সৌদি-ইয়েমেনি যুদ্ধ (১৯৩৪)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সৌদি-ইয়েমেনি যুদ্ধ সৌদি আরব ও ইয়েমেনের মধ্যে ১৯৩৪ সালে সংঘটিত হয়।

পটভূমি[সম্পাদনা]

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অটোমান সাম্রাজ্যের ক্ষমতা পতনের পর সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা ইবনে সৌদ নিজেকে নজদের রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯২৫ সালে তিনি হাশেমিদের কাছ থেকে হেজাজের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি নজদ ও হেজাজ রাজ্যদুটি একত্র করার ঘোষণা দেন এবং এভাবে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠা হয়। বেশিরভাগ সীমানাই অচিহ্নিত ছিল এবং নির্দিষ্ট কোন মানচিত্রও ছিলনা ও চুক্তি দ্বারা অনির্দিষ্ট ছিল।[১] তাকে “আধুনিক সলোমন” [২] হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল, এছাড়াও তাকে আরও অনেক নামে ডাকা হত যেমন “মরুভূমির ক্রমওয়েল” “নেপোলিয়ন”[৩] এবং “আরবের বিসমার্ক”[৪]

১৯৩২ সাল নাগাদ ইবনে সৌদ ইয়েমেন বাদে প্রায় সব আরব এলাকা নিজের নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন এবং এছাড়া ছোট্ট উপকূলীয় রাজ্যগুলোও তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল, যেগুলো ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে ছিল (ওমান, কুয়েত, বাহরাইন, এডেন ইত্যাদি)। হেজাজ ও ইয়েমেনের মধ্যে বিভিন্ন উপজাতীয় অঞ্চল ছিল যার উপর পূর্বে অটোমানরা দুর্বল সার্বভৌমত্ব ধরে রেখেছিল এবং ইবনে সৌদ ও ইয়েমেনের ইমাম উভয়েরই এই ভূখন্ডগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল।

আসির নিয়ে বিরোধ[সম্পাদনা]

১৯২৩ সালে ইমির ইদ্রিসী যিনি আসির আমীরাতের শাসক ছিলেন তিনি নেজদ, হেজাজ ও ইয়েমেনের মধ্যে অসহায় স্বাধীনতা বজায় রেখেছিলেন। তিনি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হেজাজের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন কিন্তু আসিরের দক্ষিণে ইয়েমেনের ইমাম ইয়াহিয়ার সাথে তার বিরোধ ছিল।[৫] ১৯২৬ সালে, আসিরের আমির সৌদি আরবের পক্ষে যোগ দিতে সম্মত হন এবং ১৯৩০ সালে এটি নেজদ ও হেজাজ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। যুদ্ধ শুরু হলে ইয়েমেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন সৌদি রাজ্য বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা বৃহত্তর ইয়েমেন নামেও পরিচিত।

সানা চুক্তি[সম্পাদনা]

যুদ্ধের শুরুতে, ১৯৩৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইয়েমেন সরকার এবং এডেনের ব্রিটিশ প্রতিনিধি একটি "বন্ধুত্ব চুক্তি" তৈরি করেছিল। এই চুক্তি ইয়েমেন এবং ব্রিটেনের মধ্যে এডেন নিয়ে ঝামেলা মেটায় এবং ইয়েমেন ও এডেনের রক্ষিত অঞ্চলের সীমান্তের মধ্যে কয়েকটি বিরোধের নিষ্পত্তি করে এবং যার অধীনে ব্রিটিশরা চল্লিশ বছর ধরে ইয়েমেনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিল। ফলে ইয়েমেনের ইমাম এডেন আক্রমণ বন্ধ করতে সম্মত হন।[৬] এই সময়ে, ব্রিটিশরা সৌদি ও ইয়েমেন উভয় পক্ষের সাথে "বন্ধুত্ব চুক্তি" করেছিল।[৭]

