অ্যানা উইন্টার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অ্যানা উইন্টার
উইন্টার ২০১৯ সালে
জন্ম (1949-11-03) ৩ নভেম্বর ১৯৪৯ (বয়স ৭৪)
জাতীয়তাব্রিটিশ
নাগরিকত্বযুক্তরাজ্য
যুক্তরাষ্ট্র
শিক্ষানর্থ লন্ডন কলেজিয়েট স্কুল
পেশাম্যাগাজিন সম্পাদক, ফ্যাশন জার্নালিস্ট
কর্মজীবন১৯৭৫ - বর্তমান
নিয়োগকারীকনডে ন্যাস্ট পাবলিকেশন্স
পরিচিতির কারণপ্রধান সম্পাদক, ভোগ (যুক্তরাষ্ট্র) আর্টিস্ট ডিরেক্টর, কনডে ন্যাস্ট
উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব
সহকারী সম্পাদক, হার্পার্স এন্ড কুইন, হার্পার্স বাজার; ফ্যাশন সম্পাদক, ভিভা, স্যাভভি, নিউইয়র্ক; ক্রিয়েটিভ পরিচালক, যুক্তরাষ্ট্র ভোগ; প্রধান সম্পাদক, ব্রিটিশ ভোগ এবং হাউস এন্ড গার্ডেন
পূর্বসূরীগ্রেস মিরাবেল্লা
বোর্ড সদস্যমেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট
দাম্পত্য সঙ্গীডেভিড শ্যাফার
(বি. ১৯৮৪; বিচ্ছেদ. ১৯৯৯)
সন্তান
পিতা-মাতাচার্লস উইন্টার
এলেনর ট্রেগো বেকার
আত্মীয়প্যাট্রিক উইন্টার (ভাই)
স্বাক্ষর
200px

ডেইম অ্যানা উইন্টার ( জন্ম ৩ নভেম্বর ১৯৪৯) একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান সাংবাদিক এবং সম্পাদক।[১] তিনি ১৯৮৮ সাল থেকে ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, এছাড়াও তিনি ২০১৩ সাল থেকে ভোগ প্রকাশ করে আসা আমেরিকান ম্যাস মিডিয়া কোম্পানী কন্ডে ন্যাস্টের একজন শিল্প নির্দেশক। ট্রেডমার্ক পেইজবয় বব কাট চুল এবং কালো চশমারধারী উইন্টার ফ্যাশন জগতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। ফ্যাশনে ধারা সৃষ্টিকারী তার চোখ এবং তরুণ ডিজাইনারদের প্রতি সমর্থনের জন্য সুধী মহলে তিনি বেশ প্রশংসিত। নির্লিপ্ত আচরণ এবং অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের জন্য তাকে “নিউক্লিয়ার উইন্টার” বলে ডাকা হয়।

তার বাবা চার্লস উইন্টর ছিলেন লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের (১৯৫৯-৭৬) সম্পাদক। কীভাবে একটি পত্রিকা প্রজন্মের তরুনদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে সে বিষয়ে তিনি উইন্টারকে অনেক শিক্ষা দিয়েছেন। টিনএজ বয়সে তিনি ফ্যাশনের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। দুটি ব্রিটিশ ম্যাগাজিনে ফ্যাশন সাংবাদিক হিসেবে তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তরাস্ট্রে চলে আসেন এবং নিউইয়র্ক ও হাউস এন্ড গার্ডেন ম্যাগাজিনে কিছুদিন কাজ করেন। এরপর তিনি আবার লন্ডনে ফিরে আসেন এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ ভোগ ম্যাগাজিনে সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বছর খানেক পরে তিনি নিউইয়র্কের ফ্র্যাঞ্চাইজি পত্রিকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং এর প্রকাশনার অচলাবস্থা পুনরুজ্জীবিত করেন। তার প্রকাশিত ম্যাগাজিনগুলো নিয়ে সেই সময় নানা বিতর্ক তৈরি হয়। ফ্যাশনে পশুর লোমের তৈরি কোট প্রচারের জন্য পশু অধিকার কর্মীদের দ্বারা তিনি আক্রমনের শিকার হন। অন্য সমালোচকেরা তার নারীত্বসৌন্দর্যের অভিজাত দিকটি প্রচারের নিন্দা করেন।   

অ্যানা উইন্টারের জীবন কাহিনী অবলম্বনে তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী লরেন উইসবার্গার ২০০৩ সালে লেখেন বেস্টসেলিং রোম্যান এ ক্ল্যাফ দ্যা ডেভিল ওয়ার্স প্রাডা। পরবর্তিতে এই উপন্যাস অবলম্বনে একটি ব্যবসা সফল সিনেমা নির্মিত হয় যেখানে মেরিল স্ট্রিপ মিরান্ডা প্রিস্টলি নামে এক ফ্যাশন সম্পাদকের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ২০০৯ সালে তার জীবন কাহিনী নিয়ে আর.জে. কাটলার দ্যা সেপ্টেম্বর ঈস্যু নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

পরিবার  [সম্পাদনা]

অ্যানা উইন্টারের জন্ম ১৯৪৯ সালে লন্ডন শহরের হ্যাম্পস্টেড নামের একটি জায়গায়।[২] তার বাবা চার্লস উইন্টার (১৯১৭ -১৯৯৯) ছিলেন ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সম্পাদক, মা ছিলেন হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অধ্যাপকের কন্যা এলেনর ট্রেগো বেকার (১৯১৭-১৯৯৫)। তার বাবা-মা ১৯৪০ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কিন্তু ১৯৭৯ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। উইন্টারের নামকরণ করা হয় তার নানী অ্যানা বেকারের নামানুসারে, যিনি ছিলেন পেনসিলভিনিয়ার এক ব্যবসায়ীর কন্যা।

উইন্টারের বিমাতা অড্রি স্লাটার-ও ছিলেন একজন ম্যাগাজিন সম্পাদক এবং হানি ও পেটিকোট সহ বেশ কয়েকটি ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা।

ডাচেস অফ ডেভোনশায়ার এবং অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকের ঔপন্যাসিক লেডি এলিজাবেথ ফস্টার ছিলেন উইন্টারের প্রপ্রপ্রমাতামহ এবং শেষ বারোনেট স্যার আগুস্টাস ভেরে ফস্টার ছিলেন তার গ্রান্ড আঙ্গেল।      

উইন্টারেরা চার ভাই বোন। তার বড় ভাই জেরাল্ড ছোটবেলায় সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান। ছোট ভাইদের মধ্যে একজনের নাম প্যাট্রিক উইন্টার, যিনি নিজেও একজন সাংবাদিক এবং বর্তমানে দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকার কূটনৈতিক সম্পাদক। আরেক ভাই জেমস এবং বোন নোরা উইন্টার লন্ডনের স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং বিভিন্ন বে-সরকারী আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোতে সন্মানের সাথে কাজ করেছেন।

উইন্টার বসবাস করেন গ্রীণউইচ ভিলেজে।  

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

স্বাধীনচেতা উইন্টার তরুণ বয়সে পড়াশোনা করেছেন নর্থ লন্ডন কলেজিয়েট স্কুলে। সেখানে তিনি সেই স্কুলের পোশাক পরিধান রীতির বিরুদ্ধে একপ্রকার বিদ্রোহ ঘোষণা করে তার স্কার্টের নিচের অংশ কেটে ছোট করেন। চোদ্দ বছর বয়স থেকে তিনি বব কাট চুলের স্টাইল গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় আমেরিকান টেলিভিশন শো রেডি স্টেডি গো’র একজন নিয়মিত দর্শক। সেই শো-এর ক্যাথি ম্যাকগোয়ানকে দেখে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার নানীর পাঠানো জনপ্রিয় টিনএজ ম্যাগাজিন সেভেনটিন-এর সংখ্যাগুলো দেখে ফ্যাশনে তার আগহ বাড়তে থাকে। তিনি বলেছেন, “ষাটের দশকে লন্ডনে বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে দেখতাম সবার মাথায় শুধু আরভিং পেন, ফ্যাশনে আলাদা কি ঘটছে সেদিকে কারো নজর নেই।” তার বাবা তরুণদের বাজারে কীভাবে নেতৃত্ব দান করতে হবে সে বিষয়ে তাকে অনেক পরামর্শ দিতেন।

১৫ বছর বয়স থেকে তিনি তার মনের মত পুরুষদের সাথে ডেটিং করতেন। ২৪ বছর বয়সে -পিয়ের্স পল রিডের সাথে তার কিছুদিনের জন্য সম্পর্ক তৈরি হয়। বয়ঃসন্ধির শেষের দিকে গসিভ কলামিস্ট নাইজেল ডেম্পস্টারের সাথে তিনি লন্ডন ক্লাব সার্কিটে ফিক্সার হয়েছিলেন।  

পেশাজীবন[সম্পাদনা]

ফ্যাশন থেকে সাংবাদিকতা[সম্পাদনা]

তাকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দ্যা সেপ্টেম্বর ইস্যু-তে উইন্টার বলেছেন, “আমার ধারণা আমার বাবা খুব করে চাইতেন যে আমি ফ্যাশন জগতে কাজ করি”। বাবার সাহায্যে তিনি সেই সময়ের প্রভাবশালী ফ্যাশন হাউস বিবা-তে চাকরি পেয়ে যান, তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। পরের বছর তিনি নর্থ লন্ডন কলেজিয়েট স্কুল ত্যাগ করে হ্যারোডস-এ ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেয়া শুরু করেন। বাবা -মায়ের নির্দেশে বাড়ির পাশের একটি প্রতিষ্ঠানেও তিনি ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করেন। তারা তাকে বলেছিলেন, “হয় তুমি ফ্যাশনে মনোযোগী হও অথবা তা একেবারে ছেড়ে দাও”। উইন্টার ফ্যাশন ম্যাগাজিনে প্রথম কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তার এক বয়স্ক ছেলেবন্ধু রিচার্ড নেভিলের নিজস্ব ফ্যাশন ম্যাগাজিন ওজে-তে, সেসময় সেটি ছিল বেশ জনপ্রিয় এবং একটু বিতর্কিত।  

