প্রেরিত পিতর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সন্ত পিতর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
পোপ
সন্ত
বাণীপ্রচারক
সাক্ষী

প্রেরিত পিতর
রোমের বিশপ
আন্তিয়খিয়ার কুলপিতা
সুসমাচার ও স্বর্গের চাবি হাতে পিতর
গির্জাপ্রাচীন খ্রীষ্টীয় মহামণ্ডলী
বিশপের এলাকাক্যাথলিক মণ্ডলী অনুযায়ী রোমের প্রথম বিশপ (পোপ), পূর্ব অর্থডক্স মণ্ডলী অনুযায়ী আন্তিয়খিয়ার প্রথম বিশপ (কুলপিতা)
পরবর্তীরোমের বিশপ - লাইনাস, আন্তিয়খিয়ার বিশপ - ইভোডিয়াস
আদেশ
বিন্যাস৩৩ খ্রীস্টাব্দ
যীশু
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম নামশিমোন
জন্মবৈৎসৈদা, সুরিয়া, রোমীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যুরোম, রোমীয় সাম্রাজ্য
মাতাপিতাযোনা ও তার স্ত্রী
পোপের আখ্যা
উৎসবের দিন২৯ জুন
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনসকল খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী
উপাসনাগৃহসন্ত পিতরের অট্টালিকা, রোম

প্রেরিত পিতর (ধ্রুপদী সিরীয়: ܫܸܡܥܘܿܢ ܟܹ݁ܐܦ݂ܵܐ; হিব্রু ভাষায়: שמעון בר יונה‎; আরবি: سِمعَان بُطرُس, প্রতিবর্ণীকৃত: Simʿa̅n Buṭrus; গ্রিক: Πέτρος Petros; আরবি: شمعون الصفـا, প্রতিবর্ণীকৃত: Sham'un al-Safa, অনুবাদ'Simon the Pure';[১] জন্ম আনু. ৩০ খ্রিষ্টাব্দ[২] – মৃত্যু আনু. ৬৪ থেকে ৬৮ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে),[৩] যিনি শিমোন পিতর, শিমিয়োন বা সাধু পিতর নামেও পরিচিত, ছিলেন যীশুখ্রীষ্টের বারোজন প্রেরিতের একজন এবং প্রারম্ভিক মণ্ডলীর নেতাদের অন্যতম। ক্যাথলিক মতানুসারে খ্রিষ্টের দ্বারা তাঁঁর যাজকাভিষেক হয় মথি ১৬:১৮ "মণ্ডলীর প্রস্তর" মন্তব্যে৷ তাঁকে সাধারণত রোমের প্রথম বিশপ এবং আন্তিয়খিয়ার প্রথম কুলপিতা মানা হয়৷ সমস্ত প্রাচীন খ্রীষ্টীয় সম্প্রদায় পিতরকে একজন প্রধান সন্ত এবং রোমীয় খ্রীষ্টমণ্ডলী ও আন্তিয়খিয়ার খ্রীষ্টমণ্ডলীর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শ্রদ্ধা করে থাকে, কিন্তু তার বর্তমান উত্তরাধিকারীদের কর্তৃত্ব সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করে৷[৪][৫][৬][৭][৮]

নূতন নিয়ম ইঙ্গিত করে যে পিতরের পিতার নাম ছিল যোহন (বা যোনাঃ) এবং গালীল প্রদেশের বৈৎসৈদা গ্রাম থেকে তিনি এসেছিলেন৷ তার ভাই আন্দ্রিয় তারই মতো একজন প্রেরিতদূত ছিলেন৷ মূলত একজন জেলে, তিনি বাণীপ্রচারকদের নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন এবং বেশ কিছু বিশেষ মুহূর্তে যীশুর সঙ্গে ছিল, যেমন যীশুর দিব্যরুপান্তরণ৷ সুসমাচার মতে, পিতর স্বীকার করেছিলেন যে যীশুই হলেন মশীহ; পরে তিনি তিনবার যীশুকে অস্বীকার করেন এবং তার কাজের পরিণাম বুঝতে পেরে কেঁদেছিলেন; তিনি পেন্টেকস্টের দিনে বাণীপ্রচার করেছিলেন।

