সিন্ধুতাই সপকাল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিন্ধুতাই সাপকাল
জন্ম(১৯৪৮-১১-১৪)১৪ নভেম্বর ১৯৪৮
মৃত্যু৪ জানুয়ারি ২০২২(2022-01-04) (বয়স ৭৩)
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামঅনাথদের মা
পরিচিতির কারণঅনাথ শিশুদের লালন পালন করার জন্য।
দাম্পত্য সঙ্গীশ্রীহরি সাপকাল
সন্তাননিজের একটি কন্যা এবং তিনটি পুত্র
১০৪২ জন পালিত সন্তান।

সিন্ধুতাই সাপকাল এছাড়াও অনাথদের মা[১] (১৪ নভেম্বর ১৯৪৮ - ৪ জানুয়ারি ২০২২) হিসাবে পরিচিত, একজন ভারতীয় সমাজকর্মী ছিলেন, যিনি অনাথ শিশুদের লালনপালনের কাজের জন্য বিখ্যাত। ২০১৬ সালে, তিনি ডিওয়াই পাতিল ইনস্টিটিউট, প্রযুক্তি এবং গবেষণা কর্তৃক ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত হন।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা[সম্পাদনা]

তিনি জন্মগ্রহণ করেন, ১৪ নভেম্বর,১৯৪৮ সালে মহারাষ্ট্রর ওয়ারধা জেলা পিম্প্রি মেঘে গ্রামে। তার পিতা অভিমানজি সাঠে পেশায় একজন গোচারক ছিলেন। একজন অবাঞ্ছিত সন্তান, হওয়ার দরুন তার ডাকনাম দেওয়া হয়েছিল 'ছিন্ধি' (ছেঁড়া টুকরা কাপড়)। তার বাবা তার মায়ের বিরুদ্ধে সিন্ধুতাইকে শিক্ষিত করতে উৎসাহী ছিলেন। অভিমানজি গোচারণেের অজুহাতে তাকে বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণের জন্য পাঠাতেন যেখানে আর্থিক কারণে সত্যিকারের একটি স্লেটের সামর্থ্য না থাকায় তিনি 'ভারাদি গাছের পাতা' ব্যবহার করতেন।পতিত দারিদ্র্য, পারিবারিক দায়িত্ব, এবং বাল্যবিবাহ অন্তরায়গুলি,চতুর্থ শ্রেণী পাস করার পর তার প্রথাগত শিক্ষাগ্রহণে সমাপ্তি ঘটিয়েছিল।,[২]

বিবাহ এবং প্রারম্ভিক কর্ম[সম্পাদনা]

১০ বছর বয়সে, তিনি শ্রীহরি সাপকাল ওরফে হারাবজি, ওয়ারধা জেলার নাবরগাও গ্রামের একটি ৩০ বছর বয়েসী গোচারকের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ২০ বছর বয়স হওয়া অবধি তিনি তিন সন্তানের জননী হন। সিন্ধুতাই একটি সফল আন্দোলন করেছিলেন একজন স্থানীয় প্রতিপত্তিশালী মানুষেের বিরুদ্ধে যিনি গ্রামবাসীদের কিছু পারিশ্রমিক ছাড়া, ঠকিয়ে শুকনো গোবর যা ভারতে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়, সংগ্রহ করছিলেন এবং বনদপ্তরের সঙ্গে যোগসাজশ করে তা বিক্রি করছিলেন। তার আন্দোলন জেলাশাসককে তার গ্রামে আসতে বাধ্য করেছিল এবং সাপকাল সঠিক জেনে, প্রতিপত্তিশালী মানুষটির বিরুদ্ধে জেলাশাসক আদেশ জারই করেন যা সেই প্রতিপত্তিশালী লোকটির অপচ্ছন্দ ছিল। ক্ষুব্ধ লোকটি একজন গরীব মহিলার কাছে অপমানিত হয়ে  তার স্বামীকে প্ররোচিত করেন এবং সাপকাল তার  ৯মাসেের বেশি গর্ভাবস্থায় স্বামী পরিত্যক্তা হন। সেই রাতে তাদের ঘরের বাইরে গোয়ালঘরে তিনি কন্যার জন্ম দেন এবং কিছু কিমি দুরে পিত্রালয়ে মার কাছে আশ্রয় চান, যিনি তা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি আত্মহননের চিন্তাকে সরিয়ে রেখে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে খাবারের জন্য ভিক্ষা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি  বুঝতে পারেন পরিত্যক্ত শিশুর সংখ্যা অনেক। তিনি তাদের দত্তক নেন এবং সবার খাদ্যের জন্য বৃহত্তরভাবে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, সামনে যেকোন অনাথেরই তিনি মায়ের দায়িত্ব নেবেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তার নিজের কন্যাকে, পক্ষপাতিত্ব হবার ভয়ে পুনার নিকট শ্রীমন্তই দাগদু শেঠ হালুয়াই নামক একটি ট্রাস্টে দিয়ে দেন।.[৩]

