কেপ স্প্যারো

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কেপ স্প্যারো বা মোসি চড়ুই প্রজাতির প্যাসারিডি গণের একপ্রকার পাখি।এটি সাধারণত দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা যায়।একটি মাঝারি আকৃতির পাখি ৫.৫ -৬.৩ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে।এটির বিশেষ পালক আছে,স্ত্রী ও পুরুষ উভয় প্রজাতির মাথায় অনুজ্জ্বল ডোরা আছে।এদের পালক প্রধানত ধূসর,বাদামী ও চেস্টনাট রঙের হয়ে থাকে।কিছু পুরুষ পাখির মাথা ও ঘাড়ে কালো ও সাদা ছোপ থাকে।এদের বসতি শুষ্ক তৃণভূমি,কৃষিজ অঞ্চল,শহরাঞ্চল ও এঙ্গঙ্গোলার মধ্য উপকূল থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব ও সোয়াজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্ত্রিত। এদের তিনটি উপপ্রজাতি এসব স্থানে বাস করে।

কেপ স্প্যারো।

এরা সাধারণত বিজ,গাছের নরম অঙ্শ ও পোকামাকড় খায়।এরা দলবদ্ধভাবে প্রজনন করে।প্রজনন ঋতু ব্যতীত এরা বড় দলে বিভক্ত হয়ে খাদ্যের খোঁজে ঘুরে বেরায়।এরা গাছের ডালে,গর্ত বা অন্য প্রজাতির পাখির বাসায় বাসা তৈরি করে।একবারে তিন থেকে চারটি দিম দেয়,বাবা-মা উভয়েই প্রজনন,বাসা তৈরি ও বাচ্চা লালনপালনে অঙ্শ নেয়।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

একটি প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ওজন ১৭ থকে ৩৮ গ্রাম হয়ে থাকে। পুরুষ পাখিরা সাধারণত কালো মাথাওয়ালা হয়ে থাকে ও চোখের পিছন থেকে ঠোঁট পর্যন্ত এদের মাথার উভয় পাশে সাদা ছোপ থাকে।এদের শরীরের নিম্নাঙ্শ ধূসর বর্ণের ও পার্শ্বদেশ কালো বর্ণের হয়ে থাকে। পুরুষদের গলার পিছনটা গাড়ো ধূসর,শরীরের পশ্চাদভাগ ও ঘাড় উজ্জ্বল চেস্টনাট বর্ণের হয়। এদের ঘাড়ের নিচে সাদাকালো ডানা, ওড়ার জন্য পালক ও ধূসর ও কালো ডোরাকাটা লেজ থাকে।

শ্রেণিবিন্যাস[সম্পাদনা]

আবাসস্থল[সম্পাদনা]

কেপ স্প্যারো আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল, এঙ্গোলার দক্ষিণে ও সোয়াজিল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে বাস করে।উত্তরে এটি এঙ্গোলার বেঙ্গুয়েলা ও শুধুমাত্র নামিব মরুভূমি ছাড়া নামিবিয়ার উপকূলীয় ও মধ্যাঞ্চলে পাওয়া যায়।এটি সর্বপশ্চিম বাদে পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা,বতসোয়ানার দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্য বতসোয়ানার কালাহারি অববাহিকায় খুব সামান্য দেখা যায়।পশ্চিমে,জিম্বাবুয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমে এদের অল্প পরিমাণে দেখা যায়।

প্রকৃতি[সম্পাদনা]

সামাজিক প্রকৃতি[সম্পাদনা]

কেপ স্প্যারো দলবদ্ধভাবে বাস করে এবং সাধারণত একত্রে প্রজনন ঘটায়।বছরের অধিকাংশ সময় এরা প্রায় ২০০ পাখির দলে বিভক্ত হয়ে নগরাঞ্চল থেকে দূরবর্তী স্থানে ঘুরে বেড়ায়।কৃষিজ ভূমি ও শহরাঞ্চল,যেখানে পর্যাপ্ত খাবার রয়েছে সেখানে তারা ছোট দলে ভাগ হয়ে ঘুরে বেড়ায়।এসব অঞ্চলে তারা অন্যান্য শস্যবীজখাদক পাখি যেমন চড়ুই,কেপ ওয়েভার এবং ইউপল্যাক্টাস গণের অন্যান্য ওয়েভার পাখিদের সাথে একজোট হয়।শহরাঞ্চলের পাখিরা মৌসুমি ঋতুতে পাকাশস্য ভক্ষণের উদ্দেশ্যে বড় বড় দলে ভাগ হয়ে পার্শ্ববর্তী পল্লীঅঞ্চলে দিনভর উড়ে বেড়ায় এবং রাতে নীড়ে ফিরে আসে

