নগর পরিকল্পনাবিদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নগর পরিকল্পনাবিদ
জেনি জ্যাকব, বিশ্বখ্যাত নগর পরিকল্পনাবিদ
পেশা
নামশহর পরিকল্পনাবিদ, পরিকল্পনাবিদ, শহর পরিকল্পনাবিদ
পেশার ধরন
পেশা
প্রায়োগিক ক্ষেত্র
স্থাপত্য
ভূগোল
আবাসন উন্নয়ন
নগর পরিকল্পনা
পুরকৌশল
বিবরণ
যোগ্যতাজটিল চিন্তা, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধান, কার্যকরী যোগাযোগ, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত বিষয়সমূহ নিয়ে কাজ করা।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
দেখুন নগর পরিকল্পনা শিক্ষা
কর্মক্ষেত্র
নির্মাণ, বিল্ডিং ও পরিকল্পনা
সম্পর্কিত পেশা
স্থপতি, নির্মাণ প্রকৌশলী, ভূগোলবিদ, ইতিহাসবিদ/সংরক্ষণবিদ, ল্যান্ডস্কেপ স্থপতি, পরিমাণ পরিমাপক, নগর নকশাকারী।

নগর পরিকল্পনাবিদ হচ্ছেন একজন পেশাজীবী যিনি নগর পরিকল্পনার কাজে নিযুক্ত।

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ বিশেষ কোন বিষয়ের উপর কাজ করতে পারেন, এবং তাকে অভিহিত করা যেতে পারে শহর পরিকল্পনাবিদ, টাউন পরিকল্পনাবিদ, আঞ্চলিক পরিকল্পনাবিদ, লং-রেঞ্জ পরিকল্পনাবিদ, পরিবহন পরিকল্পনাবিদ, পার্ক পরিকল্পনাবিদ, ফিজিক্যাল পরিকল্পনাবিদ, শারীরিক পরিকল্পনাবিদ, পরিকল্পনা বিশ্লেষক, শহর নকশাবিদ, সমাজ উন্নয়ন পরিচালক, অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ অথবা অন্য কোন নামে।[১][২]

দায়িত্ব[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব বিভিন্ন অধিকারের সীমার মধ্যে হেরফের করতে পারে। তাই, নিচে বর্ণিত বিষয়গুলি একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বের সাধারণ বর্ণনা, যার মধ্যে একজন নগর পরিকল্পনাবিদ দুইটি বিষয়ের উপর কাজ করতে পারেন। অন্যদিকে একজন নগর পরিকল্পনাবিদ শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপরও বিশেষজ্ঞ হ’তে পারেন।

ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

ভূমি ব্যবহারের উপর দক্ষ নগর পরিকল্পনাবিদ্গণ বিশেষতঃ কাজ করেন ভূমি ব্যবহার নিয়ন্ত্র ও উপবিভাগ উন্নয়নের উপর, এবং তাঁর লক্ষ্য থাকে আকাংক্ষিত নগর উন্নয়ন অর্জন করা।

ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ অর্জিত হয় পরিকল্পনার হাতিয়ারগুলির খসড়া প্রণয়ন ও পরিগ্রহণের মাধ্যমে যা সাজানো হয়েছে ভূমি ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে। পরিকল্পনার এই হাতিয়ারগুলি রূপ নেয় আইন ও নীতির, এবং এতে আছে অনেক ধরনের শর্তাবলী যেমন প্রণীত আইন, বিধিমালা, সংহিতা, সংকল্পনা, নকশা, কর্মপন্থা ও নির্দেশনা; এবং কখনো কখনো এদের সমন্বয়। পরিকল্পনার হাতিয়ারগুলি এলাকা ভাগের মানচিত্র বা নকশার মাধ্যমে বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে এলাকা সংরক্ষণ বা এলাকা ভাগ করে থাকে। নগর পরিকল্পনাবিদের উপর দায়িত্ব পড়ে পরিকল্পনার হাতিয়ার ও এলাকা ভাগের পরিকল্পনা প্রস্তুত করা। এবং, যেহেতু নগর পরিকল্পনা কদাচিৎ স্থানু এবং নগর পরিকল্পনার লক্ষ্য সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়, একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হচ্ছে সবসময় পরিকল্পনার হাতিয়ার এবং বিভাজনের নকশাগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা যাতে সেগুলো থাকে হাল-নাগাদ।

