পিটার বার্জ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পিটার বার্জ
১৯৬১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে পিটার বার্জ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামপিটার জন পার্নেল বার্জ
জন্ম(১৯৩২-০৫-১৭)১৭ মে ১৯৩২
ক্যাঙ্গারু পয়েন্ট, ব্রিসবেন, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৫ অক্টোবর ২০০১(2001-10-05) (বয়স ৬৯)
সাউথপোর্ট, কুইন্সল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২০০)
২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৮ জানুয়ারি ১৯৬৬ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৫৩–১৯৬৮কুইন্সল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪২ ২৩৩
রানের সংখ্যা ২২৯০ ১৪৬৪০
ব্যাটিং গড় ৩৮.১৬ ৪৭.৫৩
১০০/৫০ ৪/১২ ৩৮/৬৮
সর্বোচ্চ রান ১৮১ ২৮৩
বল করেছে ১৯৫
উইকেট
বোলিং গড় - ১২৯.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং - ১/০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২৩/০ ১৬৬/৪
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২১ আগস্ট ২০১৮

পিটার জন পার্নেল বার্জ (ইংরেজি: Peter Burge; জন্ম: ১৭ মে, ১৯৩২ - মৃত্যু: ৫ অক্টোবর, ২০০১) কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনের ক্যাঙ্গারু পয়েন্ট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন পিটার বার্জ

১৯৫৩ থেকে ১৯৬৮ সময়কালে ঘরোয়া অস্ট্রেলীয় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে খেলেছেন তিনি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৪২ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন পিটার বার্জ। ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৫ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে পিটার বার্জের।

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করে প্রভূতঃ সম্মান কুড়ান। এ সময় তিনি ২৫ টেস্ট ও ৬৩টি একদিনের আন্তর্জাতিক খেলা পরিচালনা করেছিলেন।

১৯৬৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটার হিসেবে মনোনীত হন তিনি। ১৯৯৭ সালে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণ, প্রশাসক ও আন্তর্জাতিক রেফারিসহ ঘোড়দৌড়ে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া (এএম) পদবীতে ভূষিত হন পিটার বার্জ।

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

কুইন্সল্যান্ডের ব্রিসবেনের শহরতলী ক্যাঙ্গারু পয়েন্টে এক ক্রিকেট অনুরাগী পরিবারে পিটার বার্জের জন্ম। বাবা টমাস জন জ্যাক বার্জ টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান নীল ইন্ড্রাস্ট্রিজে রাজ্য প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন শেষে বিক্রয়কর্মী হন ও পরবর্তীতে ডি. এন্ড ডব্লিউ. মুরে নামীয় বিপণীবিতানের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন।[১] জ্যাক বার্জ পূর্বাঞ্চলীয় শহরতলীতে ব্রিসবেন গ্রেড ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন ও পরবর্তীকালে ক্রিকেট প্রশাসক ছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৭ সালে স্বীয় মৃত্যুর পূর্ব-পর্যন্ত কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহীর দায়িত্বে ছিলেন।[২] এছাড়াও, ১৯৫২ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ান কন্ট্রোল বোর্ডে কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেছেন এবং ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত রাজ্য দল নির্বাচকের দায়িত্বে ছিলেন জ্যাক বার্জ।[২] পিটার এ প্রসঙ্গে স্মৃতিরোমন্থন করে জানান যে, আমার পিতা টেস্ট ক্রিকেটার হবার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। তিনি সর্বদাই খেলতে চাইতেন।[১]

পিতার অনুপ্রেরণায় ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা গড়ে উঠে। শৈশবে তিনি ঝুমঝুমি দেন যা ছিল অনেকটাই বল ও ব্যাটের ন্যায়।[১] তিন বছর বয়সে ব্যাটে হাত দেন। মাকে মোজায় বল বেধে দিতে উদ্বুদ্ধ করেন ও ঘণ্টাকাল আঘাত করতেন। পাঁচ বছর বয়সে বুরান্ডা বয়েজ স্টেট স্কুলে ভর্তি হন। পিতার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদ্যালয়ে সেরা ক্রিকেটার হন। সাড়ে আট বছর বয়সে প্রথমবারের মতো প্রতিযোগিতামূলক খেলায় অংশ নেন। নয় বছর বয়সে প্রথম সেঞ্চুরি করেন।[২] নয় বছর বয়সে বুরান্ডার পক্ষে ২২৩ রানের ইনিংস খেলার পর অত্যধিক তাপমাত্রার কারণে অবসর নেন। তার পিতা প্রতিপক্ষের কাছে এভাবে উইকেট বিলিয়ে দেয়ার কারণে তীব্র ভৎসনা করেন। বার্জ বলেন, ‘এটি বেশ সুন্দর পরামর্শ ছিল। আমি তা আর কখনো করিনি।’[১]

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষে থাকাকালে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ও উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলেন। এ পর্যায়ে ১১ ইনিংস খেলে একটি দ্বি-শতক, আটটি শতক, ৯৭ ও ০ রান তুলেন।[৩] তেরো বছর বয়সে রাজ্যের অন্যতম অভিজাত ব্যক্তিগত বিদ্যালয় অ্যাঙ্গলিকান চার্চ গ্রামার স্কুলে চলে যান।[৪] সিডনিতে বিদ্যালয় বালকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় কুইন্সল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন। ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ১০০ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস উপহার দেন তিনি। শেষ তিন বছর প্রথম একাদশে খেলেন ও শেষ বর্ষে অধ্যয়নকালে প্রথম গ্রেডের ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। তিনি উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলেন ও তিন নম্বর অবস্থানে ব্যাটিংয়ে নামতেন। রাজ্য দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছ থেকে খেলার উপযুক্ততার বিষয় আসলে তার বাবা কুইন্সল্যান্ডের নির্বাচনী পরিষদ থেকে সড়ে দাঁড়ান।[৩] তাস্বত্ত্বেও কলকলে পরিবেশ ও আত্মীয়-স্বজনের সান্নিধ্যে থাকতেই অধিক পছন্দ করতেন পিটার বার্জ।[১] চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্সিতে অধ্যয়ন করেন। ওয়ালি ওয়ামস্লে’র প্রশিক্ষণে রাজ্যের অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলার জন্য মনোনীত হন।[৩]

