বৃষ্টির পানি সংগ্রহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ মন্টারে ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং উচ্চ শিক্ষা, মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো
বৃষ্টির পানি জমানোর কাজে ব্যবহৃত জলাধার।

বৃষ্টির পানি সংগ্রহ হচ্ছে একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে পুনরায় কাজে লাগানোর জন্য বৃষ্টির পানি আহরণ করা হয়। বৃষ্টির পানি নদী বা ছাদ থেকে আহরণ করা হয়, এবং অনেক জায়গায় আহরণ করা জল গভীর কূয়া বা আধারে জমানো হয়। কখনো কখনো জল আহরণ করা হয় ছাকনির মাধ্যমে শিশির বা কুয়াশা থেকে। এই জল ব্যবহার করা হয় বাগান, গবাদি পশু, কৃষি কাজ, সঠিক শোধনের মাধ্যমে পান করার কাজে ও বাড়ীর অভ্যন্তরীণ তাপের কাজে, এবং দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণের কাজে। বৃষ্টির

বৃষ্টির পানি সংগ্রহ বাড়ির গৃহস্তালি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহের সবচেয়ে সাধারণ ও পুরাতন পদ্ধতি।[১]

সুবিধাসমূহ[সম্পাদনা]

বৃষ্টির জল সংগ্রহ দেয় কোন এলাকায় জল সঙ্কটের সময় একটি স্বনির্ভর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এবং উন্নত বিশ্বে এটা মূল জল সরবরাহ ব্যবস্থার সম্পূরক হিসেবে কাজ করে। এই পদ্ধতি খড়ার সময় জল সরবরাহ করে, নিচু এলাকায় বন্যা হ্রাস করে এবং কূপের পানির চাহিদা হ্রাস করে। এছাড়া এটা পানযোগ্য পানির ব্যবস্থা করে, কারণ বৃষ্টির পানিতে কোনো লবণাক্ততা নেই। শহরে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা অনেক সুবিধা দেয় যেমন, পানি সর্বরাহ ও বর্জ্য জলে পরিষ্কার পানির চাহিদা কমায়, নর্দমায় বরষার পানির সৃষ্টি কম হয়, এবং উপচে পড়া বর্ষার পানির দ্বারা পরিষ্কার পানির দূষণ কমায়।[২]

অনেকগুলি গবেষণা বৃষ্টির পানি সংগ্রহের খরচ ও পরিবেশগত সুবিধার উপর দৃষ্টিপাত করে।  

কৃষি কাজে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের সুবিধা জানতে আরো জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। অনেক দেশ, বিশেষ করে খরা কবলিত এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ একটি সস্তা এবং নির্ভরযোগ্য উৎস।[৩] শুষ্ক পরিবেশে কৃষি কাজ উন্নত করতে মাটির কিনারায় শৈলশিরা নির্মান করা হয় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য। এমনকি যখন খুব কম বৃষ্টিপাত হয়, তখনো শস্য ফলানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি আহরণ করা হয়।[৪] পানি ছাদ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে, কিংবা বাঁধ এবং পুকুর নির্মাণ করা যেতে পারে প্রচুর পরিমাণে পানি ধরে রাখতে যাতে করে কম বৃষ্টিপাতের সময়ও ফসল ফলানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির সরবরাহ থাকে।

গুণাগুণ[সম্পাদনা]

জমা হওয়া সংক্রামক উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় প্রাথমিকভাবে উপচে পড়া পানি সরিয়ে দেয়ার ফলে।[৫] উন্নতমানের ভাসমান প্রণালী ব্যবহার করে ট্যাঙ্কের নিচের পরিবর্তে উপর থেকে পানি আহরণ এবং সারিবদ্ধ ট্যাঙ্ক ব্যবহারের মাধ্যমে পানির গুণাগুণ উন্নত করা যায় পূর্ব পরিশোধন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা ব্যবহার ক’রে ট্যাঙ্কের ভিতরে যাতে কোন বড় ধরনের তলানি না জমা হয় তা নিশ্চিত করা যায়। পানি স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য পূর্ব পরিশোধন প্রণালী একটি গুরুতবপূর্ণ পদ্ধতি।

