শারদা (অভিনেত্রী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শারদা
জন্ম
সরস্বতী দেবী

(1945-06-25) ২৫ জুন ১৯৪৫ (বয়স ৭৮)
অন্যান্য নামঊর্বশী শারদা
পেশাঅভিনেত্রী, রাজনীতিবিদ
কর্মজীবন১৯৫৯–বর্তমান
অফিসসংসদ সদস্য
রাজনৈতিক দলতেলুগু দেশম পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীচালাম (বি. ১৯৬৭; বিচ্ছেদ. ১৯৭০)
পিতা-মাতাভেঙ্কটেশ্বর রাও
সত্যবতী দেবী
পুরস্কারশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (৩ বার)

শারদা (জন্ম: সরস্বতী দেবী, ২৫ জুন ১৯৪৫) হলেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ। তিনি মালয়ালম ও তেলুগু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সফলতা অর্জন করেন।[১] তিনি তুলাবরম (মালয়ালম), স্বয়মবরম (মালয়ালম) ও নিমজ্জনম (তেলুগু) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জনের জন্য তিনি ঊর্বশী শারদা নামেও পরিচিত, কারণ পূর্বে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঊর্বশী পুরস্কার নামে প্রদান করা হত। এছাড়া তিনি দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ অর্জন করেছেন এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য অন্ধ্র প্রদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এনটিআর জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।[২]

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

শারদা ১৯৪৫ সালের ২৫শে জুন অন্ধ্র প্রদেশের টেনালি শহরে এক তাঁতি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মনাম সরস্বতী। তার পিতা ভেঙ্কটেশ্বর রাও ও মাতা সত্যবতী দেবী।[২] তার এক ভাই রয়েছে, তার নাম মোহন রাও। শারদাকে শৈশবে মাদ্রাজ পাঠিয়ে দেওয়া হয় তার দাদী কানাকাম্মার সাথে থাকার জন্য। শারদা তার দাদীকে "কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা ব্যক্তি" বলে বর্ণনা করে, যিনি পরবর্তী সময়ে "নায়কদের তাকে [শারদা] ছুঁতে দিত না" এবং "শুধু রবিবারে রিহার্স করতে দিত"। শারদার বয়স যখন ছয় তখন থেকে তিনি নাচতে শিখেন। তিনি নবরাত্রিতে এবং মন্দিরের অন্যান্য অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করতেন। তার মায়ের ইচ্ছাতেই তিনি নৃত্য শিখেন। তার মা চাইতেন তিনি "চলচ্চিত্রাঙ্গনে বড় তারকা" হবেন। যদিও তার পিতা এতে আগ্রহী ছিলেন না, তবে তিনি তার নাচ শিখায় বাধা দেননি। শারদা তেলুগু অভিনেতা চালামকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। বর্তমানে শারদা তার ভাইয়ের সাথে চেন্নাইয়ে বসবাস করছেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শৈশবে তিনি তেলুগু মঞ্চে কাজ করতেন। তেলুগু চলচ্চিত্র কন্যাসুলকম-এ একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে।[৩] তিনি পুনরায় মঞ্চাভিনয়ে ফিরে যান এবং তামিল নাটক রক্ত কান্নেরু-এর তেলুগু সংস্করণে অভিনয় করেন। নাটকটি তামিলনাড়ুতে ১০০ বারের অধিক মঞ্চস্থ হয়।

১৯৫৯ সালে তিনি শারদা নামে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তার নাম পরিবর্তনের কারণ ছিল সে সময়ে চলচ্চিত্র শিল্পে সরস্বতী নামে একাধিক অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি তেলুগু প্রযোজক এল. ভি. প্রসাদের অধীনে কাজ শুরু করেন। যদিও তিনি তার কোন চলচ্চিত্রে কাজ করেননি, তিনি তার অধীনে নবরস পাঠসহ অভিনয়ের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে তিনি অভিনয়ের অধিক দক্ষতা ও উন্নতি লাভ করেন। তার প্রথম সফল কাজ ছিল আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাওয়ের সাথে ইদ্দারু মিত্রুলু (১৯৬১) চলচ্চিত্রে। ছবিটি ব্যবসাসফল হয় এবং এই ছবিতে তার কাজের সফলতার ধারাবাহিকতায় তিনি কন্নড়, তামিল ও মালয়ালম চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ পান। এই সময়ে তিনি তেলুগু ভাষার আত্ম বন্ধবু (১৯৬২), তবুত্তুভুলু (১৯৬৩) ও মুরালি কৃষ্ণ (১৯৬৪) চলচ্চিত্রে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করেন।[৩]

