ভিয়েতনামী রন্ধনশৈলী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নেম কুওন বা গোই কুওন, ভিয়েতনামী সালাদ
বুন চা, পোড়ানো পোর্ক ও নুডলস দিয়ে তৈরী খাবার
বুন বো হুই

ভিয়েতনামী রন্ধনশৈলী ভিয়েতনামের খাদ্য ও পানীয়র সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে যা পাঁচটি মৌলিক স্বাদের সন্নিবেশ। প্রতিটি ভিয়েতনামী খাবারের আলাদা স্বাদ আছে।[১] এদের প্রধান খাদ্য উপাদানের মধ্যে আছে মাছের সস, চিংড়ি বাটা, সয়া সস, চাল, তাজা গুল্ম, ফল এবং শাকসবজি। তারা লেমনগ্রাস, আদা, মিন্ট, ভিয়েতনামী মিন্ট, পাখিরচোখ ঝাল, লেবু, থাই বেসিল পাতা ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে।[২] সনাতনী ভিয়েতনামী রান্না এর সতেজ উপাদান, অল্প তেল ও দুগ্ধজাত দ্রব্য ব্যবহার, আলাদা স্বাদ এবং গুল্ম ও সব্জি প্রধান হওয়ায় ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তাজা গুল্ম ও মাংসের ভারসাম্য ব্যবহার ও নির্দিষ্ট মশলার ব্যবহার ভিয়েতনামী খাবারকে পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর রন্ধনশৈলী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[৩]

দর্শনগত গুরুত্ব[সম্পাদনা]

ভারসাম্য নীতি মেনে চলায় ভিয়েতনামী খাবারে সর্বদা সুগন্ধ, স্বাদ এবং রঙের সমাবেশ ঘটে। ভিয়েতনামী খাবারে সর্বদা পাঁচটি উপাদান উপস্থিত থাকে। মৌলিক এই পাঁচটি উপাদান বা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মশলা (ধাতু), টক (কাঠ), তিতা (আগুন), লবনাক্ততা (পানি) এবং মিষ্টি (মাটি/পৃথিবী)।

ভিয়েতনামী খাবারে পাঁচ ধরনের পুষ্টি থাকেঃ পাউডার, পানি বা তরল, খনিজ উপাদান, প্রোটিন এবং চর্বি। ভিয়েতনামী বাবুর্চীরা তাদের খাবারে পাঁচ ধরনের রঙ আনার চেষ্টা করেঃ সাদা, সবুজ, হলুদ, লাল এবং কালো।

ভিয়েতনামী খাবার পঞ্চেন্দ্রিয় দ্বারা উপভোগ করা যায়। খাবারের রঙ চোখকে আকর্ষণ করবে, মুচমুচে উপাদানের শব্দ কানকে আনন্দ দেবে, মশলার পঞ্চপদ জিহবা দ্বরা অনুভুত হবে, গুল্মের সুগন্ধ নাক দ্বারা ঘ্রাণের মাধ্যমে পাওয়া যাবে এবং কিছু কিছু খাবারের অনুভূতি হাতের স্পর্ষ দ্বারা অনুভব করা যাবে। জটিল বা সাধারণ যে ধরনের পদই হোক না কেন ভিয়েতনামী খাবার অবশ্যই উপভোগ্য হয়ে ওঠে।

পঞ্চ উপাদান[সম্পাদনা]

ভিয়েতনামী রন্ধনশৈলী এশীয় পঞ্চ উপাদান বা উ জিং এবং মহাভুত দ্বারা প্রভাবিত।

্সংযুক্ত উপাদান[৪]
Wood Fire Earth Metal Water
'মসলাদি' টক তিতা মিষ্টি মসলা নোনতা
'অঙ্গ' গল ব্লাডার ক্ষুদ্রান্ত্র পাকস্থলী বৃহদান্ত্র মূত্রথলি
'রং সবুজ লাল হলুদ হোয়াইট কালো
'ইন্দ্রিয়' দর্শন স্বাদ স্পর্শ গন্ধ শব্দ
'পুষ্টি ' কার্বোহাইড্রেট চর্বি প্রোটিন খনিজ পদার্থ পানি

সাংস্কৃতিক গুরুত্ব[সম্পাদনা]

জীবিত এবং মৃত বিশ্বের মধ্যে সংযোগ হিসাবে লবণ ব্যবহৃত হয়। বিবাহে পূর্ণাংগতা এবং শান্তির কথা নবদম্পতিদের স্মরণ করিয়ে দিতে বন ফু ব্যবহার করা হয়। বিশেষ দিবস যেমন চন্দ্র নতুন বছরে পূর্বপুরুষদের আত্মার উদ্দেশ্যে খাবার উৎসর্গ করা হয়। ভিয়েতনামী সংস্কৃতিতে খাবার রান্না এবং খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিয়েতনামী ভাষায় খাওয়া এন বিবিধ অর্থ বহন করে।

রাজকীয় রন্ধনশৈলী[সম্পাদনা]

গুয়েন রাজত্বকালে সমগ্র রাজ্য থেকে ৫০ জন সেরা বাবুর্চিকে থুয়ং থিয়েন বোর্ডের জন্য নির্বাচন করা হয় যারা রাজার জন্যে খাবার প্রস্তুত করবে। প্রতিদিন তিন বেলা খাবার পরিবেশন করা হতো। সকালে ১২ পদ এবং দুপুর ও রাতের জন্য ৬৬ রকমের খাবার পরিবেশন করতে হতো তাদের যার মধ্যে ৫০ রকমের প্রধান খাবার এবং ১৬ রকমের মিষ্টি থাকতো। প্রয়োজ়নীয় একটা খাবার ছিলো পাখির বাসার স্যুপ তো ইয়েন। অন্যান্য খাবারের মধ্যে ছিলো হাঙরের পাখনা ভি কা, আবালনে বাও গু, হরিণের গান নাই, ভালুকের হাতের তে গাউ এবং গন্ডারের চামড়ার দে তে গিয়াক। পানি আসতো হ্যাম লং কূপ, বাউ কুয়োক প্যাগোডা, ক্যাম লো কূপ অথবা হুয়ং নদী থেকে। ভাত রান্নার জন্য মাটির হাড়ি একবার মাত্র ব্যবহার করা হতো। এরপর ভেঙে ফেলে দেওয়া হতো। বাবুর্চি এবং থুয়ং থিয়েন বোর্ড সদস্য ব্যতীত কারোর এসব খাবারের কাছে যাওয়ার অনুমতি ছিলো। রান্না করা খাবার সর্বপ্রথম খোঁজাদের খাওয়ানো হতো, এরপরে রাজার স্ত্রীদের। স্ত্রীরা অতঃপর রাজাকে খাদ্য নিবেদন করতো। রাজা সংগীত মুখর পরিবেশে একা একা খাদ্যগ্রহণ করেন।

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Vietnamese Food"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৬ 
  2. "Vietnamese Ingredients"WokMe। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১১ 
  3. Annie Corapi (২০১১)। "The 10 healthiest ethnic cuisines"CNN Health। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১১ 
  4. "Archived copy"। ০৫ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৫ নভেম্বর ২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ=, |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)