পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ১৯৭৭

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন, ১৯৭৭

← ১৯৭২ ১৪ জুন ১৯৭৭ ১৯৮২ →

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪ টি আসন
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য দরকার ১৪৮টি আসন
  সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিরোধী দল তৃতীয় দল
 
নেতা/নেত্রী জ্যোতি বসু প্রফুল্লচন্দ্র সেন সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়
দল সিপিআই(এম) জনতা পার্টি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আর)
জোট বামফ্রন্ট
গত নির্বাচন ১৪ নতুন ২১৬
আসন লাভ ১৭৮ ২৯ ২০
আসন পরিবর্তন বৃদ্ধি ১৬৪ - হ্রাস ১৯৬
শতকরা ৩৫.৪৬% ২০.০২% ২৩.০২%
সুইং বৃদ্ধি ৮.০১% - হ্রাস ২৬.০৬%

নির্বাচনের পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী

সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়
কংগ্রেস

নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী

জ্যোতি বসু
বামফ্রন্ট

১৯৭৭ সালের ১৪ জুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজিত হয়।[১] কেন্দ্রে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারের পতনের পর এই নির্বাচন আয়োজিত হয়। বামফ্রন্ট এই নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। এই বিজয় বাম দলগুলির কাছেও বিস্ময়কর ছিল। এই নির্বাচনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট শাসনের সূত্রপাত ঘটে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) নেতা জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে রাজ্যে প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ করে।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালের মার্চ মাসে লোকসভা নির্বাচনে জনতা পার্টি জয় লাভ করলে নবগঠিত কেন্দ্রীয় সরকার সেই নয়টি রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আর) লোকসভা ভোটে পরাজিত হয়েছে।[২] পশ্চিমবঙ্গ ছিল এই নয়টি রাজ্যের অন্যতম।[২] কংগ্রেস(আর) বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন কংগ্রেস(আর) সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জানায়।[২] কিন্তু ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিলে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বি. ডি. জাটির আদেশক্রমে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়।[২]

১৯৭৭ সালের মার্চে আয়োজিত নির্বাচনের পূর্বে বামফ্রন্ট (ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) নেতৃত্বাধীন একটি নবগঠিত জোট) ও জনতা পার্টি আসন-ভাগাভাগির চুক্তির ভিত্তিতে অংশগ্রহণ করেছিল।[২] বিধানসভা নির্বাচনের আগেও দুই পক্ষ আসন-ভাগাভাগির ব্যাপারে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করে।[২] বামফ্রন্ট জনতা পার্টিকে ৫৬% আসন এবং জনতা পার্টি নেতা প্রফুল্লচন্দ্র সেনকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন ছেড়ে দিতে রাজি ছিল। কিন্তু জনতা পার্টি ৭০% আসনের দাবি জানায়।[৩] ফলে দুই পক্ষের জোট গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং বামফ্রন্ট ও জনতা পার্টি আলাদা আলাদা ভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়।[২]

এই নির্বাচনে যোগ্যতাসম্পন্ন ভোটদাতার সংখ্যা ছিল ২৫,৯৮৪,৪৭৪। ভোট পড়েছিল ৫৬.১৫%।[৪]

প্রচার[সম্পাদনা]

১৯৭৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি বিধানসভার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বামফ্রন্ট, কংগ্রেস(আর) ও জনতা পার্টির মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল।[২] বামফ্রন্ট ২৯৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। এর মধ্যে সিপিআই(এম) ২২৪টি আসনে এবং সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক ৩৬টি, বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল ২৩টি, মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক ৩টি, ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ৪টি ও বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস ২টি আসনে প্রার্থী দেয়। একটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন বামফ্রন্ট-সমর্থিত নির্দল প্রার্থী।[৪][৫][৬] কংগ্রেস(আর) ২৯০টি আসনে এবং জনতা পার্টি ২৮৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল।[৪]

