিয়াকে দেখতেন গাণিতিকভাবে তৈরি বহুত্ববাদী দুনিয়ারূপে। রেনেসাঁ দর্শন লিওনার্দো দা ভিঞ্চির নোটবুকে লেখা দুইটি বিবৃতি থেকে বোঝা যায়:

  • আমাদের সব জ্ঞানের উৎপত্তি হয় আমাদের কর্মবিধি থেকে
  • একজন ব্যক্তি গণিতবিদ্যা ও গণিতবিদ্যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোনো কিছু প্রয়োগ করতে পারবে কি পারবে না এর কোন নিশ্চয়তা নেই।

একইভাবে, গ্যালিলিও তার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিই প্রয়োগ করেননি, তিনি গণিত শাস্ত্রের উন্নতি করেছেন পদার্থবিদ্যার সমস্যা সমাধানের জন্য। মানুষের জ্ঞান লাভের এই দুইটি ধারণা যথাক্রমে অভিজ্ঞতাবাদযুক্তিবাদের পটভূমি সৃষ্টি করে।[৫]

রেনেসাঁ যুগের দার্শনিক[সম্পাদনা]

যুক্তিবাদ[সম্পাদনা]

র‍্যনে দেকার্ত এবং তার বাণী "আমি ভাবি, সুতরাং আমি আছি"-এর মাধ্যমে মূলত আধুনিক দর্শন যাত্রা শুরু করে। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে মধ্যযুগীয় দার্শনিক মতবাদ প্রাধান্য বিস্তার করেছিল দর্শনে। সে সময়ের দর্শন প্লেটো, অ্যারিস্টটল এবং শুরুর দিককার গির্জার মতবাদের ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। দেকার্ত মত প্রকাশ করলেন যে, অধিকাংশ মধ্যযুগীয় দার্শনিক মতবাদ অর্থহীন অথবা মিথ্যা। এক কথায়, তিনি গোড়া থেকে দর্শনকে ঢেলে সাজাতে চাইলেন। তিনি এজন্য মেডিটেশন অন ফার্স্ট ফিলোসফি রচনা করলেন। এতে ছয়টি প্রবন্ধে তিনি তার চিন্তাচেতনা ব্যক্ত করলেন। তিনি সেই আমলের দার্শনিক চিন্তাভাবনাকে সরিয়ে নিজের মত করে ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন দর্শনের বিষয়গুলোকে। তিনি নির্ধারণ করতে চেষ্টা করলেন যে, তিনি যা জানেন তা "নিশ্চিত" কি না। তিনি দেখলেন যে, তিনি প্রায় সবকিছুর ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করতে পারেন। যেমন, দেহ, ঈশ্বর, তার স্মৃতি, ইতিহাস, বিজ্ঞান এমনকি গণিতেও সংশয় প্রকাশ করলেন। তিনি দেখলেন যে, তিনি নিজের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন না। তিনি দেখলেন যে, তিনি যা ভাবছেন তা সত্য না হলেও তিনি নিজেই সেটা নিয়ে ভাবছেন এটা সত্য। এই নীতিতে তিনি তার জ্ঞানকে ঢেলে সাজালেন। তিনি দেখলেন যে, তার কিছু ধারণা শুধু তার মধ্য থেকে আসছে না, ঈশ্বরের কাছ থেকেও আসছে। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করলেন। তিনি এরপর প্রমাণ করলেন যে, ঈশ্বর তাকে প্রণালীগতভাবে সব ব্যাপারে প্রবঞ্চিত করছেন না। তিনি আরো প্রমাণ করলেন যে, বিজ্ঞানের সাধারণ মতবাদ ও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা ভ্রম বলে পরিগণিত হতে পারে কিন্তু, সেগুলো মিথ্যা নয়।

যুক্তিবাদী[সম্পাদনা]

অভিজ্ঞতাবাদ[সম্পাদনা]