কেপ স্প্যারো সাধারণত তাদের নীড়ে বিশ্রাম করে,অপ্রজনন ঋতুতে অকৃষিজভূমির পাখিরা যখন দীর্ঘ ভ্রমণে বের হয় তখন তারা পুরাতন বাসা ও ঘন ঝোপঝাড়ে আশ্রয় নেয়।কৃষিনির্ভর ও শহরাঞ্চলে বসবাসকারি পাখিরা বিশেষধরনের বাসা তৈরি করে,এসব বাসা তাদের আতুরঘর থেকে সাধারণমানের তবে অসংখ্য অন্তরক বস্তুদ্বারা তৈরি।

খাদ্যাভাস[সম্পাদনা]

ক্যাপ স্পেরো প্রধানত গাছপালা ও মাটি থেকে বীজ খুজে খুজে খায়।এরা শস্যবিজ,বুনো ঘাস এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রক্ষুদ্র লতাপাতা খায়।গম ও এদের খাকিউইড(অল্টারনান্থ্যারা কারাকাসানা)পছন্দের খাবার|মুকুল আর নরম ফলও এরা খায়,যার কারণে কৃষির যথেষ্ট ক্ষতি হয়।এরা কিটপতঙ্গও খেয়ে থাকে,ছানাদেরকে বিশেষভাবে শুঁয়োপোকা খাওয়ানো হয়ে থাকে।এরা গাছের নরম কুঁড়ি ও এলো থেকে মধু খায়,তবে এগুলো তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস নয়।

প্রজনন[সম্পাদনা]

পূর্বরাগ ও বাসা তৈরি[সম্পাদনা]

কেপ স্প্যারো ৫০-১০০ পাখির দলে ভাগ হয়ে প্রজনন করে।অজানা এক কোন কারণে প্রত্যেক গোষ্ঠীর ১০ থেকে ২০ শতাংশ পাখি দলছাড়া হয়ে অন্য জায়গায় বসতি স্থাপন করে।কেপ স্প্যারো সাধারনত একগামী,তবে ওয়েস্টার্ন কেপের কোন কোন স্থানে একটি পুরুষ ও দুটি স্ত্রী পাখি একসাথে বাসা তৈরি ও বাচ্চা লালনপালনের ঘটনাও লক্ষ্য করা গেছে।ধারণা করা হয় যে অপ্রজননক্ষম যুগলরাই দলবদ্ধ হয়,তবে কীভাবে যুগল গঠিত হয় অথবা যুগলবন্দী চিরজীবনের জন্য কিনা তা অজানা।প্রজননক্ষম হলে,নবগঠিত যুগজে।সকালে বাসা তৈরির জন্য উপযুক্ত স্থান খুঁজে এবং বিকেলে দলে ফিরে আসে।স্থান নির্বাচন করা হলে যুগলরা বাসা তৈরি করা শুরু করে দেয়।অন্যান্য যুগল,যারা বাসা অন্বেষণ করছে তারাও যোগ দেয় এবং এভাবেই অচিরেই একটি বড়দল গঠিত হয়।

বাসা তৈরি[সম্পাদনা]

কেপ স্প্যারো বিভিন্ন স্থানে বাসা তৈরি করে।ঝোপঝাড়,গাছপালা।,বিশেষকরে একাসিয়াসে বাসা তৈরি করে,এমনকি একটি গাছে অসংখ্য বাসা তৈরি করতেও দেখা যায়।গর্ত ও আবৃত স্থানগুলোতে কদাচিৎ বাসা তৈরি করতে দেখা যায়।তারা দালানের ছাদের প্রান্তভাগে,প্রাচীরে বেড়ে ওঠা লতাপাতা,ভূগর্ভের গর্ত,খড়ের গাদার গহ্বরে বাসা তৈরি করে।কখনও তারা অন্য পাখিদের যেমন বাবুইপাখি ও আবাবিল পরিত্যক্ত বাসাতে বসতি গড়ে।দলছাড়া যুগলরা নিচু ঝোপ ও বৈদ্যুতিক বা টেলিফোনের খুঁটিতে বাসা তৈরি করে।বাসা ভূমি থেকে কমপক্ষে ১ মিটার উঁচুতে ও কয়েক সেন্টিমিটারের ব্যবধানে তৈরি করে থাকে।শুধুমাত্র বাসা ও এর সন্নিকটের স্থানগুলোকে একেকটি অঞ্চল ধরা হয়।পুরুষ পাখিরা কখনও রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বা কখনও ঠোঁট দ্বারা লড়াই করে তাদের বাসভূমি রক্ষা করে|

মানবজাতির সাথে সম্পর্ক[সম্পাদনা]

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে এটি একটি পরিচিত পাখি এবং প্রচুর পরিমাণে দেখা যায়।এদের উপস্থিতি আশংকাজনক নয় এবং আইইউসিএন লাল তালিকার নূন্যতম বিপদগ্রস্ত প্রজাতির তালিকায় এদের স্থান দেয়া হয়েছে।এটি কৃষিব্যবস্থার ক্ষতিকারক পতঙ্গ বিবেচিত হতে পারে বিশেষভাবে শস্যক্ষেত ও আঙ্গুরবাগানের জন্য।