শুন্যস্থানের ঈশ্বর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(শুন্যতায় ঈশ্বর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
এএআই কর্তৃক অনুমোদিত নাস্তিকতার প্রতীক

শুন্যতায় ঈশ্বর (ইংরেজি: God of the gaps) হচ্ছে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা এমন এক দৃষ্টিকোণ; যার মাধ্যমে বলা হয় বিজ্ঞান এখনো অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে পারে নি। অর্থাৎ বিজ্ঞানের সকল জ্ঞান ব্যবহার করেও সবকিছু ব্যাখ্যা করা যায় না। আর যা ব্যাখ্যা করা যায় না, তাতেই আমাদের জ্ঞানের ঘাটতি আর এই ঘাটতি বা শুন্যস্থানকেই ঈশ্বর দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। এই প্রক্রিয়াটি খ্রিষ্টান ধার্মিকদের মস্তিষ্কপ্রসূত। এর মাধ্যমে তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ দেন। [১][২] কেও কেও এই বুলিকেই ধর্মের সমালোচনা হিসেবে ব্যবহার করে বর্ণনায় বলে, যা সাম্প্রতিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারছে না, সেখানেই অযাচিতভাবে ঈশ্বরকে টেনে আনা হয়।

এই বিতর্কের বিভিন্ন প্রয়োগ[সম্পাদনা]

'God-of-the-gaps' নামক মতবাদের সফল প্রয়োগ করা হয় সেসব ক্ষেত্রে যার ব্যাখ্যা মানুষের কাছে নেই।[৩][৪] উদাহরণস্বরুপ: আগেকার দিনে মানুষ মনে করত, আকাশ থেকে পরা শিলাবৃষ্টি, ঈশ্বর শয়তানকে উদ্দেশ্য করেই ছুড়ে মারেন। অনেকদিনের অব্যবহার্য পুকুরে হঠাৎ করে জ্বলে উঠা আগুনের অর্থ হলো, এর নিচে নরক আছে,শরীরে জ্বর জ্বর অনুভূত হওয়ার অর্থ হলো, দোজখের তাপ। অথচ এসব বিষয় মানুষ তার অজ্ঞতার কারণেই জানত না, কিন্তু আজ বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ এর যথার্থ ব্যাখ্যা জানতে পারছে। 'গড অব দ্য গ্যাপস' কে বর্তমানে যেসব বিষয়ের যথার্থ ব্যাখ্যা বিজ্ঞানের কাছে নেই সেখানেই প্রয়োগ করা হয়। অথচ এর জন্য মুলত দায়ী মানুষের অজ্ঞতা, যা আজ হোক বা কাল নিশ্চয়ই দূরীভূত হবে। মুলত গড অব দ্য গ্যাপসের প্রবক্তারা যে কয়েকটা বিষয় অনুসরণ করে, তার সংক্ষিপ্ত রুপ নিচে উল্লেখ করা হল:

  • আমাদের পরিচিত এই দুনিয়াকে বুঝার যে জ্ঞান তা সম্পূর্ণ নয়, এই জ্ঞানের মাঝখানে মাঝখানে শুন্যতা আছে।
  • এই শুন্যতাকে পুর্ণতা দেওয়া যায়, যদি সেসব খালিজায়গায় অলৌকিক শক্তির আনয়ন করা হয়। এই ধরনের বাদানুবাদের সময় একটি উদাহরণ ব্যবহার করা হয়,যেমন: জীববিজ্ঞান দ্বারা প্রাপ্ত জ্ঞানে যে শুন্যতা আছে, সেখানে ঈশ্বর হচ্ছে সে শুন্যস্থানকে পুর্ণ করে দেওয়ার একমাত্র ব্যাখ্যা। আরও বলা হয়" সাম্প্রতিক বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না কীভাবে জীবন শুরু হল, অতএব জীবন তৈরীর একমাত্র কারণ অবশ্যই ঈশ্বর।" intelligent design creationism এর সমালোচকরা, এই বিষয়ের তীব্র সমালোচনা করেন।[৫]

God-of-the-gaps নামক এ মতবাদকে অনেক ধর্মতত্ববিদ দ্বারা নিরুৎসাহিত করা হয়। তাদের মতে যেসব ঘটনাকে god of the gaps নামক মতবাদের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়, পরবর্তীতে বিজ্ঞানের দ্বারা যদি অন্য ব্যাখ্যা বের হয়ে আসে, তাহলে ঈশ্বরের প্রতি মানুষের বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভাবে উঠে যাবে।[৬][৭][৮][৯]

