সুগতাকুমারী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুগতাকুমারী
সুগতাকুমারী
জন্ম২২ জানুয়ারি ১৯৩৪
আরানমুলা,ভাজুভেলিল থারাভাদু, কেরালা
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাকবি এবং সমাজকর্মী
প্রতিষ্ঠানপ্রকৃতির সংরক্ষণ সমিতি, অভয়া
উল্লেখযোগ্য কর্ম
Raathrimazha,Paavam Manavahridayam, Muthuchippi, Irulchirakukal and Swapnabhoomi
পুরস্কারপদ্মশ্রী, ভায়ালার পুরস্কার, এজুথাচান পুরস্কার

সুগতাকুমারী (জন্ম ২২ জানুয়ারি ১৯৩৪) একজন ভারতীয় কবি এবং সমাজকর্মী, যিনি দক্ষিণ ভারতের কেরালায় পরিবেশ ও নারীবাদী আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে পরিচিত।  তিনি তার কবি পিতার সামাজিক সক্রিয়তা এবং জাতীয়তাবাদী চেতনায়  প্রভাবিত হন।[১] তিনি প্রকৃতি সংরক্ষণ সমিতি, প্রকৃতি সংরক্ষণে অভয়া সংগঠন এবং মানসিকভাবে অসুস্থদের জন্য একটি ডে-কেয়ার সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তিনি কেরালা স্টেট উইমেন’স কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

সুগতাকুমারী ১৯৩৪ সালের ৩ জানুয়ারী কেরালার ভাজুভেলিল থারাভাদু এ আরানমুলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা, বোদেশ্বরন ছিলেন বিখ্যাত একজন গান্ধী চিন্তাবিদ ও লেখক, যিনি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত ছিলেন। তার মাতা ভি.কে. কারতিয়ায়িনী সংস্কৃত ভাষায় ছিল যার বিশাল পান্ডিত্য এবং সংস্কৃত ভাষার শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন।[২] তিরুবনন্তপুরম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর সুগতাকুমারী ১৯৫৫ সালে দর্শনশাস্ত্রে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন । পরবর্তীতে থিসিসের জন্য তিন বছর 'কমপারেটিভ স্টাডি অফ দি কনসেপ্ট অফ মোক্ষ ইন ইনডিয়ান স্কুলস অফ ফিলোসপি' গবেষণা করেছিলেন, কিন্তু থিসিস সম্পন্ন করেননি।

সুগতাকুমারী এর স্বামী ডাঃ কে. ভায়ালুদ্দন নায়ার (১৯২৯-২০০৩) ও একজন শিক্ষাবিদ ও লেখক ছিলেন। শিক্ষাবিষয়ক মনোবিজ্ঞানের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নায়ার কৃতিত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজ করেছেন যার মধ্যে রয়েছে শ্রী অরবিন্দো’স ফিলোসপি বিষয়ে গবেষণা করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন।[৩] লক্ষ্মী নামের তাঁদের একটি মেয়ে আছে। সুগতাকুমারী এর বড় বোন হৃদয়াকুমারী সাহিত্য সমালোচক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন । রোমান্টিকতা নিয়ে মালয়ালম ভাষায় রচিত গবেষণাধর্মী “কল্পনীকথা (Kalpanikatha)” গ্রন্থের জন্য হৃদয়াকুমারী কেরালা সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার ১৯৯১ লাভ করেছিলেন।

বর্তমানে সুগতাকুমারী কেরালা স্টেট জাওহার বালাভবন, থিরুভানান্থপুরাম এর অধ্যক্ষ এবং কেরালা স্টেট ইনস্টিটিউট অফ চিল্ড্রেন’স সাহিত্য কর্তৃক প্রকাশিত শিশু পত্রিকা থালিরু এর প্রধান সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।

সাহিত্য কর্ম[সম্পাদনা]

সুগতাকুমারী রচিত প্রথম কবিতা ১৯৫৭ সালে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়েছিল এবং যার মাধ্যমে ব্যাপক পাঠক মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। Pathirappookal (Flowers of Midnight) রচনার জন্য সুগতাকুমারী ১৯৬৮ সালে কেরালা সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন।  Raathrimazha (Night Rain) এর জন্য ১৯৭৮ সালে কেন্দ্র সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন। Paavam Manavahridayam, Muthuchippi, Irulchirakukal and Swapnabhoomi হলো তার অনন্য অসাধারন রচনা।

