ছাঁচনপাত্তি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ছাঁচনপাত্তি
Autumn Leaf
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: সন্ধিপদী
শ্রেণী: পতঙ্গ
বর্গ: লেপিডোপ্টেরা
পরিবার: Nymphalidae
গণ: Doleschallia
প্রজাতি: D. bisaltide
দ্বিপদী নাম
Doleschallia bisaltide
(Cramer, 1777)

আকার[সম্পাদনা]

ছাঁচনপাত্তির প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৭৫-৮৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[১]

উপপ্রজাতি[সম্পাদনা]

ভারতে প্রাপ্ত ছাঁচনপাত্তির উপপ্রজাতিসমূহ হল-[২]

  • Doleschallia bisaltide malabarica Fruhstorfer, 1899 – Malabar Autumn Leaf
  • Doleschallia bisaltide indica Moore, 1899 – Himalayan Autumn Leaf
  • Doleschallia bisaltide andamanensis Fruhstorfer, 1899 – Andaman Autumn Leaf

বিস্তার[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির প্রজাপতিদের সিকিম, দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা[৩], আসাম, মায়ানমার অঞ্চলে পাওয়া যায়।[৪]

আন্দামান ছাঁচনপাত্তি[সম্পাদনা]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

আন্দামান ছাঁচনপাত্তি উপপ্রজাতি (বৈজ্ঞানিক নাম:Doleschallia bisaltide andamanensisFruhstorfer,1899) ভারতীয় ছাঁচনপাত্তি উপপ্রজাতির (বৈজ্ঞানিক নাম:Doleschallia bisaltide indica Moore,1890 এর প্রায় অনুরূপ বলা চলে। পার্থক্য বলতে যেটা প্রথমেই চোখে পড়ে তা হল, আন্দামান ছাঁচনপাত্তি প্রজাতির সামনের ডানার উপরিতলের তীর্যক হলুদ বন্ধনীটি অপেক্ষাকৃত চওড়া এবং কোস্টাল প্রান্তরেখার মধ্যভাগ থেকে ৪ নং ইন্টারস্পেস পর্যন্ত অবিচ্ছিন্নভাবে বিস্তৃত, যদিও প্রি-এপিকাল অংশে এটা কিছুটা সংকুচিত। আন্দামান ছাঁচনপাত্তি এর পিছনের ডানার উপরিপৃষ্ঠে টার্মেন থেকে টর্নাস অবধি বিস্তৃত একটি অভ্যন্তরীণ এবং একটি বহিস্থঃ আঁকাবাঁকা সংকীর্ণ অথবা সরু কালো সাবটার্মিনাল ব্যাণ্ড অথবা পটি রয়েছে। ডানার নিম্নপৃষ্ঠের নিরিখে আন্দামানীয় উপপ্রজাতিটি ভারতীয় উপপ্রজাতিটির মতন একইরকম পরিবর্তনশীল, তবে অনেক আন্দামানীয় নমুনাতে (সম্ভবতঃ আর্দ্র রূপ এর নমুনাতে) গ্রাউন্ড রঙ অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট মানের। প্রায় মেটালিক অথবা ধাতব সবজে এবং কালো রেখার দবারা সুস্পষ্টকৃত তুষারশুভ্র ছোপ দেখা যায় বেসাল অঞ্চলে। দ্বিতীয় এবং পঞ্চম ইন্টারস্পেসে অবস্থিত ওসিলিয়াস দুটি দৃশ্যত ভারতীয় উপপ্রজাতির ওসিলিয়াস অপেক্ষা বেশি সুস্পষ্ট হয়। শুঙ্গ, মাথা, বক্ষদেশ ( থোরাক্স) এবং পেট মালাবার ছাঁচনপাত্তি উপপ্রজাতি্র (বৈজ্ঞানিক নাম:Doleschallia bisaltide malabarica Fruhstorfer,1899) অনুরূপ।[৪]

বিস্তার[সম্পাদনা]

আন্দামান ছাঁচনপাত্তি উপপ্রজাতিদের দেখা মেলে দক্ষিণ আন্দামান, কার নিকোবর, মধ্য নিকোবর এবং গ্রেট নিকোবর অঞ্চলে।

আচরণ[সম্পাদনা]

Ligustrum glomeratum [৫] নামক ফুলের প্রতি এরা আকৃষ্ট হয় এবং Pseuderanthemum album (Acanthaceae) উদ্ভিদে এদের লার্ভার খোঁজ পাওয়া যায়।[৬][৭]

মালাবার ছাঁচনপাত্তি[সম্পাদনা]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

