আদিনারীবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আদিনারীবাদ (Protofeminism) একটি দার্শনিক ঐতিহ্য আধুনিক নারীবাদের ধারণার পূর্বে যার অস্তিত্ব ছিল বলে বিবেচনা করা হয়, সেটি এমন একটি যুগ ছিল যখন নারীবাদ এর ধারণাটা অজানা ছিল,[১] অর্থাৎ বিংশ শতকের পূর্বের নারীবাদকেই আদিনারীবাদ বলে।[২][৩] অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকের নারীবাদকে "নারীবাদ" এর মধ্যে ফেলা হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কোন কোন আধুনিক পণ্ডিত "আদিনারীবাদ" শব্দটির ব্যাবহারযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন করেন,[৪] ঠিক যেমন উত্তরনারীবাদ নিয়েও প্রশ্ন করা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

প্রাচীন গ্রীস[সম্পাদনা]

এলেইন হফম্যান বারুচের মতে প্লেটো "নারীর পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক ও যৌন সমতার জন্য যুক্তি দিয়েছিলেন, প্লেটো তার সর্বোচ্চ শ্রেণিতে নারীদেরকে সদস্য হিসেবে বিবেচনা করেন,... যারা শাসন করে এবং যুদ্ধ করে।"[৫] প্লেটোর দ্য রিপাবলিক গ্রন্থের পঞ্চম গ্রন্থে তিনি নারীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন:

কুকুর পুরুষ ও নারীতে বিভক্ত নাকি তারা সমানভাবেই শিকার করে, পাহাড়া দেয় ও অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে থাকে? নাকি আমরা কেবল পুরুষ কুকুরদেরকেই কেবলমাত্র পাহাড়া দেবার জন্য ব্যবহার করি আর স্ত্রী-কুকুরদেরকে তাদের বাসায় রেখে দেই যাতে তারা তাদের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়াতে পারে ও লালন পালন করতে পারে?

দ্য রিপাবলিক গ্রন্থ বলছে, প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি কাজ করবে, সমান শিক্ষা পাবে এবং রাষ্ট্রের সকল বিষয়ে সমানভাবে অংশীদার হবে। একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে নারী তার সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করবে যার জন্য কম শারীরিক শক্তির প্রয়োজন।[৬]

ইসলামী স্বর্ণযুগ[সম্পাদনা]

প্রাক-আধুনিক যুগে ইসলামী জাতিগুলোর মধ্যে কোনও আনুষ্ঠানিক নারীবাদী আন্দোলন ছিল না, কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিল যারা নারী অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের উন্নতির জন্য দাবি করেছিল। মধ্যযুগীয় রহস্যবাদী ও দার্শনিক ইবনে আরাবী যুক্তি দিয়েছিলেন যে, নবী হিসেবে নারীর চেয়ে পুরুষ অধিক আনুকূল্য লাভ করেছে। পুরুষের মত নারীও ওয়ালি হতে সক্ষম।[৭]

দ্বাদশ শতাব্দীতে, সুন্নি পণ্ডিত ইবনে আসাকির লিখেছিলেন যে, হাদিসের মত ধর্মীয় গ্রন্থের জ্ঞান সরবরাহ করার জন্য নারীরাও ধর্মগ্রন্থ পড়তে পারেন এবং সেই জ্ঞান সরবরাহ করার যোগ্যতা (ইজাজত) অর্জন করতে পারেন। এটি বিশেষ করে শিক্ষিত এবং পণ্ডিত পরিবারের পরিস্থিতি ছিল, এইসব পরিবারে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য সর্বোচ্চ সম্ভাব্য শিক্ষা নিশ্চিত করা হত।[৮] কিন্তু কিছু ব্যক্তি যেমন মুহাম্মাদ ইবনে আল-হাজ (মৃত্যু ১৩৩৬) এই অনুশীলনকে অনুমোদন করেননি। তারা পুরুষের উপস্থিতিতে ধর্মগ্রন্থের আবৃত্তি শোনার সময়ে নারীর উচ্চস্বরে আওয়াজ করা ও নিজেদের শরীরের যেসব অংশ ঢেকে রাখা উচিৎ (আওরাত) সেগুলো প্রকাশ করা নিয়ে বিতৃষ্ণ ছিলেন।[৯]

দ্বাদশ শতাব্দীতে ইসলামী দার্শনিককাজি (বিচারক) ইবনে রুশদ প্লেটোর দ্য রিপাব্লিকের উপর একটি ভাষ্য রচনা করেছিলেন, যেখানে তিনি যৌনতার সমতা সম্পর্কে প্লেটোর মতামতগুলোকে পরীক্ষা করেছিলেন। তিনি উপসংহারে পৌঁছেছিলেন যে, পুরুষরা নারীর চেয়ে শক্তিশালী হলেও নারীর পক্ষে পুরুষের মত কিছু কর্তব্য পালন করা সম্ভব। তিনি তার বিদায়াত আল-মুজতাহিদ (দ্য বিশিষ্ট বিচারকদের প্রথম পাঠ) গ্রন্থে তিনি আরও বলেন যে, এই কর্তব্যগুলোর মধ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। সমাজের নারীরা কেবল মা এবং স্ত্রী এর ভূমিকা পালন করাতে সীমাবদ্ধ রয়েছে - এই বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।[১০] বলা হয় যে, মুসলিম বিজয় এবং ফিতনাগুলোতে (গৃহযুদ্ধ) নুসাইবাহ্‌ বিনতে ক্বাব এবং আয়িশা সহ অনেক নারীই সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন বা সাহায্য করেছিলেন।[১১]