ধারণাসঙ্গতভাবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যবহার্য পানির সমতুল্য হতে হবে। কিন্তু, বেশীরভাগ উন্নয়নশীল দেশে উন্নতমানের পানযোগ্য পানি ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। এর কারণে অনেক টাকা ও পরিশ্রম অপচয় হয় এবং পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে। একটি কার্যকর পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করতে হবে বৃষ্টির পানি যা পরিশোধনের মাধ্যমে কাপড় ধোয়া, শৌচাগার ও সেচ কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।

পদ্ধতি সংস্থাপন[সম্পাদনা]

বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতি একটি খুব সাধারণ অথবা অত্যাধুনিক হতে পারে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি আসলে কোন প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়, এটি একটি চৌবাচ্চা ব্যবস্থা কারণ দালানের সবগুলো পানির কল ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাঙ্কের সাথে সংযুক্ত।

ব্যবস্থাগুলির আকার চাহিদার উপর নির্ভর ক’রে নির্ধারণ করা হয় যেহেতু এটা প্রতিদিন পানি সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত আকারের হ’তে হবে। বিশেষ করে, পানি ধরার স্থান, যেমন ছাদ, পর্যাপ্ত আকারের হ’তে হবে সঠিক পানি প্রবাহ বজায় রাখতে। পানি ধারণের ট্যাঙ্কটিও পর্যাপ্ত আকারের হতে হবে।

নিম্নমানের পদ্ধতিতে নিম্নমানের প্রণালী ব্যবহার করা হয়। ছাদ অথবা মাটি থেকে পানি সংগ্রহ এবং মাটিতে সিক্ত পানি পাম্প ক’রে জলাধারে নিয়ে যাওয়া হয়।

পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নির্মাণের আগে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। যেমন, বৃষ্টির পানি আহরণের জিআইএস ম্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে নির্ণয় করা যেতে পারে কোন এলাকায় আহরণের জন্য পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় কিনা। কিংবা Rain is Gain যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে কোন এলাকার পানির চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়। এসব যন্ত্র পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা নির্মাণের সময় টাকা ও সময় বাঁচাতে পারে।

জীবনচক্র পরিমাপঃ পরিবেশের নকশা[সম্পাদনা]

বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জীবনচক্র পরিমাপের জন্য EEAST মডেল।

সমসাময়িক পদ্ধতিগুলির জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং পরিবেশগত কার্যকারিতা নির্ণয় করা জীবনচক্র পরিমাপ একটি পদ্ধতি যা ব্যবহার করা হয় ব্যবস্থার পরিবেশগত প্রভাব শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নির্ণয় করা। ডেভকোটা এই ধরনের একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যাতে দেখা যায় যে দালানের নকশা, ও ক্রিয়া পদ্ধতিটির পরিবেশগত কর্মক্ষমতায় একটি গুরুত্বপূর্ণো ভূমিকা পালন করে।[৬][৭] EEAST মডেল গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ এবং সেই পদ্ধতির সম্পূর্ণ খরচ নির্ণয় করে থাক।  

পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থার কার্যক্ষমতার দিকটি আলোচনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয় যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় শৌচাগারের কাজে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পরিবেশগত প্রভাব। এতে দেখা যায় যে পরিবেশগত নিঃসরণের খরচ অনেকাংশে কমানো সম্ভব যদি দালানগুলি আলাদাভাবে না হয়ে একটি সম্মিলিত নেটওয়ার্কের আওতায় থাকে।

বিশুদ্ধ পানিতে প্লাবিত বনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ[সম্পাদনা]

রাতারগুল জলাবন, বাংলাদেশ

বিশুদ্ধ পানিতে প্লাবিত বনের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ সম্ভব, এতে প্লাবিত জমি থেকে আয়ের অপচয় হয় না। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয়ভাবে লভ্য বৃষ্টির পানির দ্বারা সারা বছরের পানির চাহিদা খুব কম খরচে পূরণ করা।[৮] এর মাধ্যমে ঘরোয়া, শিল্পসংক্রান্ত ও সেচ কাজে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা যাবে।