সুগতাকুমারী’র শুরুর রচনাগুলিতে দুঃখময় ভালোবাসার গীতিকথা পরিলক্ষীত হলেও পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংবেদনশীল বিষয়, নারীদের অধিকার ও অবিচার তুলে ধরেন। পরিবেশগত সমস্যা এবং অন্যান্য সমসাময়িক সমস্যাগুলিও তাঁর কবিতায় তীব্রভাবে বর্ণিত হয়েছে।

সুগতাকুমারীকে সমসাময়িক মালয়ালম কবিদের মধ্যে সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং সবচেয়ে দার্শনিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর কবিতায় জীবনের বিষণ্ণতা ও দুঃখবোধকে প্রতিফলিত করেছেন সুনিপুনভাবে। সুগতাকুমারী ভাষায়, "আমি আমার মানসিক উৎসাহের দ্বারা বেশিরভাগ লেখার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছি; আমার কয়েকটি কবিতা আনন্দদায়ক বলে মনে করা যেতে পারে। কিন্তু এই দিনগুলোতে আমার মনে হয় আমি ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছি, বস্তুত যা নিরর্থক বা অর্থহীন।" [৪] সুগতাকুমারী এর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনাগুলির মধ্যে Raathrimazha, Ambalamani(temple bell) and Manalezhuthu অন্যতম। শিশুসাহিত্যে অবদান এর জন্য ১০০৪ সালে স্টেট ইনস্টিটিউট অফ চিল্ড্রেন’স লিটারেচার তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করে। তিনি অনেক অনুবাদ সাহিত্যও রচনা করেছেন।

কেরালা সরকারের সর্বোচ্চ সাহিত্যিক সম্মাননা ভায়ালার পুরস্কার (Vayalar Award) এবং এজুথাচান পুরস্কার (Ezhuthachan Puraskaram) সহ তার সাহিত্যকর্মের জন্য আরও অনেক পুরস্কার জিতেছেন।[৫][৬] ২০০৪ সালে তাকে কেরালা সাহিত্য একাডেমী ফেলোশিপ দেওয়া হয়।[৭] তিনি ২০০৬ সালে ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাবপদ্মশ্রী পেয়েছেন।[৪] ২০১২ সালে তিনি তৃতীয় মালয়ালম লেখক হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ “সরস্বতী সম্মান”, “পণ্ডিত কারুপ্পন পুরস্কার” লাভ করেছেন।[৬]

সামাজিক কার্যক্রম[সম্পাদনা]

সুগতাকুমারী একজন  প্রকৃতি সংরক্ষণবাদী হিসেবে সোসাইটি ফর কনজারভেশন অফ নেচার এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিমজ্জন এর কবল থেকে ১৯৭০ সালে কেরালার সাইলেন্ট ভ্যালি নামে প্রাকৃতিক বন রক্ষার্থে জাতীয় আন্দোলন পরিচালনা করেন। তার কবিতা “মারাথিনু স্তুতি” (Marathinu Stuthi-Ode to a Tree) এ আন্দোলনের প্রতীক ও দি সেইভ সাইলেন্ট ভ্যালি ক্যাম্পেইন সভার উদ্বোধনী সঙ্গীত হিসেবে নির্ধারন করা  হয়েছিল। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বনায়ন প্রচেষ্টার জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন প্রথম ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী বৃক্ষ মিত্র পুরস্কার ।

তিনি বিভিন্ন নারী আন্দোলনের সাথেও জড়িত ছিলেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন কেরালা স্টেট উইমেন কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে। অভয়া  (শরণার্থী) নামীয় একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে মহিলা মানসিক রোগীদের আশ্রয় এবং আশা ভরসার যোগান দাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Status of women declining: Sugathakumari" 
  2. Women Writing in India: The twentieth century (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসবিএন 9781558610293 
  3. "Educationist Velayudhan Nair dead - Times of India" 
  4. "Thiruvananthapuram News : `A pleasant surprise'"। Archived from the original on ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৬। 
  5. "Ezhuthachan Puraskaram for Sugathakumari" 
  6. "Literary Awards - Government of Kerala, India"। ১১ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. "Award for Sugathakumari"