লীলা পুনাওয়ালা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
লীলা পুনাওয়ালা
জন্ম১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৪
অন্যান্য নামলীলা থাডানি
পেশাবিশ্বপ্রেমিক
মানবতাবাদী
শিল্পপতি
কর্মজীবন১৯৬৭ থেকে
পরিচিতির কারণকর্পোরেট ক্ষেত্রে নেতৃত্বদান
মানবপ্রীতি
সামাজিক কাজ
দাম্পত্য সঙ্গীফিরোজ পুনাওয়ালা
পুরস্কারপদ্মশ্রী
অর্ডার অফ দ্য পোলার স্টার
শিরোমণি মহিলা পুরস্কার
ফোর ওয়ে টেস্ট পুরস্কার
বিজয় রত্ন
শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এফ আই ই পুরস্কার
উদ্যোগ রতন পুরস্কার
বর্ষসেরা আন্তর্জাতিক নারী
রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ পুরস্কার
রাজীব গান্ধী শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার
গ্লোবাল ইন্ডিয়া শ্রেষ্ঠত্ব পুরস্কার
সমাজশ্রী পুরস্কার
হিন্দ গৌরব পুরস্কার
ইন্দিরা গান্ধী স্মারক পুরস্কার
পুনের গর্ব পুরস্কার
ইন্ডিয়ান উইমেন সায়েন্টিস্টস এসোসিয়েশন আজীবন সম্মাননা পুরস্কার
উদ্যোগ ভূষণ পুরস্কার
ওয়েবসাইটwww.lilapoonawallafoundation.com

লীলা ফিরোজ পুনাওয়ালা (জন্ম ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৪) একজন ভারতীয় শিল্পপতি, বিশ্বপ্রেমিক, মানবতাবাদী[১] এবং লীলা পুনাওয়ালা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, যেটি একটি বেসরকারী সংস্থা এবং ভারতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেয়েদের মধ্যে পেশাদারী শিক্ষা প্রসারের জন্য বৃত্তি এবং নির্দেশনা প্রদান করে। [২] তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পেশাদার ডিগ্রি অর্জনকারী দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা এবং আলফা লাভাল ভারত এবং টেট্রা প্যাক ভারতের প্রাক্তন সভাপতি।[৩] তিনি, ১৯৮৯ সালে, ভারত সরকার দ্বারা চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হয়েছেন[৪] এবং ২০০৩ সালে, সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাফ দ্বারা অর্ডার অফ দ্য পোলার স্টার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।[৫][৬]

জীবনী[সম্পাদনা]

লীলা পুনাওয়ালা, বিবাহপূর্ব নাম লীলা থাডানি,[৭] ব্রিটিশ ভারতের সিন্ধু অঞ্চলের হায়দ্রাবাদে, ১৬ই সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ সালে, এক সিন্ধি পরিবারে, পাঁচ সন্তানের মধ্যে একজন হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন। [৫] তিন বছর বয়সে তিনি তার বাবাকে হারান এবং, ভারত বিভাজনের সময়, তার পরিবার পুনে বসবাসের জন্য উদ্বাস্তু হয়ে ভারতে চলে এসেছিলেন।[৮] তিনি পুনেতে তার প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন এবং তারপর ১৯৬৭ সালে, তিনি পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সরকারি প্রকৌশল কলেজ থেকে যান্ত্রিক প্রকৌশলে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক হন [৫] তিনি রুস্তন এবং হর্নসবিতে একজন শিক্ষানবিশ হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। এখানেই তার ভবিষ্যৎ স্বামী ফিরোজ পুনাওয়ালার সাথে তার দেখা হয়। ফিরোজ দাউদি বোহরা পরিবার থেকে ছিলেন এবং একই কোম্পানিতে কাজ করতেন।[৯] কোম্পানির নিয়মানুসারে একই পরিবারের সদস্যদের একসাথে কাজ করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে, লীলা সুইডিশ বহুজাতিক আলফা লাভালের ভারতীয় বিভাগে শিক্ষানবীশ প্রকৌশলী হিসাবে কাজ নেন।[৯] সেখানে তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছিলেন, এবং দুই দশকের মধ্যে কোম্পানির সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। [১০] এভাবে তিনি ভারতে প্রথম নারী সিইওদের মধ্যে একজন হয়ে উঠেন। [১১] তার কর্মজীবনে, তিনি আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন।[৩] তার ব্যবস্থাপনায়, আলফা লাভল ভারতের কার্যক্ষমতা ৫০০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২.৫ বিলিয়নে পৌঁছোয়। অবশেষে তিনি ভারতে টেট্রা প্যাকের ব্যবসাকে অধিগ্রহণ করেন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হন। ২০০১ সালে তার অবসর গ্রহণের সময় পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন।[৬]

