কালাদিয়ারার যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কালাদিয়ারার যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: বর্গির হাঙ্গামা এবং বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৫–১৭৪৯)
তারিখ১৬ এপ্রিল ১৭৪৮[১]
অবস্থান
কালাদিয়ারা (পাটনা থেকে ২৬ মাইল দূরে), বিহার প্রদেশ, বাংলা (বর্তমান কালাদিয়ারা, বিহার, ভারত)
ফলাফল

বাংলার নবাবের বিজয়[১][২]

  • বিহারে আফগান বিদ্রোহের অবসান ঘটে[১]
বিবাদমান পক্ষ
বাংলা মারাঠা সাম্রাজ্য
বিদ্রোহী আফগান সৈন্যদল[১]
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
আলীবর্দী খান মীর হাবিব
সমশের খান[১] 
সরদার খান[১] 
শক্তি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজ্ঞাত অজ্ঞাত

কালাদিয়ারার যুদ্ধ ১৭৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল বিহারের কালদিয়ারা নামক স্থানে বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের সৈন্যবাহিনী এবং সম্মিলিত আফগান বিদ্রোহী মারাঠা বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়[১]। যুদ্ধে মারাঠারা ও বিদ্রোহী আফগানরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়[১]। এই যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিহারে আফগান বিদ্রোহের অবসান ঘটে[১]

পটভূমি[সম্পাদনা]

বাংলার নবাব আলীবর্দী খান যখন মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন[১], তখন বিহারে আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ করে। বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা জৈনুদ্দিন আহমদ (নবাবের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা) মারাঠা আক্রমণ থেকে বিহারকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাঁর সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করছিলেন[১]। এজন্য তিনি আলীবর্দী কর্তৃক পদচ্যুত আফগান সৈন্যাধ্যক্ষ সমশের খান এবং সরদার খানকে নিজ সৈন্যদলে গ্রহণ করেছিলেন[১]। কিন্তু ১৭৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁরা দু'জন বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক জৈনুদ্দিন ও তাঁর পিতা হাজি আহমদকে হত্যা করেন[১] এবং জৈনুদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দি করেন। এই সংবাদ পেয়ে আলীবর্দী বিহার অভিমুখে যাত্রা করেন। মারাঠা সৈন্যরাও বিদ্রোহী আফগানদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য বিহারের দিকে রওনা হয়েছিল। ভাগলপুরের যুদ্ধে নবাব তাদেরকে পরাজিত করেন[১]

যুদ্ধের ঘটনাবলি[সম্পাদনা]

ভাগলপুরের যুদ্ধের পর নবাব আলীবর্দী বিহারের রাজধানী পাটনার দিকে অগ্রসর হন। ১৭৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল পাটনা থেকে ২৬ মাইল দূরে কালাদিয়ারা নামক স্থানে নবাব মারাঠা ও বিদ্রোহী আফগানদের সম্মিলিত বাহিনীর মুখোমুখি হন[১]। মারাঠাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মীর হাবিব, আর আফগানদের নেতৃত্বে ছিলেন নবাবের ভূতপূর্ব সেনাপতি শমসের খান ও সরদার খান[১]। উভয়পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে নবাবের বাহিনীর নিকট সম্মিলিত মারাঠা ও আফগান বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়[১]। আফগান বিদ্রোহীদের নেতা সমশের খান ও সরদার খান যুদ্ধে নিহত হন[১]

ফলাফল[সম্পাদনা]

কালাদিয়ারের যুদ্ধে নবাবের জয়লাভের মধ্য দিয়ে বিহারে আফগান বিদ্রোহের অবসান ঘটে। বিদ্রোহী আফগানরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়[১], আর মীর হাবিবের নেতৃত্বে মারাঠা বাহিনী দ্রুত বিহার থেকে পশ্চাৎপসরণ করে। এই যুদ্ধের ফলে বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে মারাঠা ও বিদ্রোহী আফগানদের মধ্যে মিত্রজোট গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়[১]। যুদ্ধের পর নবাব পাটনা পুনরুদ্ধার করেন এবং তাঁর কন্যা আমিনা বেগম ও তাঁর সন্তানদের মুক্ত করেন[১]। নবাব তাঁর বেগম শরফুন্নেসার পরামর্শে জৈনুদ্দিন ও আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বিহারের নতুন প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন[১]। রাজা জানকীরাম সিরাজের নায়েব নিযুক্ত হন। এর মধ্য দিয়ে বিহারে নবাবের কর্তৃত্ব পুন:প্রতিষ্ঠিত হয়[১]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম. "মারাঠা আক্রমণ". বাংলাদেশের ইতিহাস. পৃ. ২৯৩–২৯৯.
  2. http://scroll.in/article/776978/forgotten-indian-history-the-brutal-maratha-invasions-of-bengal