নগর পরিকল্পনাবিদদের উচিত সমাজের বিশিষ্ট জনদের সাথে আলাপ করা যখন পরিকল্পনার হাতিয়ারগুলি প্রস্তুত ও হাল-নাগাদ করা হয়। এই ধরনের আলোচনার ধারা নির্ভর করবে প্রকল্পের উপর।

একজন নগর পরিকল্পনাবিদের আরো দায়িত্ব হচ্ছে পরিকল্পনার হাতিয়ারগুলি বাস্তবায়ন করা। এটা অর্জন করা হয় একটি অনুমতি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে উন্নয়ন প্রস্তাবকারী, ভূমি ব্যবহারের পরিবর্তন, কিংবা প্রস্তাবিত উপবিভাগের এলট্মেন্ট দরকার হবে অনুমতি, অনুমোদন, লাইসেন্স, বা উন্নয়ন প্রস্তাবনার অনুমিতি বা এর ব্যবহারের পরিবর্তন।  একজন নগর পরিকল্পনাবিদের কাজ হচ্ছে অনুমোদনটি ভেবে দেখা এবং সঠিকভাবে নির্ণয় করা যে এটা পরিকল্পনার হাতিয়ার ও বিভাজনের নকশার নিয়ম কানুনের মধ্যে পড়ে কিনা। আইনগতভাবে নগর পরিকল্পনাবিদের ক্ষমতা থাকতে পারে প্রস্তাবনাটি নির্ণয় করা; নয়তো পরিকল্পনাবিদ এমন কারো পরামর্শ চাইতে পারেন যারা পরিকল্পনাবিদ নন, যেমন কাউন্সিলের কোন নির্বাচিত ব্যক্তি।

যখন নগর পরিকল্পনাবিদ ভবিষ্যৎ উন্নয়নের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হন তখন উনার দায়িত্ব হবে অনুমতিহীন ভূমি উন্নয়নের প্রকল্পগুলি অনুসন্ধান করা। অনেক ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদ্গণ প্রয়োজনে আদেশ দিতে পারেন যে অনুমোদনবিহীন প্রকল্প বন্ধ করা হোক এবং প্রকল্পটি উন্নয়নের পূর্বের অবস্থায় রূপান্তর করা হোক; কিংবা বিকল্প উপায়ে ভূতাপেক্ষ অনুমোদনবিহীন উন্নয়ন ও ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারেন।

কৌশলগত নগর উন্নয়ন[সম্পাদনা]

দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও বিকাশের কার্যকর পরিকল্পনার জন্য একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হবে কৌশলগত পরিকল্পনা (কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনা, পরিকল্পনার দক্ষতা, কাঠামোগত পরকিকল্পনা নামে পরিচিত) প্রস্তুত করা। কৌশলগত নগর উন্নয়নের লক্ষ্য খুব উঁচু, যা সেই আইনি এক্তিয়ারে পরিকল্পনার হাতিয়ার প্রস্তুত ও সংশোধনের নির্দেশ দিবে।

আঞ্চলিক পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

আঞ্চলিক পরিকল্পনার কাজ হচ্ছে একটি ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে (যা একটি সম্পূর্ণ শহর বা তার বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে) ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা, পরিকাঠামো এবং উপনিবেশ বিকাশের পরিকল্পনা করা। এই অর্থে, নগর পরিকল্পনাবিদের কাজ হচ্ছে নগর উন্নয়ন একটি দীর্ঘ মাপদন্ডে বিবেচনা করা। আঞ্চলিক পরিকল্পনা স্থানীয় (পাড়া/মহল্লা) পরিকল্পনার আওতায় পড়ে না।

ঐতিহ্য ও সংরক্ষণ[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হ’তে পারে সেইসব স্থাপনাগুলি শনাক্ত এবং সংরক্ষণ করা যেগুলো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহন করে। এসব দায়িত্বের মধ্যে বর্তাতে পারে একটি ঐতিহ্য নিবন্ধন সঙ্কলন করা, সংরক্ষণ কাজে উৎসাহিত করার জন্য উপস্থিত উদ্দীপকগুলি শনাক্ত করা, এবং লিস্টে অন্তর্ভুক্ত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলির পুনঃসংরক্ষণের প্রস্তাবনা পেশ করা।

