মাটির দৃঢ়ীভবন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ওডোমিটার

দৃঢ়ীভবন বা দৃঢ়ীকরণ (ইংরেজিঃ Consolidation) হলো মাটির উপর সুদীর্ঘকালব্যাপী স্থির মানের ভার ক্রিয়া করার দরুণ মাটির অভ্যন্তরস্থ পানি নিঃসরণের ফলে মাটির সংকোচন প্রক্রিয়া। ভূ-পৃষ্ঠস্থ মাটিতে রয়েছে মাটির কণার পাশাপাশি পানি ও বায়ু। দীর্ঘদিন যাবৎ মাটির উপর উচ্চমানের বল ক্রিয়া করলে মাটির উপর যে চাপ সৃষ্টি হয়, তাতে মাটির ভেতরের বায়ু ও পানি বের হয়ে আয়তন সর্বোতভাবে হ্রাস পায়। এে ঘটনাকেই মাটির দৃঢ়ীভবন বলা হয়।

ধাপ ও ধরন[সম্পাদনা]

১। প্রারম্ভিক দৃঢ়ীভবন

২। প্রাথমিক দৃঢ়ীভবন

৩। মাধ্যমিক দৃঢ়ীভবন

প্রারম্ভিক দৃঢ়ীভবন[সম্পাদনা]

আংশিক সম্পৃক্ত মাটিতে স্থির মানের ভার চাপালে প্রথম দিকে খুব দ্রুত এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মাটির আন্তঃকণা ফাঁকা স্থান হতে প্রচুর পরিমাণে বায়ু ও অল্প পরিমাণে পানি বের হয়ে আসে। এতে মাটির আয়তন হ্রাস পায়। এ ঘটনাকে প্রারম্ভিক দৃঢ়ীভবন বলা হয়।

প্রাথমিক দৃঢ়ীভবন[সম্পাদনা]

মাটির উপর দীর্ঘদিন যাবৎ স্থির মানের ভার চাপিয়ে রাখা হলে, মাটির মধ্যকার শূন্যস্থানগুলো হতে ধীরে ধীরে পানি বের হয়ে আসে। ফলে মাটির আয়তন হ্রাস পায়। একে প্রাথমিক দৃঢ়ীভবন বলে।

মাটি হতে পানি বের হয়ে আসবার এ বৈশিষ্ট্য মাটির ভেদ্যতা গুণের উপর নির্ভর করে। যে মাটির ভেদ্যতা বেশি, তাতে প্রাথমিক দৃঢ়ীভবন সম্পন্ন হতে তুলনামূলক কম সময় লাগে। যেমনঃ স্থূল দানা মাটির ভেদ্যতা বেশি, তাই তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যেই এ মাটির প্রাথমিক দৃঢ়ীভবন সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে, যে মাটির ভেদ্যতা গুণ কম; যেমনঃ সূক্ষ্ণ দানা মাটি; সে সব মাটির ক্ষেত্রে প্রাথমিক দৃঢ়ীভবনে বেশি সময় লাগে।

মাধ্যমিক দৃঢ়ীভবন[সম্পাদনা]

মাটির মধ্যকার আন্তকণা ফাঁকা স্থানে স্থির থাকা পানির এমনিতেই একটি স্থিরার্দ্র চাপ (Hydro-static pressure) থাকে। বাইরে থেকে ভার চাপানোর ফলে পানির কণার উপর চাপ আসে। এই আগত চাপ 'অতিরিক্ত ঔদক চাপ' হিসেবে বিবেচিত হয়। মাটির উপর বাইরে থেকে কোন চাপ প্রয়োগ করা হলে, সে চাপ তৎক্ষণাৎ মাটির অভ্যন্তরে স্থিত পানি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাহিত হয়। তবে, সময় যত গড়ায়, বহিরাগত চাপটি ধীরে ধীরে মাটির কণা কর্তৃকও বাহিত হওয়া শুরু করে। ফলে, উপর থেকে প্রযুক্ত চাপের কিছু অংশ পানি আর বাকি অংশ মাটি বহন করে।

পানির বহন করা চাপের অংশটুকুকে 'ছিদ্রস্থ পানির চাপ' এবং মাটির বহন করা চাপের অংশটুকুকে 'কার্যকরী চাপ' বলে।

সে যাই হোক, সময় গড়ানোর সাথে সাথে এই ছিদ্রস্থ পানির চাপ কমতে থাকে, আর কার্যকরী চাপের মান বাড়তে থাকে। এক সময় দেখা যায়, পানির উপর আগত অতিরিক্ত ঔদক চাপের মান কমতে কমতে শুন্য হয়ে গেছে। অর্থাৎ, উপর থেকে আগত চাপের প্রায় পুরো অংশই এবার মাটির কণাকে বহন করতে হয়। সম্পূর্ণ চাপের পুরোটা বহন করতে গিয়ে মাটির কণাগুলোর ত্রিমাত্রিক বিন্যাস ভেঙে যায়। এতে, মাটি আরেকটু পরিমাণে সংকুচিত হয় এবং মাটির আয়তন হ্রাস পায়। এঘটনাকে মাধ্যমিক দৃঢ়ীভবন বলে।