সৌর প্যানেলের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ[সম্পাদনা]

জনাকীর্ণ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির উৎস ক্রমেই দুঃষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। সৌর শক্তি ছাড়াও বৃষ্টির পানি যে কোন যায়গার জন্য একটি নবীকরণযোগ্য সম্পদ। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান বিশাল আকৃতির সৌর প্যানেল দিয়ে ঢেকে ফেলা হচ্ছে। এই সৌর প্যানেলে পড়া বৃষ্টির পানি আহরণ করা যেতে পারে এবং সুষ্ঠ নিষ্কাশনের মাধ্যমে এটাকে পানোপযোগ্য করা যেতে পারে।[৯][১০] সৌর প্যানেল একটি সহজ এবং সস্তা উপায় বৃষ্টির পানিকে পানযোগ্য বোতলজাত পানিতে রূপান্তরিত করতে।[১১]

নতুন কিছু উপায়[সম্পাদনা]

রেইন সসার একটি উলটানো ছাতা সদৃশ বস্তু যা দিয়ে আকাশ থেকে পড়া বৃষ্টির পানি আহরণ করা যায়। এই পদ্ধতিটি পানি বিশাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায় এবং এটা উন্নয়নশীল দেশের জন্য বৃষ্টির পানি আহরণের একটি ভাল উপায়।[১২] এছাড়া এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানি বাগানের কাজে বা ছোট জায়গায় চাষের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।[১৩]

গ্রোসিস ওয়াটারবক্স নামে একটি ডাচ উদ্ভাবন শিশিরকণা ও বৃষ্টি থেকে পানি আহরণের মাধ্যমে তা গাছ ফলানোর কাজে ব্যবহার করা যায়।

গুয়াতেমালার অনাথাশ্রমে শিশুদের সামনে রেইন সসার পদ্ধতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

ঐতিহ্যগতভাবে ডিটেনশন বেসিনের মাধ্যমে ঝড়ো পানি সংগ্রহ শুধু একটি কারণেই ব্যবহৃত হত। কিন্তু, এখন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বৃষ্টির পানি আরো সহজভাবে সংগ্রহ করা যায়।[১৪] এটা ব্যবহার করা হয় EPA হেডকোয়ার্টারে ব্যবহার করা হয় ঝড়ের আগে জমানো পানি সরানোর কাজে। এই পদ্ধতিটি ব্যবহারের ফলে পানির গুণগত মান উন্নয়ন সম্ভব।[১৫][১৬]

সাধারণতঃ জলপ্রবাহের উপর দিয়ে চেক ড্যাম নির্মাণ করা হয় মাটির পানি চুইয়ে নিচের স্তরে পড়ার জন্য। কৃত্রিম উপায়ে পানি চুইয়ে পড়া অনেকাংশেই উন্নত করা সম্ভব। এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি ব্যবহারের জন্য স্থানীয় ভূগর্ভস্থ জলস্তর (aquifer) খুব দ্রুত রিচার্জ করা সম্ভব।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তৃতীয় খৃষ্টপূর্বের কোন এক সময় বালোচিস্তান (এখন পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানে অবস্থিত), এবং ভারতের কুচ প্রদেশের কৃষক সম্প্রদায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা ব্যবহার করেন কৃষি কাজ ও অন্যান্য কাজে।[১৭] প্রাচীন তামিলনাড়ুতে চোল সাম্রাজ্যের রাজারা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবহার করেন।[১৮] ভারতের বালাগানপতি নগরের বৃহদেশ্বর মন্দিরের পানি শিব গঙ্গা ট্যাঙ্কে জমানো হতো।[১৯] চোলা রাজ্যের শেষের দিকে (১০১১-১০৩৭ খৃষ্টপূর্ব) তামিল নাড়ুর কাড্ডালোর জেলায় পান এবং সেচ কাজে ব্যবহারের পানির জন্য ভিরানাম ট্যাঙ্ক নির্মাণ করা হয়। ভিরানাম ট্যাঙ্কটির দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার এবং এর ধারণ ক্ষমতা ১,৪৬৫,০০০,০০০ কিউবিক ফিট।