শেফিল্ড শিল্ড অভিষেক[সম্পাদনা]

কুইন্সল্যান্ডে ঐ সময় ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের অপরাজেয় দলের উইকেট-রক্ষক হিসেবে ছিলেন ডন টলন ও সংরক্ষিত অবস্থায় ছিলেন পরবর্তীকালে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা উইকেট-রক্ষক ওয়ালি গ্রাউট। ফলশ্রুতিতে উইকেট-রক্ষণের দায়িত্ব ছেড়ে দেন ও ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ ঘটান।[৩] ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কুইন্সল্যান্ডের সর্বশেষ খেলায় অভিষেক ঘটে তার। সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামেন তিনি। উভয় ইনিংসে দলীয় সংগ্রহে প্রথম পাঁচ উইকেট দ্রুত পতন ঘটলেও বার্জ ৫৪ ও ৪৬ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেছিলেন।[৩] এরফলে দলের পরাজয় এড়াতে বিরাট ভূমিকা পালন করেন তিনি।[৫]

এরপর ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে বার্জ দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। নভেম্বরে শুরু হওয়া মৌসুমের প্রথম খেলায় নিউ সাউথ ওয়েলসের রে লিন্ডওয়াল, কিথ মিলাররিচি বেনো’র ন্যায় সমৃদ্ধ বোলিং আক্রমণ মোকাবেলা করে ১০৩ রান তুলেন তিনি।[৩] পরের খেলায় এক অঙ্কের রানের কোঠা স্পর্শ করতে পারেননি। এরপর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৪ রান তুলেন তিনি। ৮৮, ৪৭ ও ৬৫ রান তুলে মৌসুম শেষ করেন। প্রথম মৌসুমে সবগুলো খেলায় অংশ নিয়ে ৪১.৮০ গড়ে ৪১৮ রান তুলেন।[৫]

১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে পূর্বেকার গ্রীষ্মের ন্যায় পুণরাবৃত্তি ঘটান পিটার বার্জ। মৌসুমের উদ্বোধনী খেলায় প্রতিপক্ষ নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ১২২ রান তুলেন। ফিরতি খেলায় ৯০ ও ৪১ রানের ইনিংস খেলার পর ৫৩ রান করেন।[৫]

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত করা হয়। সিডনিতে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজের পঞ্চম টেস্টে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। ঐ সময় অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই সিরিজে পরাজিত হয়েছিল। ফলে দল নির্বাচকমণ্ডলী নবাগতদেরকে সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে, অপ্রত্যাশিতভাবে বৃষ্টির কারণে চতুর্থ দিন বেলা ২টা পর্যন্ত খেলা আয়োজন করা সম্ভবপর হয়নি।[৩]

খেলার চতুর্থ বলের মাধ্যমে প্রথম বল স্পর্শ করেন। লেগ স্লিপে দণ্ডায়মান অবস্থায় লেন হাটনের ক্যাচ তালুবন্দী করেন তিনি। ফিল্ডিংয়ে নেমে লিন্ডওয়াল তাকে চতুর্থ বলটির দিকে নজর রাখতে বলেন। লিন্ডওয়াল হাটনকে লক্ষ্য করে পরপর তিনটি আউটসুইঙ্গার বল মারলেও চতুর্থটি ইনসুইঙ্গার মারেন। হাটনের ব্যাট স্পর্শ করে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ক্যাচ করায়ত্ত্ব করেন। বার্জ ১৭ ও অপরাজিত ১৮* রান তুললে অস্ট্রেলিয়া ফলো-অন এড়াতে আরও ১৫০ রানের প্রয়োজন ছিল।[৩][৫] তখনও দলটির ৩২ রানের দরকার ছিল ও উপর্যুপরী চতুর্থ টেস্ট পরাজয়ের দিকে এগুচ্ছিল। কিন্তু, সময়ের অভাবে তা ঘটেনি।[৫][৬] ঐ মৌসুমে তিনি ৪২.১১ গড়ে ৩৭৯ রান তুলেন।[৫]

ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন[সম্পাদনা]

১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের জন্য মনোনীত হন। দলে তার বাবা ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।[৩] আনুষ্ঠানিকভাবে এক সভায় বার্জ তার বাবাকে ‘জ্যাক’ হিসেবে ডাকেন। অন্যরাও তাই করেছিল।[১] জ্যামাইকার বিপক্ষে প্রস্তুতিমূলক খেলায় ২৯ ও ৬৯ রান তুলেন ও প্রথম টেস্টের জন্য মনোনীত হন। প্রথম ইনিংসে ১৪ রান তুলেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে তাকে ব্যাট হাতে নেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। খেলায় অস্ট্রেলিয়া নয় উইকেটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল। পরের খেলায় ত্রিনিদাদের বিপক্ষে শূন্য রান ও ২ সংগ্রহ করেন। ফলে সিরিজের বাদ-বাকী চার টেস্ট থেকে উপেক্ষিত ছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করেছিল।[৩][৬] সফরের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ব্রিটিশ গায়ানার বিপক্ষে ১৭৭ রানের ইনিংস খেলা। এতে সফরকারীরা ইনিংসের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল।[৫] প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৩৮.৭৫ গড়ে ৩১০ রান তুলেন।[৫]

ঐ সফরের পর বার্জ পিঠের ব্যথায় আক্রান্ত হন। অন্যদিকে তার পিতার হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগতে থাকেন ও এক পর্যায়ে তার জীবন কেড়ে নেয়। তবে তার স্বাস্থ্যের সমস্যা সন্তানের খেলোয়াড়ী জীবনে প্রভাব ফেলেনি।[১]

অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমের ঘরোয়া ক্রিকেটের খেলায় অংশ নেন।[৬] আটটি খেলার মধ্যে একটি খেলা বাদে কুইন্সল্যান্ডের সবগুলো খেলায় অংশ নিয়েছিলেন পিটার বার্জ। ১২ ইনিংসের মধ্যে অনেকগুলোতেই ইনিংসে সূচনালগ্নে মাঠে নেমেছেন। তবে, কোনটিতেই বড় অঙ্কের কোঠায় নিয়ে যেতে পারেননি। আটবার ২০-এর রানে ও চারবার ৫০ থেকে ৬৫ রানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ক্ষেত্র তৈরি করেন। ঐ মৌসুমে ৩৩.০০ গড়ে ৩৬৩ রান তুলেন। টেস্ট প্রস্তুতিমূলক খেলায় লিন্ডওয়াল একাদশের পক্ষে খেলে জনসন একাদশের বিপক্ষে অংশ নেন। ৭২ ও ৪৬ রান তুলে দলকে ২ উইকেটের ব্যবধানে জয় পেতে সহায়তা করেন।[৫]

