আহসান উল্লাহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আহসান উল্লাহ
জন্ম২ ডিসেম্বর, ১৯৪২
মৃত্যু৭ জুলাই, ২০০৭
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

আহসান উল্লাহ (জন্ম: ২ ডিসেম্বর, ১৯৪২ - মৃত্যু: ৭ জুলাই, ২০০৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আহসান উল্লাহ’র জন্ম ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আহমেদপুর গ্রামে। বাবার নাম আমিন উল্লাহ এবং মায়ের নাম জরিফা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম নূরজাহান বেগম। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন আহসান উল্লাহ। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে প্রশিক্ষণে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফ্রান্স থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট মোংলা বন্দরে রাত পৃথিবীর বিখ্যাত যুদ্ধের ইতিহাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌকমান্ডো অপারেশনের গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায়। দুঃসাহসিকতাপূর্ণ এই অভিযান তখন গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় মুক্তিযোদ্ধারা। মোংলা বন্দরে আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে ৪০ জন নৌকমান্ডো অংশ নেন। মুক্তিবাহিনীর নৌকমান্ডো দলের একটি উপদলের দলনেতা আহসান উল্লাহ খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিজের কাছে থাকা ছোট রেডিও অন করলেন। আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রটি অন করে কান পেতে থাকলেন। এই কেন্দ্রে একটি গান বাজার কথা। সেটা শুধু তিনিই জানেন। ঠিক যখন সাড়ে সাতটা, তখন তিনি শুনতে পেলেন তার সেই কাঙ্ক্ষিত গান: ‘আমার পুতুল আজকে যাবে প্রথম শ্বশুরবাড়ি।’ গানটি শুনে আহসান উল্লাহ আর দেরি করলেন না। দ্রুত সহযোদ্ধা নৌকমান্ডোদের একত্র করে জানালেন, আজ রাতেই হবে তাদের প্রতীক্ষিত অপারেশন। তারপর আবেগময় কণ্ঠে সবাই শপথবাক্য পাঠ করলেন। এরপর সারা দিন গোপন শিবিরে উৎকণ্ঠায় কাটল। সন্ধ্যায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাতে রওনা হলেন লক্ষ্যস্থলে। গোপন শিবির থেকে লক্ষ্যস্থল পাঁচ-ছয় কিলোমিটার দূরে। মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্যস্থলে যখন পৌঁছালেন, তখন ভোর সাড়ে চারটা। তার সহযোদ্ধারা দ্রুত বুকে মাইন বেঁধে নিলেন। তারপর পায়ে ফিনস পরে নিঃশব্দে নেমে পড়লেন পানিতে। পশুর নদীতে জাহাজ ছড়িয়ে আছে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে। পানিতে নেমে নৌকমান্ডোরা ছড়িয়ে পড়লেন জাহাজগুলো লক্ষ্য করে। কোনো জাহাজের জন্য দুজন, কোনো জাহাজের জন্য একজন। নদীতে বড় বড় ঢেউ আর বিশালাকার শোঁ শোঁ শব্দে গড়িয়ে যাচ্ছে নৌকমান্ডোদের নাক-মুখের ওপর দিয়ে। অন্যদিকে বন্দরের সার্চলাইটের আলো সমানে ঘুরছে নদীর ওপর। কোনো কোনো জাহাজেরও সার্চলাইট জ্বালানো। আলোর ঝলকানির মধ্যে এগিয়ে যেতে থাকেন তারা। নৌকমান্ডোরা সফলতার সঙ্গে বেশির ভাগ জাহাজে লিমপেট মাইন লাগালেন। তারপর সময়ক্ষেপণ না করে সাঁতার কেটে চলে গেলেন নিরাপদ স্থানে। তখন ভোর আনুমানিক সাড়ে পাঁচটা বা পৌনে ছয়টা। মাঝনদীতে প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটল বিকট শব্দে। দু-তিন মিনিট পর আরেকটি। তারপর নদীতে শুরু হলো লঙ্কাকাণ্ড। একনাগাড়ে সাত-আট মিনিট ধরে একটির পর একটি মাইন বিস্ফোরণ। ৩৫-৪০টি মাইনের কান ফাটানো শব্দে বন্দরে অবস্থানরত আতঙ্কিত পাকিস্তানি সেনারা ছোটাছুটি করতে থাকল। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১২-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৩৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২০৪। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]