মীর হাবিব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মীর হাবিব ইস্পাহানি
উড়িষ্যার নায়েব নাযিম
কাজের মেয়াদ
মে ১৭৫১[১] – ২৪ আগস্ট ১৭৫২[১]
পূর্বসূরীআব্দুস সালাম[১]
উত্তরসূরীমুসলেহউদ্দিন মুহম্মদ খান (প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসেবে)[১]
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মইস্পাহান, পারস্য (বর্তমান ইস্পাহান, ইরান)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মৃত্যু২৪ আগস্ট ১৭৫২[১]
কটক, উড়িষ্যা, নাগপুর রাজ্য, মারাঠা সাম্রাজ্য (বর্তমান কটক, ওড়িশা, ভারত)
ধর্মইসলাম
সামরিক পরিষেবা
যুদ্ধবাংলায় মারাঠা আক্রমণ

মীর হাবিব ইস্পাহানি (?–২৪ আগস্ট ১৭৫২), যিনি মীর হাবিব নামে সমধিক পরিচিত, বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খান এবং সরফরাজ খানের অধীন একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন[১]। ১৭৪০ সালে আলীবর্দী খান সরফরাজ খানকে পরাজিত ও নিহত করে ক্ষমতা দখল করলে তিনি আলীবর্দীর প্রতি ক্ষুদ্ধ হন। ১৭৪১ সালে মারাঠা নেতা প্রথম রঘুজী ভোঁসলে বাংলা আক্রমণ করলে তিনি মারাঠাদের সঙ্গে যোগ দেন এবং পরবর্তী দশ বছরব্যাপী বাংলায় মারাঠাদের আক্রমণাভিযানে মারাঠাদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন[১][২]। ১৭৫১ সালে আলীবর্দীর সঙ্গে মারাঠাদের সন্ধি স্থাপিত হয় এবং সন্ধি অনুযায়ী মীর হাবিব নবাব আলীবর্দীর নামেমাত্র কর্তৃত্বাধীনে উড়িষ্যার নায়েম নাযিম বা প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত হন[১]। ১৭৫২ সালের ২৪ আগস্ট জানুজী ভোঁসলের মারাঠা সৈন্যদের হাতে তিনি নিহত হন[১]

পরিচিতি[সম্পাদনা]

মীর হাবিব পারস্যের ইস্পাহানে (বর্তমান ইস্পাহান, ইরান) জন্মগ্রহণ করেন। এজন্য তিনি 'মীর হাবিব ইস্পাহানি' নামে পরিচিত। তিনি ভাগ্যান্বেষণে বাংলায় আসেন এবং বাংলার নবাব মুর্শিদ কুলি খানের অধীনে চাকরি লাভ করেন[১]

মুর্শিদ কুলি খানের অধীনে কর্মজীবন[সম্পাদনা]

নবাব মুর্শিদ কুলি খানের শাসনামলে 'দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান' নামে পরিচিত জাফর খান রুস্তম জঙ্গ জাহাঙ্গীরনগরের প্রাদেশিক শাসনকর্তা (নায়েব নাযিম) ছিলেন[১]। তিনি ছিলেন মুর্শিদ কুলির জামাতা সুজাউদ্দিন খানের জামাতা। মীর হাবিব দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির অধীনে চাকরি নেন এবং নিজ যোগ্যতাগুণে তাঁর সহকারীর পদমর্যাদা লাভ করেন[১]

সুজাউদ্দিন খানের অধীনে কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৭২৭ সালে মুর্শিদ কুলি খানের মৃত্যুর পর সুজাউদ্দিন খান বাংলার নবাব হন। তিনি দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি এবং মীর হাবিবকে তাঁদের স্ব স্ব পদে বহাল রাখেন[১]

ত্রিপুরা অভিযান[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি মীর হাবিবকে ত্রিপুরা রাজ্য জয় করার জন্য প্রেরণ করেন[১]। পটসপারের জমিদার আগা সাদিক তাঁকে সাহায্য করেন। মীর হাবিব তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে চণ্ডীগড় দুর্গ আক্রমণ করেন। ত্রিপুরার রাজা পলায়ন করেন এবং পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নেন। তাঁর দুর্গ ও রাজধানী মীর হাবিবের হস্তগত হয়[১]। ত্রিপুরার পরাজিত রাজার ভ্রাতুষ্পুত্রকে ত্রিপুরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং আগা সাদিককে সেখানকার ফৌজদার নিযুক্ত করা হয়। মীর হাবিব বিপুল ধনরত্ন ও বহুসংখ্যক হাতি নিয়ে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন[১]। মীর হাবিবের ত্রিপুরা বিজয়ে সন্তুষ্ট হয়ে নবাব সুজাউদ্দিন তাঁকে 'বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত করেন এবং আমিরের মর্যাদা প্রদান করেন[১]

আলীবর্দী খানের অধীনে কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৭৩৯ সালে সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সরফরাজ খান বাংলার নবাব হন। কিন্তু ১৭৪০ সালে বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা আলীবর্দী খান তাঁকে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার মসনদ দখল করেন। আলীবর্দী মীর হাবিবকে স্বপদে বহাল রাখেন, কিন্তু মীর হাবিব আলীবর্দী কর্তৃক তাঁর প্রাক্তন প্রভু সুজাউদ্দিনের পুত্রকে হত্যা করার ঘটনার কারণে আলীবর্দীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। চতুর মীর হাবিব আলীবর্দীর প্রতি অসন্তুষ্ট হলেও বাহ্যিকভাবে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন[১]

বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ও হাবিবের বিশ্বাসঘাতকতা[সম্পাদনা]

মারাঠাদের সঙ্গে যোগদান[সম্পাদনা]

১৭৪১ সাল থেকে মারাঠাদের নাগপুর রাজ্যের রাজা রঘুজী ভোঁসলের মারাঠা বাহিনী বাংলায় হানা দিতে শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলার সমৃদ্ধ অঞ্চলসমূহ লুণ্ঠন এবং বাংলা, বিহারউড়িষ্যা থেকে চৌথ কর আদায় করা। এ উদ্দেশ্যে তারা ১৭৪১ সালে উড়িষ্যা আক্রমণ করে, কিন্তু পরাজিত হয়। ১৭৪২ সালে রঘুজীর প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে তারা আবার বাংলা আক্রমণ করে এবং বর্ধমানমুর্শিদাবাদ অঞ্চলে লুটতরাজ শুরু করে[১]। ১৭৪২ সালের ১৫ এপ্রিল উড়িষ্যা থেকে প্রত্যাবর্তনকালে নবাব আলীবর্দী বর্ধমানের নিকটে মারাঠাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হন। এসময় মীর হাবিব তাঁর বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। সুযোগ বুঝে তিনি নবাবের সৈন্যদল ত্যাগ করে ভাস্কর পণ্ডিতের সঙ্গে যোগদান করেন[১]

মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠন[সম্পাদনা]

অবরুদ্ধ নবাব আলীবর্দী শেষ পর্যন্ত অবরোধ ভেদ করে কাটোয়ায় পৌঁছতে সক্ষম হন[১]। এতে ভাস্কর পণ্ডিত হতাশ হয়ে পড়েন এবং বাংলা ত্যাগ করার সংকল্প গ্রহণ করেন। কিন্তু মীর হাবিবের প্ররোচনায় তিনি অকস্মাৎ নবাবের রাজধানী মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠন করার পরিকল্পনা করেন[১]। তিনি একদল মারাঠা সৈন্যকে মুর্শিদাবাদে প্রেরণ করেন। মারাঠা মুর্শিদাবাদে ব্যাপক হারে লুটতরাজ করে এবং কেবল জগৎ শেঠের কুঠি থেকেই তিন লক্ষ টাকা লুণ্ঠন করে[১]। এরপর শহরের উপকণ্ঠে লুটতরাজ ও ধ্বংসসাধন করে নবাবের আগমনের পূর্বেই ১৭৪২ সালের ৭ মে তারা কাটোয়ায় প্রত্যাবর্তন করে।

হুগলী দখল[সম্পাদনা]

১৭৪২ সালের জুনে মীর হাবিব তাঁর বন্ধুদের সহযোগিতায় হুগলীর মদ্যপ ফৌজদার মুহম্মদ রেজাকে বন্দি করতে সক্ষম হন। হাবিবের সহযোগিতায় মারাঠা সৈন্যরা হুগলী লুণ্ঠন করে ও দখল করে নেয়[১]। শাহ রাও হুগলীর শাসনকর্তা এবং মীর হাবিব এর দিউয়ান নিযুক্ত হন। ক্রমশ গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরবর্তী জেলাগুলোতে মারাঠাদের প্রাধান্য স্থাপিত হয় এবং এ অঞ্চলের জনগণের দুর্দশা চরমে পৌঁছে[১]

মারাঠাদের পশ্চাৎপসরণ[সম্পাদনা]

কাটোয়ার প্রথম যুদ্ধে আলীবর্দী মারাঠাদেরকে পরাজিত করলে মারাঠারা বাংলা থেকে পশ্চাৎপসরণ করে এবং উড়িষ্যায় গমন করে। কিন্তু ১৭৪২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে আলীবর্দী তাদেরকে উড়িষ্যা থেকেও বিতাড়িত করেন। ফলে মীর হাবিবকে পালিয়ে নাগপুরে আশ্রয় নিতে হয়[১][২]

১৭৪৩ ও ১৭৪৪ সালের অভিযান[সম্পাদনা]

১৭৪৫ সালের অভিযান[সম্পাদনা]

মুর্শিদাবাদ আক্রমণের প্রচেষ্টা[সম্পাদনা]

মেদিনীপুরে পশ্চাৎপসরণ[সম্পাদনা]

মারাঠা বাহিনীর অগ্রগতি[সম্পাদনা]

বর্ধমানের যুদ্ধ[সম্পাদনা]

আফগান বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

পরাজয়[সম্পাদনা]

১৭৪৯ সালের অভিযান[সম্পাদনা]

উড়িষ্যা অধিকার[সম্পাদনা]

মারাঠা বাহিনীর অগ্রগতি[সম্পাদনা]

পশ্চাৎপসরণ[সম্পাদনা]

সন্ধি[সম্পাদনা]

উড়িষ্যার নায়েব নাযিম পদলাভ ও মৃত্যু[সম্পাদনা]

পরিবার[সম্পাদনা]

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম, (বাংলাদেশের ইতিহাস), পৃ. ২৮৪–৩০২
  2. মোহাম্মদ শাহ (২০১২)। "মারাঠা হামলা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743