ইংল্যান্ড গমন[সম্পাদনা]

বড় ধরনের ইনিংস খেলার সুযোগ না পেলেও পিটার বার্জকে ১৯৫৬ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য মনোনীত করা হয়। ইংরেজ ভূমিতে লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৯৯ রানের মাধ্যমে সফলতম যাত্রা শুরু করেন। পরের খেলায় ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে শূন্য রান তুললেও নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ১৩১ রান করেন। পরবর্তী খেলায় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে ৬১ রানের ইনিংস খেলেন।[৫]

টেস্ট শুরুর পূর্বে শেষ চার ইনিংসে মাত্র ৬৭ রান তুললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত সিরিজে অংশ নেয়ার পর আর্থার মরিস অবসর গ্রহণ করলে ব্যাটিং অর্ডারে শূন্যতা পূরণে পিটার বার্জকে পুনরায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।[৫] প্রথম তিন টেস্টে তিনি মাত্র ১৬.৮০ গড়ে ৮৪ রান তুলতে সক্ষম হন। হেডিংলিতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে এক অঙ্কের কোঠা অতিক্রমণে ব্যর্থ হন। অত্যন্ত শুষ্ক পিচে জিম লেকারের অফ স্পিনে দুবারই লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ যেতে বাধ্য হন। ফলশ্রুতিতে, ১৮ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো ইনিংস পরাজয়বরণ করে।[৬] এ ফলাফলের প্রেক্ষিতে তাকে শেষ দুই টেস্টে প্রথম একাদশের বাইরে রাখা হয়।[৫] অ্যাশেজ সিরিজ শুরু হবার পর অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক খেলায়ও তেমন সুবিধে করতে পারেননি। ১২ ইনিংসে মাত্র চারবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রান তুলতে পেরেছেন যা তাকে টেস্টে খেলার সুযোগ এনে দেয়নি।[৫]

ভারত উপমহাদেশ গমন[সম্পাদনা]

ভারতীয় উপমহাদেশে টেস্ট সফরে যান। করাচীতে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে পরাজয়ের পর তাকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়।[৫][৬] রন আর্চার, ইয়ান ক্রেগকিথ মিলারের ন্যায় আক্রমণধর্মী ব্যাটসম্যান ও অল-রাউন্ডারদের আঘাতপ্রাপ্তি ও অসুস্থতা বিদ্যমান থাকায় তার এ মনোনয়ন লাভ ছিল।[৭]

প্রথমবারের মতো এ টেস্ট সিরিজের সবগুলোতে অংশ নেন তিনি। মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সিরিজের উদ্বোধনী টেস্টে ৩৫ রান তোলেন। ঐ টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় পায়।[৫] বোম্বেতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে ৮৩ রানের প্রথম অর্ধ-শতকের সন্ধান পান তিনি। এরপর কলকাতায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে ৫৮ রান তুলেন। সমগ্র সিরিজে ৪৯.৫০ গড়ে ১৯৮ রান তুলেন ও তার দল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে।[৩][৫] ভারতে সফরকালীন জানতে পারেন যে, তার পিতা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত। কিন্তু, জ্যাকের কঠোর নির্দেশনায় দেশে ফিরে যেতে পারেননি।[৮]

১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে প্রথমবারের মতো প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রানের ফুলঝুড়ি ছোটাতে থাকেন। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ধারাবাহিক সেঞ্চুরি করেন। তবে, মৌসুমের মাঝামাঝি পর্যায়ে বড় সংগ্রহের দিকে যেতে পারেননি। সাতবার ধারাবাহিকভাবে ২০ থেকে ৮০ রানের মধ্যে ইনিংস খেলেন। গ্রীষ্মের শেষ খেলায় প্রথম দ্বি-শতক রান তুলেন। ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ২১০ রানের ইনিংসটির প্রথম বলেই আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান।[৩][৫] ব্যক্তিগত সমস্যা থাকা স্বত্ত্বেও ৭১.৮০ গড়ে ৭১৮ রান তুলেন তিনি।[৫] ঐ মৌসুমে জ্যাক বার্জ হৃদযন্ত্রের সংক্রমণের ফলে জাতীয় পর্যায়ের প্রস্তুতিমূলক খেলার ইনিংসের মাঝামাঝি পর্যায়ে অবসর নিতে বাধ্য হন পিটার বার্জ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বেকার খেলোয়াড় স্ট্যান ম্যাককাবেবিল ও’রিলি একাদশের খেলা ছিল এটি।[৮]

নিউজিল্যান্ড গমন[সম্পাদনা]

মৌসুম শেষে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। উইকেট-রক্ষণে দক্ষতা থাকায় অস্ট্রেলিয়া দল ব্যারি জার্মানের পরিবর্তে কোন বিকল্প উইকেট-রক্ষক প্রেরণ করেনি।[৩] বার্জের ভাষায়, পিতার জীবনে ক্রিকেট বিরাট অংশ বহমান ছিল। তিনিও আমার সাথে যেতে চাইতেন।[৮] ক্যান্টারবারির বিপক্ষে ১০৫ রান তুলে সফর শুরু করেন। এরপর অকল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৮১ রান তুললেও অন্য কোন খেলায় পঞ্চাশোর্ধ্ব রান তুলতে পারেননি।[৫]

ঐ সময়ে নিউজিল্যান্ড দলের টেস্ট মর্যাদা থাকলেও অস্ট্রেলিয়ান কন্ট্রোল বোর্ড খেলাগুলোকে মর্যাদা দানে প্রত্যাখান করে। তিনটি আন্তর্জাতিক খেলায় পিটার বার্জ খুব কমই ভূমিকা রাখতে সমর্থ হন। ২৮.৭৫ গড়ে ১১৫ রান তুলেন তিনি ও অস্ট্রেলিয়া দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। সমগ্র নিউজিল্যান্ড সফরে ৩৮.৭৫ গড়ে ৩১০ রান তুলনে তিনি।[৫]