অভিজ্ঞতাবাদ হল দর্শনের একটি শাখা যা দর্শনের অন্যান্য শাখা যেমন যুক্তিবাদ, ভাববাদ এবং ইতিহাসবাদকে নাকচ করে দেয়। অভিজ্ঞতাবাদ অনুসারে, জ্ঞান আসে (একমাত্র ও প্রাথমিকভাবে) বাইরের জগৎ থেকে লব্ধ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। এই ধারণা যুক্তিবাদকে নাকচ করে দেয় কেননা, যুক্তিবাদ অনুসারে জ্ঞান বিশুদ্ধ চিন্তাধারা থেকেও আসে। অভিজ্ঞতাবাদ এবং যুক্তিবাদ দুইটাই ব্যক্তিগত জ্ঞানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। অপরদিকে, ইতিহাসবাদ হল সামাজিক জ্ঞানতত্ত্ব। আবাত, ইতিহাসবাদ অভিজ্ঞতার গুরুত্বকে স্বীকার করে নিলেও এর সাথে অভিজ্ঞতাবাদের পার্থক্য বিদ্যমান কেননা, ইতিহাসবাদ অনুসারে, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ পর্যবেক্ষণ করে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা লাভ করে থাকে। অভিজ্ঞতাবাদকে অভিজ্ঞতাজনিত গবেষণার সাথে মেলানো উচিত নয় কেননা, অভিজ্ঞতাজনিত গবেষণার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জ্ঞানতাত্ত্বিক বিষয় মাথায় রাখা হয় এবং গবেষণার প্রয়োগের ক্ষেত্রে গবেষকগণ সচেতন থাকেন। বর্তমানে অভিজ্ঞতাবাদকে জ্ঞানলাভের মাধ্যম ও দর্শনের একটি শাখা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। প্রথমদিকে অভিজ্ঞতাবাদকে "তাদের জন্য বলুন" হিসেবে অভিহিত করা হলেও এই ধারায় প্রতিদ্বন্দ্বী চিন্তাচেতনার বিরোধিতা করা হয়েছে। যাইহোক, অভিজ্ঞতাবাদ দর্শনের ইতিহাসে কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা দিয়ে এটাকে বিচার করা উচিত নয়। এটাকে গড়ে তোলা উচিত এমনভাবে যাতে এটি সমসাময়িক জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখার মাঝে বিশিষ্ট স্থান দখল করতে পারে। অন্যকথায়, অভিজ্ঞতাবাদকে এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত, যাতে এটি বিভিন্ন ধ্যাবধারণা ও সমসাময়িক বিজ্ঞানের তত্ত্বের মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করতে পারে।

অভিজ্ঞতাবাদ হল জ্ঞানের সে সব শাখার মধ্যে অন্যতম, যা মানব জ্ঞান বিশ্লেষণ করতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যা জ্ঞানতত্ত্ব নামে পরিচিত। অভিজ্ঞতাবাদ অভিজ্ঞতা ও প্রমাণের উপর বিশেষত, ইন্দ্রিয় দর্শনের প্রতি গুরুত্বারোপ করে থাকে, যা গড়ে ওঠে সহজাত চিন্তাচেতনা অথবা ঐতিহ্যের ভিত্তিতে।[৬] অপরদিকে, উদাহরণস্বরূপ, ভাববাদ গড়ে ওঠে কারণ চিন্তা করার মাধ্যনে যার সাথে সহজাত জ্ঞানের কোন সম্পর্ক নেই।

অভিজ্ঞতাবাদী[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক দর্শন[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক দর্শন হল রাজনীতি, স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, সম্পদ, অধিকার আইন ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনের প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করে থাকে। রাজনৈতিক দর্শনে এসব বিষয় কী, কেন এগুলো প্রয়োজন (যদি ও কেবল যদি এগুলো প্রয়োজনীয় হয়), রাষ্ট্রের কি করা উচিত এবং কি করা উচিত নয়, স্বাধীনতা কেন থাকা উচিত, স্বাধীনতার মাত্রা কতটুকু হওয়া উচিত, আইনের কাজ কি, নাগরিকদের ন্যায়সঙ্গত সরকারের প্রতি কি দায়িত্ব এবং ন্যায়সঙ্গত সরকারের পতন হলে কি করণীয়–এসব নিয়ে আলোচনা করে থাকে দর্শনের এই শাখা। সহজ কথায়, "রাজনৈতিক দর্শন" মানুষের সাধারণ ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও রাজনীতি নিয়ে দর্শনশাস্ত্রে আলোচনা করর থাকে।[৭]

দেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দার্শনিক[সম্পাদনা]

ভাববাদ[সম্পাদনা]

ভাববাদ হল দর্শনের একটি ধারা, যেখানে বলা হয়ে থাকে যে বাস্তবতা, এবং আমাদের জানা বাস্তবতা হল মূলত মনের সৃষ্টি অথবা অন্যথায় এগুলো অবাস্তব। জ্ঞানতত্ত্বের দিক দিয়ে ভাববাদ সংশয়বাদকে স্পষ্ট করে কেননা, ভাববাদ মন সম্পর্কিত কোন বিষয় জানার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করে থাকে।সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ভাববাদ মানুষের ভাবনা, বিশ্বাস, মূল্যবোধের সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে থাকে।[৮] তত্ত্ববিদ্যার মতবাদ অনুযায়ী মন ও আত্মার দ্বারা তৈরি সত্তা নিয়ে আলোচনা করে থাকে।[৯] ভাববাদ অনুভূতিবাদী ও দ্বৈতবাদী তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়, যেগুলো মানব মনের উপরে গুরুত্বারোপ করে নি। ভাববাদের চূড়ান্ত স্তর দর্শনশাস্ত্রে আত্মজ্ঞানবাদ নামে পরিচিত

