বিজন সেতু হত্যাকাণ্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(বিজন সেতু হত্যাকান্ড থেকে পুনর্নির্দেশিত)

বিজন সেতু হত্যাকাণ্ড ১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিলের দিন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার উপকন্ঠে বালিগঞ্জে সংঘটিত আনন্দমার্গের ১৬ সন্ন্যাসী ও ১ জন সন্ন্যাসিনীর হত্যাকাণ্ডকে বোঝায়। দিনের বেলায় সংঘটিত হওয়া সত্বেও এই ঘটনার জন্য আজও কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। আনুষ্ঠানিক বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য বারে বারে আহ্বান জানানোর পর ২০১২ সালে উক্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য একটি একজনের তদন্ত-কমিশন গঠন করা হয়।

ঘটনা[সম্পাদনা]

১৯৮২ সালের ৩০ এপ্রিলের দিন আনন্দমার্গের ১৬জন সন্ন্যাসী ও একজন সন্ন্যাসিনীকে কলকাতার তিলজলাতে অবস্থিত তাদের মুখ্য কার্যালয়ে হওয়া একটি শিক্ষা সম্মেলনে নিয়ে যাওয়া অবস্থায় ট্যাক্সির ভিতর থেকে টেনে বাইরে আনা হয়। একই সময় তিনটি ভিন্ন স্থানে মারা যাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে প্রহার করা হয়েছিল এবং তাদের দেহগুলি একত্র করে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল। খবরে প্রকাশ যে, দিনর বেলায় প্রকাশ্য স্থানে সংঘটিত এই ঘটনা হাজার হাজার লোক প্রত্যক্ষ করেছিল[১]

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ[সম্পাদনা]

এই ঘটনা যখন ঘটে তখন জ্যোতি বসু বাংলার বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সে সময় জ্যোতি বসুর পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। চাপের মুখে জ্যোতি বসু দেব কমিশন গঠন করেন। কিন্তু আনন্দমার্গীদের সেই কমিশনের উপর কোন আস্থা ছিল না কারণ, কান্তি গাঙ্গুলী সহ অন্যান্য বিশিষ্ট সিপিএম নেতারা এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন।[২] জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ১৯৯৬ সালে এই মামলার তদন্ত শুরু করেছিল কিন্তু সেই সময়ে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে খুব বেশি অগ্রগতি করতে পারেনি।[৩] তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বারবার আনুষ্ঠানিক বিচার বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করার পরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অমিতাভ লালার তত্ত্বাবধানে একটি একক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন - অমিতাভ লালা তদন্ত কমিশনকে ২০১২ সালের মার্চ মাসে এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিযুক্ত কমিশন ইতিমধ্যেই তার তদন্ত শেষ করেছে। রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে বলেও শোনা গেছে।[৩][২] কমিশন সূত্রের মতে, কিছু নথিতে অভিযোগ করা হয়েছে যে কসবা-যাদবপুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সিপিআই(এম) নেতারা ১৯৮২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পিকনিক গার্ডেনের কলোনি বাজারে মিলিত হয়েছিলেন আনন্দমার্গীদের নিয়ে আলোচনা করতে, যাদের সদর দপ্তরটি তখন তিলজলায় এমন একটি স্থানে আসছিল যেখানে সেই সময় প্রবেশ করা কঠিন ছিল। জানা যায় বৈঠকটিতে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বামফ্রন্ট ক্যাবিনেট মন্ত্রী কান্তি গাঙ্গুলী, প্রয়াত প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক শচীন সেন, স্থানীয় সিপিআই(এম) নেতা নির্মল হালদার, ১০৮ নং ওয়ার্ডের (তিলজলা-কসবা) প্রাক্তন কাউন্সিলর অমল মজুমদার এবং যাদবপুরের তৎকালীন সংসদ সদস্য (ও পরবর্তীকালে লোকসভার স্পিকার) সোমনাথ চ্যাটার্জি। আনন্দমার্গীরা কমিউনিস্টদের ক্রোধ অর্জন করেছিলেন কারণ তারা আদর্শগতভাবে তাদের বিরোধিতা করেছিল এবং আশির দশকের গোড়ার দিকে সিপিএম তাদের কার্যকলাপ নিয়ে গভীরভাবে সন্দিহান ছিল। মার্গীদের উপর প্রথম আক্রমণটি ১৯৬৭ সালে পুরুলিয়া গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে হয়েছিল যেখানে তাদের মধ্যে পাঁচজনকে সিপিআই(এম) ক্যাডাররা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ ছিল। ঠিক দু'বছর পরে, আনন্দমার্গের কোচবিহার মণ্ডলীতে হামলা হয়। সিপিএম সর্বদা বিশ্বাস করত যে মার্গের আধ্যাত্মিক-ধর্মীয় আবরণের নীচে রয়েছে রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং এজেন্ডা। এমনকি ১৯৮২ সালের বিজন সেতু হত্যাকাণ্ডের পরেও, ১৯৯০ সালের এপ্রিলে, পুরুলিয়ায় আনন্দমার্গের পাঁচ সদস্য সিপিআই(এম) ক্যাডারদের দ্বারা খুন হয়েছিল বলে অভিযোগ। ১৯৮২ সালের জঘন্য গণহত্যা সম্পর্কে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু কুখ্যাতভাবে বলেছিলেন, "কী করা যায়? এমন ঘটনা ঘটে।"[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Namboodiri, Udayan (১৯৯৭-০৫-০২)। "Basu Govt still suppressing facts on Margi massacre"The Indian Express। ২০১০-০৩-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০১৪ 
  2. "নতুন সরকারের কাছে বিজন সেতু নারকীয় হত্যাকাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবি আনন্দমার্গ সন্ন্যাসীদের"। ৩০ এপ্রিল ২০২১। 
  3. Judicial probe into killings of Margis, The Statesman, ৭ মার্চ ২০১২, ১৩ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা 
  4. "Why corpses of a 1982 killing are stirring again"The Indian Express। ৫ জুন ২০১৫। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]