মধ্যযুগীয় ইউরোপ[সম্পাদনা]

মধ্যযুগীয় ইউরোপে, নারীদের নিয়ে প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে তারা বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল, বাইবেলের ঐতিহ্য অনুযায়ী ইভের উৎপত্তিগত পাপের কারণে নারীদের এই অবস্থা। একে নারীদের উপর অনেক বিধিনিষেধের জন্য ন্যায্যতা হিসাবে ব্যবহার করা হত, এইসব বিধিনিষেধের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সম্পত্তির অধিকার না থাকা, বা সবসময় পিতা বা স্বামী কথা মেনে চলতে বাধ্য থাকা।[১২] কিন্তু মধ্যযুগেই এই দৃষ্টিভঙ্গি, ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তৈরি হওয়া বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এসেছিল। মধ্যযুগের যেসব আদিনারীবাদীগণ নারীবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে আছেন মারি ডি ফ্রান্স, এলেনর অফ অ্যাকুইটাইন, বেত্তিসিয়া গোজ্জাদিনি, নিকোলা দে লা হেয়ি, ক্রিস্তিন দে পিজঁ, ইয়াদুইগা অফ পোল্যান্ড, লরা সেরেটা এবং লা মালিঁচে[১৩]

যুক্তরাজ্যের ১৩৮১ এর কৃষক বিদ্রোহে নারীর ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৩৮১ সালের কৃষক বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ভূমিদাসত্বের বিরুদ্ধে শেষ মধ্যযুগীয় বিদ্রোহ, এবং এই বিদ্রোহ অনেক নারী বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করে। ১৩৮১ সালের ১৪ জুন, লর্ড চ্যান্সেলর এবং ক্যান্টারবেরি এর আর্চবিশপ সাইমন অফ সাডবারিকে টাওয়ার অফ লন্ডন থেকে টানতে টানতে নিয়ে আসা হয় এবং শিরশ্ছেদ করা হয়। দলের নেতা হলেন জোহানা ফেরোউর যিনি সাডবারির মাত্রাতিরিক্ত করারোপণের জন্য এই কঠোর পদক্ষেপের আদেশ দেন।[১৪] করাদায়ে অবদান রাখার জন্য ফেরোউর লর্ড হাই ট্রিজার বা কোষাধ্যক্ষ স্যার রবার্ট হেলসের ক্ষেত্রেও শিরশ্ছেদের আদেশ দেন।[১৫] বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ফেরোউর স্যাভয় প্রাসাদটি পুড়িয়ে দেন এবং ডিউক এর সোনা ভরা সিন্দুক চুরি করেন। প্রধান বিচারপতি জন ক্যাভেন্ডিশকে শিরশ্ছেদ করেছিলেন ক্যাথেরিন গামেন, যিনি আরেকজন নারী নেত্রী ছিলেন।[১৫]

বেটস কলেজের ইংরেজির সহযোগী অধ্যাপক সিলভিয়া ফেডেরিকোর মতে, বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে নারীরা প্রায়শই দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করত, আর এই বিদ্রোহের বেলায় তারা অনেক বেশি আগ্রহী ছিল। বিদ্রোহটিতে পুরুষেরা যা যা করেছিল নারীরাও তাই তাই করেছিল, তারা এই সরকার-বিরোধী বিদ্রোহে পুরুষদের মতই সহিংস ছিল। এই বিদ্রোহে নেতাদের মধ্যে কেবল জোহানা ফেরোউরই একমাত্র নারী ছিলেন না, সেখানে আরো কয়েকজন নেত্রী জড়িত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন নেত্রী কেন্ট এর মেইডস্টোন কারাগারের বিরুদ্ধে একটি হামলায় উৎসাহ প্রদানের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, আরেকজন নেত্রী অনেকগুলি প্রাসাদ লুণ্ঠনের অভীযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। সেই লুণ্ঠনের ক্ষেত্রে প্রাসাদগুলোর দাসগণ এতটাই ভয় পেয়েছিল যে পরবর্তীতে তারা আর কখনই সেই প্রাসাদগুলোতে ফিরে যাওয়াকে যথেষ্ট নিরাপদ বলে মনে করেন নি। যদিও এই বিদ্রোহে নেত্রীদের সংখ্যা অনেক ছিল না, কিন্তু বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী উন্মত্ত জনতার মধ্যে নারীর সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে অনেক বেশি ছিল। যেমন সাফকে ৭০ জন নারী বিদ্রোহী ছিল।[১৬]

এই বিদ্রোহে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য এবং কিছু ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দানের ভূমিকা পালন করার জন্য উপযুক্ত কারণ ছিল। ১৩৮০ সালে বিবাহিত নারীদের উপর আরোপিত পোল ট্যাক্স (প্রতি ব্যক্তির উপর আরোপিত কর) অনেক বেশি ছিল।।তাই এই বিদ্রোহে পুরুষের মত নারীর সহিংস অংশগ্রহণে অবাক হবার কিছু ছিল না। সেইসময় নারীদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ড সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ঘৃণাকে তুলে ধরে।[১৬]