১৯৭০ সালে, হার্পার বাজার ইউকে কুইনের সাথে যুক্ত হয়ে হার্পার’স এন্ড কুইন-এ রুপান্তরিত হলে উইন্টার সেখানে প্রথম সহকারী সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং এর মাধ্যমেই ফ্যাশন সাংবাদিকতায় তার ক্যারিয়ার শুরু হয়। সেখানে তিনি তার সহকর্মীদের বলেন যে, তিনি ভোগ সম্পাদনা করতে চান। এরপর সেখানে তিনি মডেল অ্যানাবেল হোডিনকে খুঁজে পান, যিনি ছিলেন তার নর্থ লন্ডন কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক সহপাঠী। উইন্টার তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং নতুন ধারার ফটোশুটের জন্য হেলমুট নিউটন, জিম লীসহ সেই সময়ের যুগান্তকারী কয়েকজন ফটোগ্রাফারের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী মিন হগের সাথে তীব্র মতানৈক্যের দরুন তিনি হার্পার’স এন্ড কুইন ছেড়ে তার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক বয়ফ্রেন্ড জন ব্রাডশ’র সাথে নিউইর্কে পাড়ি জমান।  

নিউইর্ক শহরে[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সাল, নতুন জায়গা নিউইয়র্কে এসে তিনি জুনিয়র ফ্যাশন ইডিটর হিসেবে হার্পার’স বাজারে যুক্ত হন। কিন্তু নয় মাসের মাথায় উইন্টারের নতুনধারার ফটোশুট মানতে না পেরে সম্পাদক টনি মাজ্জোলা তাকে চাকরিচ্যুত করেন। জনশ্রুতি আছে বয়ফ্রেন্ড ব্রাডশ’র এক বন্ধু তাকে বব মার্লের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, এরপর এক সপ্তাহের জন্য তারা গোপন অভিসারে চলে গিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে টিভি শো দ্যা লেট লেট শো উইথ জেমস কর্ডন-এ সেই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, রেগে লিজেন্ড বব মার্লের সাথে তার কখনো আলাপ হয় নি, কিন্তু সুযোগ পেলে তিনি অবশ্যই তার সাথে প্রেম করতেন। কয়েক মাস পরে ব্রাডশ’র সাহায্যে তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ম্যাগাজিন ভিভার প্রধান ফ্যাশন সম্পাদকের পদে যুক্ত হন। সেই ম্যাগাজিনটি শুরু করেছিলেন পেন্থহাউজ প্রকাশক বব গুচিওনের সাবেক স্ত্রী ক্যাথি কীটোন। সেখানে কাজ করার সময় তিনি প্রথম ব্যক্তিগত সহকারী নিযুক্ত করেন। যা তাকে চাহিদা সম্পন্ন এবং কড়া বস হিসেবে ভাব মূর্তি তৈরিতে সহায়তা করে।

গুচিওন ১৯৭৮ সালের শেষের দিকে অলাভজনক হওয়ায় ভিভা বন্ধ করে দেন। উইন্টার কিছুদিন কাজ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন। ব্রাডশ’র সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটে এবং ফরাসী রেকর্ড প্রযোজক মিচেল এসটেবানের সাথে তার সম্পর্ক শুরু হয়। দু’বছর স্থায়ী সেই সম্পর্কের দিনগুলো তিনি নিউইয়র্কে ও প্যারিসে এসটেবানের সাথে ভাগাভাগি করে কাটিয়েছিলেন।          

তিনি ১৯৮০ সালে পুনরায় কাজে ফিরে আসেন এবং মেয়েদের নতুন ম্যাগাজিন সাভভি-তে ফ্যাশন সম্পাদক হিসেবে এলসা ক্লেনসের স্থলাভিষিক্ত হন।পরের কয়েক বছর তিনি ফ্যাশন সম্পাদক হিসেবে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনে কাজ করেন। এতদিন ধরে তার নিজের বিকশিত করা যে সমস্ত ফ্যাশন এবং ফটোশুট গুলো আগে কোথাও পাত্তা পায় নি, অবশেষে সেখানে সেগুলো সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। সম্পাদক এডওয়ার্ড কোসনার মাঝেমধ্যে তাকে কড়া নিয়মকানুনের মধ্যে রাখতেন এবং ম্যাগাজিনের অন্য সেকশনে কাজ করতে বলতেন। উইন্টার প্রচ্ছদের সাথে যুক্ত রাচেল ওয়ার্ডের সাথে কাজ করে বুঝার চেষ্টা করেন কীভাবে সেলিব্রেটি প্রচ্ছদগুলো বেশি সংখ্যক বিক্রি হচ্ছে।

তার এক সাবেক সহকর্মী সেই সময়ের ভোগ সম্পাদক গ্রেস মিরাবেল্লা’র সাথে তার একটি সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেন। সেই সাক্ষাৎকারটি শেষ হয় যখন উইন্টার মিরাবেল্লাকে বলেন যে তিনি তার চাকরিটি পেতে চান।    

কনডে ন্যাস্ট[সম্পাদনা]

১৯৮৩ সালে কনডে ন্যাস্ট-এর সম্পাদকীয় পরিচালক এবং ভোগ ম্যাগাজিনের প্রকাশক অ্যালেক্স লিবারম্যান উইন্টারকে ভোগে একটি পদে যুক্ত হওয়ার কথা বলেন। বেতন দ্বিগুণ করার জন্য কিছুদিন সংগ্রাম করার পর অবশেষে তিনি অজানা বেশ কিছু দায়িত্ব নিয়ে ক্রিয়েটিভ পরিচালক হসেবে ভোগে যুক্ত হন। তিনি শিশু মনোরোগ চিকিৎসক এবং লন্ডনে তার পূর্ব পরিচিত ডেভিড শাফারের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৮৪ সালে তারা দু'জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৮৫ সালে উইন্টার প্রথম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বেট্রিক্স মিলার ভোগের যুক্তরাজ্য সংস্করণ থেকে অবসর গ্রহণ করলে তিনি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি বেশ কয়েকজন কর্মীকে পরিবর্তন করেন এবং ম্যাগাজিনের উপর প্রচন্ডভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন, যা এর আগে আর কোন সম্পাদক কখনো করেন নি। এর ফলে তাকে সবাই “নিউক্লিয়ার উইন্টার” বলে ডাকা শুরু করে। যে সমস্ত কর্মীরা সেখানে অবশিষ্ট ছিলেনে তারা সেই সময়টাকে “আমাদের অসন্তোষের উইন্টার” বলে অভিহিত করা শুরু করেন। তিনি যুক্তরাজ্য সংস্করণটিতে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসেন, এই পরিবর্তনগুলোর ফলে ম্যাগাজিনটি তার প্রথাগত খাপছাড়া অবস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাটির চেয়েও ভালো অবস্থানে চলে আসে। উইন্টারের আদর্শ পাঠিকারা ছিলেন সেই সমস্ত মহিলাই, সাভভি যাদের কাছে পৌঁছতে চেয়েছিলেন। ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেছিলেন, “একশ্রেণীর মহিলা রয়েছেন, যারা ব্যবসা এবং টাকার প্রতি আগ্রহী, যার কেনাকাটা করার সময় নেই। সে শুধু জানতে চায় কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে, কোথায় হচ্ছে এবং কীভাবে হচ্ছে?”

১৯৮৭ সালে উইন্টার নিউইয়র্কে ফিরে আসেন এবং হাউস এন্ড গার্ডেন-এর নিয়ন্ত্রণ নেন। প্রতিদ্বন্দ্বী আর্কিটেচারাল ডাইজেস্ট-এর তুলনায় এই পত্রিকাটির তেমন কাটতি ছিল না। কনডে ন্যাস্ট কর্তৃপক্ষের আশা উইন্টার সেটার উন্নতি করবেন। আবার, সেই পত্রিকাটিতেও তিনি কর্মীদের মধ্যে এবং কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসেন। প্রথম সপ্তাহেই দুই মিলিয়ন ডলারের ছবি ও আর্টিকেল বাতিল করে দেন। তিনি পত্রিকাটিতে অনেক বেশি ফ্যাশনের ছবি যুক্ত করেন, ফলে পত্রিকাটিকে সবাই “হাউস এন্ড গারমেন্ট” বলে ডাকা শুরু করে। তিনি অনেক সেলিব্রেটিকেও যুক্ত করেন যেটিকে ইন্ড্রাস্টিতে "ভ্যানিটি চেয়ার" বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

এই পরিবর্তগুলোর ফলে ম্যাগাজিনটি অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। একসময় পত্রিকাটির নাম হাউস এন্ড গার্ডেন থেকে সংক্ষিপ্ত করে শুধু "এইচজি" রাখা হয়, ফলে পুরনো অনেক গ্রাহক ভাবলেন তাদের কাছে নতুন একটি পত্রিকা এসেছে এবং সেটিকে সরিয়ে রেখে তারা আসলটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এই গ্রাহকদের বেশিরভাগই পরে তাদের সাবস্ক্রিপশন বাতিল করেন।পরে কিছু ফ্যাশন বিজ্ঞাপনদাতা আসার ফলে পুরনো বিজ্ঞাপনদাতারা ম্যাগাজিনটি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।

মাস দশেক পর তিনি ভোগ পত্রিকার যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণের সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। মিরাবেল্লার সময়ে ভোগ পত্রিকায় শুধু জীবনযাত্রা বিষয়ক দিকগুলোই বেশি প্রাধান্য পেত, ফ্যাশন ততটা পেত না। এলে পত্রিকার নতুন উপস্থাপিত যুক্তরাষ্ট্র সংস্করণটির সাথে হয়তো ভোগ পাল্লা দিয়ে পেরে উঠবে না এই ভেবে ইন্ডাস্ট্রির পর্যবেক্ষকরা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। কর্মীদের অনেককে পরিবর্তন করার পর তিনি পত্রিকার প্রচ্ছদ শৈলীতে পরিবর্তন নিয়ে আসেন।    