নগর পুনরুজ্জীবন[সম্পাদনা]

যখন একটি নগরাঞ্চলে ধ্বস নামে তখন একজন নগর পরিকল্পনাবিদের কাজ হবে ঐ অঞ্চলের পতন ঠেকাতে পুনঃসংরক্ষণের পরিকল্পনা প্রস্তুত করা। এই ধরনের পরিকল্পনা শুধু একটি এলাকার জন্য নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ অঞ্চল নিয়ে করতে হবে।

নগর পুনরুজ্জীবন কখনো কখনো সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভর করে; সরকারি অনুদান বিভিন্ন কাজে ব্যয় হতে পারে যেমন, সড়ক উন্নয়ন, পার্ক উন্নয়ন, পরিকাঠামো উন্নয়ন, এবং ভূমি অধিগ্রহণ। নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হবে নগর পুনরুজীবনের ব্যয় নির্ণয় করা এবং পুনরুজীবন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে পরিকাঠামোর ব্যয়ভার বহন করা।

নগর পুনরুজীবনের কাজে নিয়োজিত নগর পরিকল্পনাবিদের কাজ হবে সরকারি সংস্থা, ভূমির মালিক ও সমাজের অন্যন্যদের সাথে এক সঙ্গে কাজ করা।

প্রধান পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

পূর্বের অসমাপ্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলির জন্য একটি প্রধান পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হবে। এই প্রধান পরিকল্পনাটির লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যৎ উন্নয়নের স্বার্থে একটি চূড়ান্ত নকশা অনুমোদন করা। এই প্রধান পরিকল্পনাটি করা হবে উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকাঠামো নির্ণয় করা এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা যেমন, বাণিজ্যিক, স্কুল, পার্ক, গণপরিবহন, প্রধান সড়কের প্রয়োজন ও অবস্থান নির্ণয় করা।

নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হবে বিভিন্ন পেশাদার উপদেষ্টার কাজ পর্যবেক্ষণ করা এবং পরিকাঠামোর জন্য প্রধান পরিকল্পনা এবং ভূমি ব্যবহারের নকশা  করা। মাঝে মাঝে নগর পরিকল্পনাবিদের উচিত হবে প্রধান পরিকল্পনা দ্বারা প্রভাবিত ভূমি মালিক ও সরকারি সংস্থার সাথে পরামর্শ করা।

পরিবহন ব্যবস্থার পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হবে যাতায়াতের সুব্যবস্থা এবং শহর ও বিভিন্ন এলাকার পরিকাঠামোর পরিকল্পনা করা।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বের পরিধি অর্থনৈতিক উন্নয়ন পর্যন্ত হতে পারে। এই অর্থে একজন নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ সুবিধাগুলি শনাক্ত করা ও এলাকাটিতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।

পরিবেশ পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ ভূমি ব্যবহার, প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন জমি, পানি, ও জীবনোপযোগী পরিবেশের উন্নয়নের কারণে এর প্রভাবের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকবেন।

নগর পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ জনসমাগমের স্থানের (রাস্তা-ঘাট, পার্ক, স্কোয়ার ইত্যাদি) নকশা করবেন। তাঁরা নকশা প্রস্তুতের লক্ষ্যে কখনো কখনো অন্যান্য পেশাজীবি যেবন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, স্থপতি বা ভূমি স্থপতির সাথেও এক সঙ্গে কাজ করতে পারেন।

পরিকাঠামো পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

একজন নগর পরিকল্পানাবিদের প্রয়োজন হতে পারে গণ পরিকাঠামো যেমন পানি সরবরাহ, পয়োঃনিষ্কাশন, তড়িৎ, পরিবহন, টেলিফোন, স্কুল, হসপিটাল এবং পার্কের পরিকল্পনা করা।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ[সম্পাদনা]