ভাববাদী দার্শনিক[সম্পাদনা]

অস্তিত্ববাদ[সম্পাদনা]

অস্তিত্ববাদকে সাধারণত দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন বলে ধরা হয়ে থাকে। দর্শনের এই ধারায় দার্শনিক চিন্তাভাবনা হতে হবে ব্যক্তিগত এবং দার্শনিক অভিজ্ঞতাও হতে হবে ব্যক্তিগত। এই ধারণায়, নৈতিকতা এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তা চেতনা মানব অস্তিত্ব বোঝাতে পুরোপুরিভাবে সক্ষম নয়। সেজন্য, দর্শনের প্রামাণ্যবাদ প্রয়োজন মানব অস্তিত্ব বোঝার ক্ষেত্রে।[১০][১১][১২]

অস্তিত্ববাদী দার্শনিক[সম্পাদনা]

রূপতত্ত্ব[সম্পাদনা]

রূপতত্ত্ব অভিজ্ঞতার মাধ্যমে লব্ধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। এটি একটি বিশাল দার্শনিক আন্দোলন যা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। এর প্রবক্তা ছিলেন এডমুন্ড হাসের্ল। রূপতত্ত্ববাদ জার্মানির গোটিনগেন বিশ্ববিদ্যালয় ও মিউনিখের লুডউইগ ম্যাক্সিমিলান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অনুসারীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল। এছাড়াও এই দর্শন ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা ছিল হাসের্লের প্রারম্ভিক দর্শন থেকে অনেকটাই আলাদা।[১৩]

রূপতত্ত্ববাদী দার্শনিক[সম্পাদনা]

দরকারবাদ[সম্পাদনা]

দরকারবাদ বা প্রয়োগবাদ হল একটি দার্শনিক ঐতিহ্য, যা অনুশীলন ও তত্ত্ব কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। এটি এমন বিষয় বর্ণনা করে থাকে, যেখানে অনুশীলনের মাধ্যমে তত্ত্ব বের হয়ে থাকে। এই ধরনের অনুশীলন "সুক্ষ্মবুদ্ধিসম্পন্ন অনুশীলন" নামে পরিচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দর্শনের এই ধারার উল্লেখযোগ্য অংশগুলো হল: কারণবাদ, মৌলিক প্রয়োগবাদ, প্রামাণ্যবাদ, ধারণাবাদ এবং ভ্রমবাদ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] দরকারবাদীরা মনে করে থাকেন যে, আধুনিক বিজ্ঞানের পদ্ধতি ও এর গূঢ়তত্ত্ব দর্শনের গ্রহণ করা উচিত।[১৪] চার্লস স্যান্ডার্স পার্স (এবং তার দরকারবাদী তত্ত্ব) দরকারবাদে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।[১৫] এরপর, বিংশ শতাব্দীতে দরকারবাদে আরো অবদান রাখেন উইলিয়াম জেমস এবং জন ডুয়ি[১৪]

দরকারবাদী দার্শনিক[সম্পাদনা]

বিশ্লেষণী দর্শন[সম্পাদনা]

বিশ্লেষণী দর্শন বিংশ শতাব্দী ইংরেজিভাষী দেশগুলো প্রাধান্য বিস্তাত করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, স্ক্যান্ডিনেভিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ নিজেদেরকে "বিশ্লেষণী" বিভাগ বলে অভিহিত করে থাকে।[১৬] দর্শনশাস্ত্রের এই ধারাটি বিশাল দার্শনিক মতবাদ বলে অভিহিত হয়ে থাকে।[১৭][১৮] এটি প্রকৃতিবিজ্ঞানের উপরে শ্রদ্ধা রেখে স্বচ্ছতা ও যুক্তির উপরে গড়ে উঠেছে (যাতে সাধারণত সাধারণ যুক্তিবিদ্যা ও ভাষা বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব)।[১৯][২০][২১]

বিশ্লেষণী দার্শনিক[সম্পাদনা]

আধুনিক এশীয় দর্শন[সম্পাদনা]

আধুনিক কালে এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন দার্শনিক আন্দোলনের জন্ম হয়েছে। যেমন:

  • নব্য কনফুসীয়বাদ
  • মাওবাদ
  • আধুনিক বুদ্ধিবাদ
  • কিয়োটো বিদ্যালয়
  • নব্য বেদান্ত

