ব্যবহারকারী:Ahm masum/খেলাঘর১৬

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইসলামে ধর্মীয় গুরুত্ব[সম্পাদনা]

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত: আমি বললাম, "হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মাসজিদ তৈরী করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি বললাম, অতঃপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা। আমি বললাম, উভয় মসজিদের (তৈরীর) মাঝে কত ব্যবধান ছিল? তিনি বললেন, চল্লিশ বছর। অতঃপর তোমার যেখানেই সালাতের সময় হবে, সেখানেই সালাত আদায় করে নিবে। কেননা এর মধ্যে ফযীলত নিহিত রয়েছে।"

সহীহ বুখারী:খণ্ড ৮, বই ৫৫ ,হাদিস নংঃ ৫৮৫ [১][২][৩]

ইসলামে আল-আকসা মসজিদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম অণুযায়ী এটি পৃথিবীতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ যা মসজিদুল হারামের পরে নির্মিত হয়। কুরআনে মিরাজের ঘটনা উল্লেখ করার সময় এই স্থানের নাম নেয়া হয়েছে।রাশিদুন খিলাফত এর পরেও ইসলামি পণ্ডিতরা একে ঐতিহ্যগতভাবে "আল-ইসরা " বলে উল্লেখ করত (যেহেতু সূরা বনী ইসরাঈল (রাত্রির যাত্রা) এ এটিকে উল্লেখ করা হয়েছিল) । এই সুনির্দিষ্ট আয়াতটি ইসলামে "আল-আকসা" এর গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।[৪] এই সুনির্দিষ্ট আয়াতটিতে বলা হয়েছে " পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতারাতি ভ্রমণ করিয়েছেন (মক্কার) মাসজিদুল হারাম হতে (ফিলিস্তীনের) মাসজিদুল আকসায় "। এই আয়াতটির অনুবাদ ও ব্যাখ্যায় প্রায় সব পণ্ডিতই সুনির্দিষ্টভাবে "আল-আকসা" ও "মসজিদ আল-হারাম" উল্লেখ করেছেন এবং বর্ণিত "আল- আকসা" টি যে "জেরুজালেমে " অবস্থিত "আল-আকসা" টিই তা নিশ্চিত করেছেন (ড. মুজিবুর রহমান , শায়েখ আব্দুল হামিদ ফাইজী ও অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের বঙ্গানুবাদেও তাই )।[৫] দূরত্বকে বলা হয় ( أَقْصَى)। ‘আল-বাইতুল মুকাদ্দাস’ বা ‘বাইতুল মাকদিস’ ফিলিস্তীন বা প্যালেষ্টাইনের কদস অথবা জেরুজালেম বা (পুরাতন নাম) ঈলীয়া শহরে অবস্থিত। মক্কা থেকে ক্বুদ্‌স চল্লিশ দিনের সফর। এই দিক দিয়ে মসজিদে হারামের তুলনায় বায়তুল মাকদিসকে ‘মাসজিদুল আকসা’ (দূরতম মসজিদ) বলা হয়েছে। [৬]

একটি সিরিজের অংশ
মসজিদ

স্থাপত্য
স্থাপত্য শৈলী
মসজিদের তালিকা
অন্যান্য


ইসরা ও মিরাজ[সম্পাদনা]

কুরআন ও ইসলামি বিবরণ অণুযায়ী আল-আকসা মসজিদে মুহাম্মদ (সা) মিরাজের রাতে বোরাকে চড়ে এসেছিলেন এবং এখান থেকে তিনি ঊর্ধ্বাকাশের দিকে যাত্রা করেন।[৭] তিনি এখানে নামাজ পড়েন এবং তার পেছনে অন্যান্য নবী রাসুলগণ নামাজ আদায় করেন। ফেরেশতা জিব্রাইল পুরো যাত্রায় তার সাথে ছিলেন।[৮][৯][১০]

প্রথম কিবলা[সম্পাদনা]