যদিও শতাব্দি ধরা অজানা ছিল, ইতালির ভেনিস নগরি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উপর নির্ভর করত। ভেনিসের চারিদিকে যে উপহ্রদটি রয়েছে, তার পানি লবণাক্ত এবং পানোপযোগী নয়। ভেনিসের প্রাচীন অধিবাসীরা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি ব্যবস্থা শুরু করেন যা নির্ভর করত কৃত্রিমভাবে তৈরী কূপের উপর।[২০] পানি বিশষভাবে তৈরী পাথরের মেঝে দিয়ে চুইয়ে পড়ত তারপর তা বালির একটি স্তরের মাধ্যমে ছাঁকা হয়ে কূপের নিচে জমা হত। পরে, যখন ভেনিস দেশের মূল অংশে ভূমি অধিগ্রহণ করে তখন তারা নৌকার মাধ্যমে নদী থেকে পানি আনা শুরু করে। কিন্তু, কূপগুলো তখনও কার্যকর ছিল, বিশেষ করে যুদ্ধের সময় যখন দেশের মূল অংশের পানি সরবরাহ শত্রুরা বন্ধ করে দিত।

বৃষ্টির পানি সংগ্রহে ব্যবহৃত ট্যাঙ্ক, বুর্কিনা ফাসো
বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতি, দক্ষিণ আফ্রিকা

বর্তমান ব্যবহার[সম্পাদনা]

  • চীন, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলে ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা হয় পান, সেচ কাজে, গবাদি পশুর জন্য এবং ভূগর্ভস্থ পানির পূর্ণতা বজায় রাখতে। চীনের গান্সু রাজ্যে এবং উত্তর-পূর্ব ব্রাজিলে ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের সব চেয়ে বড় প্রকল্প বিদ্যমান।
  • কোনো দেশের জনসংখ্যার সবচেয়ে বড় ভাগ যারা বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে থাকে তা হচ্ছে থাইল্যান্ড (বর্তমানে ৪০% এর কাছাকাছি)।[২১] সেদেশের সরকার ৮০’র দশকে প্রবলভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উপর জোর দেয়। ৯০ এর দশকে যখন সরকারি অনুদান শেষ হয়ে যায় তখন বেসরকারি খাত সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং কয়েক মিলিয়ন ট্যাঙ্ক তারা ক্রয় করে বাসার কাজে ব্যবহারের জন্য।[২২] এটা পৃথিবীতে নিজস্ব পানি ব্যবহারের অন্যতম বড় একটি উদাহরণ।
  • বারমুডার আইন অনুযায়ী প্রত্যেকটি নতুনভাবে নির্মিত দালানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকতে হবে।[২৩]
  • যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডেও একই ধরনের আইন প্রচলিত আছে।
  • সেনেগালগিনি-বিসাউ এর দিওলা-পিপলদের প্রতিটি বাড়ীতে হাতে বানানো বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ যন্ত্র লাগানো আছে।
  • মিয়ানমারের ইরাওয়াদি ব-দ্বীপে ভূগর্ভস্ত পানি হয় লবণাক্ত, তাই সেখানকার বাসিন্দারা তাদের পানযোগ্য পানির চাহিদা মেটাতে কাদায় ঘেরা বৃষ্টির পানির পুকুরের উপর নির্ভর করেন। এই পুকুরগুলির কোন কোনটি কয়েক শ’ বছরের পুরনো এবং বাসিন্দারা এগুলোকে প্রচুর শ্রদ্ধার সাথে রক্ষণেবাক্ষণ করে।
  • মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের কলোরাডো রাজ্যে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কলোরাডো ওয়াটার রাইটস এর কারণে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল; একজন বাড়ীর মালিক যদি বৃষ্টির পানি আহরণ করত, তা হ’লে তাকে দেখা হত এমন একজন মানুষ হিসেবে যিনি অন্যান্য মানু্‌ যারা জলবিভাজিকার পানি আহরণ করে থাকেন, তাদের অধিকার হরণকারী হিসেবে। এখন বেসরকারি কূপের মালিকরা পারমিটের মাধ্যমে বৃষ্টির পানি আহরণের পদ্ধতি বাসার ছাদে লাগাতে পারেন।[২৪] যে কারণে কলোরেডোর আইন প্রণয়নকারী পরিষদকে বোঝানো অসম্ভব হচ্ছিল, সেটা হচ্ছে ২০০৭ সালের এক জরীপে দেখা যায় যে ডেনভার এলাকায় বৃষ্টির পর ৯৭% পানি কখনো জলাশয় পর্যন্ত পৌঁছে না, বরং তা গাছ গাছালি ব্যবহার করে বা বাষ্পে পরিণত হয়।[২৫] কলোরেডোতে আইনগতভাবে কেউ ৩৫ একরের কম জায়গায় পানির জন্য কূপ খনন করতে পারে না। টেক্সাস রাজ্যে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ যন্ত্র কিনতে গেলে বিক্রয় কর ধরা হয় না।[২৬] ২০১২ সালে ওহাইও রাজ্যে Water for 2060 আইন পাশ করা হয় বৃষ্টির পানি ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য। সান্তা ফে, নিউ মেক্সিকোতে নতুন নতুন দালানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক।[২৭] ২০১২ সালে ওকলাহোমা রাজ্যে Water for 2060 Act পাশ করা হয়।[২৮]
  • চীনের বেইজিং এ কিছু কিছু হাউজিং সোসাইটি তাদের মূল পানির উৎস হিসেবে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করছ।
  • আয়ারল্যান্ডের প্রফেসর মাইকেল ম্যাকগিনলি ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন এ একটি বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতি চালু করেন।