পেশা হিসেবে নগর পরিকল্পনা একটি নতুন পেশা। খুব কম সরকারি সংস্থাই এই পেশার জন্য লাইসেন্স প্রদান করে। যার ফলে, অন্যান্য কিছু সংশ্লিষ্ট পেশা নগর পরিকল্পনার প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা আছে ব’লে দাবি করে। যখন আমেরিকান প্ল্যানিং এসোসিয়েশ, কানাডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ প্ল্যানার্স এবং রয়াল টাউন প্ল্যানিং ইন্সটিটিউটের মত সংস্থাগুলি পেশাদার পরিকল্পনাবিদদের সত্যায়িত করে, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পেশাজীবি যেমন ভূমি স্থপতিও দাবি করে যে তাদেরও নগর পরিকল্পনার অভিজ্ঞতা আছে। আন্তর্জাতিকভাবে লাইসেন্স প্রদানের মাধ্যমে নগর পরিকল্পনাবিদদের ভূমিকার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি স্টেট নগর পরিকল্পনাবিদের লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। কানাডার ওন্টারিও ও আলবার্টা রাজ্য শুধুমাত্র সেইসব নগর পরিকল্পনাবিদদের লাইসেন্স দেয়, যাঁদের সি আই পি শিক্ষা ও সমপরিমাণ প্রশিক্ষণ আছে।

দেশ ভেদে নগর পরিকল্পনা[সম্পাদনা]

কানাডা[সম্পাদনা]

সাধারণতঃ কানাডার নগর পরিকল্পনাবিদদের নগর পরিকল্পনার উপর স্নাতক অথবা স্নাতোকত্তর ডেগ্রী থাকা।

গ্রীস[সম্পাদনা]

গ্রীসের নগর পরিকল্পনাবিদ্গণ সাধারাণতঃ ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর পড়ালেখা করেন। সেদেশের এরিস্টোটল ইউনিভার্সিটি অফ থেসালোনিকি এবং ইউনিভার্সিটি অফ থেসালি হচ্ছে শুধু দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নগর পরিকল্পনার উপর স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

যদিও বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে এসে পরিকল্পনা পেশার পরিচিতি ধীরে ধীরে বাড়ছে, কিন্তু এই বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়া শুরু হয় ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা ফ্যাকাল্টির স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালুর মধ্যে দিয়ে। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও গ্রামীন পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি চালু করে যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে মোট সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নগর ও গ্রামীন/অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করছে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে, যা লন্ডনের রয়াল টাউন প্ল্যানিং ইন্সটিটিউটের আদলে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা দুই হাজার। বিআইপি'র সদস্য পদে আবেদন করার জন্য স্বীকৃত কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকার আবশ্যকতা রয়েছে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ মন্ত্রণালয় সহ তাদের অধীন সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিকল্পিতভাবে ভৌত, অবকাঠামো, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে পরিকল্পনাবিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। সে তুলনায় সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে পরিকল্পনাবিদদের জন্য খুবই অল্পসংখ্যক পদ রয়েছে। যেসকল প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে পরিকল্পনাবিদরা কর্মরত রয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে রাজউক সহ অন্যান্য উন্নয়ন কতৃপক্ষসমূহ, সিটি কর্পোরেশন, এবং কয়েকটি "ক" শ্রেনীর পৌরসভায়। এর বাইরে পরিকল্পনাবিদদের একটা বড় অংশ জাতিসংঘ সহ দেশী বিদেশী এনজিওতে কর্মরত রয়েছেন।

ভারত[সম্পাদনা]

যদিও ভারতে পরিকল্পনা কোন স্বীকৃত পেশা নয়, এই পেশাটি শুরু হয় ১৯৪১ সালে দিল্লী টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ প্ল্যানিং এয়ান্ড আর্কিটেকচার এর মাধ্যমে। পরে এটাকে স্কুল অফ টাউন এয়ান্ড প্ল্যানিং এর সাথে সংযুক্ত করা হয়, যা ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংযুক্ত হওয়ার পর এটা ১৯৫৯ সালে স্কুল অফ প্ল্যানিং অয়ান্ড আর্কিটেকচার নাম ধারণ করে। বর্তমানে এটা পরিকল্পনার উপ্র স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পড়ালেখার জন্য সবচেয়ে নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি।