মিরাবেল্লার পছন্দ ছিল খুব পরিচিত মডেলদের আঁটসাঁট মুখমণ্ডলের ছবি, যা তিনি শুধু স্টুডিওর ভেতরেই শুট করতেন। উইন্টার প্রচ্ছদে মুখমণ্ডলের সাথে শরীরের ছবিও যুক্ত করেন এবং শুটগুলো নিতেন বাইরে, যা শুরুতে ডায়না ভ্রিল্যান্ডের মত সম্পাদকেরা করতেন। তিনি কম পরিচিত মডেলদের ব্যবহার করতেন। ব্যবহৃত পোশাকে অভিজাত ফ্যাশনের সাথে স্বল্প দামের কাপড়ও যুক্ত করতেন। ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে তার সম্পাদনায় প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয় যেটিতে তিনি ফটোগ্রাফার পিটার লিন্ডবার্গের তোলা ১৯ বছর বয়েসী মিশেলা বার্চুর ছবি ব্যবহার করেন। পোশাক হিসেবে বার্চু পড়েছিলেন ৫০ ডলারের একটি অনুজ্জল জিন্স এবং ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার খ্রিশ্চিয়ান ল্যাক্রোইক্সয়ের ডিজাইন করা ১০ হাজার ডলার মূল্যের একটি রত্নখঁচিত জ্যাকেট। এটি ছিল প্রথম কোন ভোগ প্রচ্ছদ মডেলের জিন্স পরিহিত ছবি (প্রথমে বার্চুর পড়ার কথা ছিল জ্যাকেটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি ঘাঘরা, কিন্তু তিনি একটু মোটা হওয়ার দরুন সেটি তার শরীরের সাথে মানানসই হয় নি)।  

২০১২ সালে এই সংখ্যাটি নিয়ে উইন্টার বলেন :

এটি ছিল ভোগের পূর্বের চর্চিত এবং তথাকথিত কাছ থেকে তোলা অনেক সাজসজ্জা এবং দামি গয়না ব্যবহার করা আভিজাত্যময় ছবিগুলো থেকে একেবারে আলাদা। এটি আগের সব নিয়ম ভেঙ্গে ফেলেছিল। প্রচ্ছদে ব্যবহৃত ছবিটিতে মিশেলা দেখতে সুশ্রী ছিল না, সে কারো দিকে তাকিয়েও ছিল না; তার চোখ দুটো প্রায় বন্ধ ছিল। তার চুলগুলো তার মুখের চারপাশে উড়ছিল। এটি দেখতে ছিল সহজ সাদামাটা, রাস্তায় একটি ছোট মুহুর্ত এবং এটিই ছিল সম্পূর্ণ বিষয়। এই বিষয়গুলো এমনভাবে ঘটার পর লোকজন নানা ভাবে এসব ব্যাখ্যা করেছিল : এটি ছিল উঁচু এবং নিচুর মধ্যে সংমিশ্রণ, মিশেলা গর্ভবতী ছিল। কিন্তু এগুলোর কোনটিই সত্য ছিল না। আমি শুধু সেই ছবিটি দেখেছি এবং পরিবর্তনের হাওয়া অনুভব করেছি। একটি প্রচ্ছদ ছবি হিসেবে আপনি এর চেয়ে আর বেশি কিছু আশা করতে পারেন না।                  

কয়েক বছর পর, উইন্টার স্বীকার করেন যে প্রচ্ছদের ওই ছবিটি পরিকল্পনা মাফিক করা হয় নি। ২০১১ সালে যখন ভোগের পুরো সংরক্ষণাগারের অনলাইন সংস্করণ করা হলো তখন উইন্টার বিবৃতি দিয়েছিলেন, “আমি শুধু বলেছিলাম চলো এটি চেষ্টা করে দেখি। এটি ছিল খুবই প্রাকৃতিক। আমাকে বলা হয়েছিল, ‘এটি নতুন, এটি আলাদা’। এই ছবিটিই প্রচ্ছদের কভারের জন্য কিনা এটা নিশ্চিত করতে ছাপাখানা থেকে ফোন করা হয়েছিল, প্রথমে তারা ভেবেছিল কোথাও একটি ভুল হয়েছে, ভুল করে এই ছবিটি এসেছে। ২০১৫ সালে তিনি বলেছিলেন, তাকে যদি বলা হয় তার সম্পাদিত কোন সংখ্যাটি তার প্রিয়, তিনি এই সংখ্যাটিই বেছে নেবেন। “এটি আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল এবং এটি ভোগে অনেক বড় একটি পরিবর্তন নিয়ে এসেছিল।”   

“উইন্টারের পদক্ষেপ জনমনে বিরাট প্রভাব তৈরী করেছিল - একজন সত্যিকারের মহিলা এভাবেই কাপড় পরিধান করেন (হাজার হাজার ডলার মূল্যের টি-শার্ট পরিধান ব্যতিক্রম ঘটনা)।” একজন সমালোচক বলেছিলেন, ১৯৮৯ সালের জুন সংখ্যাটির প্রচ্ছদের জন্য একজন মডেলের মেকআপ বিহীন, ভেজা  চুলের, শুধু একটি বাথরোব (স্নানের আগে বা পরে পরার জন্য ডিলা পোশাক) পরিহিতা ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ফটোগ্রাফার, মেকআপ আর্টিস্ট এবং কেশবিন্যাসকারী সবাই সেই মডেল বরাবর কৃতিত্ব পেয়েছিলেন। আগস্ট ২০১৪ সালে গিগি হ্যাডিড উইন্টারের প্রথম সংখ্যাটির খুব প্রশংসা করেছিলেন।

১৯৯০-এর দশক    [সম্পাদনা]

তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের পর ফ্যাশনের উপর গুরুত্বারোপ করেন, পত্রিকাটি অভিক্ষিপ্তাবস্থায় ফিরে আসে যা আগে ছিল ভ্রিল্যান্ডের অধীনে থাকার সময়। ভোগ উইন্টারের প্রধান সহকারী লিজ টিবেরিসকে প্রলুব্ধ করা প্রধান প্রতিপক্ষ এলে, হার্পার’স বাজারকে টেক্কা দিয়ে বাজারে তার অবস্থান ধরে রাখে। মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডচ ভোগের আগের সম্পাদক মিরাবেল্লাকে নিয়ে একটি পত্রিকা বের করেন। তার অন্য গুরুতর প্রতিপক্ষ ছিলেন ভ্যানিটি ফেয়ারের সম্পাদক টিনা ব্রাউন, পরবর্তিতে দ্যা নিউইয়র্কারের সাথেও তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠে। এই দশকের শেষের দিকে উইন্টারের আরও বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য কর্মী হার্পার’স বাজারে চলে যান।

উইন্টারের এক সহকর্মী কেট বেটসও তার প্রতিপক্ষ ছিলেন। কর্মীদের সাথে এক বৈঠকে তিনি উইন্টারের শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন কারণ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রকাশ্যে উইন্টারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। ম্যাগাজিনটির গতিপথ নিয়ে দুজনের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। বেটস ভাবলেন, ভোগের ফ্যাশন অংশটির জনপ্রিয়তা কমে গিয়েছে। অন্যদিকে উইন্টার ভাবলেন বেটসের আরোপিত “পপুলার কালচার” বিভাগটি পাঠকদের পছন্দ নয়। বেটস ফ্যাশন বিভাগের প্লাম সাইকসের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন, জনশ্রুতি মতে, তাকে তিনি “ভন্ড মূর্খ” বলে অবজ্ঞা করেছিলেন। বেটস পরে পদত্যাগ করেন। বেটস দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেছিলেন যে, উইন্টার তাকে কখনো বাচ্চাদের উপহার পর্যন্ত পাঠান নি। কিন্তু উইন্টার এক সম্পাদকীয়তে বেটসের প্রশংসা করেন এবং তাকে শুভ কামনা জানান।

২০০০-এর দশক[সম্পাদনা]

বেটস ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে ভোগে কাজ করা সম্পাদকদের একজন যিনি নতুন শতকের কাছাকাছি সময়ে এসে পদত্যাগ করেছিলেন। বছর খানেক পর ভোগের সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আরেক সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী প্লাম সাইকস চিত্রনাট্য এবং শহরের অভিজাত শ্রেনীদের নিয়ে লেখা তুমুল বিক্রি হওয়া উপন্যাসগুলো রচনায় মনোযোগ দেয়ার জন্য ভোগ ত্যাগ করেন। আরও বেশ কিছু সম্পাদক অন্য প্রকাশনায় ভালো পদের চাকরির সুযোগ পাওয়ায় ভোগ ত্যাগ করেন। তাদের জায়গায় আসা বাকিরাও যখন সেখানে বেশি দিন টিকতে পারলেন না, সম্পাদনা পর্ষদ তখন ঢেলে সাজানো হলো।   

Anna Wintour wearing sunglasses as she walks along a street in Germany
উইন্টার ২০০৬ সালে জার্মানিতে

২০০৪ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যাটি ছিল ৮৩২ পৃষ্ঠা, কাটলার’স ডকুমেন্টারীর ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর সংখ্যাটি প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত একটি মাসিক ম্যাগাজিন হিসেবে এটি ছিল সর্ববৃহৎ। উইন্টার ভোগের বাকি তিনিটি প্রকাশনা টিন ভোগ, ভোগ লিভিং এবং মিন’স ভোগ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন। টিন ভোগ বিজ্ঞাপনের জন্য বেশি পৃষ্ঠা বরাদ্দ রাখে এবং পূর্বের প্রকাশিত এলে গার্ল এবং কসমো গার্লের চেয়ে বিজ্ঞাপন থেকে বেশি মুনাফা অর্জন করে। মিন’স ভোগের প্রথম প্রকাশিত সংখ্যাটির পৃষ্ঠা ছিল ১৬৪টি, প্রথম প্রকাশিত সংখ্যা হিসেবে কনডে ন্যাস্টের ইতিহাসে যা সর্ববৃহৎ। ম্যগাজিন প্রকাশনায় এমন সফল-সাহসী পদক্ষেপের জন্য এডএজ তাকে “বছরের সেরা সম্পাদক” উপাধিতে ভূষিত করে।   