ইসলামে আল-আকসা মসজিদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম দিকে মুসলিমরা এই স্থানকে কিবলা (দিক) হিসেবে ব্যবহার করত।[১১] হিজরতের পরে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হওয়ায় এর পরিবর্তে কাবা নতুন কিবলা হয়।[১২][১৩] মসজিদ আল কিবলাতাইনে নামাজের সময় এই আয়াত নাজিল হয়।[১৪] [১৫] এরপর থেকে কাবা কিবলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[১৬] প্রথম দিকের মুফাসসিরদের (কুরআনের ব্যাখ্যাকারী) মতে , ৬৩৮ সালে জেরুজালেম বিজয়ের পর উমর ( রাঃ ) প্রবেশের সময় কাব আল আহবারের থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন (মসজিদ তৈরির জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা কোনটি হতে পারে)। তিনি ছিলেন একজন ইহুদী থেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত ব্যাক্তি যিনি মদিনা থেকে তার সাথে এসেছিলেন । তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এটি কুব্বাত আস-সাখরার ((ডোম অব দ্য রক) পেছনে হওয়া উচিৎ "...... এর ফলে গোটা জেরুজালেম আপনার সামনে থাকবে "। উমর (রাঃ) প্রত্যুত্তর দিলেন ,  " তোমার মত ইহুদীবাদের সাথে মিলে গেছে  !" । এই কথোপকথনের পরপরই  উমর (রাঃ) একটি স্থান পরিষ্কার করতে শুরু করলেন । যেটি আবর্জনা ও রাবিশে পরিপূর্ণ ছিল । তিনি তার জোব্বাটি ব্যাবহার করলেন এবং অন্য সাহাবারা তাকে অনুকরণ করল যতক্ষণ না জায়গাটি পরিষ্কার হয়েছিল । উমর (রাঃ) এরপর সেই স্থানে নামাজ পড়লেন যেখানে নবী (সাঃ) মেরাজের পূর্বে নামাজ পড়েছিলেন বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকে ।[১৭] বর্ণনা অনুসারে উমর (রাঃ) সেই স্থানটিকে মসজিদ হিসেবে পুনঃনির্মাণ করেছিলেন ।[১৮]

যেহেতু দাউদ (আঃ) ও সুলাইমান (আঃ) এর প্রার্থনার স্থান হিসেবে পূর্ব থেকেই এটি একটি পবিত্র উপাসনার স্থান ,তাই উমর (রাঃ) স্থাপনাটির দক্ষিণস্থ কোনে এটি নির্মাণ করেন । যাতে কুব্বাত আস-সাখরা ((ডোম অব দ্য রক) মসজিদটি ও ক্বাবার মধ্যস্থানে না পড়ে যায় এবং মুসলমানরা নামাজের সময় একমাত্র মক্কার দিকেই মুখ করতে পারে । [১৯]

ধর্মীয় মর্যাদা[সম্পাদনা]

জেরুজালেম ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান। কুরআনের অনেক আয়াতই জেরুজালেমকে নির্দেশ করেছে যার কথা একদম শুরুর দিকের ইসলামি পণ্ডিতরাও বলেছেন ।[২০] "জেরুজালেম " এর কথা হাদিসেও অনেকবার উল্লেখ করা হয়েছে ।এখানে অবস্থিত মসজিদুল আকসা ইসলামে তৃতীয় সম্মানিত মসজিদ । এবং একথা মধ্যযুগের অনেক লিপিতেও উল্লেখ করা হয়েছে ।[২১] নবী (সাঃ) বলেছেন "একজন লোক ঘরে নামাজ পড়লে একটি নেকি পান, তিনি ওয়াক্তিয়া মসজিদে পড়লে ২৫ গুণ, জুমা মসজিদে পড়লে ৫০০ গুণ, মসজিদে আকসায় পড়লে ৫০ হাজার গুণ, আমার মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে পড়লে ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদুল হারাম বা কাবার ঘরে পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাবেন। (ইবনে মাজা, মিশকাত) ।[২২] ধর্মীয় কারণে যে তিনটি স্থানে সফরের কথা মুহাম্মদ (সা) বলেছেন এই স্থান তন্মধ্যে অন্যতম। বাকি দুটি স্থান হল মসজিদুল হারামমসজিদে নববী।অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশান (ওআইসি) , ইসলামে তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসেবে আল-আকসা মসজিদকে বোঝায় ( এবং এর উপর আরবদের সার্বভৌম কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি করে )। [২৩]


