বিধবা বিবাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিধবা বিবাহ
ভারতে সাদা শাড়ি পরিহিতা একজন বিধবা নারী(খ্রিস্টাব্দ ১৭৭৪– ১৭৮১ এর সামসময়িক)
অবস্থা: বাতিলকৃত

দ্য হিন্দু উইডো'স রিম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৫৬। খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলাই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন সময়ে তখনকার ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় ভারতবর্ষের সকল বিচারব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধ করা হয়েছিল। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং আইন প্রণয়ন করে বিধবা বিবাহ কে আইনি স্বীকৃতি দেন। লর্ড উইলিয়ম বেন্টিনয়ের দ্বারা সতীদাহ বিলুপ্ত করার পর এটিই প্রথম বড় সমাজ সংস্কার আইন।.[১][২][৩][৪][৫][৬]

পারিবারিক সম্মান ও পারিবারিক সম্পত্তির কথা বিবেচনা করে, উচ্চ-বর্ণবাদী হিন্দু সমাজ দীর্ঘদিন ধরে বিধবা, এমনকি শিশু ও কিশোর-কিশোরদের পুনর্বাসনের বা বিয়ের অনুমতি দেয়নি, যার ফলে তাদের অনেক নিষ্ঠুর ও বঞ্চনার জীবনযাপন করতে হত।[৭] ১৮৫৬ সালের হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন[৮] একজন হিন্দু বিধবার উত্তরাধিকারের জন্য কিছু ক্ষতির বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা প্রদান করেছিল, যদিও, আইনের অধীনে বিধবা তার মৃত স্বামীর উত্তরাধিকার ত্যাগ করে।[৯] বিশেষ করে এই আইন করার লক্ষ্য ছিল কিছু হিন্দু বিধবা শিশুর জন্য, যার স্বামী বাড়িতে যাবার আগে বিধবা হয়ে যেতো।

উচ্চ-বর্ণের হিন্দু সমাজ দীর্ঘদিন যাবৎ বিধবাদের পুনরায় বিবাহের অনুমোদন দেয় নি। বিধবারা এমনকি যারা শৈশবে বা কৈশোরে বিধবা হয়েছিলেন তারাও বৈরাগ্য ও কঠোর ত্যাগ স্বীকার করে জীবনযাপন করবেন এমনটাই প্রত্যাশিত ছিল। তথাকথিত পরিবারের সম্মান ও পারিবারিক সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য এরকম নিয়ম করা হয়েছিল। পণ্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার ভারতে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন, ১৮৫৬, প্রণয়ন করে যার মাধ্যমে বিধবাদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্য সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি সামাজিক রক্ষাকবচ প্রদান করা হয়।

পটভূমিকা[সম্পাদনা]

সতীদাহ প্রথা মূলত হিন্দু ধর্মের কোনো মৌলিক বিধান নয়; পৌরাণিক কাহিনি থেকেই এর সূত্রপাত। কথিত আছে দক্ষ রাজার কন্যা শিবের স্ত্রী সতী ,স্বামীর সাথে জ্বলন্ত চিতায় আত্মাহুতি দেন। আর তখন থেকেই মূলত হিন্দু ধর্মে এই অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। বিদ্যাসাগর প্রাথমিক ভাবে কেন বিধবা বিবাহ নিয়ে এগিয়ে আসেন তা নিয়ে উনিশ শতকে তার দুই জীবনীকার বিহারীলাল সরকার এবং চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষ্য আলাদা। তাঁর ছোট ভাই শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্নের বক্তব্যটিই অনেকে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করেন (‘বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত ও ভ্রমনিরাস’)। চণ্ডীচরণের মতে, সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্র বাচস্পতির বালিকাবধূর অকালবৈধব্য বিদ্যাসাগরকে এই ‘মহৎ কর্মে ব্রতী’ হওয়ার জন্য প্রাণিত করে। বিহারীলাল লিখেছেন, বীরসিংহে বিদ্যাসাগরের এক বাল্যসহচরী ছিল। সে অকালে বিধবা হয়। এক দিন তিনি শুনলেন একাদশী বলে মেয়েটি সারা দিন খায়নি। আর শুনে তিনি কেঁদেই ফেললেন। তবে এই দুটো ঘটনাই তার ছাত্রজীবনে ঘটা। আর শম্ভুচন্দ্র যা বলছেন তা তার কর্মজীবনের শেষ দিকের। ঘটনা এ রকম যে, এক দিন বিদ্যাসাগর বাড়ির চণ্ডীমণ্ডপে বসে বাবার সঙ্গে স্থানীয় বিদ্যালয়গুলোর অবস্থা সম্পর্কে যখন আলোচনা করছেন, তখনই তার মা ‘রোদন করিতে করিতে’ সেখানে এসে ‘একটি বালিকার বৈধব্য-সংঘটনের উল্লেখ করত,’ তাকে বললেন ‘তুই এত দিন যে শাস্ত্র পড়িলি, তাহাতে বিধবাদের কোনও উপায় আছে কিনা?’ তার বাবাও তখন জানতে চাইলেন, ধর্মশাস্ত্রে বিধবাদের প্রতি শাস্ত্রকারেরা কী কী ব্যবস্থা করেছেন? এর পরই নাকি ‘শাস্ত্র-সমুদ্র মন্থন’ করে তিনি লিখলেন ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি, যা ১৮৫৪-র ফেব্রুয়ারিতে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-য় প্রকাশিত হয়। ১৮৫৫-র জানুয়ারিতে প্রকাশিত হল তার ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব।’ এর পরই সৃষ্টি হল প্রবল আলোড়ন। শেষে ১৮৫৬-র ২৬ জুলাই অনুমোদিত হল বিধবাবিবাহ আইন।

