বুরঞ্জী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বুরঞ্জী হল ইতিহাসের একপ্রকারের কালক্রমিক লিখিত বিবরণ। অসমের বুরঞ্জীসমূহ প্রথমাবস্থায় আহোম ভাষাতে লেখা হয়েছিল এবং এই রীতি ১৮৫৮ সাল পর্যন্দ অব্যাহত ছিল।[১] পরে বুরঞ্জী লিখতে অসমীয়া ভাষা আহোম ভাষার স্থান নেয়।[২][৩]

আহোম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাপক স্বর্গদেব চুকাফার নির্দেশে ১২২৮ সালে অসমে বুরঞ্জী লেখা ব্যবস্থার প্রবর্ত্তন ঘটে। সেই সময়ে শাসকীয় পক্ষের সঙ্গে বাকী লোকরাও ঘরে ঘরে বুরঞ্জী লিখে রাখত। কালক্রমে বুরঞ্জীর মূলতঃ দুটো ভাগ দেখা যায়: রাজাঘরীয়া বুরঞ্জী এবং অন্যান্য পরিবারসমূহে লেখা বুরঞ্জী।[৪] আহোম ভাষায় লিখিত বুরঞ্জীসমূহকে বিষয়বস্তু অনুযায়ী দেও বুরঞ্জী এবং ডিন বুরঞ্জী হিসাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । 'দেও' শব্দর অর্থ হ’ল স্বর্গীয় এবং এমন বুরঞ্জীতে সৃষ্টির উৎপত্তি, ইন্দ্র, স্বর্গ ইত্যাদির বিষয়ে উপকথামূলক কাহিনী আছে। অন্যদিকে 'ডিন' শব্দের অর্থ হ’ল পৃথিবী এবং ইয়াে ম্যুং-রি-ম্যুং রাম রাজ্যে খুন্-লুং এবং খুনলাইতের বংশধরগণ এবং চুকাফা প্রতিষ্ঠা করা রাজ্যসমূহের বিষয়ে তথ্য-পাতি আছে। বুরঞ্জীসমূহের আকার, বিবরণ ইত্যাদির আধারে একে লাই লিক (ঘাই/রাজনীতি বিষয়ক পুথি), লিট (নথি পত্র/পবিত্র গ্রন্থ), রু-পুত (শিক্ষার উদ্দেশ্যে রক্ষিত নথি পত্র), উ-কুত (থোরতে লিখে রাখা ঘটনাপঞ্জী) ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়।[৫] আহোম সাম্রাজ্যের পতনের পরে বুরঞ্জী লেখার প্রথাও ধীরে ধীরে অপ্রচলিত হয়।

বুরঞ্জী (বা বু-রন্-জী) শব্দটির মূল টাই-চীন ভাষা। বু মানে মূর্খ, রন মানে শেখানো এবং জী মানে সম্ভার। অর্থাৎ এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল মূর্খের শিক্ষার সম্ভার। আহোম রাজত্বকালে লেখা বুরঞ্জীসমূহে আহোম রাজ্য ছাড়াও কাছের চুতীয়া রাজ্য, কাছাড়ি রাজ্য এবং ত্রিপুরা রাজ্য (শুুতীয়া, কাছাড়ি এবং ত্রিপুরা বুরঞ্জী) তথা কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা মোগল সাম্রাজ্যের (পাদশ্যাহ বুরঞ্জী) বিষয়েও বিশদ বিবরণ আছে।[৫] এই বুরঞ্জীসমূহ ঘাইকরে সাঁচিপাতে লেখা হয়েছিল।

আহোম প্রশাসনে বুরঞ্জী প্রনয়নের একটি সুকীয়া বিভাগ ছিল। প্রথমে চিরিং পদের মানুষরা বুরঞ্জী লেখার কাজ করত। তাঁদররকে পরিচালনার ভার বরচিরিং বরুয়া এবং চিরিং ফুকন নামের দুজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে দিয়ে হয়েছিল। চিরিং ফুকন প্রকৃত বুরঞ্জী রচনা করেছিলেন। পরে অসমীয়া ভাষায় লেখা বুরঞ্জীসমূহের নকল করতে লেখারু নামের একটি পদ নিয়োগ করা হয়েছিল এবং লেখকের বরুয়া নামক একজন কর্মচারী তাদের পরিচালনা করেছিল।[৫] রাজেশ্বর সিংহর শাসনকালে কীর্ত্তি চন্দ্র বরবরুয়া নিজের বংশ মর্যদা সম্পর্কে অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্য আছে বলে রাজার অনুমতি নিয়ে বহু বুরঞ্জী জ্বালিয়ে নষ্ট করে।[৬] তখন থেকে বুরঞ্জী লিখনের দায়িত্ব বরবরুয়ার হস্তান্তরিতনহয়।[৫]

ভাষা[সম্পাদনা]

পশ্চিমী আসামি ছিল প্রভাবশালী সাহিত্যিক ভাষা এবং "আহোম আদালতগুলিতে লেখা বুনিয়াদি সহ সকল প্রাচীন অসমীয়া সাহিত্যের একমাত্র মাধ্যম"। পূর্বের অসমীয়াউপভাষাটি ১৯ শতকের গোড়ার দিকের অঞ্চলে এই অঞ্চলের আদর্শ সাহিত্যিক ভাষা হয়ে উঠেছিল। ১৭ থেকে ১৯ শতকের মধ্যে গড়ে ওঠা অসমীয়া লেখার একটি শৈলী গার্গায় উল্লেখযোগ্যভাবে পূর্ব অসমে বুরজিস লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. লীলা গগৈ (১৯৯৪)। টাই সংস্কৃতির রূপরেখা। বনলতা। পৃষ্ঠা ৫৬। আইএসবিএন 81-7339-079-7 
  2. Goswami, Golockchandra (1982), Structure of Assamese, Page 11, Western Assamese dialect, the sole medium of all ancient Assamese literature including the buranjis written in the Ahom court
  3. (Goswami 2007, পৃ. 436)
  4. (Hartman 1997, পৃ. 227)
  5. লীলা গগৈ (১৯৯৪)। টাই সংস্কৃতির রূপরেখা। বনলতা। পৃষ্ঠা ১১০–১৪৬। আইএসবিএন 81-7339-079-7 
  6. Sarkar, J. N. (1992) The Buranjis: Ahom and Assamese in The Comprehensive History of Assam Vol II (ed H K Barpujari), Publication Board, Assam