ইউরোপীয় রেনেসাঁ[সম্পাদনা]

নারীর উপর আরোপিত বিধিনিষেধ[সম্পাদনা]

ক্রিস্টিন দে পিজাঁ একদল পুরুষের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন।

রেনেসাঁর শুরুতে, নারীর একমাত্র ভূমিকা এবং সামাজিক তাৎপর্য ছিল কেবল প্রজনন করাতেই সীমাবদ্ধ।[১৭] এই লৈঙ্গিক ভূমিকা একজন নারীর প্রধান পরিচয় এবং জীবনের উদ্দেশ্যকে সংজ্ঞায়িত করত। রেনেসাঁ মানবতাবাদীদের কাছে জ্ঞানপ্রেমী হিসেবে একজন আদর্শ ও সুপরিচিত ব্যক্তি সক্রেটিস বলেছিলেন, তিনি তার প্রথম স্ত্রী জ্যান্থিপ্পেকে সহ্য করেছিলেন, কারণ তিনি তাকে পুত্র দান করেছিলেন, ঠিক যেভাবে একটি হংসীর কোলাহল সহ্য করতে হয় কারণ তা ডিম ও বাচ্চা দেয়।[১৮] এই উপমাটি এই দাবিকে সমর্থন করে যে, সেইসময় একজন নারীর একমাত্র ভূমিকা ছিল প্রজনন।

রেনেসাঁর সময় বিবাহ একজন নারীকে সংজ্ঞায়িত করত: নারী কাকে বিবাহ করছে তার উপর ভিত্তি করে তার পরিচয় তৈরি হত। একজন অবিবাহিত নারী হচ্ছে তার পিতার কাছে সম্পত্তি, আর বিবাহের পর নারী তার স্বামীর সম্পত্তি হয়ে যায়। তার স্বামীর বা পিতা কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধাগুলো ছাড়া তার খুব সামান্য অধিকারই ছিল। বিবাহিত নারীদেরকে তাদের স্বামীদের প্রতি বাধ্য থাকতে হত, এবং তারা সতী, আজ্ঞাবহ, আনন্দপূর্ণ, নম্র, বিনয়ী এবং যদি মিষ্টভাষী না হয় তবে নীরব থাকবে এটাই আশা করা হত।[১৯] উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের ১৫৯৩ সালের নাটক দ্য টেমিং অফ দ্য শ্রু -তে ক্যাথেরিনাকে তার বুদ্ধিমত্তা ও স্পষ্টভাষিতার কারণে তার নম্র স্বভাবের বোন বিয়াংকা এর তুলনায় অবিবাহযোগ্যা হিসেবে দেখানো হয়। পেট্রুশিও তাকে 'বশে আনবার' পর দেখা যায় পেট্রুশিও যেখানে যায় তার স্ত্রী ক্যাথেরিনও অনেকটা কুকুরের মত তাকে অনুসরণ করে। ক্যাথেরিনের এই বশ্যতা প্রসংশিত হয় এবং পার্টিতে আসা জনতা তাকে 'যথাযথ নারী' হিসেবে স্বীকার করে নেয়, কেননা তখন ক্যাথেরিনা গার্হস্থ্য বিষয়গুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।[২০]

এরকম পরিস্থিতিতে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে বেশিরভাগ নারীই খুব কমই শিক্ষিত ছিল। ১৪২৪ সালে মন্টেফেল্ট্রো এর লেডি ব্যাপতিস্তা মালেতেস্তাকে পাঠানো একটি চিঠিতে, মানবতাবাদী লিওনার্দো ব্রুনি লিখেছিলেন: "আপনি এমন এক সময়ে বাস করেন, যেখানে শিক্ষার এতদূর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যে, এখানে শিক্ষিত নারী দূরের কথা, কোন শিক্ষিত পুরুষের সাথে সাক্ষাত হওয়াই কাকতালীয় ব্যাপার"।[২১] ব্রুনী নিজে ভাবতেন যে, নারীদের শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই, কেননা শিক্ষার প্রয়োজন আছে এমন কোন সামাজিক আলোচনায় নারীরা নিয়োজিত নন। একই চিঠিতে তিনি লেখেন,

কেন হাজারটা ... সূক্ষ্ম..., প্রহেলিকাময় বিষয়ের বাগ্মিতাসংক্রান্ত আলোচনাসভায় নারীদের ক্ষমতা কাজ করবে, যেখানে নারীরা কোনদিন আলোচনাসভা দেখেই নি? আলোচনাসভার বিবাদসমূহ, যেমন রণনীতি ও যুদ্ধের বিষয়গুলো পুরুষের জায়গা। কথা বলতে শেখা, কোন সাক্ষীর পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা, কোন শাস্তির পক্ষে বা বিপখে কথা বলা, বা কারও খ্যাতির পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলা নারীর কাজ নয় ... এক কথায় তাকে এই কঠোর ও রুক্ষ আলোচনাসভাকে পুরোপুরিভাবে পুরুষের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।[২১]

