তাপীয় সমীকরণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তাপীয় সমীকরণ

তাপীয় সমীকরণ একপ্রকার অধিবৃত্তীয় আংশিক ব্যবকলনীয় সমীকরণ যা কোন প্রদত্ত স্থানে সময়ের পরিবর্তনের সাথে তাপের বণ্টন (বা তাপমাত্রার পরিবর্তন) বর্ণনা করে।

তাপীয় সমীকরণের বিবৃতি[সম্পাদনা]

তিনটি স্থানিক চলরাশি (x,y,z) (কার্তেসিয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা দ্রষ্টব্য) ও সময় সূচক চলরাশি t যুক্ত একটি অপেক্ষক u(x,y,z,t) এর জন্য তাপীয় সমীকরণ হল,

সাধারণভাবে যেকোন স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার জন্য,

যেখানে α একটি ধনাত্মক ধ্রূবক, এবং Δ বা ∇2 হল লাপ্লাসের অপারেটর। তাপমাত্রা পরিবর্তনের বাস্তবিক সমস্যায়, u(x,y,z,t) তাপমাত্রা ও α তাপীয় আস্রবণকে নির্দেশ করে। গাণিতিক সরলতার উদ্দেশ্যে α = 1 ধরে নেওয়াই যথেষ্ট।

লক্ষ্যণীয় যে, তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র (অর্থাৎ শক্তির সংরক্ষণের নিয়ম) থেকে প্রাপ্ত অবস্থার সমীকরণ , নিম্নলিখিত আকারে লেখা হয় (কোন ভরের আদান-প্রদান বা বিকিরণ হয়নি ধরে নিয়ে) । এই আকারটি বেশি সাধারণ বা বৈকল্পিক এবং কোন বৈশিষ্ট্য (যেমন cp বা ρ) কোন পদটির উপর প্রভাব বিস্তার করছে তা জানার জন্যই বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয়।

যেখানে হল আয়তনিক তাপ উৎস।

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে তাপীয় সমীকরণের মৌলিক গুরুত্ব রয়েছে। গণিতবিদ্যায়, এটি অধিবৃত্তের আংশিক অবকল সমীকরণের প্রামাণিক আকার। সম্ভাবনা তত্ত্বে, ফকার-প্ল্যাঙ্ক সমীকরণের মাধ্যমে ব্রাউনীয় চলনের বিশ্লেষণে তাপীয় সমীকরণের ব্যবহার রয়েছে। ব্যবসায়িক আর্থিক গণিতে, ব্ল্যাক-সোলস্ আংশিক অবকল সমীকরণের সমাধানে এটি ব্যবহৃত হয়। রাসায়নিক আশ্লেষন ও তৎসম্বন্ধীয় আরও কিছু প্রক্রিয়ার পর্যবেক্ষণে পাওয়া যায় আশ্লেষ সমীকরণ, যা হল তাপীয় সমীকরণের একটি সরলীকৃত রূপ।

সাধারণ বর্ণনা[সম্পাদনা]

মনে করা যাক, কারোর কাছে একটি অপেক্ষক u আছে, যা একটি প্রদত্ত স্থান (x, y, z) এর তাপমাত্রাকে বর্ণনা করে। যেহেতু তাপ এই ক্ষেত্রটিতে ছড়িয়ে পড়বে, তাই এই অপেক্ষকটি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হবে। সময়ের সাথে অপেক্ষক u এর এই পরিবর্তনকে নির্ধারণ করার জন্য তাপীয় সমীকরণ ব্যবহার করা হয়। u এর পরিবর্তনের হার, u এর "বক্রতা" -র সাথে সমানুপাতী। অতএব, কৌণিক তীক্ষ্নতা যত বেশি হবে, তত দ্রুত এটি ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। সময়ের সাথে সাথে, শিখর গঠনের প্রবণতা কমে আসবে এবং সেই স্থান পূর্ণ হবে সমতলীয় উপত্যকা দ্বারা। যদি কোন একটি প্রদত্ত বিন্দুতে u সরলরৈখিক হয় (অর্থাৎ এর আনতি ধ্রূবক হয়), তবে এই বিন্দুতে u অবিচল-অবস্থায় পৌছে গেছে এবং এটি এই বিন্দুতে অপরিবর্তনীয় (তাপীয় পরিবাহিতাকে ধ্রূবক ধরে নিয়ে)।

ডানপাশের সজীব চিত্রকল্পটি একটি ধাতব দন্ডে তাপ পরিবর্তনের ধারাকে বর্ণনা করছে। তাপীয় সমীকরণের একটি মজাদার ধর্ম হল সর্বাধিকতার নীতি। এই নীতি থেকে জানা যায়, u এর সর্বাধিক মান হয় পরীক্ষণীয় অঞ্চলের থেকে পূর্ব সময়ের হবে, অথবা পরীক্ষণীয় অঞ্চলের কিনারা বরাবর অবস্থান করবে। এথেকে বোঝা যায়, তাপমাত্রা কোন উৎস থেকে আগত অথবা পূর্ব থেকেই ঐ বস্তুতে উপস্থিত ছিল কারণ, তাপ পরিবাহিত হতে পারে কিন্তু বাহ্যিকভাবে অনস্তিত্বপূর্ণ কোন কিছু থেকে সৃষ্টি হতে পারে না। এটি অধিবৃত্তীয় আংশিক ব্যবকলনীয় সমীকরণের একটি ধর্ম যা সহজেই গাণিতিকভাবে প্রমাণ করা সম্ভব(নিচে দেখুন)।

