কর্তাভজা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কর্তাভজা হচ্ছে আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদসুফিবাদ থেকে উদ্ভূত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায়। এ মতবাদের মূল গুরু হচ্ছেন আউলচাঁদ[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আউলচাঁদের জন্ম ইংরেজির ১৬৮৬ খ্রিস্টাব্দে। আউলচাঁদের ২২ জন শিষ্যের মধ্যে প্রধান ৮ জন শিষ্য রামশরণ পালের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্তাভজা ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান, যা পরবর্তী সময়ে সতী মায়ের মন্দির নামে সবার কাছে পরিচিত। রামশরণ পালের স্ত্রীর নাম সরস্বতী, যার নামেই এই মন্দির- “সতী মায়ের মন্দির”(সরস্বতী-র প্রথম অক্ষর ‘স‘ আর শেষ অক্ষর ‘তী‘)। যিনি রামশরণ পালের মৃত্যুর পর কর্তাভজা সম্প্রদায়কে দিশা দেন।

অভ্যাস এবং বিশ্বাস[সম্পাদনা]

কর্তাভজা সম্প্রদায় মূর্তিপূজা এবং সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক যাগযজ্ঞের বিরোধী। দেহেরকামই তাদের কাছে মুখ্য। এ প্রসঙ্গে কর্তাভজা প্রচারক দুলাল চাঁদ রচিত ভাবের গীতে বলা হয়েছে—– “আছে মানুষে মানুষে যার ভেদাভেদ জ্ঞান, সে রাজ্য গমনে তার মিলবে না সন্ধান” উক্ত ভাবের গীত থেকে বোঝা যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজনে মানবসেবার প্রসঙ্গটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে ভাবের গীতে আরও বলা হয়েছে—– “ মানুষ ভজ, মানুষ চিন, মানুষ কর সার, সকলি মানুষের খেলা মানুষ বই নাই আর”

কর্তাভজা সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য যেমন আছেন তেমনি আছেন মুসলমান গুরুর হিন্দু শিষ্য। গুরুকে এরা মহাশয় এবং শিষ্যকে বরাতি বলে। এ সম্প্রদায়ে নারী পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয়না। একারণে গুরুদেবের ভূমিকায় নারী পুরুষ উভয়কেই দেখা যায়। একইভাবে এরা বাউল সম্প্রদায়ের মত জাতিভেদ প্রথা মানেনা। দুলাল চাঁদের ভাবের গীতে তাই আরও বলা হচ্ছে—- “ভেদ নাই মানুষে মানুষে, খেদ কেন ভাই এদেশে”

সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দর্শনের সন্ধান পাওয়া যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে। এ বিষয়ে কবি নবীন চন্দ্র সেনের বক্তব্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য। তাঁর মতে, কর্তাভজা সম্প্রদায়ে কোন জাতিভেদ নাই। সকলেই এক রন্ধনশালার পাক গ্রহণ করে। স্পর্শ দোষ এদের কাছে মুখ্য নয়। মানুষ হয়ে বর্বতার ভূমিকায় থাকা যাবেনা এটিই এদের কাছে মুখ্য বিবেচ্য বিষয়।

কর্তাভজাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গুরুদেবের পুত্র অযোগ্য হলে তারা তাকে গুরু নির্বাচন করতে চায়না তাদের আইন পুস্তক ভাবের গীতে এ প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিই গুরুদেব হবার অধিকারী। এ জায়গায় কর্তাভজা সম্প্রদায় বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]