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০০৮ সালের "বার্থডে অনার্সে" তাকে "অফিসার অফ দ্যা অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পিয়ারে" নিযুক্ত করেন।  

অর্থনৈতিক মন্দার জন্য সেই বছরটি মোটের উপর খুব কঠিন ছিল। ফেব্রুয়ারির মিলান শো’তে এলোমেলো অংশগ্রহনের পর, লেব্রন জেমস এবং গিসেল বান্ডচেনকে নিয়ে করা এপ্রিল সংখ্যাটির প্রচ্ছদ নিয়ে জাতিগত বিভেদের অভিযোগ ওঠে। 

পরের মাসে তিনি কার্ল ল্যাজারফেল্ডের ডিজাইন করা অত্যন্ত দামি একটি গাউন পরে একটি কস্টিউম প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেন, তার সেই পোশাকটিকে বলা হয়েছিল “২০০৮ সালের সবচেয়ে খারাপ ফ্যাশনের পোশাক”।

খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে না পারায় “ভোগ লিভিংয়ের” প্রকাশনা অনিদৃষ্ট সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হয় এবং মিন’স ভোগের বছরে দুটি করে সংখ্যা প্রকাশ করা শুরু হয়; ওমেন ম্যগাজিনের অউটসার্ট আথবা ক্রোড়পত্র হিসেবে। সেই বছরের শেষের দিকে, ডিসেম্বর সংখ্যাটির প্রচ্ছদে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে নিয়ে করা জেনিফার অ্যানিস্টোনের একটি অপমানজনক মন্তব্য বেশ বড় করে ছাপা হয়, যাকে তিনি আগে থেকেই পছন্দ করতেন না। মিডিয়া পর্যবেক্ষকগণ জল্পনা শুরু করলেন যে উইন্টার খেই হারিয়ে ফেলেছেন।

A black-and-white photo of Wintour's head with "Save Anna" in white on black in a banner below.
তার অবসর নেয়ার গুজবের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি “সেইভ আনা” লোগো

২০০৮ সালে গুজব শুরু হয় যে উইন্টার অবসর গ্রহণ করবেন এবং ভোগের ফরাসী সংস্করণের সম্পাদক ক্যারিন রোইটফেল্ড তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। জনশ্রুতি মতে রাশিয়ার জেন্টলমিন’স কোয়ার্টার্লি’র একজন সম্পাদক ভোগের রাশিয়ান সংস্করণের সম্পাদক অ্যালিনা ডোলেটসকায়াকে উপস্থাপন করেন আমেরিকান ভোগের সম্পাদক হিসেবে। কনডে ন্যাস্ট দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় পূর্ণাঙ্গ পৃষ্ঠা জুড়ে দেয়া একটি বিজ্ঞাপনে তার বিবরণ তুলে ধরে প্রতিক্রিয়া জানায়।

সেই পত্রিকাতেই ক্যাথি হোরিন একটি নিবন্ধে লেখেন যদিও উইন্টার খেই হারান নি কিন্তু একজন পাঠক হিসেবে পড়ে মনে হয় পত্রিকাটি “পানসে এবং অগ্রকথনযোগ্য” হয়ে গিয়েছে। হোরিন আরও যোগ করেন, “সাম্প্রতিক বছর গুলোতে ভোগ পড়ে খুব বিষ্ময় জাগে, ‘ভিলা ইন টুসকানি’ প্রতিবেদনটি ছিল অদ্ভুদ -চটুলতাযুক্ত। ম্যাগাজিনটি বিশ্রীভাবে উপস্থাপন হচ্ছে এবং ক্রমে পিছন দিকে সরে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।  

২০০৯ সালের দিকে উইন্টার মিডিয়ায় তার উপস্থিতি বাড়াতে থাকেন। সিস্কটি মিনিটস প্রোফাইলে তিনি বলেন যে, তিনি অবসর নেবেন না। “বর্তমান অবস্থানে থাকার এই সময়টি আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয়, এখন আমার সেরাটা না দেয়া এবং ভিন্নতর সময়ের দিকে পরিচালিত না করা হবে একধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। সেপ্টেম্বর মাসে দ্যা ওয়ার রুমের প্রযোজক আর.জে কাটলার তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন দ্যা সেপ্টেম্বর ইস্যু প্রামাণ্য চিত্রটি।

ক্রিয়েটিভ পরিচালক গ্রেস কডিংটনের সাথে তার মতানৈক্যের বিষয়টি এখানে প্রাধান্য পায়। প্রামান্য চিত্রটি প্রচারণার জন্য তিনি লেট শো উইথ ডেভিড লেটারম্যানে অংশ নেন, সেখানে অদম্য অর্থনীতিতে ফ্যাশনের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। দ্যা আমেরিকান সোসাইটি অফ ম্যাগাজিন ইডিটরস ২০১০ সালে তাকে হল অফ ফেম-এ যুক্ত করে।

২০১০-এর দশক  [সম্পাদনা]

২০১৩ সালে কনডে ন্যাস্ট তাকে তাদের কোম্পানীর ম্যাগাজিনগুলোর শিল্প নির্দেশক পদে যুক্ত করে। তিনি সি নিউহাউসের কিছু দায়িত্ব গ্রহণ করেন, কোম্পানীটির দীর্ঘদিনের চেয়ারম্যান তখন ৮০ বছরে পা দিয়েছেন, তিনি কনডে ন্যাস্টের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সেটির নিয়ন্ত্রক কোম্পানী অ্যাডভান্স পাবলিকেশন্স তত্ত্ববধানের সাথে যুক্ত হন। কোম্পানীর একজন মুখপাত্র দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন এই পদটি সৃষ্টি করা হয়েছিল উইন্টারকে রক্ষা করার জন্য। তিনি এটিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন “এর বিস্তারে আমি যা করছি, বৃহত্তর পরিসরে করছি।”

২০১৪ সালে মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট উইন্টারের নামানুসারে তাদের নাম পরিবর্তন করে নাম রাখে আনা উইন্টার কস্টিউম সেন্টার, ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা সে বছরের মে মাসে সেটি উদ্বোধন করেন। সে বছরেই উইন্টার ওভ্যাশন টিভিতে সম্প্রচারিত হুলু ওয়েব সিরিজ দ্যা ফ্যাশন ফান্ডে অভিনয় করেন। তিনি ফোর্বসের জরিপে বিশ্বের ৩৯তম ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় স্থান পান।

২০১৬ সালে, উইন্টারের জীবন অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডা মুক্তির ১০ বছর পূর্তিতে দ্যা রিঙ্গার প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সিনেমায় মিরান্ডা প্রিস্টলির চরিত্রায়ন কীভাবে তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে।

এর মধ্যে একটি খবর প্রকাশিত হয় যে, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারী ক্লিনটন বিজয়ী হলে উইন্টারকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত করা হতো। দ্যা নেশন নামে একটি আমেরিকান ম্যাগাজিনের ২০১৭ সালের জানুয়ারীর রিপোর্টে বলা হয় সেই খবরটি নিতান্তই একটি গুজব মাত্র। 

২০১৭ সালের মে মাসে, বাকিংহাম প্রাসাদের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতা এবং ফ্যাশনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ উইন্টারকে "ড্যাম কমান্ডার অফ দ্যা অর্ডার অফ দ্যা ব্রিটিশ এম্পিয়ার" খেতাবে ভূষিত করেন।

ফ্যাশন শিল্পে বেনিয়ান শক্তি      [সম্পাদনা]

কয়েক বছরের মধ্যে ফ্যাশনে নতুন ধারা তৈরী এবং নতুন ডিজাইনের উদ্ভব ঘটানো উইন্টারকে ফ্যাশন জগতের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে। “তুমি কি আমাকে এটা নিয়ে উইন্টারের কাছে যেতে বলছো” অধঃস্থনদের সাথে সংবাদপত্রের লেখকদের মতপার্থক্য হলে তাদের প্রায়ই একথা শুনতে হতো। দ্যা গার্ডিয়ান তাকে নিউইয়র্ক সিটির “বেসরকারী মেয়র” বলে ডাকা শুরু করে। তিনি খ্রিশ্চিয়ান ডিওরের মত ফ্যাশন হাউসকে জন গ্যালিয়ানোর মত তরুণ এবং নবীন ফ্যাশন ডিজাইনারকে নিয়োগ দিতে উৎসাহিত করেন। তার প্রভাব ফ্যাশনের বাইরেও ছড়িয়ে পরে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্ররোচিত করেন যেন মার্ক জ্যাকব প্লাজা হোটেলের একটি নৃত্যশালা একটি শো’য়ের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। সেই সময় জ্যাকব ও তার অংশীদারের টাকার সমস্যা ছিল। তিনি সম্প্রতি ব্রোকস ব্রাদার্সকে রাজি করিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন থম ব্রাউনকে নিযুক্ত করান। ভোগের অনুগ্রহভাজন প্লাম সাইকস নিউইয়র্কের অভিজাত ফ্যাশন তার লেখার বিষয়বস্তু হিসেবে ব্যবহার করে উপন্যাস লিখে সফল একজন ঔপন্যাসিক হন।