পুরুষ এবং স্ত্রী উভয় এরি ডানার নিম্নপৃষ্ঠ হলুদ-বাদামী বর্ণের। সামনের ডানার উপতিতলে বেসাল অংশের রঙ ফ্যাকাশে লালচে হলুদ থেকে তদপরবর্তী উজ্জ্বল সোনালী হলুদ এবং পিছনের ডানার বর্ন ধূসর বাদামী। সামনের ডানার উপরিতলে এপিক্যাল অর্ধ কালো বর্ণের। ডিসকোসেলুলার অংশের বিপরীতে ১২ নং শিরার থেকে একটি অল্প চওড়া কালো অসম আকারের বন্ধনী সেল এর শীর্ষ ভাগ দিয়ে অতিক্রম করে তীর্যকভাবে ৩ নং ইন্টারস্পেসের মাঝখন দিয়ে গিয়ে নিচের দিকে বেঁকে গিয়ে টর্নাস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সেল এর শীর্ষভাগের কাছে একটি কালো ছোপ, কালো বন্ধনীর আভ্যন্তরীণ প্রান্তরেখার সাথে মিশে রয়েছে। কালো বন্ধনীটির পাশেই একটি ছোট, অতিতীর্যক চওড়া সোনালী-হলুদ বন্ধনী কোস্টাল প্রান্তরেখার মধ্যভাগ থেকে ৫ নং ইন্টারস্পেস পর্যন্ত বিস্তৃত দেখা যায়। স্ত্রী নমুনাতে এই সোনালী-হলুদ বন্ধনী পুরুষ নমুনা অপেক্ষা বেশি চওড়া। এই বন্ধনীর লাগোয়া একটি লালচে হলুদ ছোপ লক্ষ্য করা ৪ নং ইন্টার স্পেসে। ডানার শীর্ষভাগের খানিক নিচে কোস্টাল প্রান্তরেখার কাছে দুটি অথবা কখনো তিনটি ক্কখুদ্র সাদা প্রিএপিকাল স্পট ছোখে পড়ে। ডানার প্রান্তরেখা অথবা ফ্রিঞ্জ বরাবর রোয়াগুলি (সিলিয়া) ফিকে অথবা হালকা এবং এদের অগ্রভাগে সাদা রঙ দেখা যায়। [৪]

পিছনের ডানা অন্যান্য উপপ্রজাতির মত একইরকম, গ্রাউন্ড রঙ একই এবং কোস্টাল প্রান্তরেখা মোটামুটিভাবে পূর্বে বর্নিত। একটি উপপ্রান্তিক (সাবটার্মিনাল) সরু আঁকাবাঁকা বন্ধনী এবং পরে আরো সরু প্রান্তিক (টার্মিনাল) বন্ধনী দেখা যায়। বন্ধনীগুলির রঙ ধূসর কালো। পোস্টডিসকাল অংশে ২ এবং ৫ নং ইন্টারস্পেসে কালো ছোট স্পট অথবা ছোপ রয়েছে এবং প্রান্তিক রেখা বরাবর রোঁয়াগুলি (সিলিয়া) ফিকে অথবা হালকা।[৪]

এদের ডানার নিম্নভাগ ভীষন্রকম পরিব্ররতনশীল, ডানা বন্ধ অবস্থায় দেখতে একদম শুকনো পাতার মত। ডানা বন্ধ অবস্থায় প্রতিটি নমুনাকে লালচে থেকে কালো সবজে বাদামী পর্যন্ত বিভিন্ন রঙ এর বিন্যাস চোখে পড়ে। সামনের ডানার শীর্ষভাগ এবং পিছনের ডানার প্রান্তিক রেখার (টার্মিনাল মারজিন) পশ্চাৎ ভাগ কম বেশি (জলপাই রঙ্গা )। সামনের এবং পিছনের ডানার নিম্নপৃষ্ঠ জুড়ে কালচে সরু ডিসকাল ফ্যাসিয়া রেখা রয়েছে। সাধারনতঃ যার ভিতরের দিক বরাবর একটি ধূসর রেখা লক্ষ্য করা যায়। এই ফ্যাসিয়া রেখাটি উপরের ডানার ৬নং শিরার উপর থেকে কোস্টা অবধি প্রায় সমকৌনিক ভাবে বিস্তৃত এবং অধিকাংশ নমুনাতেই ফ্যাসিয়ার এই সমকৌনিক ভাবে অবস্থিত অংশটির ভিতরদিকে একটি অস্পষ্ট বিবর্ন ছোপ থাকে এবং বাইরের দিকে একটি তীর্যক সাদাটে চওড়া দাগ দেখা যায়। এই চওড়া সাদা দাগের একটু দূরে সাব-কোষ্টাল অংশে সাদা ত্রিকোণাকৃতি প্যাঁচ অথবা ছোপ চোখে পড়ে, যার খানিক নিচে দুই ডানা জুড়ে পোষ্ট ডিসকাল অংশে আঁকাবাকা ভাবে ওসিলিয়াস স্পষ্টগুলি বিস্তৃত হয়ে আছে।[৪]