দ্য ইন্সটিটিউট অফ টাউন প্ল্যানির্স, ইন্ডিয়া, যা লন্ডনের রয়াল টাউন প্ল্যানিং ইন্সটিটিউটের আদলে প্রতিষ্ঠিত হয়, হচ্ছে ভারতের পরিকল্পনা পেশাজীবিদের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটির ২,৮০০ এর বেশি সদস্য আছে। ২০১২ সালের হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ২১ টি রিজিওনাল চ্যাপ্টার আছে। দিল্লিতে অবস্থিত স্কুল অফ প্ল্যানিং এয়ান্ড আর্কিটেকচার ভারতের প্ল্যানিং ও স্থাপত্য শিক্ষার জন্যতম অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান। এটা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪১ সালে। আহমেদাবাদে অবস্থিত সেন্টার ফর এনভাইরোমেন্ট এন্ড প্ল্যানিং টেকনোলজি, ভোপালের মাওলানা আজাদ ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এবং পাটনার এন আই টি ভারতের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান যেখানে নগর পরিকল্পনা শিক্ষা দেয়া হয়।

ইসরায়েল[সম্পাদনা]

ইসরায়েল প্ল্যানার্স আয়াসোসিয়াশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। নগর পরিকল্পনা শিক্ষা দেয় হাইফায় অবস্থিত টেকনিওন ফ্যাকাল্টি অফ আর্কিটেকচার এন্ড আর্বান প্ল্যানিং এবং সেন্টার ফর আর্বান এন্ড রিজিওনাল স্টাডিজ।

মেক্সিকোর নগর পরিকল্পনাবিদগণ সাধারণতঃ সেদেশের কোন মুখ্য বিশ্ববিদ্যালয় হ’তে স্থাপত্যের উপর ডিগ্রী লাভ করেন। বেশিরভাগই অর্জন করেন স্নাকত্তোর ডিগ্রী এবং কেউ কেউ আবার লাভ করেন স্নাতক ডেগ্রী।

নিউজিল্যান্ড[সম্পাদনা]

একজন পরিকল্পনাবিদ পেশ করেন উন্নয়নশীল ও বসবাসযোগ্য পরিবেশে বাস করার জন্য তাঁর অর্জিত অভিজ্ঞতা। পরিকল্পনাবিদ্গণ মানবগোষ্ঠির উন্নয়নে পরিবেশের যে কোন পরিবর্তনের ব্যপারে তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগান এবং বর্তমান ও ভবেষ্যতের মধ্যে দূরত্ব কমাতে তাঁদের নেতৃত্ব কাজে লাগান। পরিকল্পনাবিদ্গণ অবশ্যই কৌশলগত, নীতিগত, প্রযুক্তিগত, আইনগত, প্রশাসনিক ও পরিবেশগত গুণকের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবেন।

পরিকল্পনাবিদগণের আছে বিভিন্ন প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত ভূমিকা। তাঁরা বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও সাম্প্রদায়িক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে, গবেষণা করতে, সমস্যা সমাধানে, পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে তাঁদের জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগান।

অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে পরিকল্পনাবিদগণ খেয়াল রাখবেন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত, নৈতিক এবং রাজনৈতিক মানের দিকে। নিউজিল্যান্ডের বহুজাতিকতার কারণে সেদেশের ট্রিটি অফ ওয়াইতাঙ্গি অনুসরণ করা হয়।

একজন পরিকল্পনাবিদের মুখ্য গুণ হচ্ছে প্রিতিষ্ঠানিক সীমানার মধ্যে থেকে তাঁর অর্জিত জ্ঞান বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো।

একজন পরিকল্পনাবিদ হচ্ছেন যিনি তৃতীয় শ্রেণীতে তাঁর পেশাগত যোগ্যতা লাভ করেছেন, যিনি এখনও শিক্ষা গ্রহণ করছেন, তাঁর পেশাগত উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছেন, যিনি নিউজিল্যান্ড প্ল্যানিং ইন্সটিটিউটের একজন সদস্য, পরিকল্পনার পেশায় সাহায্য দান করেন এবং যিনি পরিকল্পনা পেশার নীতি ও আদর্শ মেনে চলতে বদ্ধ পরিকর।

দক্ষিণ আফ্রিকা[সম্পাদনা]