রেনেসাঁর সময়ের বিখ্যাত বৈঠকখানাগুলোতে সেইসময় বৌদ্ধিক বিতর্ক সংঘটিত হত, কিন্তু সেইসব স্থানে নারীদেরকে স্বাগত জানানো হয়নি। গণ আলোচনাসভাগুলোতে নারীদেরকে প্রবেশাধিকার না থাকা শিক্ষিত নারীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে, এবং তা সেইসময়ে নারীদের শিক্ষাগ্রহণের সম্ভাব্যতাকেও কমিয়ে দেয়।

"ডাইনি সাহিত্য"[সম্পাদনা]

ম্যালেয়াস ম্যালেফিকারাম (বাংলা: ডাইনিদের হাতুরি) থেকে শুরু করে রেনেসাঁ ইউরোপে উইচ বা ডাইনিদের উপর ভিত্তি করে অনেক গ্রন্থই লেখা হয়েছে। সেসব গ্রন্থে তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে, তাদেরকে চিহ্নিত, বিচার ও শাস্তি দেয়ার উপায় সম্পর্কে লেখা হয়েছে।[২২][২৩] এই গ্রন্থগুলো নারীদেরকে নৈতিকভাবে ভ্রষ্ট ও পাপী হিসেবে ভাবা, এবং নারীদের উপর অনেক বিধি নিষেধ চাপিয়ে দেবার যে দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে প্রচলিত ছিল তাকে শক্তিশালী ও স্থায়ী করে।

নারীশিক্ষার সমর্থনে কার্যক্রম[সম্পাদনা]

তবে, নারী সম্পর্কে এরকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের উপর নিষেধাজ্ঞাগুলো নিয়ে সকলে একমত হয়নি। সিমোন দে বুভোয়ার লিখেছেন যে "প্রথমবারের মত আমরা যে নারীকে তার লিঙ্গের পক্ষ নিয়ে কলম ধরতে দেখি, তিনি হলেন ক্রিস্টিন দে পিজাঁ"। তিনি পঞ্চদশ শতকে এই বিষয়ে Épître au Dieu d'Amour (প্রেমের ঈশ্বরের কাছে চিঠি) এবং দ্য বুক অফ দ্য সিটি অফ লাভ প্রকাশিত হয়।[২৪] নারীর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রথম দিকের পুরুষ সমর্থকদের একজন হলেন হাইনরিখ করনেলিয়াস এগ্রিপ্পা। তিনি "দ্য সুপেরিয়র এক্সেলেন্স অফ উইমেন এগেইনস্ট মেন" নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন।[২৫]

ইংল্যান্ডের রাণী ক্যাথেরিন অফ এরাগন ১৫২৩ সালে নারী শিক্ষার অধিকারের উপর লেখা হুয়ান লুইস ভিভেস এর গ্রন্থ দ্য এডুকেশন অফ এ ক্রিশ্চিয়ান উইমেন গ্রন্থটিকে কমিশন করেন। এই গ্রন্থের নারী শিক্ষার অধিকারের কথা বলা হয়ে, এবং নারীর জন্য শিক্ষাকে উৎসাহিত ও জনপ্রিয় করতে বলা হয়।

ভিভেস এবং রেনেসাঁ মানবতাবাদী এগ্রিকোলা যুক্তি দেন যে, অন্তত সম্ভ্রান্ত নারীদের জন্য শিক্ষার প্রয়োজন। রজার অ্যাশকাম রাণী প্রথম এলিজাবেথকে শিক্ষিত করে তোলেন। তিনি ল্যাতিন ও গ্রীক ভাষা জানতেন এবং তিনি উপলক্ষমূলক কবিতা লিখতেন। তার একটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে "অন মশিয়েরস ডিপারচার" যা এখনও সংকলিত হয়ে আছে। রাণী প্রথম এলিজাবেথকে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়, তার মদ্যে মেধা ছিল, কিন্তু নারীর দুর্বলতা ছিল না, পুরুষের অধ্যবসায় এর গুণ তার মধ্যে ছিল, যেকারণে তিনি অনেক পরিশ্রমী ছিলেন। তার শরীর দুর্বল ছিল, কিন্তু তার হৃদয় ও সাহস ছিল একজন রাজার মত।[১৭] দেখা যায় কেবল পুরুষের গুণগুলো আরোপ করেই তাকে ভাল শাসক হিসেবে দেখা হচ্ছে। রেনেসাঁ এর সময় রাণী প্রথম এলিজাবেথের মত একজন ক্ষমতাশালী ও সফল নারী হওয়ার অর্থ হচ্ছে, কোন না কোন ভাবে পুরুষের মত হওয়া। সেইসময় সমাজের এরকম দৃষ্টিভঙ্গি নারীর সম্ভাবনাকে সীমিত করে দিয়েছিল।[১৭]

সেসময় সম্ভ্রান্ত ঘরের নারীদের শিক্ষা গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি ছিল, তবে নিম্নশ্রেণীর নারীদের শিক্ষিত হওয়াটা অসম্ভব ছিল না। রেনেসাঁর সময়, মারঘেরিতা নামে একজন নারী প্রায় ৩০ বছর বয়সে পড়তে এবং লিখতে শিখেছিলেন, যাতে তার আর তার স্বামীর মধ্যকার পত্রযোগাযোগের ক্ষেত্রে কোন মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন না হয়।[২৬] মারঘারিতা সেই সময়ের লৈঙ্গিক ভূমিকার বিরুদ্ধে গেলেও তিনি আলোকিত ব্যক্তিতে পরিণত হবার জন্য শিক্ষিত হন নি, বরং শিক্ষিত হয়েছিলেন কেননা তিনি আরও ভাল স্ত্রী হবার জন্য এবং সরাসরি তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য।

