করিমুন্নেসা খানম চৌধুরানী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
করিমুন্নেসা খানম চৌধুরানী
জন্মকরিমুন্নেসা খানম চৌধুরানী
এপ্রিল ১৮৫৫
পায়রাবন্দ, মিঠাপুকুর, রংপুর, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা বাংলাদেশ)
মৃত্যু(১৯২৬-০৯-০৬)৬ সেপ্টেম্বর ১৯২৬
কলকাতা
পেশাসমাজকর্মী, লেখিকা
দাম্পত্যসঙ্গীআবদুল হালীম খান গজনবী
সন্তানআবদুল করিম গজনবী
আবদুল হালীম গজনবী

করিমুন্নেসা খানম চৌধুরানী (১৮৫৫-১৯২৬) একজন বাঙালি কবি, সমাজকর্মী এবং সাহিত্য অনুরাগী ছিলেন। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া তার ছোটবোন।[১]

শৈশব ও কৈশোর[সম্পাদনা]

১৮৫৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত রংপুরের পায়রাবন্দ জমিদার বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জহিরুদ্দীন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের এবং মাতা রাহাতুন্নেছা সাবেরা চৌধুরানী। তার ছোটবোন ছিলেন বেগম রোকেয়া। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে বড় হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই কঠোর পর্দাপ্রথার মধ্যে বড় হন তিনি। শিক্ষা ছিল কুরআন পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভাইদের থেকে শুনে শুনে তিনি পারস্য কবিতা মুখস্থ করে ফেলতেন। ছোটবেলায় পুঁথি পড়তে গিয়ে বাড়িতে ধরাও পড়েছেন তিনি। নিজের চেষ্টায় ইংরেজি ও বাংলা শিখেছিলেন। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার জমিদার আবদুল হালীম খান গজনবীর সাথে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তার বিয়ে সম্পন্ন হয়। ২৩ বছর বয়সে তিনি বিধবা হন। তখন তিনি দুই পুত্রের জননী।[২][৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

করিমুন্নেসা নিশ্চিত করেন যেন তার সন্তানরা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে। তিনি তার সন্তানদের কলকাতার স্কুলে পাঠান। তিনি বড় ছেলে আবদুল করিম গজনবীকে মাত্র বছর বয়সেই ইংল্যান্ড পাঠান। তার দ্বিতীয় সন্তান আবদুল হালিম গজনবী কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পাঠান। বাংলার রাজনীতিতে তার সন্তানেরা গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রমশই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। বাংলা ও সাহিত্যপাঠে বোন রোকেয়াকে তিনি সবসময় উৎসাহিত করতেন।[৪] তিনি নিজেও বেশকিছু কবিতা লিখেছেন। তার কবিতাগুলো মূলত ছিল প্রকৃতিসম্পর্কিত। তিনি মানস বিকাশ এবং দুঃখ তরঙ্গিনী নামে দুটি বই প্রকাশ করেন। তিনি আবদুল হামিদ খান ইউসুফজাই কর্তৃক প্রকাশিত পাক্ষিক ম্যাগাজিন আহম্মদীর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। আহম্মদী হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষে বলত, প্রথম কোনো মুসলিম ম্যাগাজিন কিনা যা করতে পেরেছিল। ১৮৮৪ থেকে ১৮৯২ সালের মধ্যে তিনি দেলদুয়ার এস্টেটের এস্টেট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।

স্বামীর মৃত্যুর পর তাকে জমিদারিও দেখতে হয়। গজনবী এস্টেটের ম্যানেজার হিসেবে একসময় কাজ করেছিলেন ঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেন[৫] ১৮৮৫ সালে মীর মশাররফ হোসেন খ্যাতনামা বিষাদ-সিন্ধু উপন্যাসটির প্রথম সংস্করণ ‘মাত’ সম্বোধনে তাকে উৎসর্গ করেন। পরবর্তীতে মশাররফের সঙ্গে করিমন্নেসার সম্পর্কের অবনতির কারণবশত বইটির পরবর্তী সংস্করণে এই উৎসর্গপত্রটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।[৬]

বেগম রোকেয়ার মতিচুর বইটির দ্বিতীয় খণ্ড তাকে উৎসর্গ করা হয়। উৎসর্গ পত্রে বেগম রোকেয়া লেখেনঃ

“আপাজান! আমি শৈশবে তোমারই স্নেহের প্রসাদে বর্ণ পরিচয় পড়িতে শিখি। আমার অপর আত্মীয়গণ আমার উর্দ্দু ও পারসী পড়ায় তত আপত্ততি না করিলেও বাঙ্গালা পড়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। একমাত্র তুমিই আমার বাঙ্গালা পড়ার অনুকূলে ছিলে। আমার বিবাহের পর তুমিই আশঙ্কা করিয়াছিলে যে আমি বাঙ্গালা ভাষা একেবারে ভুলিয়া যাইব। চৌদ্দ বছর ভাগলপুরে থাকিয়া বঙ্গভাষায় কথাবার্ত্তা কহিবার একটি লোক না পাইয়াও যে বঙ্গ ভাষা ভুলি নাই, তাহা কেবল তোমারই আশীর্ব্বাদে। অতঃপর কলিকাতায় আসিয়া ১১ বৎসর যাবত এই উর্দ্দু স্কুল পরিচালনা করিতেছি; এখানেও সকলেই - পরিচারিকা, ছাত্রী, শিক্ষয়িত্রী ইত্যাদি সকলেই উর্দ্দুভাষিণী। প্রাতঃকাল হইতে রাত্রি পর্য্যন্ত উর্দ্দু ভাষাতেই কথা কহিতে হয়। আবার বলি, এতখানি অত্যাচারেও যে বঙ্গভাষা ভুলিয়া যাই নাই, তাহা বোধহয় কেবল তোমারই আশীর্ব্বাদের কল্যাণে! স্নেহ ভক্তির নিদর্শন স্বরূপ এই গ্রন্থখানি তোমার করকমলে সমর্পণ করিতেছি, গ্রহণ করিলে ধন্য হইব। এ পুস্তকে তোমার বড় সাধের "ডেলিশিয়া হত্যা"ও দেওয়া হইয়াছে।”[৫]

তিনি ৬৭ বছর বয়সে আরবি শেখেন।[২][৭]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯২৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর করিমুন্নেসা মৃত্যুবরণ করেন।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হোসেন, আনোয়ার (২০০৩)। Muslim women's struggle for freedom in colonial Bengal: (1873-1940) (ইংরেজি ভাষায়)। প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ২৬৬। আইএসবিএন 9788180640308 
  2. সালাম, মুহম্মদ আবদুস। "চৌধুরানী, করিমুন্নেসা খানম"bn.banglapedia.org। বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৭ 
  3. The Journal of the Institute of Bangladesh Studies (ইংরেজি ভাষায়)। ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০। পৃষ্ঠা 57–58। 
  4. "একটি থেকে জ্বলছে কোটি মোমবাতি"দৈনিক প্রথম আলো। ৪ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৬ 
  5. রোকেয়া রচনাসমগ্র। ডঃ মীরাতুন নাহার সম্পাদিত। ২০০১। 
  6. "বিষাদ-সিন্ধু : পাপ অথবা প্রেমের জয়-পরাজয় : আবুল আহসান চৌধুরী"ভোরের কাগজ। ৪ জুলাই ২০১৭। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  7. Hussain, Sahanara। "The Role of Bengali Women in the 19th and 20th Centuries" (পিডিএফ)unesdoc.unesco.org। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৭