গডফাদার (উপন্যাস)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গডফাদার
লেখকমারিও পুজো
মূল শিরোনামদ্য গডফাদার
অনুবাদকমোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রচ্ছদ শিল্পীএস নেইল ফুজিতা (মূল)
দেশযুক্তরাষ্ট্র (মূল)
বাংলাদেশ (অনূদিত)
ভাষাইংরেজি (মূল)
বাংলা (অনূদিত)
ধারাবাহিকদ্য গডফাদার
ধরনঅপরাধ উপন্যাস
প্রকাশকজি পি পটনাম সানস (মূল), বাতিঘর প্রকাশনী (বাংলা)
প্রকাশনার তারিখ
১০ মার্চ ১৯৬৯
বাংলায় প্রকাশিত
ফেব্রুয়ারি ২০০৪
পূর্ববর্তী বইদ্য ফ্যমিলি কর্লিয়নি 
পরবর্তী বইদ্য সিসিলিয়ান 
বাংলা অনূদিত সংস্করণের প্রচ্ছদ

গডফাদার (মূল শিরোনাম: দ্য গডফাদার) ইতালীয়-মার্কিন লেখক মারিও পুজোর লেখা একটি অপরাধ উপন্যাস। ১৯৬৯ সালে জি পি পটনাম সানস প্রকাশিত এই উপন্যাসটি নিউ ইয়র্ক সিটির এক কাল্পনিক মাফিয়া পরিবার ও তার কর্তা ভিটো কর্লিয়নির কাহিনী। উপন্যাসে সময়ব্যপ্তি ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫, ভিটো কর্লিয়নির প্রথম জীবনের স্মৃতিও এর অন্তর্ভুক্ত। ইতালীয় অপরাধ জগতের কিছু শব্দ, যেমন কনসিলিওরি (উপদেষ্টা), ক্যাপোরেজিমি(সহকারী), কসা নসত্রা (সিসিলিয় মাফিয়া), ওমের্তা (নীরবতার নিয়ম) প্রভৃতি এই উপন্যাসের মাধ্যমে ইংরেজিতে পরিচিত হয়।

বাংলা ভাষায় বইটির বেশ কয়েকটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাতিঘর প্রকাশনী থেকে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন কর্তৃক অনূদিত গডফাদার প্রকাশিত হয়।[১] পরবর্তীতে ২০০৬ সালে সেবা প্রকাশনী থেকে শেখ আবদুল হাকিম দ্বারা অনূদিত গডফাদার প্রকাশিত হয়।[২] ২০১০ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় জোনাকী প্রকাশনী থেকে তন্ময় রনি কর্তৃক অনূদিত গডফাদার প্রকাশিত হয়।[৩] এছাড়া ২০১৫ ও ২০১৬ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় দ্য গডফাদার নামে যথাক্রমে মুক্তদেশ প্রকাশন থেকে লীলা মজুমদারের ও আকাশ প্রকাশনী থেকে শেখ আব্দুল হাকিমের ভাষান্তর প্রকাশিত হয়।[৪][৫]

উপন্যাসটি অবলম্বনে দ্য গডফাদার নামে তিনটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৭২, ১৯৭৪ এবং ১৯৯০ সালে ধারাবাহিকভাবে তিনটি চলচ্চিত্র তৈরি হয় যেগুলোর চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন মারিও পুজো। প্রথম চলচ্চিত্রদ্বয় শিল্পবোদ্ধাদের উচ্চ প্রশংসা লাভ করেছে।[৬][৭]

কাহিনীসংক্ষেপ[সম্পাদনা]

নিউ ইয়র্ক সিটির মাফিয়া বস ভিটো কর্লিয়নি মাদকসম্রাট ভার্জিল সলোৎসোর মাদক ব্যবসার প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। যার কারণে তাকে আততায়ী দ্বারা হত্যার চেষ্টা করা হয়। ভিটো কর্লিয়নি হত্যাচেষ্টায় বেঁচে গেলেও গভীরভাবে আহত হন। এমতাবস্তায় তার বড় ছেলে সনি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এরমধ্যে ছোট ছেলে মাইকেল ভার্জিল সলোৎসো এবং একজন পুলিশ ক্যাপ্টেনকে হত্যা করে, যার কারণে তাকে আমেরিকা ছেড়ে সিসিলিতে পালিয়ে যেতে হয়। মাইকেল আবার আমেরিকায় ফিরে যায় তার বড় ভাই সনির মৃত্যুর খবর পেয়ে। মাইকেলের প্রত্যাবর্তনের পর ভিটো কর্লিয়নি তাকে পরিবারের সম্পূর্ণ দায়িত্ব তুলে দেন। মাইকেল পরিকল্পনা করে যে সে তার ব্যবসা লাসভেগাসে সরিয়ে নেবে। কিন্তু তার আগে সে অত্যন্ত গোপনে পরিকল্পনা করে পাঁচ পরিবারের কর্ণধারদের হত্যা করে যারা কর্লিয়নি পরিবারকে নানাভাবে ক্ষতি করায় তৎপর ছিল। এছাড়াও পার্শ্বকাহিনি হিসেবে কর্লিয়নির মেয়ের নির্যাতিত বৈবাহিক জীবন, পশ্চিমের দুনিয়ায় জনি ফন্টেনের সাফল‍্য, পারিবারিক ব‍্যবসায় ভিটোর দ্বিতীয় ছেলে ফ্রেডোর কাহিনি এসেছে।