খ্রিস্টান মত অনুযায়ী, পিতর রোমীয় সম্রাট নেরো অগাস্টাস সিজারের অধীনে রোমে ক্রুশবিদ্ধ হন৷ মনে করা হয় যে তিনি নিজের অনুরোধে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন উলটিয়ে, কারণ তিনি নিজেকে যীশুর ভঙ্গীতে ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার অযোগ্য মনে করেছিলেন। বলা হয় যে ক্লেমেন্টাইন চ্যাপেলে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। বলা হয় যে তার দেহাবশেষ সেন্ট পিটার্স বেসিলিকাতে রয়েছে, যেখানে পোপ ৬ষ্ঠ পল ১৯৬৮ সালে প্রথম শতাব্দীর রোমান কবরস্থান আবিষ্কারের ঘোষণা করেছিলেন। ক্যাথলিক মত অনুযায়ী, সেন্ট পিতরের সরাসরি উত্তরাধিকারী হলেন বর্তমান পোপ, সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিস।

নূতন নিয়মের দুটি ধর্মপত্র পিতরের রচিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তবে বর্তমানে পণ্ডিতরা সাধারণত উভয়ের পিতররচিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে থাকেন। তার নাম বহন করে এমন বেশিরভাগ বই - অ্যাক্ট্স অব পিটার, পিটারের সুসমাচার, পিটারের প্রচার, পিটারের রহস্যোদ্ঘাটন এবং পিটারের বিচার - প্রাচীন খ্রিস্টীয় ধর্মাবলম্বীদের রচনা হিসেবে ধরা হয় এবং সেগুলোকে বাইবেলের ক্যাননগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

নাম এবং ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

কারাভাজিওর আঁকা চিত্র

পিটারের আসল নাম ছিল সিমন (গ্রীক Σίμων) বা সিমেওন (গ্রীক : Συμεών)। পরবর্তীকালে তাকে কেফা (আরামীয় : כֵּיפָא) বা পেট্রস (গ্রীক : Πέτρος) নাম দেওয়া হয়। এই নামটির অনেকেই অনেকরকম ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, যেমন শক্ত পাথর, মূল্যবান মণি ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ পণ্ডিতরাই মেনে থাকেন যে এই নামটির দ্বারা সিমনের সদাসহিষ্ণু চরিত্রই দর্শানো হয়েছে। এই নামটিই কালানুক্রমে ভাষান্তরে ল্যাটিন ভাষায় পেট্রাস ও ইংরেজিতে পিটার হয়ে দাঁড়ায়। নূতন নিয়মে Σίμων Πέτρος (সিমন পেট্রস) নামটিকে ১৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে। সিরীয়রা তাকে সিমন কেফাস বলেও ডাকেন। বাংলায় সাধারণতঃ তাকে সিমন পিটার বা সিমন পিতর নামেই ডাকা হয়ে থাকে।

নূতন নিয়মে পিতরের বর্ণনা[সম্পাদনা]

সকল বাণীপ্রচারকদের সুসমাচার, শিষ্যচরিত, হিব্রুদের সুসমাচার ইত্যাদি গ্রন্থগুলিতে পিতরের জীবনকাহিনীর উল্লেখ আছে। পিতর বৈৎসৈদার একজন জেলে ছিলেন। তার নাম ছিল শিমোন, যোনার পুত্র। প্রথম তিনটি বাণীপ্রচারকদের সুসমাচারই বর্ণনা করে যে পিতরের শাশুড়ী যীশুর দ্বারা ব্যাধি থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন কফরনূমে তার বাড়িতে; এর দ্বারা এটি স্পষ্ট যে পিতর বিবাহিত ছিলেন।