২০০৫ সালে তার বার্ষিক বেতন ছিল ২ মিলিয়ন ডলার। এছাড়াও ভাতা হিসেবে তাকে আরো অনেক কিছু দেয়া হয়। নিউইয়র্কে অথবা এর বাইরে চলাফেরার জন্য তাকে ড্রাইভারসহ একটি মার্সেডিস-এস-ক্লাস দেয়া হয়, কেনা কাটা করার জন্য তাকে দেয়া হয় ২ লক্ষ ডলার, ইউরোপের ফ্যাশন শো গুলোতে অংশ নেয়ার সময় হোটেল রিটজ প্যারিসে তাকে কোকো চ্যানেলযুক্ত সুইট দেয়া হয়। কনডে ন্যাস্টের প্রেসিডেন্ট এস.আই নিউহাউস তাকে ১.৬ মিলিয়ন ডলার সুদ বিহীন লোন দেন যেন তিনি গ্রীনউইচ ভিলেজে একটি বাড়ী কিনতে পারেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৮৪ সালে তিনি ডেভিড শ্যাফারকে বিয়ে করেন। তাদের দুই সন্তান চার্লস (চার্লি) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৫ সালে এবং ক্যাথরিন (যিনি বী নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৭ সালে। ২০০৬ সালে দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকায় একটি অনিয়মিত চিঠিতে ক্যাথরিন লেখেন, ফ্যাশনে তিনি তার মাকে অনুসরণ করেন না। ১৯৯৯ সালে ডেভিড শ্যাফারের সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সংবাদপত্র এবং গসিব কলামিস্টরা দাবী করেন বিনিয়োগকারী শেলবি ব্রায়ানের সাথে প্রণয়ে জড়ানোর ফলে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। একটি মন্তব্যে তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার বন্ধুরা বলেন ব্রায়ান তাকে সমৃদ্ধ করেছেন।

উইন্টার একজন জনহিতৈষী ব্যক্তি। তিনি নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টের একজন ট্রাষ্টি, সেখানে তিনি মিউজিয়ামের কস্টিউম ইন্সটিটিউটের জন্য ৫০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন। অজ্ঞাত ফ্যাশন ডিজাইনারদের উৎসাহ, পরামর্শ এবং সমর্থন দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য...। ১৯৯০ সাল থেকে তিনি অনেক উচ্চ বিত্তদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দাতব্য প্রতিষ্ঠান এআইডিএস’র জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন সকাল ৬ টার পূর্বেই তিনি ঘুম থেকে উঠেন, টেনিস খেলেন এবং চুল পরিচর্যা এবং মেকআপের কাজ শেষ করে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই ভোগের অফিসে চলে আসেন। কর্মসূচি শুরু হওয়ার পূর্বে যথা সময়েই তিনি ফ্যাশন শো গুলোতে উপস্থিত হন। শো’য়ের জন্য অপেক্ষা করার সময়গুলোতে তিনি ফোন দেয়া এবং নোট করার কাজগুলো করে থাকেন। বিবিসি’র প্রামাণ্যচিত্র "বস ওমেন" অনুযায়ী তিনি কোন পার্টিতে সাধারণত ২০ মিনিটের অধিক উপস্থিত থাকেন না এবং প্রতি রাতে ১০:১৫ মিনিটের মধ্যে ঘুমোতে যান। সম্পাদনার প্রথম দিন থেকেই তিনি ম্যাগাজিনের ভিজ্যুয়াল কন্টেন্টগুলো অসাধারণ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন।

পত্রিকার লেখা নিয়ে তিনি খুব একটা মাথা ঘামান না। তার কর্মীদের মতে পত্রিকায় প্রকাশের আগে তিনি সব লেখা পড়েন, কিন্তু সাবেক সম্পাদক রিচার্ড স্টোরি দাবী করেছেন তিনি খুব কমই পড়েন, পড়লেও পড়েন ভোগের আর্ট এবং বই পর্যালোচনা বিষয়ক আর্টিকেলগুলো। তার ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি প্রায়ই তার জন্য বরাদ্য লেখাগুলো অন্যের জন্য রেখে দিতেন, তার সাবেক সহকর্মীদের দাবী লেখালেখির ক্ষেত্রে তার দক্ষতা খুব সামান্য। এখন তিনি প্রতি মাসে সম্পাদকীয়ের জন্য খুব অল্প পরিমাণে লেখেন। তার তিনটি পূর্নকালীন দায়িত্ব রয়েছে কিন্তু এরপরেও তিনি মাঝে মধ্যে নিজে ফোনের উত্তর দিয়ে অবাক করে দেন। দুপুরে খাওয়ার সময় ছাড়া তিনি সাধারণত কখনো তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন না, যেখানে তিনি একটি মাংসের ফালি খেয়ে থাকেন। উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া তার দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। তার হার্পারস এন্ড কুইনের সহকর্মীরা জানান, মধ্যাহ্ন ভোজে প্রতিদিন তিনি ধূমায়িত স্যামন মাছ এবং ডিম ভুনা খেতেন, তিনি আর কিছু খেতেন না।   

ফ্যাশনে তার ব্যক্তিগত পছন্দ[সম্পাদনা]

তার অবস্থানের জন্য তাকে অনেক যাচাই বাছাই করে কাপড় পরতে হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি ফ্যাশনেবল টি-শার্ট এবং ডিজাইন করা জিন্স পরতেন। ভোগে ক্রিয়েটিভ পরিচালক হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর তিনি তার পোশাক পরিবর্তন করে মিনি স্কার্টের সাথে চ্যানেল সুইট পড়া শুরু করেন। তিনি তার দুটি গর্ভকালীন সময়েও সেগুলো পড়েছিলেন। ২০১৩ সালের মার্চে গার্ডিয়ানের “পঞ্চাশোর্ধ সেরা-পোশাকীদের ৫০ জনের একজন” হিসেবে তিনি তালিকায় স্থান পান।

Anna Wintour wearing sunglasses and a grey-and-white striped top in a dark background looking to the right
২০০৫ সালের একটি শো তে সানগ্লাস পরিহিতা উইন্টার

জীবনীকার জেরি ওপেনহাইমারের মতে, তিনি সবসময় যে সানগ্লাস পরে থাকেন তা মূলত এক ধরনের সংশোধক্ষম লেন্স, বাবার মত তার চোখের সমস্যা হওয়ায় তিনি তা পড়েন। তার একজন সাবেক সহকর্মী স্মরণ করেন, সেই সানগ্লাস না থাকলে তিনি কেমন চঞ্চল হয়ে উঠতেন। তার বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার পর এবং ম্যাগাজিন সম্পাদনার দায়িত্ব নেয়ার পর, তার একজন সহকর্মী সম্পাদক এবং বন্ধু বলেছিলেন যে “তিনি তার চশমার আড়ালে নিজেকে আর লুকিয়ে রাখেন না।"

রাজনীতি  [সম্পাদনা]

২০০০ সালে হিলারি ক্লিনটনের সিনেট নির্বাচন এবং ২০০৪ সালে জন কেরির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় থেকে উইন্টার ছিলেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থক এবং বারাক ওবামার ২০০৮ এবং ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি “বান্ডলার” হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ এবং ২০১২ সালে তিনি সারাহ জেসিকা পার্কারের সাথে তহবিল সংগ্রহকারীদের সহযোগিতা করেছিলেন। ২০১৩ সালে ভোগের সাবেক একজন যোগাযোগ পরিচালক যখন পদত্যাগ করেন, উইন্টারকে নিয়ে গুজব ওঠে যে তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত কাউকে নিয়োগ দেয়ার জন্য খুঁজছেন। এরপর দ্রুত তিনি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির সাবেক তহবিল সংগ্রহকারী এবং ওবামার প্রথম ক্যাম্পেইনের হিলডি কুরিককে নিয়োগ দেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন জানান, ক্লিনটনের ধনী দাতাদের একজন হিসেবে তিনি তার গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে তাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেন।

দ্য ডেভিল ওয়ারস প্রাডা    [সম্পাদনা]

উইন্টারের সাবেক সহকারী লওরেন ওয়েজবার্গার ভোগ ছেড়ে রিচার্ড স্টোরির সাথে ডিপার্টচারে যুক্ত হন। একটি লেখক প্রকল্পের পর তার পরামর্শে তিনি দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডা উপন্যাসটি লেখেন। উইন্টারের চরিত্র এটিতে ভালোভাবে চিত্রিত হবে এটি প্রকাশের পূর্বে এ বিষয়ে তিনি আশাবাদী ছিলেন। উইন্টার নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “আমি ভালো উপন্যাস পড়তে সবসময়ই উপভোগ করি। আমি এটি পড়বো কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিই নি।” যখন সবার ধারণা হলো যে উপন্যাসটির চরিত্র মিরান্ডা প্রিস্টলি এবং এর প্রেক্ষাপট সাজানো হয়েছে উইন্টার এবং ভোগ ম্যাগাজিনকে নিয়ে তখন লেখিকা ওয়েজবার্গার দাবী করেন যে তিনি শুধু তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নয় তার বন্ধুদের অভিজ্ঞতার আলোকে এই বইটি লিখেছেন। উপন্যাসটির শেষের দিকে উইন্টারের উপস্থিতি রয়েছে, যেখানে তিনি বলেন, তিনি এবং মিরান্ডা একে অপরকে পছন্দ করেন না।

উপন্যাসে উইন্টারের সাথে মিরান্ডার বেশ কিছু জায়গায় মিল রয়েছে, যেমনঃ তিনিও ব্রিটিশ এবং তারও দুই সন্তান, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে তার বড় অবদানের কথাও সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে। মিরান্ডা খুবই অত্যাচারী, তিনি তার অধস্তনদের কাছে অসম্ভব আবদার করেন। কাজ করার জন্য তাদের তিনি প্রয়োজনীয় কোন তথ্য এবং সময় দেন না কিন্তু ব্যর্থ হলে তাদের তীব্রভাবে ভৎসনা করেন।

বিটসকে হার্পার’স থেকে বহিস্কার করার দুবছর পর তার সহকর্মীরা বলেন, তিনি উইন্টারের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেছিলেন, দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউতে খুব রূঢভাবে এটি বর্ণনা করা হয়েছে।

"ভোগে আমি দুই বছর কাজ করেছি; আনা উইন্টারকে পরামর্শদাতা হিসেবে পেয়েছি, আমি বলতে পারি যে ওয়েজবার্গার একজন শয়তানের অধীনে ৩২,৫০০ ডলারের জন্য জান দিয়ে কাজ করার ফলে কিছু শিখতে পেরেছেন।"