আধুনিক যুগের প্রথম দিকের শিক্ষিত নারী[সম্পাদনা]

যেসব নারীরা সেইসময় শিক্ষা লাভ করেছিলেন, তারা প্রায়ই উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং নারী ও তাদের অধিকার এর পক্ষে লিখেছিলেন। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ষোড়শ শতকের ভেনিসবাসী লেখক মদেস্তা দি পোজ্জ দি ফরজি, যিনি নারীর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে লিখেছেন।[২৭]

চিত্রকর সোফনিসবা অ্যাঙ্গুইসোলা (প্রায় ১৫৩২-১৬২৫) ক্রেমোনার একটি আলোকপ্রাপ্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এবং তার বোনেরা পুরুষের মানদণ্ডে শিক্ষিত ছিল এবং পাঁচজন বোনের চারজন পেশাদার চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠেন। সোফোনিসবা এই পাঁচ বোনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন, তিনি স্পেনীয় রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের সভাচিত্রকর হবার সফলতা অর্জন করেন।

ধর্মসংস্কার[সম্পাদনা]

নারী অধিকার ও শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ধর্মসংস্কার ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রোটেস্ট্যান্ট বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল ঈশ্বরের সাথে প্রত্যক্ষ মিথস্ক্রিয়ায় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। এতে বাইবেল ও প্রার্থনা গ্রন্থগুলো পাঠের সক্ষমতা অর্জন সকলের জন্যই প্রয়োজনীয় হয়ে যায়, এমনকি নারীদের জন্যেও। এর ফলে প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায় সাধারণ বালক ও বালিকাদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে মৌলিক অক্ষরজ্ঞান শেখানো হত।[২৮] তাছাড়া, প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ আর নারীকে দুর্বল ও মন্দ-পাপী হিসেবে দেখত না, বরং সংস্কারের পর নারীদেরকে পুরুষের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে দেখা হত, এবং মনে করা হত যে, সক্ষম স্ত্রী হবার জন্য নারীদের শিক্ষিত হওয়া উচিৎ।[২৯]

সপ্তদশ শতক[সম্পাদনা]

ননকনফরমিজম, প্রোটেক্টরেট, রিস্টোরেশন[সম্পাদনা]

মারি দে গর্নে (১৫৬৫-১৬৪৫) মাইকেল দে মনতেইন এর লেখার সম্পাদক ও ভাষ্যকার ছিলেন। মনতেইনের মৃত্যুর পর তিনি মনতেইনের এসেস (Essays) এর সম্পাদনা করেন। এছাড়াও তিনি দুটো নারীবাদী রচনা লিখেছিলেন। একটি ছিল দ্য ইকুয়ালিটি অফ মেন এন্ড উইমেন (১৬২২) এবং দ্য লেডিস গ্রিভ্যান্স (১৬২৬)। ১৬৭৩ সালে ফ্রাংকোইস পউলেইন দে লা বারে De l'égalité des deux sexes (অন দ্য ইকুয়ালিটি অফ দ্য টু সেক্সেস) লেখেন।[৩০]

সপ্তদশ শতকে কোয়াকারসদের মত অনেক ননকনফরমিস্ট ধারা তৈরি হয়, যেগুলো প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলোর তুলনায় নারীদেরকে অধিক পরিমাণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিত। ধর্ম নিয়ে সেসময়কার বিশিষ্ট নারীবাদী লেখকেরা হচ্ছেন র‍্যাচেল স্পেইট, ক্যাথরিন ইভান্স, সারাহ্‌ শেভার্স, মার্গারেট ফেল (তিনি কোয়াকারস এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন), এবং সারাহ্‌ ব্ল্যাকবরো[৩১][৩২][৩৩] এই প্রবণতার ফলে কোয়াকারবাদের প্রথম দশকগুলোতে কিছু নারী মন্ত্রী ও লেখিকার উদ্ভব হয়, যেমন মেরি মলিনিউবারবারা ব্লগডন[৩৪] তবুও সাধারণভাবে যেসব নারী ধর্মপ্রচার করতেন বা ধর্ম বিষয়ে মতামত দিতেন তারা পাগলামি ও ডাইনবিদ্যার জন্য সন্দেহভাজন হওয়ার বা এর অভিযোগের শিকার হবার বিপদের মুখে ছিলেন। এবং অ্যান এসকিউ এর মত অনেককেই তখন "পিতৃতান্ত্রিক নিয়মকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করার কারণে"[৩৫] খুটিতে বেঁধে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল।[৩৬]

ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে, নারীবাদী ধারণাগুলি অরথোডক্স বা প্রচলিত ধর্মমতের বদলে ওয়ালডেনসিয়ানসক্যাথারিস্টদের এর মত হেটেরোডক্সি বা প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী হিসেবে বিবেচিত হয়। লেভেলারস এর মত ধর্মীয় সমানাধিকারবাদী সংগঠনগুলো লৈঙ্গিক সাম্যের পক্ষে ছিল, এবং তাই তাদের রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল। লেভেলারস নারীরা বিশালাকারে মিছিল বের করে, এবং সমানাধিকারের আবেদন করেন। কিন্তু সেইসময়ের কর্তৃপক্ষ সেই আবেদনকে খারিজ করে দেয়।[৩৭]