কানাডা[সম্পাদনা]

কানাডার অনেক নাগরিকই কাপড় ধোয়া, সেচ ও বাথরুমে ব্যবহারের জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। ২০০০ সালের পর থেকে কিছু আইন পরিবর্তনের কারণে এখন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা ব্যবহার করা অনেক সহজ হয়েছে।

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে ভূগর্ভস্ত পানির ছকে পানি ভূমি থেকে সাধারণতঃ ৭ মিটার নিচে থাকে। বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থার মাধ্যমে যদি বৃষ্টির মৌসুমে এই ছকটি ৪ মিটার বাড়ানো যায়, তাহলে সারা বছর কোন সমস্যা ছাড়াই ভূগর্ভস্ত পানি দিয়ে ফসল ফলানো সম্ভব হয়।

  • তামিলনাড়ু হচ্ছে প্রথম রাজ্য যেখানে ভূগর্ভস্ত পানি নিঃশেষ রোধ করতে প্রতিটি দালানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। এই ব্যবস্থাটি ২০০১ সালে চালু করা হয় এবং তামিল নাড়ুর সব পল্লি অঞ্চলে এটা কাজে লাগানো হয়। সমগ্র তামিল নাড়ুতে পোস্টারিং এর মাধ্যমে বৃষ্টির পানি সংগ্রহে মানুষকে সচেতন করা হয়। এটা খুবই ভাল ফল দেয়। এর ফলে পানির স্তর ৫০% বৃদ্ধি পায় এবং পানির গুণও অনেক ভাল হয়।[২৯]
  • কর্ণাটক: ব্যাঙ্গালোরে ৬০ ফিট x ৪০ ফিট আয়তনের সব জায়গার মালিকের জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক। ব্যাঙ্গালোরের জয়নগরে Bangalore Water Supply and Sewerage Board স্যার এম ভিসভেসভারায়ার নামে একটি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ থিম পার্ক নির্মাণ করে। অডিটোরিয়ামের দ্বিতীয় তলায় পরিবেশ বান্ধব গ্রীন এয়ার কন্ডিশন সিস্টেম স্থাপন করা হয় এবং সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থার উপর জনসাধারণকে ভিডিও দেখানো হবে।[৩০] ব্যাঙ্গালোরের ডিপার্টমেন্ট অফ কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ চেষ্টা করা হচ্ছে সৌর প্যানেলের উপরের স্তর ব্যবহার করে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা।[৩১]
  • রাজস্থানে থার মরুভূমির বাসিন্দারা সব সময় বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা ব্যবহার করে আসছে। রাজস্থানের অনেকগুলো প্রাচীন পানি আহরণের পদ্ধতি পুনরায় সচল করা হয়েছে।[৩২] রাজস্থানের অন্যন্য অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যেমন, জয়পুরের চাউকা সিস্টেম।[৩৩]
  • মহারাষ্ট্র: বর্তমানে পুনেতে যে কোন নতুন হাউজিং সোসাইটিতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক।
  • মহারাষ্ট্রের মুম্বাইতে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা পানির সংকট দূর করার একটি ফলপ্রসূ সমাধান হিসেবে দেখা হয়।
  • মুম্বাই সিটি কাউন্সিল বড় জনগোষ্ঠির জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করার পরিকল্পনা করছে।[৩৪]

