সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সামাজিক বিজ্ঞানের দর্শন হল যুক্তিসামজিক বিজ্ঞানের পদ্ধতিসমূহ, অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞানরাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যয়ন। সামাজিক বিজ্ঞানের দার্শনিকগণ সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মধ্যে পার্থক্য ও সমতা, সামাজিক সমস্যাসমূহের মধ্যে সম্পর্ক, সামাজিক আইনের সম্ভাব্য উপস্থিতি, এবং বিভিন্ন সংগঠন ও মাধ্যমের তাত্ত্বিক গুরুত্ব বিষয়ে আলোকপাত করেন।

ওগুস্ত কোঁত ও দৃষ্টবাদ[সম্পাদনা]

ফরাসি দার্শনিক ওগুস্ত কোঁত তাঁর কোস্‌ দঁ ফিলসফি পজিটিভ (ইতিবাচক দর্শনের পথ) বইয়ে সর্বপ্রথম দৃষ্টবাদের জ্ঞানতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করে। বইটি ধারাবাহিকভাবে ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়। এই বইটি তাঁর ১৮৪৮ সালের আরেকটি কাজ দিসকোস্‌ সুর লেন্সেম্বল দ্যু পজিটিভিসম (দৃষ্টবাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি) এর পর প্রকাশিত হয়। কোস্‌ দঁ ফিলসফি পসিটিভ বইয়ের প্রথম তিনটি ভলিউমে বিজ্ঞানের বিদ্যমান শাখা (গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ও জীববিজ্ঞান) নিয়ে আলোকপাত করা হয়। রসায়ন ও জীববিজ্ঞানে সামাজিক বিজ্ঞানের আগমনের অপরিহার্যতা উপর জোড় দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়সমূহ নজরে রেখে ও পর্যবেক্ষণ করে, এবং এইভাবে বিজ্ঞানকে শ্রেণিবিভাগ করে কোঁতকে প্রথম বিজ্ঞানের দার্শনিক বলা হয়ে থাকে।[১]

সমাজবিজ্ঞানের আধুনিক পাঠ্য শাখা শুরু হয় এমিল ডুর্খাইমের (১৮৫৮-১৯১৭) কাজের মধ্য দিয়ে। ডুর্খাইম কোঁতের দর্শনের অনেক বিবরণ বাদ দেন। তিনি কিছু বিষয় রাখেন এবং সামাজিক বিজ্ঞান হল মানুষের কর্ম জগতে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের যৌক্তিক ধারাবাহিকতা এই ধারণা ঠিক রেখে এর পদ্ধতিগত সংশোধন আনেন।[২] ডুর্খাইম ১৮৯৫ সালে বর্দেয়াঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ইউরোপীয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু করেন। একই বছর তিনি তাঁর ১৮৯৫ সালের লে রিগলেস্‌ দঁ লা মেথড্‌ সোশিওলজিক[৩] (সমাজবিজ্ঞানের পদ্ধতির ভূমিকা) বইয়ে যুক্তি দেখান, "আমাদের প্রধান লক্ষ্য হল মানুষের কার্যে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের বিস্তার ঘটানো... যা দৃষ্টবাদ বলা হয় কিন্তু তা আসলে যুক্তিবাদের ফল।"[৪]

জ্ঞানতত্ত্ব[সম্পাদনা]

যে কোন বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রকল্পে কিছু দার্শনিক পূর্ব আগমনের আভাস থাকে। এই পূর্বাভাস সামাজিক জ্ঞানের বৈশিষ্ট, সামাজিক বাস্তবতার বৈশিষ্ট, ও মানুষের নিয়ন্ত্রণের স্থানে বিদ্যমান থাকে।[৫] সামাজিক বিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ব্যবহৃত পদ্ধতিসমূহ নিয়ে কাজ করবে এই বিষয় পণ্ডিতগণ অস্বীকার করেন। সামাজিক বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা দৃষ্টবাদীগণ যুক্তি দেখান যে সামাজিক সমস্যাসমূহ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে অধ্যয়ন করা যাবে এবং তা করা উচিত। এই অবস্থান বিজ্ঞানবাদ, প্রকৃতিবাদশরীরবাদের সাথে জড়িত।[৬]

প্রারম্ভিক জার্মান হার্মেনিউটিশিয়ানদের মধ্যে ভিলহেল্ম ডিলথে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের পার্থক্য (গেইস্টেস্‌ভিসেনশাফ্‌ট) খুঁজে বের করার অগ্রদূত। এই রীতি মাক্স ভেবারগেয়র্গ জিমেলের নেতিবাচকতাকে জানান দেয় এবং সমালোচনামূলক তত্ত্বের সাথে চলতে থাকে। ১৯৬০ এর দশক থেকে, বিজ্ঞানবাদ বা ভাবতত্ত্ব হিসেবে বিজ্ঞানের সমালোচনার পাশাপাশি বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তসমূহের সাধারণ দুর্বলতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইয়োর্গেন হাবারমাস তাঁর অন দ্য লজিক অফ দ্য সোশাল সাইন্সেস (১৯৬৭) বইয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন যে, সামগ্রিক বিজ্ঞানের দৃষ্টবাদ তত্ত্ব সামাজিক বিজ্ঞান ও ইতিহাসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পকের কারণে ব্যর্থ হয়েছে।"[৭]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Auguste Comte"Stanford Encyclopaedia 
  2. Wacquant, Loic. 1992. "Positivism." In Bottomore, Tom and William Outhwaite, ed., The Blackwell Dictionary of Twentieth-Century Social Thought.
  3. Gianfranco Poggi (2000). Durkheim. Oxford: Oxford University Press.
  4. Durkheim, Emile. 1895. The Rules of Sociological Method. Cited in Wacquant (1992).
  5. Cote, James E. and Levine, Charles G. (2002). Identity formation, Agency, and Culture, Mahwah, New Jersey: Lawrence Erlbaum Associates.
  6. Robert Audi, ed. (1999). The Cambridge Dictionary of Philosophy (Second ed.). Cambridge: Cambridge University Press. p. 704. আইএসবিএন ০-৫২১-৬৩৭২২-৮.
  7. Outhwaite, William, 1988 Habermas: Key Contemporary Thinkers, Polity Press (Second Edition 2009), আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৪৫৬-৪৩২৮-১.