মিরান্ডার কিছু ভালো গুণাবলীও ছিল, উপন্যাসের মূল চরিত্র অ্যাণ্ড্রিয়া স্যাকস উল্লেখ করেছেন, ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদনার সিদ্ধান্তগুলো তিনি নিজে নিতেন এবং এই কাজগুলো অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষনতার সাথে করতেন। ২০০৮ সালে ওয়েজবার্গার বলেছিলেন,” আমি এক সেকেন্ডের জন্যও জানতাম না যে উইন্টারের সহকারী হিসেবে কাজ করা কত্তো বড় একটি সুযোগ ছিল”।

চলচ্চিত্রে রুপায়ন     [সম্পাদনা]

এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রটি শুধু একমাত্র চলচ্চিত্র নয় যা উইন্টারের থেকে কিছু ধার নিয়েছিল। দ্যা ইনক্রেডিবলসে এডনা মোডসেরও একই চুলের গঠন লক্ষ্য করা যায়। জনি ডেপ বলেছেন, চার্লি এন্ড চকলেট ফ্যাক্টরী সিনেমার উইলি ওনকা চরিত্রটির চালচলন অংশত উইন্টার দ্বারা অনুপ্রানীত। ট্রেডমার্ক বব কাট চুল এবং সানগ্লাস - আগলি বিটি টেলিভিশন সিরিজের ফেয় সোমারস চরিত্রটিও উইন্টার দ্বারা অনুপ্রাণিত।  

২০০৫ সালে সিনেমাটি নির্মানের সময় উইন্টার প্রধান ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে ডিজাইনারদের এই বলে হুমকি দিয়েছিলেন যে, তারা যদি সিনেমাটিতে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন তবে ভোগ তাদের রক্ষা করবে না। একজন মুখপাত্রের মাধ্যমে তিনি অস্বীকার করেছেন যিনি বলেছিলেন যে তিনি “ফ্যাশনকে সমর্থন করে” এমন যে কোন বিষয়ে আগ্রহী। সিনেমাটিতে অনেক ডিজাইনারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। একমাত্র ভ্যালেন্টিনো গারাভানি একটি বিশেষ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন।  

২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিনেমাটি মুক্তি পায় এবং ব্যবসায়িক ভাবে সফলতা অর্জন করে। উইন্টার সিনেমাটির প্রিমিয়ারে প্রাডা পরে উপস্থিত হয়েছিলেন। ছবিতে অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপ পুরোপুরি মূল (এবং আরও সহানুভূতিশীল) চরিত্র হিসেবে সমালোচকদের প্রশংসা পাওয়ার জন্য বইয়ের মিরান্ডা চরিত্রটি থেকে আলাদা একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। (সিনেমায় স্ট্রিপের অফিস উইন্টারের অফিসের মতই ছিল যা উইন্টার পুনরায় সাজিয়েছেন বলে জানা গেছে)।

উইন্টার জানিয়েছেন যে সিনেমাটি সম্ভবত সরাসরি ডিভিডিতে যাবে। এটি বিশ্বব্যাপি ৩০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। পরে ২০০৬ সালে সিনেমাটি ডিভিডিতে মুক্তির দিনে বারবারা ওয়ালটারের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উইন্টার বলেন, “সিনেমাটি খুবই উপভোগ্য, ফ্যাশনকে গ্ল্যামারাস, আকর্শনীয় এবং উপভোগ্য করে উপস্থাপন করা ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়, আমি এটি থেকে ১০০% পেছনে ছিলাম।”   

জীবনিকার ওপেনহাইমার ধারণা করেছিলেন যে দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডা সিনেমাটি উইন্টারের পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

তিন বছর পর যখন দ্যা সেপ্টেম্বর ইস্যু প্রকাশিত হলো সমালোচকরা সেটিকে শুরুর দিকের কাল্পনিক সিনেমাটির সাথে তুলনা করেন। অনেকেই মেরিল স্ট্রিপের মিরান্ডা চরিত্রটির সাথে তার সাদৃশ্য পর্যালোচনা করেন এবং প্রশংসা করেন সিনেমায় আসল মানুষটিকে দেখানোর জন্য। ম্যানোলা ডার্গিস দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন যে মিরান্ডা চরিত্রটি উইন্টারকে মানবিক করে তুলতে সাহায্য করেছে এবং প্রামাণ্যচিত্রটি সেটি বহাল রেখেছে।

সমালোচনা  [সম্পাদনা]

২০০৫ সালে, দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডা প্রকাশের দুবছর পর জীবনীকার ওপেনহাইমার মন্তব্য করেন : এতে ভোগ সম্পাদকের শীতল জীবন এবং উষ্ণ সময় প্রকাশিত হয়েছে। এটি একজন সত্যিকারের মহিলাকে একইভাবে চিত্রিত করেছে।

ব্যক্তিত্ব[সম্পাদনা]

যারা তাকে ভালভাবে চেনেন, এমনকি তার কাছের বন্ধুদের সাথেও উইন্টার আবেগত ভাবে দূরত্ব বজায় রাখেন। গার্ডিয়ান লিখেছে, “ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে আনা উইন্টার আনা উইন্টার হওয়া বন্ধ করে দিয়ে ‘আনা উইন্টার’ হয়ে যান, একটি সুদৃশ্য ভবনের বর্ধিত অংশের মত। তার ব্যক্তিত্বের বেশিরভাগটাই তিনি জনসাধারণের কাছে অবরুদ্ধ করে রাখেন।” কডিংটন বলেছেন, “আমার মনে হয় তিনি সহজগম্য না হওয়াটা উপভোগ করেন, তার অফিস একটি ভয়ঙ্কর জায়গা। তার ডেস্কে যাওয়ার আগে আপনাকে অফিসে প্রায় এক মাইল পথ হাঁটতে হবে এবং আমি নিশ্চিত এটি ইচ্ছাকৃত।” ভোগ প্রকাশক টম ফ্লোরিও বলেছেন, “আমি তাকে জনগনের কাছে সহজগম্য হতে দেখি নি, তার সহজগম্য হওয়ার প্রয়োজনও ছিল না।”

২০১০ সালে ট্রিবেকা ফিল্ম ফেস্টভালের ভ্যানিটি ফেয়ার পার্টিতে উইন্টার

তিনি বলেছিলেন তিনি তার বাবা চার্লসের অনুরাগী ছিলেন, দুর্বোধ্য হওয়ার জন্য যাকে সবাই “চিল্লি চার্লি” বলে ডাকতেন। সাবেক সহকর্মীরা ওপেনহাইমারকে তার একই রকম নির্লিপ্ততার কথা বলেছেন। তিনিও তার ক্রোধের উদ্বায়ী বহিঃপ্রকাশের জন্য পরিচিত ছিলেন এবং এ দুটি কারণে ফলশ্রুতিতে তাকে সবাই "নিউক্লিয়ার উইন্টার" বলে ডাকা শুরু করে। তিনি এটি খুবই অপছন্দ করতেন, দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসকে তিনি বলেছিলেন এটি আর ব্যবহার না করতে। দ্যা সেপ্টেম্বর ইস্যুতে তিনি স্বীকার করেছেন, মাঝে মধ্যে তিনি অত্যন্ত রেগে যান।

তার এক বন্ধু দ্যা অবজার্ভারকে বলেছেন, “অতীতে তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ানো অনেক মানুষের প্রতি তিনি রূঢ ছিলেন।” “তিনি ছোট কথা বলতেন না। তিনি তার সহকারীর সাথে কখনো বন্ধুত্ব করতেন না।” তার একজন সাবেক সহকারী জানিয়েছেন, “উইন্টারের সাথে লিফটে চড়া খুবই ভীতিকর।” ভোগ অফিসে উইন্টার দ্বারা অরোপিত অলিখিত নিয়মগুলো তার সাথে জুনিয়র কর্মীদের কথা বলা নিষেধ করে। একবার উইন্টারের একজন সহকারী এক সম্পাদককে তিরস্কার করেছিলেন, কারণ তিনি লিফটে উইন্টারকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। (তিনি এটিকে অতিরঞ্জন বলে অভিহিত করেন।) একজন পরিদর্শক সাংবাদিক দেখলেন যে, একজন জুনিয়র স্টাফ সদস্য দৃশ্যত আতঙ্কিত হয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন যখন তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তাকে উইন্টারের সাথে লিফটে থাকতে হবে। একবার এক জুনিয়র সম্পাদক উইন্টারের প্রবেশ পথটি হলওয়েতে দেখে তাকে সহায়তার প্রস্তাব না দিয়েই চলে যান এবং পরে তাকে বলা হয়েছিল যে “তিনি একেবারে সঠিক কাজটি করেছেন”।

এমনকি তার বন্ধুরাও স্বীকার করেছেন তার উপস্থিতিতে তারা কিছুটা শিহরণ অনুভব করেন। বারবারা এমিল বলেছেন, “উইন্টারের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল, যখনই আমরা মিলিত হতাম আমাকে একধরনের শীতল আতঙ্ক মোকাবিলা করতে হতো।” কডিংটন বলেছেন, “আমি জানি কখন তাকে নাড়ান বন্ধ করতে হবে, তিনি জানেন না কখন আমাকে নাড়ান বন্ধ করতে হবে।”

তাকে একজন পারফেকশনিস্ট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে যিনি নিয়মিতভাবে নির্বিচারে অধস্তনদের কাছে অসম্ভব কিছু দাবী করেন। একবার তিনি এক জুনিয়র কর্মীকে একজন ফটোগ্রাফারের আবর্জনার স্তূপ থেকে একটি ছবি আনতে বলেছিলেন যা তিনি তাকে দিতে অস্বীকার করেন। দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডাতে এমিল বলেন, “ধারণা করা হয় উইন্টার কোন কিছু করার ক্ষেত্রে ‘শীগ্রই’ না ‘এখনই’-তে বিশ্বাসী।” “উইন্টার যা চান তা অবিলম্বে চান।”  দীর্ঘদিনের এক সহকারী বলেন, “উইন্টার আপনাকে পানিতে ফেলে দেবেন, আপনি ডুববেন না সাঁতার কাটবেন সেটা আপনার বিষয়।”