১৯৬৩ সালে কুঙ্গুমম চলচ্চিত্র দিয়ে তার তামিল চলচ্চিত্রে ও বাল্মিকী দিয়ে কন্নড় চলচ্চিত্রে এবং ১৯৬৫ সালে ইন্নাপ্রভুগাল চলচ্চিত্র দিয়ে শারদার মালয়ালম চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে।[৪] একই বছর তিনি পি. ভেনু পরিচালিত শকুন্তলা, মুরাপ্পেন্নু, ও উদ্যোগস্থ, এবং কাত্তু তুলাসি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সফল হন। পরবর্তী কালে তিনি মালয়ালম চলচ্চিত্রেই বেশি নজর দেন এবং অন্য ভাষায় চলচ্চিত্রে কাজ কমিয়ে দেন। ১৯৬৭ সালে ইরুত্তিন্তে আথমাভু চলচ্চিত্রসহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজের জন্য তিনি জাতীয় সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কারটি ১৯৬৮ সালে প্রবর্তিত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পূর্বসূরি হিসেবে অভিহিত। ১৯৬৯ সালে তিনি মালয়ালম ভাষার তুলাবরম চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তার প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[১] এই চলচ্চিত্র সম্পর্কে তিনি পরবর্তী কালে বলেন, "আমি ভাবিনি যে বিজয়া চরিত্রে অভিনয় করে এতটা খ্যাতি অর্জন করব। আমি খুবই হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তি এবং তুলাবরম ছবির শুটিংকালে প্রচুর হাসতাম, এমনকি কয়েকটি খুব-গম্ভীর দৃশ্যের ফাঁকেও।"[১] তুলাবরম ছবিটি তামিল ভাষায় তুলাবরম, তেলুগু ভাষায় মানুশুলু মারালি এবং হিন্দি ভাষায় সমাজ কো বদল ডালো নামে পুনর্নির্মিত হয়। সবকয়টি চলচ্চিত্রে তিনি তার অভিনীত মূল চরিত্রে অভিনয় করেন।[১] তেলুগু ও হিন্দি সংস্করণ দুটি ব্যবসাসফল হয়।[৩]

১৯৭০ সালে ত্রিবেণীতারা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭২ সালে তার অভিনীত কালাম মারিন্ডি ছবিটি নারী ভক্তদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করে।[৩] তিনি মালয়ালম ভাষার স্বয়মবরম (১৯৭২) ও তেলুগু ভাষার নিমজ্জন্ম (১৯৭৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে আরও দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।[২]

চান্দা সাসানুডু (১৯৮৩) চলচ্চিত্র দিয়ে তিনি তেলুগু চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন এবং এই ধারাবাহিকতায় আনাসুয়াম্মা গারি আল্লুডু (১৯৮৬), প্রতিধ্বনি (১৯৮৬) ও জগন্নাথকম (১৯৯১) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।[৩]

১৯৯৩ সালের পরে তিনি চলচ্চিত্র নির্বাচনের ব্যাপারে সচেতন হয়ে পড়েন এবং অল্পসংখ্যক চলচ্চিত্রে কাজের প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পরবর্তী কালে তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হল মালয়ালম ভাষার মাজাতুল্লিক্কিলুক্কাম (২০০২), রাপ্পাকাল (২০০৫), ও নায়িকা (২০১১) এবং তেলুগু ভাষার স্টালিন (২০০৬)। তাকে সর্বশেষ মালয়ালম চলচ্চিত্র আম্মাক্কুরু তালাত্তু (২০১৫)-এ দেখা যায়।[৪]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

শারদা ২২ বছর বয়সে অভিনেতা চালামকে বিয়ে করেন। তিন বছর পর তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। পরবর্তী কালে তিনি ১৯৭৫ সালে একজন মালায়লি ব্যক্তিকে বিয়ে করেন। এই বিয়েও বিবাহবিচ্ছেদে গড়ায়। তার কোন সন্তান-সন্ততি নেই এবং তার ভাই ও বোনের সন্তানদের নিজের সন্তানের মত লালনপালন করেছেন।[৩]

তিনি লোটাস চকোলেট নামে একটি চকোলেট ফ্যাক্টরির মালিক। তিনি তার নিজ জেলা টেনালি থেকে তেলুগু দেশম পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[৩]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
  • ১৯৬৮: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - তুলাভরম (মালয়ালম)
  • ১৯৭২: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - স্বয়মভরম (মালয়ালম)
  • ১৯৭৭: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - নিমজ্জনম (তেলুগু)
কেরালা রাজ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার
  • ১৯৭০: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী - ত্রিবেণীতারা
তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার পুরস্কার
  • ২০১৩: আজীবন সম্মাননা
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দক্ষিণ
  • ১৯৮৭: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (মালয়ালম) - ওরু মিন্নামিনুঙ্গিন্তে নুরুঙ্গুভেত্তাম
  • ১৯৯৭: আজীবন সম্মাননা
নন্দী পুরস্কার
  • ১৯৮৪: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী - বব্বিলি ব্রাহ্মন্না
  • ২০১০: এনটিআর জাতীয় পুরস্কার
বঙ্গ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার
  • ১৯৭০: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (হিন্দি) - সমাজ কো বদল ডালো

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কুমার, পি. কে. অজিত (১৬ জুন ২০১৬)। "'I always enjoyed my work in Malayalam'" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য হিন্দু। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৯ 
  2. চেলেঙ্গাড়, সাজু (১১ জানুয়ারি ২০১৫)। "The actor with a golden touch" (ইংরেজি ভাষায়)। দ্য হিন্দু। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১৯ 
  3. "Sharada goes down the memory lane!"তেলুগু সিনেমা (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জুন ২০১৬। ১৮ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৯ 
  4. "Veteran actor Sharada selected for Prem Nazir award"দ্য নিউজ মিনিট (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]