প্রথম বিধবাবিবাহ[সম্পাদনা]

নিজের শিশুকন্যার বালবৈধব্য ঘোচাতে রাজা রাজবল্লভ অনেক কাল আগে বিধবাবিবাহ প্রচলনে উদ্যোগী হয়েছিলেন, কিন্তু নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজের বিরোধিতায় তা বানচাল হয়ে যায়।

রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে ১৮৫৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর উপস্থিতিতে প্রথম বিধবা বিবাহের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। স্বামি মারা যাওয়া পরে স্ত্রী আবার বিবাহ দেয়ার রীতি হল বিধবাবিবাহ ।[১০]

আইন[সম্পাদনা]

  • হিন্দুদের মধ্যে কোনো বিয়ে অবৈধ নয় এবং এই ধরনের বিবাহও অবৈধ হবে না, যদি পূর্বে বিবাহিত বা বিয়ের পড়ে স্বামী মারা যাওয়ায় কোনো নারী বিয়ে করতে পারে।
  • সমস্ত অধিকার এবং স্বার্থসহ যে কোনো বিধবা তার মৃত স্বামীর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে, বা তার স্বামী বা তার উত্তরাধিকারীদের উত্তরাধিকার দ্বারা, অথবা এর যেকোনো ইচ্ছার বা নিয়মানুবর্তিতার ভিত্তির উপর নির্ভর করে, অনুমতি ব্যতীত পুনরায় বিবাহ করা, এই ধরনের সম্পত্তি সীমিত মুনাফা, পুনর্বিবাহের অবসান ঘটবে বা স্বামী মারা গেছে কিনা তা যাচাই করা।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Chandrakala Anandrao Hate (১৯৪৮)। Hindu Woman and Her Future। New Book Company। পৃষ্ঠা 156। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  2. Penelope Carson (২০১২)। The East India Company and Religion, 1698-1858। Boydell Press। পৃষ্ঠা 225–। আইএসবিএন 978-1-84383-732-9 
  3. B. R. Sunthankar (১৯৮৮)। Nineteenth Century History of Maharashtra: 1818-1857। Shubhada-Saraswat Prakashan। পৃষ্ঠা 522। আইএসবিএন 978-81-85239-50-7। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  4. Mohammad Tarique। Modern Indian History। Tata McGraw-Hill Education। পৃষ্ঠা 4–। আইএসবিএন 978-0-07-066030-4। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  5. John F. Riddick (২০০৬)। The History of British India: A Chronology। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 53–। আইএসবিএন 978-0-313-32280-8। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  6. Indrani Sen (২০০২)। Woman and Empire: Representations in the Writings of British India, 1858-1900। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 124–। আইএসবিএন 978-81-250-2111-7 
  7. Peers 2006, পৃ. 52–53
  8. Forbes 1999, পৃ. 23
  9. Carroll 2008, পৃ. 80
  10. "First Widow Marrage"