২০০০-এর দশকে ব্রায়ানের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর কাজে তিনি একটু নরম হন। “এমনকি যখন তিনি খারাপ মেজাজে থাকেন তখনও তার আলাদা অঙ্গভঙ্গি থাকে” কেউ একজন “উইন্টার ওয়াচার” হিসেবে নিউইয়র্ক টাইমসকে একথা বলেন।

পশুর পশম ব্যবহারে তার অবস্থান[সম্পাদনা]

তিনি প্রায়ই পেটা’র মত প্রাণী অধিকার রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছেন। তারা ভোগে পশমের ব্যবহার, পশমের পক্ষে তার সম্পাদকীয় এবং পশু অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ক প্রদত্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের অস্বীকৃতি জনানোর জন্য তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিল। অব্যাহত ভাবে তিনি ম্যাগাজিনের ছবিগুলোতে পশমের ব্যবহার করতে থাকেন এবং বলেন এগুলো পরিধানে দোষের কিছু নেই। ভোগে তার সহকর্মী টম ফ্লোরিও বলেন, “১৯৯০ সালের শুরুতে প্রচ্ছদে ছাপানোর আগ পর্যন্ত পশমের তৈরি পোশাক কেউ পরে নি।” “তিনি গোটা ইন্ডাস্ট্রিকে প্রজ্বলিত করেছেন।”

একবার আন্দোলনকারী কর্মীদের দ্বারা তিনি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, সে সময় তিনি তার “গহনা হারিয়ে ফেলেছিলেন”। ২০০৫ সালের অক্টোবরে প্যারিসে ক্লোয়ি শো’র জন্য অপেক্ষা করার সময় তার উপর কেউ একজন খাবারের থালা নিক্ষেপ করেছিল।  

আরেকবার এক রেস্টুরেন্টে এক আন্দোলনকারী তার খাবারের প্লেটে একটি মৃত র‍্যাকন ফেলে দিয়েছিলেন; তিনি ওয়েটারকে তা সরিয়ে নিতে বলেন। একবার কোম্পানির এক বার্ষিক ক্রিস্টমাস পার্টির সময় কন্ডে ন্যাস্ট অফিসের বাইরে পশুঅধিকার আন্দোলনকারীরা আন্দোলন করছিল, তখন উইন্টার এবং ভোগ প্রকাশক রন গ্যালোটি একটি রোস্ট করা গরুর মাংসের প্লেট পাঠিয়ে তাদের প্রতিবাদের পাল্টা প্রতিবাদ করেন।

পশু অধিকার সংরক্ষণ গোষ্ঠীর বাইরে অন্যরাও পশমের বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। ফ্যাশন জার্নালিস্ট পিটার ব্রাউনস্ট্রেইন তার একটি ইসতেহারে লিখেছিলেন যে, তিনি বড় ইঁদুর দ্বারা রক্ষিত একটি নরকে যাবেন, সেটা এত উত্তপ্ত হবে যে তাকে আর পশম পরার প্রয়োজন হবে না। পামেলা অ্যান্ডারসন ২০০৮ সালের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, উইন্টার-ই হচ্ছেন সেই জীবিত ব্যক্তি যাকে তিনি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন, “কারণ তিনি তরুণ ডিজাইনার এবং মডেলদের পশম ব্যবহার এবং পরার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।”

আভিজাত্য[সম্পাদনা]

উইন্টারের সম্পাদকীয়তার আর একটি সাধারণ সমালোচনা হলো ভোগের প্রচ্ছদে সেলিব্রেটিদের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং তাদেরকে তার মানদণ্ডগুলো পূরণ করতে বাধ্য করা। তিনি প্রচ্ছদের ছবির জন্য অপরা উইনফ্রেকে তার ওজন কমানোর কথা বলেছিলেন। অনুরুপভাবে, হিলারী ক্লিনটনকে বলেছিলেন নীল জ্যাকেট না পরার জন্য। ২০০৫ সালে অ্যাংলোম্যানিয়া উদযাপনের সময় উইন্টার সেখানে উপস্থিত জেনিফার লোপেজ, কেট মোস, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডায়ান ফন ফারস্টেইনবার্গের মত ব্যক্তিত্বদের পোশাক ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করে দিয়েছিলেন। ডাব্লুডাব্লুডির প্রকাশক প্যাট্রিক ম্যাকার্থি বলেছেন, “আমার মনেহয় না ভ্রিল্যান্ডের মধ্যে এ ধরনের কোন একাগ্রতা ছিল।”

শৌখিন ব্যক্তি ও সেলিব্রেটিদের পোশাক ধার দেয়ার জন্য তিনি ডিজাইনারদের প্ররোচিত করেন, যারা পরে শুধু ভোগ নয় পিপল, ইউএস উইকলী’র মত সাধারণ-আগ্রহের ম্যাগাজিনগুলোতে সেই পোশাক পরে ছবি তুলবেন, যা ক্রেতারা কি চায় তা প্রভাবিত করে। ইন্ডাস্ট্রির কেউ কেউ মনে করেন উইন্টার এটির উপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছেন, বিশেষত যেহেতু তিনি নিজে কাপড় তৈরি ও উৎপাদনের সাথে জড়িত নন। স্টাইল ডট কমের নির্বাহী ফ্যাশন পরিচালক ক্যান্ডি প্রাটস প্রাইস বলেন, “শেষ ফলাফলটি হলো উইন্টার বিক্রয়কেন্দ্রের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।” নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে গ্রাঞ্জ ফ্যাশন নির্মুলের কৃতিত্ব তার, যখন এটি খুব একটা বিক্রি হচ্ছিল না। তিনি ডিজাইনারদের বলে দেন যে তারা যদি গ্ল্যামারকে এড়িয়ে চলা অব্যাহত রাখেন তবে তাদের ডিজাইন ভোগের জন্য আর ব্যবহৃত হবে না। সবাই তার কথা মেনে চলেন। ভোগের অন্য আরেকজন লেখক অভিযোগ করেছেন উইন্টার সাধারণ কর্মজীবি মহিলাদের পছন্দের বিষয়গুলো পৃষ্ঠা থেকে বাদ দিয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মত গ্রাহক। তিনি বলেছেন, উইন্টার কেবল নির্দিষ্ট শ্রেণীর কিছু পাঠকের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করতেই মগ্ন থাকেন। আমাদের একবার স্তন ক্যান্সার সম্পর্কিত একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয়েছিল যা বিমানবালাদের দিয়ে শুরু হয়েছিল, কিন্তু তিনি ম্যাগাজিনে কোন যাত্রী সেবিকা রাখতেন না। তাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন এবং বিমানে চলাচল করেন এমন একজন ব্যবসায়ী মহিলাকে আমাদের খুঁজে বের করতে হয়েছিল।

A seated woman wearing a white dress, holding a coffee cup and sunglasses, looking at the camera. The surrounding seats are empty.
ফ্যাশন ওয়ার প্রেসে ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে এড ক্যাভিশের তোলা ছবিতে উইন্টার)

উইন্টারের বিরুদ্ধে সমকক্ষদের থেকে নিজেকে আলাদা করার অভিযোগও তোলা হয়েছিল। দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডা’র একজন ব্রিটিশ ফ্যাশন ম্যাগাজিন সম্পাদক বলেন, “আমার মনে হয় না কল্পকাহিনী বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।”  “এর উদাহরণে বলা যেতে পারে শিল্প কেবল জীবনের একটি নকল অনুকরণ মাত্র।”

২০০৮ সালে মিলান ফ্যাশন উইকে তিনি অনুরোধ করেছিলেন যে, সপ্তাহের প্রথমদিকে কিছু মূল শো পুনরায় নির্ধারণ করা উচিৎ যাতে তিনি এবং যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অন্যান্য সম্পাদকদের প্যারিস শোয়ের আগে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য হাতে সময় থাকে। এর ফলে অভিযোগ উঠেছিল। অন্য সম্পাদকেরা বললেন যে, তাদের পূর্বের শো গুলোতে ছুটে যেতে হয়েছিল এবং কম পরিচিত ডিজাইনারদের ডিজাইন গুরুত্বপূর্ণ দর্শকদের একটি অংশ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ডলস এবং গাব্বানা বলেছিলেন যে, ইতালীয় ফ্যাশনের অল্প একটু পাপমোচন হয়েছে এবং মিলান “সংজ্ঞাহীন সার্কাসে পরিণত হচ্ছে”।

জিওরজিও আরমানি, যিনি সেই সময় উইন্টারের সাথে সুপারহিরোদের পোশাক নিয়ে একটি প্রদর্শনীর সহ-সভাপতিত্ব করছিলেন সেখানে তিনি তার ব্যক্তিগত বক্তব্যের জন্য কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “হয়তো তিনি যা ভেবেছিলেন তা একটি সুন্দর পোশাক কিন্তু আমি মনে করি না এটি কোন সুন্দর পোশাক ছিল।” তিনি দাবী করছিলেন যে লোকেরা কেন তাকে অপছন্দ করে তা উইন্টার বুঝতে পারেন না।

তিনি উইন্টারের প্রতি অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি ইতালীর চেয়ে ফরাসী এবং আমেরিকান ফ্যাশাকে বেশি প্রাধান্য দেন। জেফ্রি বীন উইন্টারকে শো তে আমন্ত্রণ জানানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তার সম্পর্কে উইন্টার লেখা বন্ধ করে দেয়ার পরে। উইন্টারকে নিয়ে তার মন্তব্য ছিল, “একজন চার চাকা বিশিষ্ট গাড়ীর মহিলা বস, যারা তার ট্যাঙ্কে জ্বালানী সরবরাহ করেন না তাদের তিনি উপেক্ষা করেন অথবা ত্যাগ করেন। সম্পাদক হিসেবে তিনি জাতকে স্তুপে পরিণত করেছেন, স্বাদকে পরিণত করেছেন বর্জ্যে।”