ডাইনিদের পুড়িয়ে মারা

সপ্তদশ শতক আরো অনেক উদীয়মান লেখিকারই সাক্ষী হয়েছিল, যেমন অ্যান ব্র্যাডস্ট্রিট, বাথসুয়া মেকিন, মারগারেট ক্যাভেন্ডিশ, ডাচেস অফ নিউক্যাসল, লেডি মেরি রথ,[৩৮][৩৯] ইউজেনিয়া নামে একজন বেনামী নারী, মেরি শাডলেই, এবং মেরি অ্যাস্টেল। তারা নারীদের পরিবর্তিত ভূমিকা সম্পর্কে তুলে ধরেন, এবং নারীশিক্ষার দাবি জানান। তবে তাদেরকে অনেক শত্রুভাবাপন্নতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, বিংশ শতকের পূর্বে ক্যাভেন্ডিশ এবং রথের লেখা প্রকাশিত হয়নি।

সপ্তদশ শতাব্দীর ফ্রান্সেও উচ্চবিত্ত বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ এর উদ্ভব দেখা যায় যেগুলো নারীর দ্বারাই চালিত হত এবং যেখানে নারীরা শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন।[৪০] কিন্তু নারীদেরকে আলোচনাসভাগুলোর সদস্যপদ দেয়ার পরও নারীরা পেছনে পড়ে যান। নারীরা লিখতেন, কিন্তু তাদের লেখা ছাপানো হত না।[৪১] আলোচনা সভাগুলোতে নারীদের সীমিত ভূমিকা থাকার পরও জঁ-জাক রুশো নারীদেরকে "পুরুষের 'স্বাভাবিক' আধিপত্যের প্রতি হুমকি" বলে মনে করতেন।[৪২]

মেরি অ্যাস্টেলকে প্রায়শই প্রথম নারীবাদী লেখক হিসাবে বর্ণনা করা হয়। যাইহোক, তাকে নিয়ে এমনটা বলতে গেলে তিনি তার লেখাগুলোর জন্য তার যে পূর্ববর্তী যেমন আনা মারিয়া ফন শারম্যান, বাথসুয়া মেকিন-দের কাছে ঋণী তাদেরকে অস্বীকার করা হয়। তিনি অবশ্যই ইংরেজি ভাষার প্রথম দিককার নারীবাদী লেখিকাদের মধ্যে একজন, যার বিশ্লেষণগুলো কেবল তার সময়ের জন্যই নয়, আজও প্রাসঙ্গিক, এবং যার নারীদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করায় উদ্যম পূর্ববর্তীদেরকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।[৪৩][৪৪] অ্যাস্টেল ও আফরা বেন একসাথে মিলে সপ্তদশ শতকে নারীবাদী তত্ত্বের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তী আরেক শতক পর্যন্ত কোন নারীই আর এত জোড়ালোভাবে আওয়াজ তোলেননি। ঐতিহাসিক নথিগুলোতে দেখা যায়, অ্যাস্টেল প্রায়ই তার চেয়ে ছোট এবং আরও আলোচ্য বন্ধু ও পত্রযোগাযোগকারী লেডি মারি ওর্টলি মনটেগু এর ছায়ায় ছায়াবৃত হয়ে গেছেন।

সামাজিক মূল্যবোধের উদারীকরণ এবং যুক্তরাজ্যে শাসনব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের ধর্মনিরপেক্ষীকরণ শিল্পে নারীদেরকে সুযোগ প্রদান করেছিল। এটি নারীদের জন্য তাদের উদ্দেশ্যের প্রতি এগিয়ে যাবার একটা সুযোগ করে দেয়। কিন্তু নারী নাট্যকারগণ একই রকম শত্রুভাবাপন্নতার শিকার হন। যারা এর শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন ক্যাথেরিন ট্রটার ককবার্ন, মেরি ম্যানলে এবং মেরি পিক্স। এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিলেন আফরা বেন[৪৪][৪৫][৪৬] তিনি প্রথম ইংরেজ নারী যিনি পেশাদার লেখকের মর্যাদা অর্জন করেছিলেন।[৪৭] তিনি একজন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার এবং রাজনৈতিক প্রচারক ছিলেন।[৪৮] তার জীবদ্দশায় তিনি সফল হলেও, হেনরি ফিল্ডিং ও স্যামুয়েল রিচার্ডসনের মত লেখকগণ তাকে অবজ্ঞা করে "অনারীসুলভ" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[৪৮] একইভাবে, ঊনিশ শতকের সমালোচক জুলিয়া ক্যাভানাফ বলেন, "পুরুষকে নারীর নৈতিক মানদণ্ডে উন্নীত না করে বেন নিজে পুরুষের স্থূলতাতেই নিজেকে নিমজ্জিত করেছেন।"[৪৯] বিংশ শতকে বেন আরও বিস্তৃত পরিসরে পাঠক লাভ করেন, এবং সেইসাথে বিশ্লেষণী স্বীকৃতি লাভ করেন। ভারজিনিয়া উল্‌ফ তার কর্মজীবনের প্রশংসা করেন এবং লেখেন, "সকল নারীরই এক সঙ্গে মিলে আফরা বেনের সমাধিতে পুষ্প নিবেদন করা উচিৎ ... কারণ তার কারণেই নারীরা তাদের মনের কথা বলার অধিকার লাভ করেছেন।"[৫০]