সাউথ আফ্রিকান কাউন্সিল অফ প্ল্যানার্স (SACPLAN) হচ্ছে সেদেশের মনোনীত পরিকল্পনাবিদদের কাউন্সিল যা প্ল্যানিং প্রফেশন এক্ট ২০০২ অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এটা গঠন করা হয় পরিকল্পনা পেশাকে নিয়ন্ত্রণ করতে। প্ল্যানিং প্রফেশন প্রিন্সিপল এয়াক্ট সকল রেজিস্টার্ড পরিকল্পনাবিদদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এই আইনের মাধ্যমে SACPLAN নিশ্চিত করে পরিকল্পনা পেশার গুণগত মান যা শুধুমাত্র একজন রেজিস্ট্রিকৃত পরিকল্পনাবিদ দিতে পারেন। এই আইনটি রেজিস্ট্রিকৃত পরিকল্পনাবিদদের পেশাগত কোড অফ কন্ডাক্ট বর্ণনা করে।[৩]

যুক্তরাজ্য[সম্পাদনা]

যুক্তরাজ্যে যাঁরা শহর কিংবা গ্রাম পরিকল্পনাবিদ হতে চান তাঁরা অবশ্যই প্রথমে সেই বিষয়ের উপর ডিগ্রী লাভ করবেন এবং অতঃপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করবেন। সেটা রয়াল টাউন প্ল্যানিং ইন্সটিটিউট (RTPI) অনুমোদিত হতে হবে কিংবা একটি ৪ বছরের ডিগ্রী থাকতে হবে। তখন তাঁরা RTPI এর সদস্য হতে পারবেন, কিন্তু পূর্ণ সদস্য হতে দু’ বছরের জন্য কর্ম প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

যুক্তরাজ্যের নগর পরিকল্পনাবিদদের দায়িত্ব সব ধরনের নির্মিত পরিবেশের উপর কাজ করা, সেটা শহর বা গ্রাম, যেটাই হোক না কেন। তাঁরা (স্থানীয় পরিকল্পনা কর্তৃত্ব) সাধারণ নাগরিক, ডেভেলপার ও কর্পোরেশনকে পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়ে থাকেন এবং তাদের সিদ্ধান্ত দ্বারা স্থানীয় সরকারকে সাহায্য করে থাকেন।  

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র[সম্পাদনা]

যুক্তরাষ্ট্রের নগর পরিকল্পনাবিদগণ সাধারণতঃ নগর পরিকল্পনার উপর স্নাতক অথবা স্নতকত্তোর ডিগ্রী অর্জন করেন। তাঁদের পেশজীবি সার্টিফিকেট প্রদান করে আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ সার্টিফাইড প্ল্যানার্স (AICP), যা আমেরিকা প্ল্যানিং এসোসিয়েশনের একটি শাখা। (AICP) সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য একজন পরিকল্পনাবিদের থাকতে হবে পরিকল্পনার উপর শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা এবং পাশ করতে হবে নগর পরিকল্পনার উপর পরীক্ষা। যদিও সার্টিফিকেট একজন পেশাজীবি পরিকল্পনাবিদের প্রয়োজন হয় না, তথাপি এটার দ্বারা একজন পরিকল্পনাবিদ তাঁর পেশাগত দক্ষতা সত্যায়িত করতে পারেন।

ফিলিস্তিন[সম্পাদনা]

ফিলিস্তিনের পরিকল্পনাবিদ্গণ দিয়িত্ব নেন যখন ফিলিস্তিনি অথোরিটি গাজা ও পশ্চিম তীরের শাসনভার গ্রহণ করেন। ফিলিস্তিনি পরিকল্পনাবিদদের প্রশিক্ষণ দেয় As Plan Viak নামে একটি নরওয়েজিয়ান কোম্পানি। তারা প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেন প্রথম থেকে যখন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি নরওয়ের সরকার অনুদানে শুরু হয়। বিরযাইত ও আলাঞ্জাহ – এই দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় নগর পরিকল্পনার উপর স্নাতক ও স্নাকত্তোর  ডিগ্রী দিয়ে থাকে এবং পরিকল্পনাবিদ্গণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন।

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "Planning Specializations"Choosing the Planning Profession। American Planning Association। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. "List of Job Titles - Urban and land use planners (NOC 2153-A)"National Occupational Classification 2011 -ESDC। Government of Canada। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  3. Administrator। "SACPLAN - SACPLAN"sacplan.org.za 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]