স্থুলতা সম্পর্কে তার মন্তব্য একাধিক অনুষ্ঠানে বিতর্ক তৈরি করেছে। ২০০৫ সালে, ন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন টু অ্যাডভান্স ফ্যাট অ্যাকসেপ্টেন্সের নিউইয়র্ক অধ্যায়ে উইন্টারের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছিল। ভোগের এডিটর-এট-লার্জ আন্দ্রে লিওন ট্যালি বলার পরে, এক পর্যায়ে উইন্টার তার ওজন কমানোর দাবী জানিয়েছিলেন। “ভোগের মেয়েরা বেশিরভাগই পাতলা, অত্যন্ত পাতলা” তিনি বলেন, কারণ মিস উইন্টার মোটা মানুষকে পছন্দ করেন না।”

কার্দাশিয়ান পরিবার এবং কানইয়ে ওয়েস্টের সাথে মিলিত হওয়ার সময় উইন্টার পর্যবেক্ষকদের অবাক করে দিয়েছিলেন, এটি চরম পরিণতি পায় কার্দাশিয়ান - ওয়েস্টকে একই প্রচ্ছদে রাখার পরে। উইন্টার মন্তব্য করেছিলেন যে ম্যাগাজিনে কেবল “গভীর রুচিযুক্ত” ব্যক্তিদের রাখা ছিল খুবই বিরক্তিকর এবং তার এই ধরনের ব্যক্তিত্বের শরণাগত হওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে কেউ কেউ ম্যাগাজিনটিকে “গুঞ্জনের জন্য মরিয়া” বলে অভিযুক্ত করেন। তবুও উইন্টার কম বেশি “গভীর স্বাদযুক্ত” জুটির সাথে জোটবদ্ধ হওয়া অব্যাহত রেখেছেন। 

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

উইন্টারের পক্ষে কথা বলার লোকও অনেক। অ্যামান্ডা ফোর্টিনি স্ল্যাট ম্যাগাজিনকে বলেছেন যে, তিনি উইন্টারের অভিজাত শ্রেণীতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, ফ্যাশনে এটি অপরিহার্য হওয়ার সময় থেকেই :

আমাদের বেশিরভাগই অত্যন্ত দামি কাপড় কেনার উদ্দেশ্যে ভোগ পড়েন না, পড়েন কারণ এটি আমদের চোখকে এতে অভ্যস্ত করে এবং আমাদের স্বাদকে সম্মোহিত করে। এটি উইন্টারের নির্মম নান্দনিকতা থেকে পাওয়া আনন্দ, তিনি তার বেশিরভাগ প্রতিযোগীদের গণতান্ত্রিক প্রবণতায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান। তার সেই বিশেষাধিকার অস্বীকার করা মানে তার পাঠকদের সুন্দর ছবিযুক্ত প্যারিসের ফ্যাশন সম্মত পোশাক দেখে কল্পনা করার অধিকারকে অস্বীকার করা।   

এমা ব্রোকস নিজেই এটা উইন্টারের মধ্যে দেখেন : তার অদম্য দক্ষতা দেখার মতো, যেন তিনি তার ম্যাগাজিনের পাতার মধ্যে বাস করেন, এতে একধরনের সততা রয়েছে। এটা প্রমাণিত, সবাই এটা নিয়ে চিন্তা করে যে ভোগের দেখানো জীবনযাত্রা বাস্তবে খুব কমই সম্ভব। উইন্টার ২০১৫ সালে ব্যাখ্যা করেছেন, “মুদ্রণ প্রকাশনাগুলোকে যতটা সম্ভব বিলাসবহুল অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।” কিছু বন্ধু তার অতিরঞ্জিত উদাসীনতাকে লাজুকতা অথবা শুধুমাত্র ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ অচরণ হিসেবে দেখে থাকেন। উইন্টার নিজেকে একজন লাজুক ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেন। যখন মোরলে সাফার উইন্টারের কাছে তার ব্যক্তিত্বের অভিযোগ নিয়ে জানতে চান, তিনি বলেন,  

মোরলে, আমার সাথে অনেক মানুষ রয়েছেন যারা আমার সাথে ১৫-২০ বছর ধরে কাজ করছেন, আমি যদি অতটা খারাপ হয়ে থাকি তবে তারা অবশ্যই শাস্তি পেতে আগ্রহী; কারণ তারা এখনো এখানে রয়েছেন...যদি আমি কখনো তাদের সাথে অভদ্র বা শীতল আচরণ করে থাকি, তার কারণ আমি সবসময় সেরাটাই পেতে চেয়েছি।

মোটা লোকদের কাজে না নেয়ার অভিযোগের প্রতিবাদেও তিনি অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এখানে যারা কাজ করছেন বিশেষ করে ফ্যাশন বিভাগে, তারা নিজেদের এমনভাবে উপস্থাপন করবেন যেন বহির্বিশ্ব বুঝতে পারে যে তারা ভোগে কাজ করেন।”

সমর্থকেরা তার সমালোচকদের যৌনতাবাদী বলে অবিহিত করেছেন। দ্যা ডেভিল ওয়ারস প্রাডা মুক্তি পাওয়ার কিছুদিন পরে দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস উইন্টারকে নিয়ে লিখতে গিয়ে বলে, “মিডিয়াতে শক্তিশালী মহিলাদের সর্বদা তাদের পুরুষ সহযোগীদের তুলনায় আরও নিখুঁত ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।” যখন তিনি ভোগের দায়িত্ব নেন গসিভ কলামিস্ট লিজ স্মিথ গুজব ছড়িয়ে দেন যে, তিনি এই চাকরিটি পেয়েছেন সি নিউহাউসের সাথে প্রণয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে। জনশ্রুতি মতে এই বিষয়টি নিয়ে উইন্টার কর্মীদের সাথে প্রথম সভায় প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। ২০০২ সালে মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করার সময়ও তিনি এই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন।

তাকে এমন একজন নারীবাদী বলা হয় যার ভোগের পরিবর্তনগুলো নারীর মর্যাদার অগ্রযাত্রাকে প্রতিফলিত করেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে এবং শক্তিশালী করেছে। ওপেনহেইমারের বইটি পর্যালোচনা করতে গিয়ে ওয়াশিংটন মান্থলির ম্যানেজিং এডিটর ক্রিস্টিনা লারসন বলেছেন, ভোগ অন্যান্য মহিলা ম্যাগাজিনের মতো নয়।

…এটির পাঠকেরা অভাবের অনুভূতি নিয়ে থাকেন না। ভোগে প্রকাশিত পোশাক, আসবাব এবং ভ্রমণ পরিকল্পনার বিষয়গুলো দেখে একজন মহিলা তৃপ্তি বোধ করেন। একজন সফল মহিলা সেটি ক্রয়ও করতে পারেন অথবা কমপক্ষে প্রশংসা করবেন। যা বিক্রয়ের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ… এটি প্রাথমিকভাবে উচ্চাভিলাষকে প্রাধান্য দেয়, অনিরাপত্তাকে নয়।  

প্রছদে সেলিব্রেটিদের প্রাধান্য দেয়াকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখতেন। তিনি বিষয়টিকে দেখতেন এভাবে, যে মহিলারা ভোগের প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন তারা অর্জন করেছেন তা দেখানোর জন্য, তারা দেখতে কেমন শুধু তা দেখানোর জন্য নয়। কার্ল লেগারফেল্ড তার সম্পর্কে বলেছেন, “তিনি সৎ। তিনি কি ভাবছেন তা তিনি আপনাকে বলবেন। হ্যাঁ হলে হ্যাঁ, না হলে না।”

অ্যালিস রুই এবং ইসাবেল টোলেডোর মত ডিজাইনারেরা উইন্টার বা ভোগকে প্ররোচিত না করেই উন্নতি করেছেন। বিজ্ঞাপনের আয়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা স্বত্ত্বেও তিনি তার প্রচেষ্টায় ভোগকে স্বাধীন রাখতে পেরেছিলেন। উইন্টার ছিলেন একমাত্র ফ্যাশন সম্পাদক যিনি পত্রিকার সম্পাদকীয় পৃষ্ঠাগুলোতে বেশি পোশাক দেখানোর আরমানির চরমপত্র অনুসরণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন যে, তাকে যদি দুটি পোশাকের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলা হয় তবে তিনি বিজ্ঞাপন দাতারটিই বেছে নেবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “বাণিজ্যিক শব্দটিকে আমি মোটেও খারাপ শব্দ বলে মনে করি না।”

উইন্টারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নিজেই সেই ধারণাটিকে খারিজ করে দিয়েছেন যে তিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। “আমি নিজেকে মোটেও কোন ক্ষমতাবাদ ব্যক্তি মনে করি না” উইন্টার ২০১১ সালে ফোর্বসে একথা বলেন, যখন তারা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মহিলা হিসেবে তাকে ৬৯ তম তালকায় স্থান দেয়। “তুমি জানো এর মানে কি? এর মানে হলো তুমি রেস্টুরেন্টে খুব ভালো একটি বসার আসন পেয়েছ অথবা সিনেমা দেখার জন্য ভালো টিকেট অথবা অন্য কিছু। কিন্তু অন্যকে সাহায্য করতে সক্ষম হওয়ার এটি খুব ভালো একটি সুযোগ এবং এর জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।” বীনের মতো সমালোচনার জবাবে তিনি এককালের একচেটিয়া বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোর গণতন্ত্রকরণের পক্ষে কথা বলেছিলেন। তিনি ড্যানা থমাসকে বলেন, “এর ফলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ আরও ভালো ফ্যাশন পেতে চলেছে এবং যত বেশি মানুষ ফ্যাশন করতে পারে তত ভালো।”   

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Obama supporter Anna Wintour reportedly considered for ambassadorial post by administration", The Hollywood Reporter. Retrieved 10 August 2016.
  2. "Anna Wintour"Vogue (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০১