কামার আহমাদ সাইমন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কামার আহমাদ সাইমন
মাতৃশিক্ষায়তনবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাচলচ্চিত্র নির্মাতা
কর্মজীবন২০১২–বর্তমান
পুরস্কারপূর্ণ তালিকা

কামার আহমাদ সাইমন একজন বাংলাদেশী স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রগ্রাহক এবং লেখক।

শুনতে কি পাও! (২০১২) তার প্রথম চলচ্চিত্র, যেটি বিশ্বের অন্যতম প্রামান্য চলচ্চিত্র উৎসব ‘সিনেমা দ্যু রিল’-এ সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে গ্রাঁ প্রি জিতে। একই চলচ্চিত্রের জন্য মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার ‘স্বর্ণশঙ্খ’ এবং সেরা সিনেমাটোগ্রাফির পুরস্কার ও জিতে। বিশ্বের প্রাচীনতম প্রামাণ্যচিত্রের উৎসব জার্মানির ডক-লাইপজিগের ৫৫তম আসরের উদ্বোধনী ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হয়েছিল এই চলচ্চিত্রটি

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

কামার আহমাদ সাইমন পুরান ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন । রক্ষণশীল সামাজিক কাঠামোর মধ্যে দিয়ে তার শৈশব কাটে। ঢাকার চলচ্চিত্র উৎসবে বাইসাইকেল থিভস, সিনেমা প্যারাডিসো, লা ডলসে ভিটা, ড্রিমস, কোয়ানিসকাটসির মত বিশ্বমানের মাস্টারপিস চলচ্চিত্রগুলো দেখার মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্রের সাথে তার সম্পর্ক গভীর হয়। বাংলাদেশে সিনেমা নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার সুযোগ না থাকায় তার শৈশবের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিদ্যায় স্নাতক পাশ করেন। পরবর্তীতে পুরোপরি স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা হওয়ার আগ পর্যন্ত নিজের বিজ্ঞাপনী সংস্থায় শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করেন।

চলচ্চিত্রের তালিকা[সম্পাদনা]

শুনতে কি পাও! (২০১২)[সম্পাদনা]

বিশ্বের প্রাচীনতম প্রামান্য চলচ্চিত্র উৎসব জার্মানির ডক-লাইপজিসের উদ্বোধনী রাতে প্রদর্শিত হয়ে প্রথম আলোচনায় আসে শুনতে কি পাও!। বিশ্বের বৃহত্তম প্রামাণ্য উৎসব আমস্টারডামের ইডফার আনুষ্ঠানিক বাছাই, প্যারিসের জর্জ পম্পিদ্যু সেন্টারে অনুষ্ঠিত ইউরোপের অন্যতম উৎসব সিনেমা দ্যু রিলে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার “গ্রাঁ প্রি" এবং মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ সিনেমাটোগ্রাফি ও শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার “স্বর্ণশঙ্খ” বিজয়ী হয়ে বহুল প্রশংসিত হয় ছবিটি। লোকার্নোর ‘ওপেন ডোর্স’ কার্যক্রমের উদ্বোধনী ছবিও ছিলো ‘শুনতে কি পাও!’ এ যাবত ৩৫টিরও বেশি অন্তর্জাতিক উৎসবে আমন্ত্রিত ও ১০টি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়েছে ছবিটি। নন-ফিকশন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছে ছবিটি। ফরাসী গন-গ্রন্থাগার বা পাবলিক লাইব্রেরী, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ছবিটি তাদের সংগ্রহশালায় নিয়েছে।

একটি সূতার জবানবন্দী (২০১৫)[সম্পাদনা]

কামারের প্রথম টেলিভিশন ডকুমেন্টারি একটি সূতার জবানবন্দী (২০১৫)। একটি সূতার জবানবন্দী এশিয়ার অন্যতম চারটি টেলিভিশন জাপানের এনএইচকে, কোরিয়ার কে বি এস, তাইওয়ানের পিটি এস এবং সিঙ্গাপুরের মিডিয়াকর্পের সহ-প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে। ২০১৩ সালে ‘দ্য এশিয়ান পিচ’ পুরস্কার জয় করেছিল এই প্রামাণ্যচিত্রের স্ক্রিপ্টটি।