পুনাওয়ালা দম্পতির কোন সন্তান নেই। তারা পুনেতে থাকেন এবং সেখানে ফিরোজ পুনাওয়ালা তার ফুলের রপ্তানি ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। [৭]

উত্তরাধিকার এবং অবস্থান[সম্পাদনা]

২০০১ সালে সক্রিয়, শিল্প ও কৃষি (এম এ সি সি আই এ), মহারাষ্ট্র চেম্বার অফ কমার্সে, পুনে-সুইডিশ অধ্যায় প্রতিষ্ঠার পেছনে পুনাওয়ালার যে অবদান, তার প্রতিবেদন সেখানে রাখা হয়েছে। [৬] আলফা লাভাল থেকে অবসর গ্রহণের পর, তিনি লীলা কনসাল্টিং সার্ভিস কোম্পানি নামে একটি পরামর্শ সংস্থা খোলেন এবং বিভিন্ন কোম্পানির উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করতে থাকেন; ইউএসএ এর সুমবার্গার, এবং ইউকে এর আর্কো সেফটি ইকুইপমেন্ট তার মক্কেল দের মধ্যে অন্যতম।[১২] তিনি কোয়ালিটি সার্কেল ফোরাম অফ ইন্ডিয়ার মহারাষ্ট্র অধ্যায়ের সাথে জড়িত, যেখানে তিনি বিদায়প্রাপ্ত (ইম্যারিটাস) সভাপতি।[১২] তিনি পুনে সিটিজেনস পুলিশ ফাউন্ডেশনএর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, গ্রামীণ সম্প্রদায়ের কল্যাণে জড়িত এনজিও আস্থা নো কাই এর কার্যসমতির বোর্ডে আছেন, এবং পুনে ব্লাইন্ডমেনস এসোসিয়েশন এর সহ সভাপতি।[১২] তিনি ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের পুনে বিভাগীয় কমিটিরও সদস্য এবং সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লিডারশিপ এর পরিচালনা পরিষদীয় সদস্য।[১২]

এ. পি. জে. আবদুল কালাম বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি থাকাকালীন, পুনাওয়ালা সেই কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন, এছাড়াও হার্বাল এবং ফ্লোরাইটের সাব-কমিটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের প্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য পূর্বাভাস ও মূল্যায়ন কাউন্সিল (টিআইএফএসি)এর সদস্য হিসাবে তিনি ভারত সরকার এর সাথে যুক্ত ছিলেন।[১২][১৩] শিক্ষা সেক্টরের সঙ্গে তার সংযোগের মধ্যে আছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কেন্দ্রীয় দলের সদস্য; পুনে বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিম্বায়োসিস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটএর শিক্ষা সংসদ সদস্য; পুনে ব্যাসপীঠ, পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পার্কের পরিচালনা সংসদ সদস্য এবং সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অফ অ্যাডভান্সড কাউন্টিংএর পরিচালনা পরিষদ সদস্য।[১২] তিনি কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অ্যাসোসিয়েশনের ফুড টাস্ক ফোর্সের সভাপতি হিসাবে কাজ করেছেন। [১২] তিনি ইন্দো-সুইস ভোকেশনাল ট্রেনিং ট্রাস্টএর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এবং কল্পনাপ্রসূত পুনে আন্তর্জাতিক বায়োটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার সাথে উপ-গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে জড়িত ছিলেন।[১২] তিনি জীবন বীমা কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ার উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্যও ছিলেন।[১২]