আরেকটি মজাদার ধর্ম, যদি প্রারম্ভিক সময় t = t0 তে u অপেক্ষকে কোন অবিচ্ছেদ থেকেও থাকে, t > t0 হওয়া মাত্রই তাপমাত্রা নিরবিচ্ছিন্নতা প্রাপ্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, 0 তাপমাত্রাবিশিষ্ট একটি ধাতব দন্ডকে যদি 100 তাপমাত্রাবিশিষ্ট আরেকটি ধাতব দন্ডের প্রান্তে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়, তবে খুব দ্রুত দন্ডদুটির সংযোগস্থলের তাপমাত্রা 50 এ উপনীত হবে এবং সংযুক্ত দন্ডের তাপমাত্রার রেখচিত্রটি 0 থেকে 50 এর মধ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিন্যস্ত হবে।

সম্ভাবনা তত্ত্বে তাপীয় সমীকরণের ব্যবহার সুপ্রচলিত। এই সমীকরণ অনির্ধারিত গতিপথের বর্ণনা করে। এই কারণে এটি ব্যবসায়িক আর্থিক গণিতেও ব্যবহৃত হয়।

রিয়ম্যানের জ্যামিতি ও টপোলজিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। রিচার্ড এস হ্যামিলটন তার রিকি ফ্লো -এর সংজ্ঞায় এর ব্যবহার করেছিলেন।পরবর্তীকালে রিকি ফ্লো ব্যবহার করে গ্রিগোরী পেরেলম্যান টপোলজিকাল পঁয়ক্যারে অনুমানের সমাধান করেন।

বাহ্যিক বা বাস্তবিক সমস্যা ও তাপীয় সমীকরণ[সম্পাদনা]

একমাত্রিক অবকল[সম্পাদনা]

তাপীয় সমীকরণ উদ্ভাবিত হয়েছে ফ্যুরিয়রের নিয়ম ও শক্তির সংরক্ষণের নিয়ম (ক্যানন ১৯৮৪) থেকে। ফ্যুরিয়রের নিয়ম অনুযায়ী,একটি তলের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে তাপশক্তির প্রবাহের হার, সেই তল বরাবর তাপমাত্রার ঋণাত্মক নতির সমানুপাতিক হবে।

যেখানে k হল তাপ পরিবাহিতা এবং u হল তাপমাত্রা। একমাত্রিক ক্ষেত্রে, আনতি একটি সাধারণ স্থানিক অবকল, সুতরাং ফ্যুরিয়রের নিয়মের রূপটি হয়ে যায়,

কৃতকার্যের অনুপস্থিতিতে, বস্তুটির প্রতি একক আয়তনে আভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন, ΔQ, তাপমাত্রার পরিবর্তন, Δu,-এর সাথে সমানুপাতী (কেবলমাত্র এই অংশের জন্য Δ সময়সম্বন্ধীয় সাধারণ অবকলন অপারেটর, স্থানসম্বন্ধীয় লাপ্লাসের অপারেটর নয়)।

যেখানে cp আপেক্ষিক তাপ ধারকত্ব এবং ρ হল বস্তুটির ভর ঘনত্ব। পরম শূন্য তাপমাত্রায় শক্তিকে শূন্য ধরে নিলে এটি হয়ে যায়,

বস্তুটির একটি ক্ষুদ্র স্থানিক অঞ্চলে আভ্যন্তরীণ শক্তির বৃদ্ধি

একটি নির্দিষ্ট সময় কাল

-এর উপর সমীকরণটি হবে

কলনবিদ্যার মৌলিক উপপাদ্য ব্যবহার করে। যদি কোন কৃতকার্য না হয়ে থাকে এবং যদি কোন তাপ উৎস বা তাপ ধারক না থেকে থাকে, তাহলে [x−Δx, xx] সময়ান্তরালে আভ্যন্তরীণ শক্তির পরিবর্তন সম্ভব হয় কেবলমাত্র সীমানা বরাবর তাপীয় ফ্লাক্সের জন্য। ফ্যুরিয়রের নিয়ম অনুযায়ী এটি হল,

পুনরায় কলনবিদ্যার মৌলিক উপপাদ্য ব্যবহার করে। শক্তির সংরক্ষণের নিয়ম প্রয়োগ করলে,

যেকোন আয়তক্ষেত্র[t −Δt, t + Δt] × [x − Δx, x + Δx] -এর জন্য এটি সত্য।