টেথীয় খাত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

টেথীয় খাত হল একটি সুপ্রাচীন সমুদ্র খাত; মেসোজোয়িক মহাযুগের (২৫.২২ কোটি - ৭.২১ কোটি বছর আগে) মাঝামাঝি সময় থেকে পরবর্তী সিনোজোয়িক মহাযুগেরও (মোটামুটি ৭.২১ কোটি বছর আগে থেকে শুরু হয়ে এখনও পর্যন্ত) একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অধুনালুপ্ত টেথিস মহাসাগরের উত্তর উপকূলের কাছাকাছি এর অস্তিত্ব বজায় ছিল।

ভূতাত্ত্বিক বিবরণ[সম্পাদনা]

আজ থেকে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে জুরাসিক যুগের (২০.১৩ কোটি - ১৫.২১ কোটি বছর আগে) প্রথম দিকে কিমেরীয় পাত ভূতাত্ত্বিক পাত (টেকটনিক প্লেট) চলাচলের কারণে ক্রমশ উত্তরে সরে এসে লরেশিয়ার পূর্ব অংশের সাথে মিশে গেলে তার আরও উত্তরমুখী চলন বন্ধ হয়; কিন্তু এর ফলে কিমেরীয় পাতটি ক্রমশ লরেশীয় পাতের তলায় ভিতর দিকে ঢুকে যেতে শুরু করে। ফলে টেথীয় খাত গড়ে ওঠে। আবার স্মিথ (১৯৭১), ডিউই, পিটম্যান, বোন্যাঁ (১৯৭৩), লাউবশার ও বেরনুলি (১৯৭৩), বেজু-দুভাল, দেকুর, পিঞ্চন (১৯৭৭), প্রমুখ ভূ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন, টেথিস সাগরের তলদেশই ছিল একটি সামুদ্রিক পাত যা ভূত্বকীয় পাতের চলনের দরুন লরেশীয় মহাদেশীয় পাতের তলায় প্রবেশ (subduct) করে্ছিল।

ক্রিটেশিয়াস যুগের (মোটামুটি ১৪.৫ কোটি - ৭.২১ কোটি বছর আগে) শেষের দিক থেকে পরবর্তী প্যালিওজিন যুগে (৬.৬ কোটি - ২.৩ কোটি বছর আগে) টেথীয় খাতের বিস্তৃতি সবচেয়ে বেশি ছিল বলে মনে করা হয়। আজকের গ্রিস থেকে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত এই খাত বিস্তৃত ছিল। এই টেথীয় খাতে একটি ভূত্বকীয় পাত অপর একটির তলায় প্রবেশ করার ফলেই সম্ভবত দক্ষিণের অতিমহাদেশ গন্ডোয়ানায় ভাঙন শুরু হয় ও গন্ডোয়ানা ভেঙে আফ্রিকা, আরব ও ভারতীয় পাতের ক্রমশ উত্তরমুখী চলন শুরু হয়। এই পাতগুলি ক্রমে উত্তরে সরে এসে ইউরেশীয় পাতের সাথে মিলিত হলে টেথিস সাগর ও সেই সঙ্গে টেথীয় খাতেরও অবলুপ্তি ঘটে। টেথীয় খাতের অবশেষ এখনও দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দক্ষিণপশ্চিম অংশে খুঁজে পাওয়া যায়।

বিলুপ্তি[সম্পাদনা]

দক্ষিণ ভারতীয় পাতটি ক্রমশ উত্তরে ইউরেশিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে টেথীয় খাতের উপরে প্রবল চাপের সৃষ্টি হয়। ফলে তা স্থানে স্থানে ভাঁজ খেতে শুরু করে ও ভেঙে যেতে থাকে। এই খাতের ভিত্তি ছিল যে পাললিক শিলার স্তরসমূহ, সেগুলি ছিল তুলনায় নরম ও দুর্বল শিলা। ফলে যখন প্রবল চাপে তা ভেঙে যেতে থাকে নিচে পৃথিবীর ম্যান্টেল থেকে তুলনামূলক শক্ত গ্রানাইটব্যাসল্ট শিলা তাদের উপরে উঠে আসে। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতীয় পাতটি টেথীয় খাত পর্যন্ত পৌঁছলে তা ধীরে ধীরে ঐ খাতের তলায় ঢুকে যেতে (subduction) শুরু করে। ফলে পাশ থেকে আসা প্রবল চাপ ও নিচে ঢুকে যেতে থাকা মহাদেশীয় পাতের ধাক্কায় টেথীয় খাত উঁচু হয়ে উঠতে শুরু করে ও জলের উপরে মাথা তুলে দাঁড়ায়। অন্যদিকে তার উত্তরের সমতল মহাসাগরীয় তলদেশেরও উচ্চতা বৃদ্ধি পায় ও তা উঁচু মালভূমিতে পরিণত হয়। এইভাবেই হিমালয় পর্বতমালা ও তার উত্তরে তিব্বতীয় মালভূমি মাথা তুলে দাঁড়ায়। তবে যদিও তখন হিমালয়ের উচ্চতা ছিল যথেষ্ট, কিন্তু তখনও তা আজকের মত সুউচ্চ পর্বতমালায় পরিণত হয়নি। পরবর্তীকালে ভারতীয় পাতটির উত্তরের মহাদেশীয় পাতের তলায় আরও ঢুকে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি চালু থাকার দরুণ ও আরও কিছু ভূতাত্ত্বিক ঘটনার ফলে এই পর্বতমালা ও তার উত্তরের মালভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।[১]

আফ্রিকা ও আরবীয় পাতের উত্তরে ইউরেশিয়ামুখী চলনের ফলে কিছুটা একইভাবে আল্পস পর্বতমালা, কার্পেথীয় পর্বতমালা, তোরোস পর্বতমালা, প্রভৃতির সৃষ্টি হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Geology of Himalayas - Mountain Building". সংগৃহীত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]