সৌদি-ইয়েমেনি যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯৩৪ সালের মার্চ মাসে, রাজা ইবনে সৌদ আরবের ক্রাউন প্রিন্সকে (পরে যিনি রাজা সৌদ হন) আদেশ দেন যে “তেহামা” পাহাড়ের উপকূলে পুনরায় শহর দখল করার জন্য যা ইয়েমেনের ইমাম দখল করেছিলেন;[৮] তেহামা আসির রাজ্যের একটি অংশ। সেখানে মে পর্যন্ত প্রকৃত যুদ্ধবিগ্রহ খবর তেমন ছিল না। ১৯৩৪ সালের মে মাসে, সৌদি বাহিনী উপকূলীয় অঞ্চলে তাদের আক্রমণ এগিয়ে নিয়েছিল এবং হোদায়দাকে দখল করেছিল। সৌদি উপজাতিরা হোদাইদায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সম্পদ লুট করার হুমকি দেয়, কিন্তু ক্রমবর্ধমান আদেশের জন্য ব্রিটিশ নাবিকদের আগমনের কারণে তারা হতাশ হয়।[৯] খাবারের অভাবের কারণে সানায় অস্থিরতায় সৃষ্টি হয়।[১০] ইমাম ঘোষণা করেন যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে, তার পুত্র পালিয়ে গেছে, এই খবর একটি গুজব।[১১] রাজা ও ইমাম উভয়ই আশিরের নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন।[১২] ইমাম যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার জন্য মিশরের রাজা ফুয়াদকে অনুরোধ করেন।[১৩] ১৯৩৪ সালের মে মাসে হোদাইদা দখল করার পর সৌদি বাহিনী সানার দিকে অগ্রসর হয়, যেখানে একটি যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী ছিল। ঐ এলাকার পাহাড়-পর্বত তাদের সাঁজোয়া গাড়ি এবং ট্যাংকগুলোর জন্য সমস্যাসংকুল ছিল।[১৪] যদিও সৌদিদের ট্যাঙ্ক সহ আরও ভাল অস্ত্র ছিল, তবে ইয়েমেনীরা পর্বত যুদ্ধে আরও অভিজ্ঞ ছিল। ১০ই মে ১৯৩৪ সালে দেখা যায় যে, যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট পরস্পরবিরোধী ছিল।[১৫] ইয়েমেনির হোদাইদা থেকে ফেরত এসেছিল, কিন্তু নাজরানে জয়লাভ করার দাবি করেছিল। ইমাম ২০০,০০০ সৈন্য নিয়ে রিয়াদে অগ্রসর হওয়ার সাহসী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, যদিও এই আক্রমণ কখনোই ঘটেনি।[১৬]

তায়েফের চুক্তি[সম্পাদনা]

১৯৩৪ সালের ১২ মে শান্তি আলোচনার সূচনা হয়। রাজা ইমামের পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কিন্তু কমপক্ষে ২০ বছর ধরে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির দাবি করেছিলেন।[১৭] যাহোক, ১৯৩৪ সালের ১৪ জুন ২০ বছরের শান্তি নিশ্চিত করার জন্য রাজা ও ইমামের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।[১৮][১৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "'Saudi Arabia'"। 'The Queenslander'। ১৯৩৩-০৮-৩১। 
  2. "'A modern Soloman'"। ১৯৩৪-১০-২৬। 
  3. "'Picturesque Figures'"। ১৯৩৪-০৫-০৫। 
  4. "'Who shall be lord of Arabia?'"। ১৯৩৪-০৫-০৯। 
  5. "'Daring Woman Traveller'"। ১৯২৩-০৭-০১। 
  6. "'Treaty with Yemen signed'"। ১৯৩৪-০২-১৭। 
  7. "'Britain Neutral - Protection for Nationals'"। ১৯৩৪-০৫-০৯। 
  8. "'Victors in Yemen'"। 'Launceston Examiner'। ১৯৩৪-০৫-১৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-২৫ 
  9. "'British sailors protect merchants at Hodeida'"। ১৯৩৪-০৫-১১। 
  10. "'Arab Fighting - Ibn Saud attacks Yemen'"। ১৯৩৪-০৫-০৫। 
  11. "'Arabian Upheaval - The Yemen invaded'"। ১৯৩৪-০৫-০৫। 
  12. "'Fighting in Arabia - Yemen invaded by warlike Wahabis'"। ১৯৩৪-০৫-০৫। 
  13. "'Fighting in Arabia'"। ১৯৩৪-০৫-০৫। 
  14. "'Arabia - More tribal fighting - British neutrality'"। ১৯৩৪-০৫-০৯। 
  15. "'Confused position in Arabia - Both forces claim successes'"। ১৯৩৪-০৫-১০। 
  16. "'Yemen disturbance'"। ১৯৩৪-০৫-১২। 
  17. "'Peace Negotiations in Arabian War'"। ১৯৩৪-০৫-১৪। 
  18. "'Saudi and Yemen - 20-year treaty'"। ১৯৩৪-০৬-১৬। 
  19. "'Arabian Affairs. Treaty Ready'"। ১৯৩৪-০৬-১৬।