খেলোয়াড়ী জীবনের এ পর্যায়ে পিটার বার্জ নিয়মিতভাবে বড় ধরনের রান সংগ্রহ করার দিকে মনোনিবেশ ঘটান। ফলশ্রুতিতে, টেস্ট দলে যোগ দিতে তাকে কোন বেগ পেতে হয়নি।

দক্ষিণ আফ্রিকা গমন[সম্পাদনা]

১৯৫৭-৫৮ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যান। টেস্ট শুরুর পূর্বে প্রস্তুতিমূলক খেলায় দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে অপরাজিত ১১১ রান তুলেন। পরের খেলায় বর্ডারের বিপক্ষে ৮০ রান তুলেন।[৫] জোহেন্সবার্গে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলার জন্য মনোনীত হন। ড্র হওয়া ঐ টেস্টে শূন্য ও ১৪ রান তুলেন।[৫]

দলের সহঃ অধিনায়কের দায়িত্বপালনকারী নীল হার্ভে আঘাত থেকে আরোগ্য লাভ করলে তিনি স্থানচ্যূত হন ও সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ৩-০ ব্যবধানে জয় পায়।[৬] ঐ সফরে বার্জ আর একটি প্রস্তুতিমূলক খেলায় পঞ্চাশ রানের ইনিংস খেলেন। ৪৯.০০ গড়ে ৪৪১ রান তুলেন তিনি।[৫]

১৯৫৮-৫৯ মৌসুমের শুরুতে পিটার বার্জ তার প্রথম তিন ইনিংসে ৭৪, ৯৪ ও ৬৪ রানের ইনিংস উপহার দেন। তবে, পিটার মে’র নেতৃত্বাধীন সফরকারী এমসিসি দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার পূর্বেকার শেষ তিন ইনিংসে ২৫, ৭ ও ১১ ইনিংস খেলেন।[৫]

জাতীয় দলের অধিনায়কের দায়িত্বপালনকারী ইয়ান ক্রেগ হেপাটাইটিসের কারণে দলের বাইরে অবস্থান করেন। এরফলে নিজ শহর ব্রিসবেনে অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলার সুযোগ এনে দেয় তাকে। কিন্তু, একমাত্র ইনিংসটিতে মাত্র দুই রান তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ঐ খেলায় স্বাগতিকরা আট উইকেটে জয় পেয়েছিল।[৯][১০] পুনরায় তাকে দলের বাইরে রাখা হয়।

এরপর তিনি কুইন্সল্যান্ডে ফিরে যান। শুরুরদিকে তেমন বড় ধরনের সংগ্রহ করতে পারেননি। পাঁচ ইনিংসের চারটিতেই ৩০ থেকে ৬০ রানের মধ্যে অবস্থান করেন। সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ১০১ ও ১৭১ তুলে স্বরূপে ফিরে আসেন।[৫] কিন্তু, মৌসুমের শেষদিকের টেস্ট খেলার জন্য তাকে আর ডাকা হয়নি। ঐ মৌসুম শেষে ৫০.৯৩ গড়ে ৭৬৪ রান তুলেন।[৫]

পুনরায় ভারত উপমহাদেশ গমন[সম্পাদনা]

পরবর্তীতে ক্রিকেট খেলায় অংশগ্রহণের জন্য অ্যাকাউট্যান্সি ফার্ম থেকে ছুটি মঞ্জুরের আবেদন প্রত্যাখিত হলে চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে ভারত ও পাকিস্তান গমনের জন্য আমন্ত্রণবার্তা পান।[৫] ইংল্যান্ড সিরিজ শেষে টেস্টের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান জিম বার্ক অবসর নিলে ব্যাটিং উদ্বোধনের সুযোগ হয় তার। এ সফরে আসা-যাওয়ার পালায় ছিলেন পিটার বার্জ।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে শূন্য রানে আউট হন। খেলায় অস্ট্রেলিয়া আট উইকেটে জয় পেয়েছিল।[৫][৬] দ্বিতীয় টেস্টে খেলার সুযোগ হয়নি তার। তবে, ড্র হওয়ায় করাচীর তৃতীয় টেস্টে ১২ রান তুলেছিলেন। সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০ ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল।[৬]

ভারতে অনুষ্ঠিত প্রথম তিন টেস্টে খেলেননি। কিন্তু, অসুস্থতা কাটিয়ে ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটিজের বিপক্ষে ১৫৭ রান তুলেন ও চেন্নাই এবং কলকাতার শেষ দুই টেস্টে তাকে খেলানো হয়।[৫] চেন্নাই টেস্টে ৩৫ রান করলে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ব্যবধানে জয় তুলে নেয় ও ড্র হওয়া মাদ্রাজ টেস্টে ৬০ রানের ইনিংস খেলেন। ঐ সিরিজে তার দল ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়।[৩][৫]

১৯৬০-৬১ মৌসুমে আবারো টেস্ট দলের বাইরে দেখতে পান তিনি। কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে চার খেলায় অংশ নিয়ে আটটি ইনিংসে ১৫ রানের কোটা স্পর্শ করতে সক্ষম হন। কেবলমাত্র দুইবার অর্ধ-শতক পান ও সর্বোচ্চ করেন ৭৫। বড়দিন ও নববর্ষের সময়কালে এ ইনিংস দুটি খেলেন। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৪০ রান তুলে দলকে ১০ উইকেটের জয় এনে দেন। এরপর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিম্নমূখী রানের খেলায় ১০৩ ও ৫৫ রান তুলে দুই উইকেটের ব্যবধানে দলকে জয়ে সহায়তা করেন। তন্মধ্যে, দলীয় সংগ্রহের ৩৮% রানই ছিল তার।[৫]