লীলা পুনাওয়ালা প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সালে, ২০ জন মেয়েকে তাদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার জন্য সমর্থন করে, পুনাওয়ালা শুরু করেন লীলা পুনাওয়ালা ফাউন্ডেশন[১৪], তার ৫৩ তম জন্মদিনের উপহার হিসেবে তিনি যে টাকা পেয়েছিলেন তাই তিনি এই কাজে ব্যবহার করেছিলেন।[৯] তখন থেকে, প্রতিষ্ঠানটি মেয়েদের নির্বাচন করে, প্রাথমিকভাবে মাহারাষ্ট্রের পুনে, অমরাবতী এবং ওয়ারধা জেলা থেকে, তাদের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চালানোর জন্য। [১৫] প্রতিষ্ঠানটি ৪১৩৫ টিরও বেশি মেয়েকে তাদের শিক্ষার জন্য সহায়তা করেছে।

এর ২০ বছরের ইতিহাসে, প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে এখনও পর্যন্ত ৮২২৫ টি বৃত্তি দেওয়া হয়েছে।

৩টি বিভাগ এবং ১টি উপবিভাগে বিভক্ত হয়ে, বৃত্তি প্রাপ্ত মেয়েরা, নতুন পরিচয়ও পায়, যেটি নিম্নরূপ:

১) লীলা ফেলো: স্নাতকোত্তরের জন্য বৃত্তি প্রাপ্ত মেয়েরা লীলা ফেলো হিসাবে পরিচিত হয়।

২) লীলা মেয়েরা: বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য বৃত্তি গ্রহণকারী মেয়েরা।

৩) লীলা জুনিয়র: ৭ম শ্রেণীতে পাঠরত যে মেয়েরা বৃত্তি পায়। মেয়েরা সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিয়ে লীলা সিনিয়র হয়ে ওঠে। ১০ম শ্রেণীর পড়া শেষ করার পর মেয়েরা স্বয়ংক্রিয় বৃত্তি পায় যা স্নাতক হওয়ার সময় পর্যন্ত প্রযোজ্য।

প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা দান পর্যন্ত সীমিত নয়, এরা কাউন্সেলিং, পেশা পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণও দেয়।[৯] তার স্বামী, ফিরোজ পুনাওয়ালা, প্রতিষ্ঠানের কাজে তাকে সাহায্য করেন। পুনে শহরের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বও তাকে এই কাজে সাহায্য করেন। [১৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "A 67-year-old 'Leading Lady' sees modern women as 'too quick-tempered'"। The Weekend Leader। ২৮ আগস্ট ২০১৫। ২১ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. "Padmashree Ms. Lila Poonawalla receives awarded by Cricket-World Legend Sachin Tendulkar"2015। NRI Press। ১২ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  3. "Executive Profile"। Bloomberg। ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  4. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  5. "The Asha Centre profile"। The Asha Centre। ২০১৫। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  6. "The original first lady of Corporate India"। Economic Times। ৫ সেপ্টেম্বর ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  7. "Turning Mirrors Into Windows"। Afternoon। ৮ মে ২০১৪। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  8. "How Alfa Laval's Lila Poonawalla is leveraging lessons from career to promote higher education for underprivileged girls"। Economic Times। ৯ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  9. "Woman of substance"। Pune Mirror। ৭ জুন ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  10. "Padmashree Ms. Lila Poonawalla"। ISBA 2012। ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  11. "Pragati Leadership profile"। Pragati Leadership। ২০১৫। ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  12. "Lila Poonawalla Foundation"। Lila Poonawalla Foundation। ২০১৫। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  13. "161 School Girls selected for Lila Poonawalla Foundation scholarship 2014"। DNA Syndicate। ৩০ জুন ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  14. "Trustees Main Board"। Lila Poonawalla Foundation। ২০১৫। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