ঢাকা নগর জাদুঘর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ঢাকা নগর জাদুঘর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের নগর ভবনে অবস্থিত। ঢাকার ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য এই ভবনের ষষ্ঠতলায় জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

ঢাকা নগর ভবন

উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

ঢাকা শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্মৃতি সংরক্ষণ ও নগরবিষয়ক গবেষণার জন্য ১৯৮৭ সালে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ঢাকা নগর জাদুঘর’। এটি ঢাকা নগরী সম্পর্কিত জাদুঘর।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৯৮৭ সালে ঢাকার ১৩৩, গ্রিন রোডের ‘জাহানারা গার্ডেন’ ছিল বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নগর জাদুঘরের প্রথম অস্থায়ী কার্যালয়। তবে পুরান ঢাকার পাঁচ ভাই ঘাট লেনের একটি বাড়িতে প্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল জাদুঘরটি। ১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই নগর ভবনের ষষ্ঠতলার একটি সুপরিসর হলঘরে এটা স্থান লাভ করে। বর্তমানে এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং একটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত।

সংগ্রহ[সম্পাদনা]

এখানে সংরক্ষিত আছে ঢাকা নগরীর স্মৃতি সংক্রান্ত জানা-অজানা নানা বিষয়। ১০০ বছর আগের ঢাকার এ মানচিত্রটি ছাড়াও এখানে আছে প্রাক-মোগল আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত ঢাকার সীমানার ধারাবাহিক বৃদ্ধির নকশা।[১] ঢাকার ইতিহাস সংবলিত ১০১টি দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে এই নগর জাদুঘরে। এছাড়াও এই জাদুঘরে ঢাকার প্রথম ছাপাখানা ও নবাবি আমলের হুক্কা, উনিশ শতকে ঢাকার নবাবদের ব্যবহৃত পানের বাটা, সে আমলের মুদ্রা, পানদানি, তামার বালতি, জগ, ড্রেসিং টেবিল, শাঁখা ও শাঁখা তৈরির করাত, বদনাসহ নানা উপকরণ। দুর্লভ আলোকচিত্রের মধ্যে আছে- পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন, রূপলাল হাউস, হোসেনি দালানের আদি রূপ, বড় কাটরা, ছোট কাটরা, সাতগম্বুজ মসজিদ, উনিশ শতকে নির্মিত বিভিন্ন বাড়ি, সেন্ট জেমস গির্জা (বর্তমান বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে), পুরনো হাইকোর্ট ভবন, ১৯০৪ সালে দিলকুশার নবাববাড়ি, ডানা দীঘি প্রভৃতি।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম ইংরেজি সংবাদপত্র সাপ্তাহিক ‘ঢাকা নিউজ’ মুদ্রণ কাজে ব্যবহৃত মুদ্রণ যন্ত্রটি রয়েছে এই জাদুঘরে। এই মুদ্রণ যন্ত্রটি উনিশ শতকের (১৮৪৭-৪৮) মাঝামাঝি সময়ের। সেই সময় এই মুদ্রণ যন্ত্রটি স্থাপন করেছিলেন সুইজারল্যান্ডের স্যামুয়েল বোস্ট। পুরান ঢাকার একটি জীর্ণ বাড়ি থেকে ১৯৮৯ সালে ঢাকা নগর জাদুঘরের ট্রাস্টি হাশেম শফি এই মুদ্রণ যন্ত্রটি এখানে সংরক্ষণ করেছিলেন।

এখানে রয়েছে মোগল এবং ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন দলিল, ছবি এবং গ্রন্থসহ নানা জিনিস। ঢাকার ১৯৫২, ১৯৬৬, ১৯৬৯ ও ১৯৭১ সালসহ নানা আন্দোলনের বেশকিছু দুর্লভ আলোকচিত্র ও পোস্টার রয়েছে।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

নানা ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর কার্ড, পোস্টার, পুস্তিকা এবং ঢাকার বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশ করেছে জাদুঘরটি। উল্লেখযোগ্য হলো- শামসুর রাহমানের ‘স্মৃতির শহর’, আবদুল কাইউমের ‘চকবাজারের কেতাবপঞ্জি’, আবদুল করিমের ‘ঢাকাই মসলিন’, মুনতাসীর মামুনের ‘ঢাকার হারিয়ে যাওয়া কামান’, প্যাকি গ্যাডেসের ‘ঢাকা নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা’।

পরিদর্শন সময়[সম্পাদনা]

সকাল ৯টার দিকে জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় এবং খোলা থাকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। সারাদিনে তেমন কোনো দর্শনার্থী আসেন না এখানে। জাদুঘরটির প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২ টাকা। সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]