ইসরায়েল[সম্পাদনা]

ইসরায়েলে সাউথওয়েস্ট সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব হাসপাতাল এন্ড হেলথ কেয়ার সিস্টেমস এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের একটি মডেল প্রোগ্রাম চালু করছে। লোদ, ইযরায়েলে সর্বপ্রথম বৃষ্টির পানি আহরণ ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়। এই প্রজেক্টটির তৃতীয় ধাপে এটাকে হাইফা পর্যন্ত বর্ধিত করার পরিকল্পনা চলছে। স্কুলের শিশুদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে সচেতন করার লক্ষ্যে প্রতিটি স্কুলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন করা হচ্ছে।[৩৫]

নিউজিল্যান্ড[সম্পাদনা]

যদিও নিউজিল্যান্ডের পশ্চিম ও দক্ষিণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি।[৩৬]

শ্রীলঙ্কা[সম্পাদনা]

শ্রীলঙ্কার গ্রামাঞ্চলে পান ও সেচ কাজের জন্য বৃষ্টির পানি সংগ্রহ একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। ২০০৭ সালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে উৎসাহিত করার জন্য Urban Development Authority (Amendment) Act, No. 36 এর মাধ্যমে একটি আইন পাশ করা হয়।[৩৭] লঙ্কা রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিং ফোরাম এই পদক্ষেপটির নেতৃত্ব দিচ্ছে।[৩৮]

দক্ষিণ আফ্রিকা[সম্পাদনা]

দক্ষিণ আফ্রিকা দক্ষিণ আফ্রিকার জল গবেষণা কমিশন বৃষ্টির পানি সংগ্রহের উপর গবেষণার জন্য সাহায্য করছে।[৩৯] শুষ্ক ও আর্দ্র অঞ্চলে গবেষণায় দেখা গেছে যে ছোট ছোট গর্ত খুঁড়ে বা ভেজা খড় পাতা ছোট খাটো ভাবে ফসল ফলানোর জন্য কার্যকরি।[৪০]

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্যে বাড়ীর বাগানে বৃষ্টির পানির ট্যাঙ্ক দেখা যায় যা বাগানের কাজে বৃষ্টির পানি সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, ব্রিটিশ সরকারের Code For Sustainable Homes নব নির্মিত বাড়ীতে কাপড় ধোয়া ও বাথ্রুমের কাজে মাটির নিচে বৃষ্টির পানি জমানোর জন্য ট্যাঙ্ক নির্মাণে উৎসাহিত করে। এই কোডটি ২০১৫ সালে বাতিল করা হয়।