  1. সহীহ বুখারী, ৫:৫৮:২২৬ (ইংরেজি)
  2. "A history of the Al Asqa Mosque"Arab World Books (ইংরেজি ভাষায়)। 
  3. "Bangla Hadith - অধ্যায়ঃ ৬০/ আম্বিয়া কিরাম ('আঃ)|সহীহ বুখারী (তাওহীদ)"হাদিস নম্বরঃ ৩৩৬৬;প্রকাশনীঃ তাওহীদ পাবলিকেশন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১০ 
  4. "Meraj Article"duas.org (ইংরেজি)
  5. Meri and Bacharach, 2006, p.50 (ইংরেজি)
  6. "তাফসীরে আহসানুল বায়ান,অনুবাদঃ শায়েখ আব্দুল হামিদ ফাইজী-সুরাঃ আল-ইসরা/Al-Isra/سورة الإسراء"Bangla Hadith [বাংলা হাদিস]। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১২-১৭ 
  7. Richard C. Martin, Said Amir Arjomand, Marcia Hermansen, Abdulkader Tayob, Rochelle Davis, John Obert Voll, সম্পাদক (২ ডিসেম্বর ২০০৩)। Encyclopedia of Islam and the Muslim World (ইংরেজি ভাষায়)। Macmillan Reference USA। পৃষ্ঠা 482। আইএসবিএন 978-0-02-865603-8 
  8. Religion and the Arts, Volume 12. 2008. p. 329-342 (ইংরেজি)
  9. Vuckovic, Brooke Olson (৩০ ডিসেম্বর ২০০৪)। Heavenly Journeys, Earthly Concerns: The Legacy of the Mi'raj in the Formation of Islam (Religion in History, Society and Culture) (ইংরেজি ভাষায়)। Routledgeআইএসবিএন 978-0-415-96785-3 
  10. সহীহ বুখারী, ৯:৯৩:৬০৮ (ইংরেজি)
  11. Buchanan, Allen (২০০৪)। States, Nations, and Borders: The Ethics of Making Boundaries (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-52575-6। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০০৮ 
  12. Buchanan, Allen (২০০৪)। States, Nations, and Borders: The Ethics of Making Boundaries (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-52575-6। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুন ২০০৮ 
  13. Shah, 2008, p.39. (ইংরেজি)
  14. Raby, 2004, p.298. (ইংরেজি)
  15. Patel, 2006, p.13. (ইংরেজি)
  16. Asali, 1990 (ইংরেজি ভাষায়) , p.105.
  17. Mosaad, Mohamed. Bayt al-Maqdis: An Islamic Perspective pp.3–8 (ইংরেজি)
  18. The Furthest Mosque, The History of Al – Aqsa Mosque From Earliest Times Mustaqim Islamic Art & Literature. 5 January 2008. (ইংরেজি)
  19. Mosaad, Mohamed. Bayt al-Maqdis: An Islamic Perspective pp.3–8 (ইংরেজি)
  20. el-Khatib, Abdallah (১ মে ২০০১)। "Jerusalem in the Qur'ān"British Journal of Middle Eastern Studies (ইংরেজি ভাষায়)। 28 (1): 25–53। ডিওআই:10.1080/13530190120034549। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০০৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  21. Doninger, Wendy (১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯)। Merriam-Webster's Encyclopedia of World Religions (ইংরেজি ভাষায়)। Merriam-Webster। পৃষ্ঠা 70। আইএসবিএন 0-87779-044-2 
  22. Important Sites: Al-Aqsa Mosque (ইংরেজি)
  23. "Resolution No. 2/2-IS"Second Islamic Summit Conference (ইংরেজি ভাষায়)। Organisation of the Islamic Conference। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪। সংগ্রহের তারিখ ১৭ নভেম্বর ২০০৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]