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চতুর্থ টেস্ট খেলার জন্য তাকে অস্ট্রেলিয়া দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। নতুন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে তিনি জানিয়ে দেন যে, যদি রানের দেখা না পান তাহলে তিনি অবসর নেবেন।[৩] অ্যাডিলেডের ঐ টেস্টে ৪৫ ও ৪৯ রান তুলেন। খেলায় এক উইকেট হাতে রেখে ড্র করতে সমর্থ হয় অস্ট্রেলিয়া দল।[৫][৬] পঞ্চম টেস্টে ৬৮ ও ৫৩ রান তুলে দলকে জয়ে এনে দেন ও অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে সিরিজে জয় পায়।[৩] ১৯৬০-৬১ মৌসুমটি পিটার বার্জের জন্য বেশ ফলদায়ক ছিল। ৫৩.৭৫ গড়ে রান তুলে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ রানসংগ্রাহক হন।

পুনরায় ইংল্যান্ড গমন[সম্পাদনা]

১৯৬১ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজ খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড গমন করে। এ সিরিজে প্রথমবারের মতো তিনি পাঁচ টেস্টের সবকটিতেই অংশ নেন। দল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতি আস্থা রেখে বিল লরি’র পর টেস্ট গড়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন পিটার বার্জ।[৩] টেস্টের পূর্বে কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে খেলাগুলোয় প্রায়শই বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত হয়। সফরকারীরা জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ায় বার্জের ইনিংস অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায়। প্রথম পাঁচ ইনিংসই অসম্পূর্ণ ছিল। তন্মধ্যে, ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ১০১ রান তুলেন। মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে উপর্যুপরী নিম্নমূখী খেলায় টেস্ট শুরুর পূর্বে সর্বশেষ কাউন্টি খেলায় সাসেক্সের বিপক্ষে ১৫৮ রান তুলেন।[৫]

এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত সিরিজের ড্র হওয়া প্রথম টেস্টে বেশ রান উঠে। একমাত্র ইনিংসটিতে পিটার বার্জ ২৫ রান তুলেছিলেন।[৫][৬] এরপর লিচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ১৩৭ রান তুলেন।[৫] অধিনায়ক রিচি বেনো আঘাতের কারণে নাম প্রত্যাহার করলে তিনি তার স্থান অক্ষত রাখেন।

লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টটিতে ফ্রেড ট্রুম্যানব্রায়ান স্ট্যাদামের বোলিং তোপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া দল। অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ১৯/৪ থাকাকালে ৬৯ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন তিনি।[৩] এর আগে অনুপযোগী পিচের প্রথম ইনিংসে ৪৬ রান তুলেছিলেন। পরবর্তী দুই টেস্টে তিনি মাত্র ৪৬ রান তুলতে পেরেছিলেন। ঐ টেস্টগুলোয় উভয় দল জয়ী হয়। ২-১ ব্যবধানে জয়ী হয়ে অস্ট্রেলিয়া দল অ্যাশেজ অক্ষত রাখে। সফরের শেষ পর্যায়ে নিজেকে বেশ মেলে ধরেন। চূড়ান্ত টেস্ট শুরুর পূর্বে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ৫১* রান তুলেন। গত আট সপ্তাহে ১৫ ইনিংসের মধ্যে এটিই প্রথম পঞ্চাশোর্ধ্ব রান ছিল।[৫]

ওভালের পঞ্চম টেস্টে নিজস্ব প্রথম শতরানের সন্ধান পান তিনি। ১৮১ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস খেলাকালে জিম লেকার ও টনি লকের বলগুলোকে ক্রমাগত সুইপের সাহায্যে মোকাবেলা করে এ রান তুলেন।[১১] সমগ্র সিরিজে ৪৭.৪২ গড়ে ৩৩২ রান তুলেন পিটার বার্জ।[৯] শেষ দুইটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় দুইটি অর্ধ-শতক তুলে এ সফর শেষ করেন তিনি।

১৯৬১-৬২ মৌসুমটি পুরোটাই অস্ট্রেলীয় ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কোন দলই টেস্ট সফরে আসেনি। মৌসুমের দ্বিতীয় খেলার মধ্য দিয়ে তিনটি খেলায় ধারাবাহিক সেঞ্চুরি করেন পিটার বার্জ। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ১০১ ও ৬৮ রান সংগ্রহ করেন যা দলের এক-তৃতীয়াংশেরও অধিক সংগ্রহ ছিল। তাস্বত্ত্বেও দলকে ৪৮ রানের পরাজয়বরণ করতে হয়েছিল। পরের খেলায় দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৯ রান তুলে কুইন্সল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসের ৯০ রানের এগিয়ে যাওয়ার সাথে আরো শক্তিশালী ভিত্তি এনে দেন ও ৩১ রানের জয় তুলে নেয় কুইন্সল্যান্ড দল।[৫] এরপর ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৪ রান করেন। তবে, প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানে এগিয়ে থেকেও খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। চূড়ান্ত ইনিংসটিতে ৮২ রান যুক্ত করেন। মৌসুম শেষে ৬৩.১০ গড়ে ৬৩১ রান তুলেন তিনি।[৫]

ইংল্যান্ডের আগমন[সম্পাদনা]

১৯৬২-৬৩ মৌসুমের শুরুটায় নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে অর্ধ-শতক ও পরের খেলায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১১৫ রান তুলেন। তবে, টেড ডেক্সটারের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ১৯৬২-৬৩ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজের শুরুতে এর ছিটেফোঁটাও লক্ষ্য করা যায়নি।[৫] ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের ড্র হওয়া প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৬ রান তুলেন ও দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক রিচি বেনো ইনিংস ঘোষণাকালীন তিনি অপরাজিত ৪৭* নিয়ে মাঠ ছাড়েন।[৫][৬] এরপর ২৩ ও ১৪ রান করলে স্বাগতিক দল সাত উইকেটে পরাজিত হয়। ফলে দলের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন।[৩][৫]