সমালোচনা[সম্পাদনা]

মানুষ এর ব্যাপক সমালোচনা করে, কারণ বেশিরভাগ মানুষের মতে যে বিষয় বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করতে পারে না, সেখানেই ঈশ্বরকে নিয়ে আসার মাধ্যমে ঈশ্বরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে।[১০] এই মতবাদের মাধ্যমে যে সব বিষয়ে মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নেই, সেখানেই ঈশ্বরকে আনয়ন করে তার ব্যাখ্য দেওয়া হয়, কিন্তু পরবর্তীতে যদি সে বিষয়ের উপর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া যায়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ঈশ্বরকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়।[১১]

খ্রিষ্ঠান বিদ্বসমাজের দ্বারা গড-অব-দ্য গ্যাপসের সমালোচনা আরও গতি পায়।[৬][১২][১৩][improper synthesis?]

জন হাবগুড, খ্রিষ্টান ধর্মীয় শব্দকোষ (Dictionary of Christian Theology) সভাপতি বলেছেন, এই মতবাদ স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিকর, কারণ যে কোনো প্রাকৃতিক ঘটনাকেই মানুষ যাচাই বাছাই না করে তা ঈশ্বরের কাজ বলে মনে করে থাকে, যদিও হয়তো বিজ্ঞানের কাছে এর সন্তোষজনক ব্যাখ্যা আছে।[১৪]

বিজ্ঞানী এবং অনেক ধার্মিকরাই মনে করেন বিজ্ঞানের যে জ্ঞানের পরিব্যাপ্তি, তার মাঝে ছোট ছোট শুন্যতার মধ্যে ঈশ্বরকে অনুভব করা প্রতারণা মুলক অনুচিত কাজ। রিচার্ড ডকিন্স, তার বই দ্যা হড ডিল্যুশন এর একটি প্রচ্ছদ পরিপূর্ণ ভাবে উৎসর্গ করেন গদ-অব-গ্যাপ্স এর উদ্দেশ্যে। তিনি প্রছদটির মাধ্যমের তাদের সমালোচনা করেন। ফ্রান্সিস কলিন্সের মত বিজ্ঞানি, যিনি ধর্মীয় বিশ্বাসকে আকড়ে ধরে রেখেছেন, তিনিও এই মতবাদকে প্রত্যাখান করেছেন। যদিও তিনি পরিকল্পিত মহাবিশ্বের তত্ত্বে বিশ্বাসী [১৫][অনির্ভরযোগ্য উৎস?]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Henry Drummond (১৯০৪)। The Ascent of Man  p. 333.
  2. উদাহরণের জন্য দেখুন "Teleological Arguments for God's Existence" in the Stanford Encyclopedia of Philosophy.
  3. Michael Shermer (2003) How We Believe: Science, Skepticism, and the Search for God, p 115 ff.
  4. Robert Larmer, "Is there anything wrong with 'God of the gaps' reasoning?" International Journal for Philosophy of Religion, Volume 52, Number 3 / December, 2002, p 129 ff.
  5. See, e.g., Mark Isaak (2006) The Counter-Creationism Handbook pp x, 11–12, 35.
  6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Dietrich Bonhoeffer 1953 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  7. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Charles Alfred Coulson 1955 p 20 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  8. Thomas Dixon "Science and Religion: A Very Short Introduction" p. 45
  9. Man Come Of Age: Bonhoeffer’s Response To The God-Of-The-Gaps, Richard Bube, 1971
  10. Larmer, Robert (2002). Is there anything wrong with “God of the gaps” reasoning? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে. International Journal for Philosophy of Religion. Kluwer Academic Publishers. Netherlands. 52: 129–142.
  11. God of the gaps — Science & Theology
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Religion p. 45 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  13. Charles Alfred Coulson (1955) Science and Christian Belief, p 20.
  14. The Westminster Dictionary of Christian Theology (Ed. Alan Richardson, John Bowden, 1983), p 242 [১]
  15. "Are gaps in scientific knowledge evidence for God?"Biologos। The BioLogos Foundation। ৬ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ৬, ২০১৫