কনটিনেন্টাল ইউরোপে গুরুত্বপূর্ণ নারীবাদী লেখকদের মধ্যে আছেন মারগুয়েরিত দে নাভার, মেরি দে গর্নে, আনা মারিয়া ফন শারম্যান, যারা নারীবিদ্বেষের বাঁধা অতিক্রম করে নারীশিক্ষার জন্য লড়াই করেছেন। সুইজারল্যান্ডে ১৬৯৪ সালে প্রথম কোন নারীর লেখা ছাপানো হয়। লেখাটির নাম ছিল গ্লবেনস-রেশেন্সশাফট। এখানে হরটেনসিয়া ফন মুস নারীদের চুপ করে থাকা উচিৎ - এই ধারণার বিরুদ্ধে লেখেন। তার আগের বছর ১৬৯৪ সালে "রোজ ডার ফ্রেহাইট" (রোজ অফ ফ্রিডম) শিরোনামে একটি লেখা বেনামে ছাপানো হয়েছিল। সেখানে লেখক পুরুষ আধিপত্যবাদ ও নারী নির্যাতনকে নিন্দা করেছিলেন।[৫১]

নিউ ওয়ার্ল্ড বা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশে মেক্সিকো এর নান হুয়ানা ইনেস দে লা ক্রুজ (১৬৫১-১৬৯৫) তার রচনা "রিপ্লাই টু সর ফিলোতেয়া"-তে নারীশিক্ষার সমর্থনে লেখেন।[৫২] সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে নারীর, বিশেষ করে শিক্ষিত নারীর লেখা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সেই শতকের শেষের দশকগুলোর সাহিত্যকে কখনও কখনও "ব্যাটল অফ দ্য সেক্সেস" বা "লিঙ্গগুলোর যুদ্ধ" বলা হয়ে থাকে,[৫৩] এবং প্রায়ই সেই সাহিত্যগুলো প্রায়ই অদ্ভুতভাবে অনেক বেশি তর্কময় ছিল, যেমন হানাহ্‌ উলি এর "দ্য জেন্টলউইমেনস কম্প্যানিয়ন"।[৫৪] যাইহোক, নারীগণ এইসব রচনার থেকে মিশ্র বার্তা লাভ করেন। কারণ তাদের লেখার প্রতিক্রিয়ায় তাদেরকে কর্কশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুনতে হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এমনকি অনেক নারীও তাদের বিরুদ্ধে লিখে আত্ম-অবমাননাকেই সমর্থন করেছিল। একই সাথে তারা দুটি দ্বন্দ্বময় সামাজিক চাপের মুখে পড়েছিলেন। কারণ বাসার বাইরের অল্প সংখ্যক শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন নারীর স্বাধীন চিন্তাকে উৎসাহিত করেছিল, কখনও কখনও আবার এগুলো সামাজিক নিয়মকেই বলবৎ করত।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Botting Eileen H, Houser Sarah L. "Drawing the Line of Equality: Hannah Mather Crocker on Women's Rights". American Political Science Review (2006), 100, pp. 265–278.
  2. Nancy F. Cott, 1987. The Grounding of Modern Feminism. New Haven: Yale University Press.
  3. Karen M. Offen, 2000. European Feminisms, 1700–1950: A Political History. Stanford: Stanford University Press.
  4. Ferguson, Margaret. Feminism in time. Modern Language Quarterly 2004 65(1), pp. 7–27
  5. Baruch, Elaine Hoffman, Women in Men's Utopias, in Rohrlich, Ruby, & Elaine Hoffman Baruch, eds., Women in Search of Utopia, op. cit., p. [209] and see p. 211 (Plato supporting "child care" so women could be soldiers), citing, at p. [209] n. 1, Plato, trans. Francis MacDonald Cornford, The Republic (N.Y.: Oxford Univ. Press, 1973), Book V.
  6. Plato। "The Republic"classics.mit.edu। Translated by Benjamin Jowett। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  7. Hakim, Souad (২০০২), "Ibn 'Arabî's Twofold Perception of Woman: Woman as Human Being and Cosmic Principle", Journal of the Muhyiddin Ibn 'Arabi Society, 31: 1–29 
  8. Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 196 & 198, আইএসবিএন 0-313-32270-8 
  9. Lindsay, James E. (২০০৫), Daily Life in the Medieval Islamic World, Greenwood Publishing Group, পৃষ্ঠা 198, আইএসবিএন 0-313-32270-8 
  10. Belo, Catarina (২০০৯)। "Some Considerations on Averroes' Views Regarding Women and Their Role in Society"। Journal of Islamic Studies20 (1): 6-15। ডিওআই:10.1093/jis/etn061 
  11. Black, Edwin (২০০৪), Banking on Baghdad: Inside Iraq's 7,000 Year History of War, Profit, and Conflict, John Wiley and Sons, পৃষ্ঠা 34, আইএসবিএন 0-471-70895-X 
  12. "Women in medieval society"। ২০২১-০২-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭ 
  13. Blain, Virginia, et al. The Feminist Companion to Literature in English (Yale UP, 1990)
  14. "Peasants' Revolt: The Time When Women Took Up Arms"। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৩ ,
  15. "Peasants' Revolt: The Time When Women Took Up Arms"। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৩ 
  16. Hogenboom, Melissa. "Peasants' Revolt: The time when women took up arms." BBC News. BBC News Magazine, 14 June 2012. Web. 7 March 2013.
  17. Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 167। আইএসবিএন 9780395419502 