কুইন্সল্যান্ডে ফিরে যান এবং সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই খেলায় ১৬৩ ও অপরাজিত ২৪* এবং ৩৩ ও অপরাজিত ৫৪* রানের ইনিংস খেলেন। ফলশ্রুতিতে, সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের পঞ্চম টেস্টে খেলার সুযোগ পান। এ পর্যায়ে সিরিজটি ১-১ ব্যবধানে অগ্রসর হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া রক্ষণাত্মক পন্থা অবলম্বন করে খেলাটিকে ড্রয়ের দিকে নিয়ে যায়। পিটার বার্জ ১০৩ ও অপরাজিত ৫২ রান তুলেন। টেস্টটি ড্র হয় ও অ্যাশেজ অক্ষুণ্ন রাখে। ৬১.২৫ গড়ে ২৪৫ রান তুলে অস্ট্রেলীয়দের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন।[৩][৯] শেফিল্ড শিল্ড মৌসুমের শেষদিকে চারটি ইনিংসে ১০-এর অধিক রান তুলতে পারেননি তিনি। তাস্বত্ত্বেও ৫২.৪৬ গড়ে ৭৮৭ রান তুলেছিলেন তিনি।[৫]

১৯৬৩-৬৪ মৌসুমের শুরুতে প্রথম তিন ইনিংসেই পাঁচ শতাধিক রান তুলেন। নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ড্র হওয়া উচ্চ রানের খেলায় ২৮৩ রান তুলে রান আউটের শিকারে পরিণত হন তিনি। এরফলে কুইন্সল্যান্ডের পক্ষে নতুন রেকর্ড গড়েন পিটার বার্জ।[২][৩][৫] ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরও একটি ড্র হওয়া খেলায় কুইন্সল্যান্ড ইনিংস ঘোষণাকালে অপরাজিত ২০৫* রানের মূল্যবান ইনিংস উপহার দেন তিনি। এক পক্ষকাল পর সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে ১২৯ রান তুলে দলকে ইনিংস বিজয়ে প্রভূতঃ সহায়ক ভূমিকা পালন করেন।[৫] মৌসুমে ৬১৭ রান তোলার পর অবশেষে বোলার কর্তৃক আউট হন তিনি।[৫]

দক্ষিণ আফ্রিকার আগমন[সম্পাদনা]

এর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার সহঃ অধিনায়ক ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে সর্বাপেক্ষা সেরা ব্যাটসম্যান নীল হার্ভে অবসর নিলে বার্জের খেলা নিশ্চিত হয়। ঐ মৌসুমে আঘাতে জর্জড়িত থাকা স্বত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের সিরিজের সবকটিতে তার অংশগ্রহণ ছিল। সিরিজ শেষে বাম পায়ে তাকে অস্ত্রোপচার করতে হয়।

নিজ শহর ব্রিসবেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ১৩ রান তুলে রান আউট হন। পুরো মাসে সফরকারীদের বিপক্ষে রান খরার কবলে পড়েন। তাসমানিয়া সম্মিলিত একাদশের সদস্যরূপে প্রস্তুতিমূলক খেলায় ৩ ও ১০ রান তুলেন। পরবর্তী দুই টেস্টে ২৩, অপরাজিত ২৬, ৩৬ ও ১৩ রান তুলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়া জয় পায় ও পরের খেলাটি ড্র হয়েছিল। পূর্বেকার মৌসুমের ন্যায় এবার অবশ্য তাকে বাতিলের খাতায় নাম লেখানো হয়নি। অ্যাডিলেড ওভালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে ৯১ রান তুলেন ও অস্ট্রেলিয়া দশ উইকেটে পরাজিত করে।[৫][৯] শেষ টেস্টে ৫৬ ও ৩৯ রান তুললেও খেলাটি ড্র হয়েছিল।[৫]

নির্জীব সিরিজে দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস সহযোগে ৩৯.৬৩ গড়ে ৩১৭ রান তুলেন তিনি। টেস্ট শুরুর পর বার্জ ইনিংসগুলোকে বড় আকারে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। মৌসুমের শেষ ১১ ইনিংসে প্রত্যেকবারই দুই অঙ্কের সংগ্রহ করলেও আটবার ২০ থেকে ৬০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।[৫] মৌসুম শেষে ৭৬.২৬ গড়ে ১১৪৪ রান তুলেন।[২]

ইংল্যান্ড গমন, ১৯৬৪[সম্পাদনা]

লেখচিত্রে পিটার বার্জের টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের ব্যাটিংয়ের অবস্থান

পায়ের আঘাতের কারণে ১৯৬৪ সালে ইংল্যান্ড সফরে তার যাওয়া বেশ অনিশ্চিত ছিল। টেস্ট সিরিজের পর ঘরোয়া মৌসুমের শেষদিকের খেলায় পর্যালোচনার পর[৫] তাকে মনোনীত করা হয়। দেশ ছাড়ার পূর্বে তিনি প্রস্তুতিমূলক খেলাগুলোয় অংশগ্রহণ করেননি তিনি।[৫] সফরের শুরুরদিকে দৌঁড়ানো থেকে তাকে বিরত রাখা হয়।[৩] সফরের উদ্বোধনী খেলায় ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে ৫৮ ও অপরাজিত ৪৬ রান তুলেন। কিন্তু, টেস্টগুলোয় এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারেননি তিনি। টেস্টগুলোর পূর্বে তিনি মাত্র আর একটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন।[৫]

সাম্প্রতিককালে অবসরের ধাক্কায় জর্জড়িত অস্ট্রেলিয়া দল যে এতোটা ভালো খেলতে পারবে তা কেউ আসা করেনি। খেলাগুলোয় প্রাধান্য বিস্তার করলেও টেস্ট খেলায় তিনি ২৯.৩৩ গড়ে মাত্র ২৬৪ রান করেছিলেন।[৫]

প্রথম দুই টেস্টে তেমন প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেননি। লর্ডস টেস্ট শুরুর পূর্বে ৩১, অপরাজিত ৪ ও ১ রান তুলেছিলেন। লর্ডসের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৯ রান তুলেন।[৩][৫] খারাপ আবহাওয়ার কারণে অস্ট্রেলিয়া দল সমূহ পরাজয় থেকে রক্ষা পায়। ড্র হওয়ার কারণে ইংল্যান্ড সুবিধা পায়।