ফলাফল[সম্পাদনা]

বামফ্রন্ট ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৩১টি আসন অধিকার করে এই নির্বাচনে জয় লাভ করে।[৪][৫][৭] এই নির্বাচনের ফলাফল বামফ্রন্টের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল। কারণ, তারা নির্বাচনের আগে জনতা পার্টিকে ৫৬% আসন ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল।[২][৮] ১৯৭৭ সালের ২১ জুন বামফ্রন্ট সরকার গঠন করে। জ্যোতি বসু এই সরকারে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।[৮][৯] বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।[১০]

অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) নেতা সন্তোষ রানা গোপীবল্লভপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন।[১১]

দল প্রার্থীসংখ্যা প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা %
বামফ্রন্ট ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) ২২৪ ১৭৮ ৫,০৮০,৮২৮ ৩৫.৪৬
সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক ৩৬ ২৫ ৭৫০,২২৯ ৫.২৪
বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল ২৩ ২০ ৫৩৬,৬২৫ ৩.৭৪
ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ৭৫,১৫৬ ০.৫২
মার্ক্সবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক ৫৮,৪৬৬ ০.৪১
বিপ্লবী বাংলা কংগ্রেস ৩৫,৪৫৭ ০.২৫
বামফ্রন্ট-সমর্থিত নির্দল ৩২,২৩৮ ০.২২
জনতা পার্টি ২৮৯ ২৯ ২,৮৬৯,৩৯১ ২০.০২
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (আর) ২৯০ ২০ ৩,২৯৮,০৬৩ ২৩.০২
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ৬৩ ৩৭৫,৫৬০ ২.৬২
সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া ২৯ ২১১,৭৫২ ১.৪৮
ভারতীয় ইউনিয়ন মুসলিম লিগ ৩২ ৫৪,৯৪২ ০.৩৮
ওয়ার্কার্স পার্টি অফ ইন্ডিয়া ২৯,২২১ ০.২০
ঝাড়খণ্ড পার্টি ৫,৭০১ ০.০৪
রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া ১,৬৫২ ০.০১
অল ইন্ডিয়া গোর্খা লিগ ৮১০ ০.০১
ভারতের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি ৪৮৯ ০.০০
অন্যান্য নির্দল ৫৬৬ ৯১২,6৬১২ ৬.৩৭
মোট ১,৫৭২ ২৯৪ ১৪,৩২৯,২০১ ১০০
সূত্র: ECI ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. West Bengal (India); Jatindra Chandra Sengupta (১৯৭৮)। West Bengal District Gazetteers: Nadiā। State editor, West Bengal District Gazetteers। পৃষ্ঠা 420। 
  2. N. Jose Chander (১ জানুয়ারি ২০০৪)। Coalition Politics: The Indian Experience। Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 105। আইএসবিএন 978-81-8069-092-1 
  3. The Wire. Why Has Nobody Called It Yet? An Analysis of the West Bengal Elections
  4. Election Commission of India. STATISTICAL REPORT ON GENERAL ELECTION, 1977 TO THE LEGISLATIVE ASSEMBLY OF WEST BENGAL ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে
  5. Bharati Mukherjee (১ জানুয়ারি ১৯৯১)। Political Culture and Leadership in India: A Study of West Bengal। Mittal Publications। পৃষ্ঠা 30–31। আইএসবিএন 978-81-7099-320-9 
  6. Communist Party of India (Marxist). West Bengal State Committee। Election results of West Bengal: statistics & analysis, 1952-1991। The Committee। পৃষ্ঠা 419। 
  7. New Left Review. RED BENGAL’S RISE AND FALL
  8. People's Democracy. West Bengal: How The Left Front And Its Government Emerged ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখে
  9. People's Democracy. Thirty Years of Left Front Government in West Bengal ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে
  10. Hindustan Times. Timeline of Left Front government in West Bengal
  11. Times of India. CPI(ML) MLA Santosh Rana quits party