প্রথম তিনটি বাণীপ্রচারকদের সুসমাচারগুলির মধ্যে, পিতর (তখন শিমোন) তার ভাই, আন্দ্রিয় এবং সিবদিয়ের দুই পুত্র - যাকোবযোহনের মতো একজন জেলে ছিলেন। সাধু মথি লিখিত সুসমাচার এবং সাধু মার্ক লিখিত সুসমাচারে প্রভু যীশু শিমোন ও তার ভাই আন্দ্রিয়কে ''মানবজাতির জেলে'' হওয়ার জন্যে তাঁকে অনুসরণ করতে বলেছিলেন।

মথি, মার্ক ও যোহনের সুসমাচারে যীশুর জলের উপর দিয়ে হাঁটার ঘটনাটির উল্লেখ আছে। মথির সুসমাচারে এর সাথে রয়েছে ক্ষণিকের জন্যে পিতরের জলের উপর চলার কাহিনীর বর্ণনা। অবশ্য, মুহূর্তের মধ্যেই পিতর ডুবতে শুরু করে, কারণ তখনও যীশুর উপর তার সম্পূর্ণ বিশ্বাস জাগেনি।

যীশুর নিস্তারপর্বের ভোজে তিনি যখন তার শিষ্যদের পা ধুয়ে দিতে চাইলেন, পিতর আপত্তি জানিয়েছিলেন। তবে যীশুর কথাই তাকে মানতে হয়েছিল। আজও বেশ কিছু খ্রীস্টধর্মাবলম্বী মণ্ডলী বৃহস্পতিবার দিন এই পা ধোয়ার অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।

তিনটি প্রধান সুসমাচারেই উল্লেখ আছে যে, যীশুকে যখন বন্দী করা হয়, তার এক সঙ্গী প্রধান যাজকের এক ভৃত্যের ডান কান কেটে ফেলে। যোহনের সুসমাচার বলে যে পিতর ছিল সেই ঘাতক ও সেই ভৃত্যের নাম ছিল ম্যাল্কাস। লূক আরও উল্লেখ করেন যে যীশু সেই কাটা কান সারিয়ে তোলেন এবং এটাই হয় তার ৩৭ অলৌকিক ঘটনার অন্তিম চমৎকার। সুসমাচার অনুযায়ী এরপর পিতর তিনবার যীশুকে প্রত্যাখ্যান করেন। তবে যীশুর পুনরুত্থানে যীশুর প্রশ্নে তিনি তিনবার তার প্রতি ভালোবাসা স্বীকার করেন।

মথির সুসমাচারে যীশু আত্মপরিচয় জানতে চাইলে পিতরই একমাত্র স্বীকার করেন যে তিনি মানবপুত্র হয়েও মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের একমাত্র সন্তান। তখন যীশু পিতরকে ''মণ্ডলীর প্রস্তর'' বলে আখ্যা করেছিলেন এবং তার হাতে স্বর্গের চাবিকাঠি তুলে দেবার কথা বলেছিলেন।

রোমীয় শাসনে তাকে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Richard T. Antoun; Donald Quataert (১৯৯১)। "The Alawis of Syria Religious Ideology and Organization"Syria: Society, Culture, and Polity। Suny Series in Judaica। SUNY Press। পৃষ্ঠা 53। আইএসবিএন 9780791407134 – books.google.com-এর মাধ্যমে। 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; britannica নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; newadvent.org নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. Matthew 16:18
  5. Dale Martin 2009 (lecture). ইউটিউবে "24. Apocalyptic and Accommodation". Yale University. Accessed 22 July 2013. Lecture 24 (transcript) ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে.
  6.  Chapman, Henry Palmer (১৯৯৩)। "Fathers of the Church"। ক্যাথলিক বিশ্বকোষ। নিউ ইয়র্ক: রবার্ট অ্যাপলটন কোম্পানি। 
  7. Thomas Patrick Halton, On Illustrious Men, v. 100, CUA Press, 1999, pp. 5–7 আইএসবিএন ০-৮১৩২-০১০০-৪.
  8. "The Early Church Fathers", Chapter 1, New Advent