তৃতীয় টেস্টকে সামনে রেখে কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে তিনি মাত্র ৫, ১৮ ও ৫ রান তুলতে পেরেছিলেন।[৫] হেডিংলির তৃতীয় টেস্টে পিটার বার্জ তার স্মরণীয় ইনিংস খেলেন। ইংল্যান্ডের ২৬৮ রানের জবাবে অস্ট্রেলিয়া এক পর্যায়ে ১৭৮/৭ করে। নিচেরসারির ব্যাটসম্যানদেরকে সাথে নিয়ে ৩৮৯ রানে দলের ইনিংস শেষ করেন। নিজে করেন ১৬০ রান। এরফলে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে ভিত্তি গড়ে উঠে। সিরিজে এটিই ড্রবিহীন খেলা ছিল। উইজডেন তার ইনিংসের ভূয়সী প্রশংসা করে। এ ইনিংসটিই সিরিজের ফলাফল এনে দেয় ও অনেক বছর পর অন্যতম সেরা ইনিংসরূপে স্বীকৃতি দেয়।[৩]

চতুর্থ টেস্ট শুরুর পূর্বে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হন। ক্রিকেটের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত লর্ডসে মিডলসেক্সের বিপক্ষে ৯৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ওল্ড ট্রাফোর্ডের চতুর্থ টেস্টে পিটার বার্জ ৩৪ রান তুলেন। অস্ট্রেলিয়া দুইদিনের অধিক সময় তাদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে। বড় ধরনের রানের এ খেলাটি ড্র হয় ও দল অ্যাশেজ অক্ষুণ্ন রাখে।[৫] এরপর ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে অপরাজিত ১০০ ও ৫৩ রান তুলেন। তার এ সংগ্রহ দলের এক-তৃতীয়াংশ হলেও মাত্র নয় রানে পরাজিত হয়।[৫] ড্র হওয়া পঞ্চম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র ইনিংসে ২৫ রান তুললেও শেষ তিনটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ৩০-এর অধিক রান করতে পারেননি।[৫]

ফলশ্রুতিতে, ১৯৬৫ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।[৩] সিরিজ শেষে ৪৬.০০ গড়ে ৩২২ রান তুলেছিলেন।[৯] নব প্রবর্তিত সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সাসেক্সের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৪ রান তুলেন।[৫]

এ সফর শেষে ভারতীয় উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি ও একটি টেস্টে অংশ নেন। তিনটি অর্ধ-শতক সহযোগে ৪৪.৩৩ গড়ে ২৬৬ রান তুলেন।[৯] ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬০ রান তুলেন ও ৬৫ রানে পিছিয়ে থেকেও অস্ট্রেলিয়া দলকে ৩৩২ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা এনে দলকে জয় এনে দেন।[৫] পরের খেলায় ৮০ ও ০ রান করলেও অস্ট্রেলিয়া দুই উইকেটে পরাজিত হয়।[৫] ড্র হওয়া তৃতীয় টেস্টে ৪ রান তুলেন। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ৫৪ ও অপরাজিত ২৮ রানের ইনিংস খেলেন।[৫]

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে নিজ দেশে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। এরপর গ্রীষ্মের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও যাননি তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে পূর্ণাঙ্গভাবে খেলেন। তবে, প্রথমার্ধ্বে তার অংশগ্রহণ প্রায় অনুপস্থিতির পর্যায়ে ছিল। মৌসুমের প্রথম সাত ইনিংসে প্রত্যেকবারই ৩০ রানে কোঠা স্পর্শ করলেও মাত্র দুইবার পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেন। এগুলোর পাশাপাশি ৯৮ ও ৯৭ রান তোলেন।[৫] শেষ ইনিংসটি কুইন্সল্যান্ডকে ৭১ রানে এগিয়ে দেয় ও ৪১ রানে জয় এনে দেয়।[৫] নববর্ষের খেলায় নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ২৪২ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস খেলেন ও প্রথম ইনিংসে দলের সংগৃহীত ২১২ রানকে ৩০৬ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে দেন। কিন্তু, দলটি সময়ের কারণে মাত্র এক উইকেটের জন্য জয় পায়নি।[৫] পরের খেলায় তিনি আরও একটি সেঞ্চুরি করেন। ঐ মৌসুম শেষে ৬০.৬০ গড়ে ৯০৯ রান তুলেন।[৫]

পরের মৌসুমে আন্তর্জাতিক খেলায় বার্জের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। গ্রীষ্মে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ১১১ রান তুলেন। পরের খেলায় সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া সম্মিলিত একাদশের সদস্যরূপে জোড়া অর্ধ-শতকের সন্ধান পান। দুই খেলার পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুইন্সল্যান্ডের সদস্যরূপে অপরাজিত ১১৪ ও ৬০ রান তুলেন। তন্মধ্যে, প্রথম ইনিংসে দলের মোট রানের অর্ধেকেরও বেশি রান তুলেন তিনি।[৫]

ঘরোয়া ক্রিকেটে সুন্দর ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৫-৬৬ মৌসুমের অ্যাশেজ সিরিজে অংশগ্রহণের জন্য পুনরায় ডাকা হয়। এটিই তার সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ ছিল। ব্রিসবেনের প্রথম টেস্টের একমাত্র ইনিংসটিতে শূন্য রান করলেও খেলাটি ড্রয়ে পর্যবসিত হয়। এরপর মেলবোর্নের দ্বিতীয় টেস্টে নিজস্ব চতুর্থ ও শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ঐ ১২০ রানের কল্যাণে অস্ট্রেলিয়া ৪২৬ রান তুলতে সক্ষম হয় ও ২০০ রানে পিছিয়ে থেকে পরাজয় এড়াতে সমর্থ হয়। এরপর তৃতীয় টেস্টে ৬ ও ১ রান তুললে অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ব্যবধানে পরাভূত হয়। পরের খেলাতে ২৭ করলেও ফলাফলের পুণরাবৃত্তি ঘটে।[৫] এটিই তার সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। পঞ্চম টেস্ট শুরুর প্রাক্কালে নিজেকে ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে দূরে রাখার কথা ঘোষণা করেন ও দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রাখেন যাতে অন্যান্য খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক খেলার অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। এ সিরিজে ২৬.৫০ গড়ে ১৫৯ রান তুলেন।[৯]