নীল মুকুট (২০২১)[সম্পাদনা]

এশিয়ার অন্যতম চারটি টেলিভিশন জাপানের এনএইচকে, কোরিয়ার কে বি এস, তাইওয়ানের পিটি এস এবং সিঙ্গাপুরের মিডিয়াকর্পের সহ- প্রযোজনায় নির্মিত নীল মুকুট ২০২০ সালের ২৭ মার্চ দেশব্যাপী মুক্তি প্রতিক্ষীত থাকলেও করোনা মহামারীতে তা পিছিয়ে গেছে। চলচ্চিত্রটির পোস্টার প্রকাশের পর বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। পাশাপাশি চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ড থেকে বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পায়। পরবর্তীতে নীল মুকুট ২০২১ সালের ৮ই আগস্ট ওভার-দ্য-টপ প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পায়।[১] মুক্তির পর ডকু-ফিকশন জনরার এই ছবিটি দর্শক ও সমালোচকের মাযে বেশ প্রশংসিতও হয়েছে।

শিকলবাহা [নির্মাণাধীন][সম্পাদনা]

শিকলবাহা কামারের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। এটি একমাত্র ইউরোপের বাইরের চলচ্চিত্র যা ইউরোপিয়ান প্রযোজক কর্মশালায় আমন্ত্রিত হয়েছিলো। সুইডেন এর গোটারবারগ চলচ্চিত্র উৎসব থেকে স্ক্রিপ্ট ডেভেলোপমেন্ট অনুদান, জার্মানির বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বিশ্বের সম্মানজনক চলচ্চিত্র অনুদান “ ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফান্ড” সহ বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান পেয়েছে এই চলচ্চিত্র। তাছাড়া ইউরোপিয়ান পোস্ট প্রোডাকশন কানেকশন এবং প্রোডিওর আ সাড এ কো-প্রোডাকশন প্ল্যাটফর্মে আমন্ত্রিত হয়েছিলো।

অন্যদিন... [নির্মাণাধীন][সম্পাদনা]

শুনতে কি পাও! -এর পর কামার আহমাদ সাইমনের ওয়াটার ট্রিলজির ২য় ছবি "অন্যদিন..." এই সিনেমাটি কানের সিনেফন্ডেশনে লা আতেলিয়ার এ অফিসিয়াল নিমন্ত্রন, লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের পিয়াৎজা গ্রান্দায় ওপেন ডোর্স শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, আর্তে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পেয়েছে। তাছাড়াও সানডেন্স চলচ্চিত্র উৎসব এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব ইডফার গ্রান্ট এওয়ার্ড পেয়েছিলো।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

  1. পিয়াৎজা গ্রান্দায় ওপেন ডোর্স শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, আর্তে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ: লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসব, সুইজারল্যান্ড
  2. গ্রান্ড অ্যাওয়ার্ড: সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসব, যুক্তরাষ্ট্র
  3. গ্রান্ট অ্যাওয়ার্ড, স্ক্রিপ্ট এন্ড প্রোডাকশন: ইডফা, নেদারল্যান্ডস
  4. ওয়ার্ল্ড সিনেমা ফান্ড (ডব্লিও সি এফ): বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব, জার্মানী
  5. শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র: শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্রের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৩
  6. স্বর্ণশঙ্খ: মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার ‘স্বর্ণশঙ্খ ২০১৪, ভারত
  7. শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক: মুম্বাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক এর পুরস্কার, ২০১৪ ভারত
  8. অডিয়েন্স চয়েজ অ্যাওয়ার্ড: সিয়াটল দক্ষিণ এশিয়া চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৪, সিয়াটল, যুক্তরাষ্ট্র
  9. গ্রাঁ প্রি: ৩৫তম সিনেমা দুয়ে রিল চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ছবির পুরস্কার ২০১৩, প্যারিস, ফ্রান্স
  10. জুরি পুরস্কার: ফিল্ম সাউথ এশিয়া ২০১৩, নেপাল
  11. উদ্বোধনী ছবি: ৫৫তম ডক-লাইপজিগ চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী ছবি ২০১২, জার্মানী

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. প্রতিবেদক, বিনোদন। "নির্মাতার জন্মদিনে চরকিতে আসছে 'নীল মুকুট'"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]