কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞান পদার্থবিদ্যার এমন একটি শাখা যেখানে আলোকে কণা হিসেবে কল্পনা করে বিভিন্ন আলোকীয় ধর্ম ব্যাখ্যা করা হয়। সনাতন পদার্থবিদ্যায় আলো তরঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হলেও আলোর অনেক ধর্মই তরঙ্গতত্ত্ব দ্বারা অনুধাবনযোগ্য নয়। প্রায় অর্ধসহস্রাব্দী-প্রাচীন আলোর তরঙ্গতত্ত্বের এই সীমাবদ্ধতা দূর করতেই বিংশ শতাব্দীতে কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞানের সূত্রপাত হয়।

কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস[সম্পাদনা]

ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের গ্রান্থামে উইলিয়াম থীড নির্মিত স্যার আইজাক নিউটনের পূর্ণাবয়ব মূর্তি

আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের জন্মভূমি হল প্রাচীন গ্রীস। বিভিন্ন সময়ে বহু গ্রীক সুপণ্ডিত যেমন সক্রেটিস,প্লেটো,অ্যারিস্টটল,ইউক্লিড প্রমুখেরা প্রাচীন গবেষণাধর্মী গ্রন্থগুলিতে আলো নিয়ে তাদের মৌলিক অনুসন্ধাননির্ভর সুচিন্তিত মতামত লিপিবদ্ধ করে গিয়েছেন।

খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে (১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে) ব্রিটিশ পদার্থবিদ আইজাক নিউটন সর্বপ্রথম তার সুপ্রসিদ্ধ আলোকীয় কণাধর্মতত্ত্বে আলোর কণাধর্মের কথা উল্লেখ করেন। যদিও নিউটন-প্রবর্তিত আলোর কণাধর্মের ধারণা আধুনিক পদার্থবিদ্যার কণাতত্ত্বের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তবু এই কণাধর্মের সাহায্যে আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ ধর্ম সফলভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। অবশ্য নিউটনের আলোকীয় কণাধর্মতত্ত্ব প্রবর্তিত হওয়ার আগেই ওলন্দাজ পদার্থবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস ১৬৭০ সালে তার গবেষণাপত্রে আলোর তরঙ্গধর্মের কথা উল্লেখ করেন। এই তরঙ্গতত্ত্বও আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। পরে ১৮০০ সালে জনৈক ব্রিটিশ চিকিৎসক টমাস ইয়ং পরীক্ষামূলক ভাবে আলোর ব্যতিচার ধর্মের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। আলোকীয় কণাধর্মতত্ত্ব তাত্ত্বিকভাবে ব্যতিচার ধর্ম ব্যাখ্যা করতে অসফল হলেও তরঙ্গতত্ত্ব এতে সাফল্য লাভ করে। এরপর থেকে আলোর তরঙ্গতত্ত্ব ক্রমশ জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। ১৮৬৪ খ্রিষ্টাব্দে স্কটিশ পদার্থবিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণের তত্ত্ব প্রবর্তিত হলে বিজ্ঞানমহলে আলোর তরঙ্গতত্ত্ব সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

১৯০০ সালে জার্মান পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক পদার্থের তাপীয় বিকরণের তত্ত্ব সংক্রান্ত গবেষণার সময় লক্ষ্য করেন যে তাপীয় বিকিরণ (তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ বা আলো) কিছু বিশেষ কণার সন্নিবেশ হিসেবে কল্পনা করে নিলে তাপীয় বিকিরণের সঠিক গাণিতিক তত্ত্ব গঠন করা সম্ভব। প্ল্যাঙ্কের এই ধারণার উপর নির্ভর করে ১৯০৫ সালে আলবার্ট আইন্সটাইন তার যুগান্তকারী গবেষণাপত্রে আলোক তড়িৎ ক্রিয়ার অজ্ঞাত রহস্য সমাধান করেন যা আলোর তরঙ্গতত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে অপারগ। এই আবিষ্কার নতুন আঙ্গিকে আলোর তরঙ্গধর্মের পাশাপাশি কণাধর্মের দাবীকেও (আলোর কণা তরঙ্গ দ্বৈততা) পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে গিলবার্ট লিউইস আলোর কণাগুলিকে ফোটন নামে অভিহিত করেন। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী পল দিরাক সর্বপ্রথম আলোকীয় বিকিরণের পূর্ণগাণিতিক কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রবর্তন করেন। পরবর্তী সময়ে বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বও ও আধুনিক কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সংমিশ্রণজাত কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব কোয়ান্টাম আলোকবিদ্যার ধারণাকে আধুনিকতর এবং গতিশীল করে তুলেছে। আধুনিক কোয়ান্টাম আলোকবিজ্ঞানে যারা দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে ভারতীয় বিজ্ঞানী ই সি জি সুদর্শন, রয় গ্লাউবার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।photo electric effect এর মতে আলো ফোটনের কিছু প্যাকেট আকারে বের হয়।এর বিকিরিত শক্তি E=hv (যেখানে v হলো কম্পাঙ্ক একে নিউ বলা হয়। এ তত্ত্ব মতে কোনো ধাতুতে আলো ফেলা হলে ইলেকট্রন নির্গত হয়।Photoelectric equation হলো: 1/2mv^2=h(v-vnot)