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Baird, Forrest E.; Walter Kaufmann (২০০৮)। From Plato to Derrida। Upper Saddle River, New Jersey: Pearson Prentice Hall। আইএসবিএন 0-13-158591-6 
  2. https://plato.stanford.edu/entries/suarez/
  3. Brian Leiter (ed.), The Future for Philosophy, Oxford University Press, 2006, p. 44 n. 2.
  4. "Niccolo Machiavelli | Biography, Books, Philosophy, & Facts"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-৩০ 
  5. [১]
  6. Baird, Forrest E.; Walter Kaufmann (২০০৮)। From Plato to Derrida। Upper Saddle River, New Jersey: Pearson Prentice Hall। আইএসবিএন 0-13-158591-6 
  7. Hampton, Jean (১৯৯৭)। Political philosophy। পৃষ্ঠা xiii। আইএসবিএন 9780813308586। ২১ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুলাই ২০১৯  Charles Blattberg, who defines politics as "responding to conflict with dialogue," suggests that political philosophies offer philosophical accounts of that dialogue. See his "Political Philosophies and Political Ideologies"। এসএসআরএন 1755117অবাধে প্রবেশযোগ্য  in Patriotic Elaborations: Essays in Practical Philosophy, Montreal and Kingston: McGill-Queen's University Press, 2009.
  8. Macionis, John J. (২০১২)। Sociology 14th Edition। Boston: Pearson। পৃষ্ঠা 88আইএসবিএন 978-0-205-11671-3 
  9. Daniel Sommer Robinson, "Idealism", Encyclopædia Britannica, http://www.britannica.com/EBchecked/topic/281802/idealism
  10. Mullarkey, John, and Beth Lord (eds.). The Continuum Companion to Continental Philosophy. London, 2009, p. 309
  11. Stewart, Jon. Kierkegaard and Existentialism. Farnham, England, 2010, p. ix
  12. Crowell, Steven (অক্টোবর ২০১০)। "Existentialism"Stanford Encyclopedia of Philosophy। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৪-১২ 
  13. Zahavi, Dan (২০০৩), Husserl's Phenomenology, Stanford: Stanford University Press 
  14. Biesta, G.J.J. & Burbules, N. (2003). Pragmatism and educational research. Lanham, MD: Rowman and Littlefield.
  15. Susan Haack; Robert Edwin Lane (১১ এপ্রিল ২০০৬)। Pragmatism, old & new: selected writings। Prometheus Books। পৃষ্ঠা 18–67। আইএসবিএন 978-1-59102-359-3। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  16. "Without exception, the best philosophy departments in the United States are dominated by analytic philosophy, and among the leading philosophers in the United States, all but a tiny handful would be classified as analytic philosophers. Practitioners of types of philosophizing that are not in the analytic tradition—such as phenomenology, classical pragmatism, existentialism, or Marxism—feel it necessary to define their position in relation to analytic philosophy." John Searle (2003) Contemporary Philosophy in the United States in N. Bunnin and E.P. Tsui-James (eds.), The Blackwell Companion to Philosophy, 2nd ed., (Blackwell, 2003), p. 1.
  17. See, e.g., Avrum Stroll, Twentieth-Century Analytic Philosophy (Columbia University Press, 2000), p. 5: "[I]t is difficult to give a precise definition of 'analytic philosophy' since it is not so much a specific doctrine as a loose concatenation of approaches to problems." Also, see ibid., p. 7: "I think Sluga is right in saying 'it may be hopeless to try to determine the essence of analytic philosophy.' Nearly every proposed definition has been challenged by some scholar. [...] [W]e are dealing with a family resemblance concept."
  18. See Hans-Johann Glock, What Is Analytic Philosophy (Cambridge University Press, 2008), p. 205: "The answer to the title question, then, is that analytic philosophy is a tradition held together both by ties of mutual influence and by family resemblances."
  19. Brian Leiter (2006) webpage “Analytic” and “Continental” Philosophy. Quote on the definition: "'Analytic' philosophy today names a style of doing philosophy, not a philosophical program or a set of substantive views. Analytic philosophers, crudely speaking, aim for argumentative clarity and precision; draw freely on the tools of logic; and often identify, professionally and intellectually, more closely with the sciences and mathematics, than with the humanities."
  20. H. Glock, "Was Wittgenstein an Analytic Philosopher?", Metaphilosophy, 35:4 (2004), pp. 419–444.
  21. Colin McGinn, The Making of a Philosopher: My Journey through Twentieth-Century Philosophy (HarperCollins, 2002), p. xi.: "analytical philosophy [is] too narrow a label, since [it] is not generally a matter of taking a word or concept and analyzing it (whatever exactly that might be). [...] This tradition emphasizes clarity, rigor, argument, theory, truth. It is not a tradition that aims primarily for inspiration or consolation or ideology. Nor is it particularly concerned with 'philosophy of life,' though parts of it are. This kind of philosophy is more like science than religion, more like mathematics than poetry – though it is neither science nor mathematics."

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]