  18. [Manetti, Giannozzo. "Life of Socrates"]
  19. Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 159–160। আইএসবিএন 9780395419502 
  20. Shakespeare, William (১৮৯৮-০১-০১)। Taming of the shrew (ইংরেজি ভাষায়)। American Book Co.। 
  21. [Bruni, Leonardo. "Study of Literature to Lady Baptista Maletesta of Montefeltro," 1494.]
  22. Boguet, Heneri (১৬০৩)। Discours Execrable Des Sorciers: Ensemble leur Procez, faits depuis 2. ans en çà, en diuers endroicts de la France. Avec une instruction pour un Juge, en faict de Sorcelerie...। Rouen। 
  23. Guazzo, Francesco (১৬০৮)। Compendium maleficarum। Milan। 
  24. de Beauvoir, Simone, English translation 1953 (১৯৮৯), The Second Sex, Vintage Books, পৃষ্ঠা 105, আইএসবিএন 0-679-72451-6 
  25. Schneir, Miram, 1972 (১৯৯৪), Feminism: The Essential Historical Writings, Vintage Books, পৃষ্ঠা xiv, আইএসবিএন 0-679-75381-8 
  26. Bridenthal, Renate; Koonz, Claudia; Stuard, Susan Mosher (১৯৮৭-০১-০১)। Becoming Visible: Women in European History (ইংরেজি ভাষায়)। Houghton Mifflin। পৃষ্ঠা 160। আইএসবিএন 9780395419502 
  27. Spencer, Anna Garlin and Mitchell Kennerly, eds. The Drama of a Woman of Genius. NY: Forum Publications, 1912.
  28. "The protestant education in the 16th century"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭ 
  29. "Women in the Protestant reform"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৭ 
  30. Schneir, Miram, 1972 (১৯৯৪), Feminism: The Essential Historical Writings, Vintage Books, পৃষ্ঠা xiv, আইএসবিএন 0-679-75381-8 
  31. Fraser, Antonia. The weaker vessel: Women's lot in seventeenth century England. Phoenix, London 1984.
  32. Marshall-Wyatt, Sherrin. Women in the Reformation era. In, Becoming visible: Women in European history, Renate Bridenthal and Claudia Koonz (eds.) Houghton-Mifflin, Boston 1977.
  33. Thomas, K. Women and the Civil War sects. 1958 Past and Present 13.
  34. Persecution and Pluralism: Calvinists and Religious Minorities in Early.... By Richard Bonney, David J. B. Trim. [১]
  35. "Lerner, Gerda. "Religion and the creation of feminist consciousness". Harvard Divinity Bulletin November 2002"। ২০০৮-০৫-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৫-০৯ 
  36. Moses, Claire Goldberg. French Feminism in the 19th Century. 1984, p. 7.
  37. "British Women's Emancipation Since the Renaissance"। ২৬ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৩ 
  38. The poems of Lady Mary Roth. Roberts, Josephine A (ed.) Louisiana State University 1983
  39. Greer, Germaine. Slip-shod sybils Penguin 1999, at 15-6
  40. Goldberg, Claire Moses. French Feminism in the 19th Century. Syracuse: State University of New York, 1985, p. 4.
  41. Bodek, Evelyn Gordon. "Salonieres and Bluestockings: Educated Obsolescence and Germinating Feminism." Feminist Studies 3 (Spring-Summer 1976), p. 185.
  42. Goldberg, Claire Moses, p. 4.
  43. Kinnaird, Joan. "Mary Astell: Inspired by ideas" in D.Spender, ed., Feminist Theories, p. 29.
  44. Walters, Margaret. "Feminism: A very short introduction". Oxford University 2005 (আইএসবিএন ০-১৯-২৮০৫১০-X)
  45. Goreau, Angeline. Aphra Behn: A scandal to modesty (c. 1640-1689) in Spender op. cit., pp. 8-27,
  46. Woolf, Virginia. A room of one's own. 1928, at 65.
  47. Janet Todd. The Secret Life of Aphra Behn. New Brunswick, NJ: Rutgers UP, 1997, p. 4.
  48. Janet Todd, p. 2.
  49. Kavanagh, Julia. English Women of Letters. (London, 1863), p. 22.
  50. Woolf, Virginia. A Room of One's Own. NY: Penguin Books, 1989, p. 71.
  51. Färber, Silvio (২০১১)। ""Die Rose der Freyheit": eine radikal-feministische Streitschrift von "Camilla" aus dem Jahre 1693"Jahrbuch der Historischen Gesellschaft Graubünden: 85–174 – e-periodica.ch-এর মাধ্যমে। 
  52. Juana Inés de la Cruz, Sor. Respuesta a Sor Filotea 1691. pub posthum. Madrid 1700
  53. Upman AH. "English femmes savantes at the end of the seventeenth century". Journal of English and Germanic Philology 12 (1913)
  54. Woolley, Hannah. The Gentlewoman's Companion. London, 1675.