বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প বর্তমানে দেশটির দ্রুত বর্ধনশীল এবং সম্ভাবনাময় শিল্পখাত। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছেঃ ওয়ালটন, মার্সেল, মিনিস্টার, ভিসন ইত্যাদি।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে ১৯৩০ সালে ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রাংশের ব্যবহার শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনী তাদের প্রয়োজনে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রেডিও স্টেশন, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এবং তারহীন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা শুরু করে এবং এর মাধ্যমেই ব্রিটিশ ভারতে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে আধুনিক প্রযুক্তির পরিচয় ঘটে।

১৯৫০ সালে বেসরকারি পর্যায়ে ইলেক্ট্রনিক শিল্পের যাত্রা শুরু হয় এবং শুরুর দিকে কিছু কারখানা সীমিত সংখ্যক রেডিও তৈরি করার মধ্য দিয়ে এই শিল্পে প্রবেশ করে। ষাটের দশকে আরও প্রতিষ্ঠান এতে যুক্ত হয় এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকাতে প্রথম টেলিভিশন স্টেশন প্রতিষ্ঠার পর কিছু প্রতিষ্ঠান টেলিভিশন সেট বানানো শুরু করে।[২] ডিজিটাল টেলিফোন সিস্টেমের সাথে মানুষ প্রথম পরিচিত হয় ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯২ সালে প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে আসে। ১৯৮০ সালের আগে ওয়ান-ব্যান্ড রেডিও ব্যতীত অধিকাংশ ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানি করা হত। তবে ১৯৮০ সালের পরে অনেক কারখানা রেডিও, টেলিভিশন, অডিও-ভিডিও রেকর্ডার ও প্লেয়ার এর বিভিন্ন অংশ জোড়া দেয়ার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।

১৯৯০ সালে উন্নত পণ্য যেমনঃ কম্পিউটার, তারবিহীন টেলিফোন, স্যাটেলাইট টিভি সিগন্যাল গ্রহণকারী সরঞ্জাম ইত্যাদি পণ্য দেশেই বিভিন্ন অংশ জোড়া দেয়া শুরু হয় এবং কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ দেশেই উৎপাদন শুরু হয়। এই সময়ের মাঝে বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দেশেই অনেক পন্যের বিভিন্ন অংশ জোড়া দেয়া ও উৎপাদনের কাজ শুরু করে। এতে অনেক স্থানীয় প্রতিষ্ঠান এসব বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগ দিয়ে সমন্বিত হয়ে কাজ শুরু করে। বর্তমানে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ষাটের অধিক। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে কিছু দেশি প্রতিষ্ঠান দেশে তৈরি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক পণ্য রফতানি করে আসছে। এদের মাঝে ওয়ালটন অন্যতম।[৩][৪][৫] এছাড়া রোবটিকস ও অটোমেশনের জন্য টেকশপ বিডি এর মতো ইলেকট্রনিক্স উৎপাদক ও বিক্রেতা তৈরি হয়েছে।[৬]

বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন কারখানা[সম্পাদনা]

ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স-স্যামসাং যৌথ কারখানার চিত্র
ক্রম উৎপাদনকারী কারখানার স্থান উৎপাদিত পণ্য
ওয়ালটন কালিয়াকৈর উপজেলা, গাজীপুর গৃহস্থালী সামগ্রী, স্মার্টফোন, ফিচার ফোন, কম্পিউটার, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, চার্জার ও গ্যাসের চুলা
স্যামসাং (ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) শিবপুর উপজেলা, নরসিংদী গৃহস্থালী সামগ্রীস্মার্টফোন
স্যামসাং (ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) মহাখালী, ঢাকা টেলিভিশন
মিনিস্টার হাই-টেক পার্ক গাজীপুর

ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

গৃহস্থালী সামগ্রী
যমুনা ইলেকট্রনিক্স ও মোটরগাড়ি গাজীপুর গৃহস্থালী সামগ্রী
সনি (র‍্যাংগস ইলেকট্রনিক্স এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, সিলেট টেলিভিশন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, রেফ্রিজারেটরগৃহস্থালী সামগ্রী
এলজি (বাটারফ্লাই গ্রুপ এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) ভালুকা উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলা টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটর
ভিশন ইলেকট্রনিক্স নরসিংদী টেলিভিশন, ও গৃহস্থালী সামগ্রী
র‌্যানকন অ্যাস্ট্রা টোশিন টোশিবা ভবানীপুর, কাশিমপুর, গাজীপুর জেলা টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরগৃহস্থালী সামগ্রী
১০ সিম্ফনি মোবাইল (এডিসন গ্রুপ) স্মার্টফোন, ফিচার ফোন ও চার্জার
১১ অপো ভোগড়া, গাজীপুর স্মার্টফোন
১২ ভিভো (প্রযুক্তি কোম্পানি) রূপগঞ্জ উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ স্মার্টফোন
১৩ রিয়েলমি ভোগড়া, গাজীপুর স্মার্টফোন
১৪ এমএনএইচ ইনডাস্ট্রিজ লিমিটেড বরিশাল, বরিশাল টেলিভিশন ও রেফ্রিজারেটর
১৫ সিঙ্গার বাংলাদেশ সাভার, ঢাকা[৭] গৃহস্থালী সামগ্রী
১৬ টেকশপ বাংলাদেশ লিমিটেড মতিঝিল, ঢাকা[৮] রোবটিক্সইলেকট্রনিক্স
১৭ ৫ স্টার মোবাইল (আল-আমিন ব্রাদার্স)[৯] গাজীপুর জেলা স্মার্টফোনফিচার ফোন
১৮ শাওমি, রেডমিপোকো (ডিবিজি টেকনোলজি বিডি লিমিটেড এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) গাজীপুর স্মার্টফোন
১৯ নকিয়া-এইচএমডি (ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার এর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে) বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, গাজীপুর[১০] স্মার্টফোনফিচার ফোন
২০ ট্রান্সন হোল্ডিং ভোগড়া, গাজীপুর স্মার্টফোন
২১ মিয়াকো প্লট ৫০, সেক্টর ৩, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০ গৃহস্থালী সামগ্রী
২২ হাইকো (ইলেকট্রনিক মার্ট) সোনারগাঁও উপজেলা টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ও গৃহস্থালী সামগ্রী
২৩ প্রোটন (প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ)[১১] পলাশ উপজেলা, নরসিংদী ফিচার ফোনস্মার্টফোন

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Bangladesh has huge potentials in electronic goods, ICT sectors | Business and Finance | natunbarta.com | Top Online Newspaper in Bangladesh"। natunbarta.com। ২০১৩-০৪-১৭। ২০১৩-১২-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩০ 
  2. Transfer, Adoption and Diffusion of Technology for Small and Cottage Industries - Rizwanul Islam - Google Books। Books.google.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-৩০ 
  3. IFC-SEDF stufy report on Electronics and Electrical sector
  4. Report of the Electronic-subcommittee of National SME Taskforce, 2006
  5. KS Rabbani, Economic Policy Paper on electronics enterprise in Bangladesh, prepared under DCCI - CIPE project 2005
  6. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "রোবটের প্রতি ভালোবাসা!"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. "Singer begins manufacturing washing machines in Bangladesh"New Age। ১১ মে ২০২১। 
  8. রোবটের প্রতি ভালোবাসা!Prothom Alo। ১২ মার্চ ২০১৬। 
  9. Islam, Muhammad Zahidul (২০১৮-১০-১২)। "5th mobile assembly plant opens today"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-২১ 
  10. দেশে নকিয়ার উৎপাদন শুরু, করবে শাওমিওDaily Manobkantha। ২০২১-১০-১২। 
  11. "Pran-RFL's smartphone coming soon"Dhaka Tribune (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-০৯-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৯-২৩