ওসিলিয়াস স্পতগুলি বিভিন্ন আকারের গোলাকার এবং প্রতিটির কেন্দ্রস্থলে একটি করে ক্ষুদ্র বিন্দু রয়েছে। সামনের ডানার ওসিলিয়াস স্পট এর কেন্দ্রীভূত বিন্দুগুলি সাদা এবং পিছনের ডানাগুলি কালো। পুরুষ ছাঁচনপাত্তি প্রজাপতিগুলির উভয় ডানায় সাধারনত (আবশ্যিক নয়) বেশ কয়েকটি সাদাটে দাগ অথবা বিন্দু দেখা যায়। এদের শুঙ্গ কালচে বাদামী, ডানার শীর্ষভাগ বাদামী হলুদ। ছাঁচনপাত্তি প্রজাপতির মাথা, বক্ষদেশ (থোরাক্স) এবং পেট এর উর্দ্ধাংশ কালচে ফিকে বাদামী, নিচের দিকে পাল্পি সাদা, থোরাক্স এবং পেট হালকা বাদামী বর্ণের হয়।[৪]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

ডিম[সম্পাদনা]

শূককীট[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির শূককীটের পৃষ্ঠদেশে দৈর্ঘ্য বরাবর সাদা বিন্দুর অথবা ফোঁটার দুটি সারি প্রতীয়মান। মাথায় একজোড়া লোম অথবা শূয়াযুক্ত স্পাইক অথবা কাঁটা দেখা যায়। দেহের বাকী খন্ডগুলিতে পৃষ্ঠভাগে (ডরসাল) একজোড়া এবং দেহখন্ডের দুই পাশে (ল্যাটারাল) একটি করে নীল শূয়াযুক্ত স্পাইক অথবা কাঁটার সারি দেখতে পাওয়া যায়।

আহার্য উদ্ভিদ[সম্পাদনা]

এই শূককীট বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ যেমন- Artocarpus, Pseuderanthemum, Calycanthus, Ruellia, Girardina, Strobilanthes এবং Graptophyllum এছাড়া Eranthemum malabaricum, Graptophyllum hortense , Asystasia chelonoides এবং Pseuderanthemum latifolium [৩] গাছের কচি পাতার রসালো অংশ আহার করে.[৮][৯]

মূককীট[সম্পাদনা]

ছাঁচনপাত্তির মূককীট হলদেটে বর্ণের এবং গায়ে অসংখ্য কালো ছোপ দেখা যায়। দেহের মধ্যভাগ সঙ্কুচিত, মাথার দু'পাশ সরু হয়ে দুটি বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।[১০]

জীবনচক্রের চিত্রশালা[সম্পাদনা]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A Pictorial Guide Butterflies of Gorumara National Park (2013 সংস্করণ)। Department of Forests Government of West Bengal। পৃষ্ঠা ২৬৫। 
  2. "Doleschallia bisaltide Cramer, 1777"। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  3. The National Red List 2012 of Sri Lanka; Conservation Status of the Fauna and Flora (2012 সংস্করণ)। Ministry of Environment, Colombo, Sri Lanka। পৃষ্ঠা 71। আইএসবিএন 978-955-0033-55-3 
  4. Bingham, C. T. 1905. Fauna of British India. Butterflies. Vol. 1
  5. Nielsen, M.C.। "REDISCOVERY OF LETHERE EUROPA TAMUNA WITH NOTES ON OTHER THREATENED BUTTEHFLIES FROM THE ANDAMAN AND NICOBAH ISLANDS " (পিডিএফ)The Journal of the Lepidopterists' Society। পৃষ্ঠা 119-120। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭  line feed character in |সাময়িকী= at position 13 (সাহায্য); line feed character in |শিরোনাম= at position 112 (সাহায্য)
  6. Veenakumari, K. and Prashanth Mohanraj 1997. Rediscovery of Lethe europa tamuna with notes on other threatened butterflies from the Andamans and Nicobar Islands. Journal of the Lepidopterists' Society. 51(3):273-275 PDF[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Lestari, P.; ও অন্যান্য। "SELECTION CRITERIA OF Graptophyllum pictum RESISTANCE TO Doleschallia bisaltide CRAMER (LEP: NYMPHALIDAE) ATTACK BASED ON INSECT FEEDING PREFERENCE " (পিডিএফ)SABRAO Journal of Breeding and Genetics। পৃষ্ঠা 172-184। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  8. Les Day। "Doleschallia bisaltide"। Samui Butterflies। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৭, ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. Adrian Hoskins। "Autumn Leaf"। Learn About Butterflies। ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৭, ২০১২ 
  10. Markku Savela। "Doleschallia C. & R. Felder, 1860"। Lepidoptera and some other life forms। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]