সতীর্থরা যখন আফ্রিকা গমনে ব্যস্ত, তখন পিটার বার্জ তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শেষ মৌসুমের দিকে পদার্পণ করছিলেন। মৌসুমের উদ্বোধনী খেলায় ৫০ ও ৬০ রানের ইনিংস খেলেন। এরপর নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ১৯৮ রান তুলেন। ফিরতি খেলায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অপরাজিত ১০১ রানের মনোজ্ঞ ইনিংস খেললেও দলের ইনিংস পরাজয় রুখতে পারেননি।[৫] ঐ মৌসুমে ৬৪.৯২ গড়ে ৯০৯ রান তুলেন। আটটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে দুইটি শতক ও পাঁচটি অর্ধ-শতকের ইনিংস খেলেন।[৫] মৌসুমের শেষ খেলায় কুইন্সল্যান্ডের জয়টি ছিল একমাত্র ও অন্য তিনটি খেলায় পরাজিত হয়।[৫]

১৯৬৬-৬৭ মৌসুম শেষে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় একাদশের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন। স্বাগতিক দলের বিপক্ষে চতুর্থ আন্তর্জাতিক খেলায় ১০২ রানের ইনিংস খেললেও অন্যান্য প্রতিনিধিত্বমূলক খেলায় ৩৫-এর বেশি রান তুলতে পারেননি। ৩৯.৬০ গড়ে ১৯৮ রান তুলেন তিনি। ঐ সিরিজে নিউজিল্যান্ড দল ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে। সামগ্রীকভাবে ঐ সফরে ৩৭.৯০ গড়ে ৩৭৯ রান তুলেন।[৫]

১৯৬৭-৬৮ মৌসুম শেষে খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন পিটার বার্জ। এ মৌসুমে তিনি আরও ছয়টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে, কুইন্সল্যান্ড দল তিনটি পরাজিত হয় ও কোন খেলায় জয় পায়নি। নিজস্ব শেষ খেলায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন। তাস্বত্ত্বেও, দলের পরাজয়কে রুখতে পারেননি তিনি।[২] শেষ মৌসুমে তিনি ৩৯.৮৭ গড়ে ৩১৯ রান তুলেন।[৫]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

কুইন্সল্যান্ডের অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ২৮ খেলায় দলকে নেতৃত্ব দেন। এ সময়ে তার দল কেবলমাত্র দুই খেলায় জয় পায় ও ১১টিতে পরাজিত হয়েছিল।[২] তার খেলোয়াড়ী জীবনে কুইন্সল্যান্ড পাঁচটি রাজ্য দলের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দূর্বল দল ছিল ও কোন শেফিল্ড শিল্ডের শিরোপা লাভে ব্যর্থ হয়েছে।[১২]

শক্ত মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন পিটার বার্জ। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মনোভাব নিয়ে খেলায় অগ্রসর হতেন। মাঠে তিনি খুবই শান্ত প্রকৃতির ও অমায়িক ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলতেন ও ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে হুক শট খেলায় সিদ্ধহস্তের পরিচয় দেন। স্বল্পকিছুসংখ্যক ক্রিকেটারদের অন্যতম হিসেবে বলে হাত দেয়ার কারণে আউট হয়েছেন। ১৯৫৮-৫৯ মৌসুমে শিল্ডের খেলায় নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে খেলাকালীন বল তার প্যাডে আঘাত হানলে শূন্যে উঠে যায় ও তিনি হাত দিয়ে বলটি ধরেছিলেন।[৩]

১৯৬৮ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে পিটার বার্জ রাজ্য দল নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেন। পরিচালনা পরিষদের সদস্য থাকা অবস্থায় ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ সময়কালে কিউসিএ’র সহঃসভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল মনোনীত ম্যাচ রেফারির দায়িত্বে ছিলেন পিটার বার্জ। দায়িত্ব পালনকালীন ১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ড দলনায়ক মাইক অ্যাথারটনের পকেট থেকে রক্ষিত ধূলা দিয়ে বলে আঁচড় কাটার অভিযোগের ন্যায় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওভালে সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে ফিরে আসা সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে খেলাকালীন এ ঘটনা ঘটে।[২]

৫ অক্টোবর, ২০০১ তারিখে ৬৯ বছর বয়সে কুইন্সল্যান্ডের সাউথপোর্টের মেইন বিচ এলাকায় হৃদযন্ত্রের আক্রমণ ক্রিয়ায় পিটার বার্জের দেহাবসান ঘটে।[১৩] ২০০৯ সালে কুইন্সল্যান্ড স্পোর্ট হল অব ফেমে পিটার বার্জকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৪] তার সম্মানার্থে ব্রিসবেনের ক্রিকেট মাঠের নামকরণ পিটার বার্জ ওভাল রাখা হয়।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Haigh, p. 198.
  2. *Cashman, Richard; Franks, Warwick; Maxwell, Jim; Sainsbury, Erica; Stoddart, Brian; Weaver, Amanda; Webster, Ray (১৯৯৭)। The A–Z of Australian cricketers। Melbourne, Victoria: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 215–216। আইএসবিএন 0-9756746-1-7 
  3. "Wisden 1965 - Peter Burge"। -Wisden। ১৯৬৫। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৫-২১ 
  4. Mason, James (২০১১)। Churchie: The Centenary Register। Brisbane, Australia: The Anglican Church Grammar School। আইএসবিএন 978-0-646-55807-3 
  5. ড় ঢ় য় কক কখ কগ কঘ কঙ কচ কছ কজ কঝ কঞ কট কঠ কড কঢ কণ কত কথ কদ কধ কন কপ কফ কব কভ কম কয কর কল কশ কষ কস কহ কড় কঢ় কয় কৎ "Player Oracle PJP Burge"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-১৬ 
  6. "Statsguru - Australia - Tests - Results list"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-২১ 
  7. Benaud, pp. 119–120.
  8. Haigh, p. 199.
  9. "Statsguru - PJP Burge - Tests - Innings by innings list"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-০৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  10. Benaud, pp. 128–136.
  11. Pollard, Jack (১৯৬৯)। Cricket the Australian Way। পৃষ্ঠা 51–52। 
  12. Williamson, Martin। "A history of the Sheffield Shield"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১১-৩০ 
  13. "Obituary 2002 - Peter Burge"Wisden Cricketers' Almanack, 2002। ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ২৮ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  14. "Mr Peter Burge AM"Queensland Sport Hall of Fame। qsport.org.au। ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০১৪ 
  15. "Peter Burge Oval"ESPN Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]