অপ্রথাগত ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

১৯৯২ সালে, আমেরিকান শিল্পী মাইকেল জোন্স ম্যাককিন নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহা শহরে অবস্থিত সমসাময়িক শিল্পের জন্য বেমিস সেন্টারে একটি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেন যা ওমাহার আকাশে একটি রংধনুর সৃষ্টি করে। এর জন্য আহরণ করা হয় হাজার হাজার গ্যালন বৃষ্টির পানি এবং এগুলো জমানো হয় ১২,০০০ গ্যালনের ৬ টি ট্যাঙ্কে। পাঁচ মাসের এই প্রজেক্টটি ছিল আমেরিকার মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে একটি বড় বৃষ্টির পানি সংগ্রহের স্থান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Rural Water Supply Network" 
  2. ""Advantages of integrated and sustainability based assessment for metabolism based strategic planning of urban water systems"." 
  3. Zhu, Qiang। "Rainwater Harvesting for Agriculture and Water Supply. Beijing: Springer." 
  4. "Rainwater Harvesting"। ৯ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  5. "New Scientist"। 
  6. Devkota। ""Development and application of EEAST: A lifecycle-based model for use of harvested rainwater and composting toilets in buildings"" 
  7. Devkota। ""Life cycle based evaluation of harvested rainwater use in toilets and for irrigation"" 
  8. "Rainwater Harvesting By Freshwater Flooded Forests" 
  9. ""Rain fed solar powered water purification systems"." 
  10. ""Inverted Umbrella Brings Clean Water & Clean Power To India"." 
  11. ""New rooftop solar hydropanels harvest drinking water and energy at the same time"." 
  12. ""Harvesting rainwater for more than greywater"."। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  13. Kumar, Ro। "LocalBlu"। Archived from the original on ১৭ ডিসেম্বর ২০১২। 
  14. "SmartPlanet" 
  15. O'Brien, Sara Ashley। ""The Tech Behind Smart Cities - Eliminating Water Pollution"." 
  16. Braga, Andrea। ""Making Green Work, and Work Harder"" (পিডিএফ)। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  17. "Rainwater Harvesting" 
  18. ""Believes in past, lives in future"."। ৯ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  19. ""Rare Chola inscription found near Big Temple"."। ২২ নভেম্বর ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  20. "Venetian Wells"। ৯ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  21. ""Joint Monitoring Programme Thailand Data"." [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  22. Saladin, Matthias। ""Rainwater Harvesting in Thailand - learning from the World Champions"." 
  23. Low, Harry। ""Why houses in Bermuda have white stepped roofs"" 
  24. ""Rainwater Collection in Colorado"." (পিডিএফ)। ২৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  25. ""Criteria and Guidelines for the "Rainwater Harvesting"" (পিডিএফ)। ২৯ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  26. ""82(R) H.B. No. 3391. Act relating to rainwater harvesting and other water conservation initiatives. † went into effect on September 1, 2011"." 
  27. ""It's Now Legal to Catch a Raindrop in Colorado". The New York Times." 
  28. ""State Rainwater Harvesting Statutes, Programs and Legislation"."NCSL। ৮ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  29. ""Tamil Nadu praised as role model for Rainwater Harvesting"." 
  30. ""Rain Water Harvesting BWSSB - Bangalore Water Supply and Sewerage Board"."। ২৮ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  31. ""Defluoridation of Drinking Water and Rainwater Harvesting Using a Solar Still"." 
  32. ""Ancient water harvesting systems in Rajasthan"." 
  33. "Chauka System"। ১২ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  34. "BMC To Make Rainwater Harvesting Mandatory For Large Societies" 
  35. "Rainwater Collection System Saves Water, Money for Schools" 
  36. "Rainwater Tanks"। Archived from the original on ১৪ এপ্রিল ২০১৬। 
  37. ""Parliament Of The Democratic Socialist Republic of Sri Lanka"" (পিডিএফ)। ৪ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  38. ""Lanka Rain Water Harvesting forum (LRWHF)"." 
  39. "Rainwater Harvesting"। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  40. "Sustainable techniques and practices for water harvesting and conservation and their effective application in resource-poor agricultural production through participatory adaptive research : report to the Water Research Commission" (পিডিএফ)। ২০১৪-১২-৩১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।