চরিত্রসমূহ[সম্পাদনা]

  • ভিটো কর্লিয়নি (দ্য ডন, গডফাদার) - কর্লিয়নি পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মাফিয়া বস। তিনি শৈশবে এতিম অবস্থায় সিসিলি থেকে আমেরিকায় আসেন। পরবর্তীতে জলপাই তেলের ব্যবসার আড়ালে জুয়াখেলা, মাদক চোরাকারবার ও শ্রমিক সংঘে দলাদলি এসব নিয়ন্ত্রণ করে তিনি গড়ে তোলেন মাফিয়া সাম্রাজ্য। ব্যক্তিগতভাবে তিনি যুক্তিবাদী, উদারহৃদয় এবং বন্ধুবৎসল। ক্যাথলিক রক্ষণশীল মনোভাবের কারণে তিনি নারীঘটিত ব্যবসায় জড়ান না, আর নিকটতম বন্ধুরাও তাকে 'গডফাদার' বা 'ডন' বলতে বাধ্য হন। তবে কাজ আদায়ের জন্যে তিনি মাঝেমধ্যে খুনোখুনিও করেছেন, যেমন- যুবক বয়সে কালোবাজারি ডন ফানুচ্চিকে খুন।
  • সান্তিনো সনি কর্লিয়নি - ডনের বড় ছেলে ও অধীনস্থ।
  • ফ্রেডেরিকো ফ্রেডি কর্লিয়নি - ডনের মেজো ছেলে।
  • মাইকেল মাইক কর্লিয়নি - ডনের ছোট ছেলে এবং উত্তরাধিকারী।
  • কন্সট্যান্সিয়া কনি কর্লিয়নি - ডনের মেয়ে।
  • টম হেগেন - ডনের পোষ্য এবং কর্লিয়নি পরিবারের কনসিলিওরি (মন্ত্রণাদাতা)। গেনকো আবানদান্ডোর পর সে এই পদ পায়।
  • জনি ফন্টেন - ডনের পালকপুত্র এবং হলিউডের খ্যাতিমান অভিনেতা ও গায়ক।
  • ভার্জিল তুর্কি সলোৎসো - মাদকব্যবসায়ী। তার মাদকব্যবসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় সে ডনের ওপর হামলা চালায়, তবে ডন বেঁচে যান। পরে মাইক কর্লিয়নি তাকে হত্যা করে।
  • ফিলিপ টাটাগ্লিয়া - কর্লিয়নিদের প্রতিদ্বন্দ্বী টাটাগ্লিয়া পরিবারের প্রধান।
  • পিটার ক্লেমেনজা - ডনের ক্যাপোরেজিমি (সহকারী)। কর্লিয়নি পরিবারের প্রতি সর্বদা বিশ্বস্ত থেকে কাজ করে দেয়।
  • সালভাদোর টেসিওল - ডনের ক্যাপোরেজিমি (সহকারী)। ডনের মৃত্যুর পর বিশ্বাসঘাতকতার জন্যে মাইক তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

চলচ্চিত্রায়ণ[সম্পাদনা]

১৯৭২ সালে উপন্যাসটি অবলম্বনে দ্য গডফাদার চলচ্চিত্র তৈরি করা হয়, পরিচালনা করেন ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা এবং অভিনয় করেন ডন ভিটো কর্লিয়নি চরিত্রে মার্লোন ব্রান্ডো ও মাইকেল কর্লিয়নি চরিত্রে আল পাচিনো। মারিও পুজো চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য ও নির্মাণকাজে সাহায্য করেন। চলচ্চিত্রটি সারাবিশ্বে আনুমানিক $২৬৯ মিলিয়ন আয় করে, পাশাপাশি জিতে নেয় অনেক পুরস্কার: তিনটি একাডেমি পুরস্কার, পাঁচটি গোল্ডেন গ্লোব ও একটি গ্র্যামি। চলচ্চিত্র জগতের ইতিহাসেও এটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রাখে। এর সিক্যুয়েল দ্য গডফাদার পার্ট ২ পায় ছয়টি অস্কার এবং এটিই প্রথম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য একাডেমি পুরস্কার অর্জন করা সিক্যুয়েল চলচ্চিত্র।

ভিডিও গেম নির্মাণ[সম্পাদনা]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. মারিও পুজোগডফাদার। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন কর্তৃক অনূদিত। 
  2. গডফাদার। সেবা প্রকাশনী।  আর্কাইভ
  3. মারিও পুজোগডফাদার। তন্ময় রনি কর্তৃক অনূদিত। 
  4. মারিও পুজোদ্য গডফাদার। লীলা মজুমদার কর্তৃক অনূদিত। 
  5. মারিও পুজোদ্য গডফাদার। শেখ আব্দুল হাকিম কর্তৃক অনূদিত। 
  6. "টপ মুভিস- ৭তম অলটাইম বেস্ট মুভিস এট রোটেন টোমাটোস" (ইংরেজি ভাষায়)। রোটেনটোমাটোস ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৮-১০ 
  7. "টপ রেটেড মুভিজ"ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]