পরবর্তী কাজ[সম্পাদনা]

তিনি তার সমস্ত জীবন অনাথদের সেবায় নিয়োজিত করেন। তাই তাকে সবাই ভালবেসে মা বলে ডাকেন। তিনি ১০৫০জনের বেশি অনাথ শিশুদের লালন পালন করেছেন। আজকের হিসাবে, ২০৭ জন জামাতা, ৩৬জন পুত্রবধু এবং ১০০০ জন নাতি-নাতনিদের নিয়ে তার একটি বৃহৎ পরিবার আছে। তিনি আজো পরের বেলার খাবার যোগাড়ের সংঘর্ষ করেন। তার পালিত শিশুদের মধ্যে আইনজ্ঞ,ডাক্তার প্রভৃতি আছেন। তার নিজের কন্যা সমেত অনেকে নিজেদের অনাথালয় চালান। তার পালিত সন্তানদের মধ্যে একজন তার জীবনের ওপর ডক্টরেট করছেন। তিনি তার কাজের জন্য ২৭৩ টির বেশি সম্মানে সম্মানিত হন। 

পরিচালিত সংগঠন[সম্পাদনা]

  • সন্মতি বাল নিকেতন।ভেলকর বস্তিi, হাদাপ্সার, পুনে
  • মমতা বাল সদন, কুম্ভ্রবালান, পুনে
  • মাই এর আশ্রম ছিকলধারা, অমরাবতি
  • অভিমান বাল ভবন,ওয়ারধা
  • গঙ্গাধরবাবা ছাত্রালয়,গুহ
  • সপ্তসিন্ধু  মহিলা আধার, বালসঙ্গোপন আনি শিক্ষন সংস্থা, পুনে

পুরস্কার[সম্পাদনা]

মোট ২৭৪ পুরস্কার

  • ২০১৭- ৮ই জানুয়ারী ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে "নারী শক্তি পুরস্কার ২০১৭" পান।[৪]
  • ২০১৫ - ২০১৪ সালের জন্য আহমদীয়া মুসলিম শান্তি পুরস্কার[৫]
  • ২০১৪ -  বাসবা সেবা সঙ্ঘ পুনে দ্বারা বাসবা ভূষণ পুরস্কার-২০১৪
  • ২০১৩ - সামাজিক ন্যায়বিচারের  জন্য মাদার টেরেসা পুরস্কার।[৬][৭]
  • ২০১৩ - দৃষ্টান্তমূলক মায়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার---- (প্রথম প্রাপক)[৮]
  • ২০১৩ - রিয়েল হিরো পুরস্কার সিএনএন-আইবিএন এবং রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন  দ্বারা [৯]
  • ২০১২ - কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, পুনে দ্বারা সিওইপি গৌরভ পুরস্কার । 
  • ২০১২ - অহল্যাবাই হোলকার  পুরস্কার  মহারাষ্ট্র সরকার দ্বারা নারী ও শিশু কল্যাণ ক্ষেত্রে সমাজ কর্মীদের জন্য প্রদত্ত [১০]
  • ২০০৮ - বর্ষসেরা নারীী পুরস্কার  দৈনিক মারাঠি সংবাদপত্র লোকসত্ত দ্বারা।
  • ১৯৯৬ - দত্তক মাতা পুরস্কার  তাল – শ্রীরামপুর জেলা আহমেদনগর. মহারাষ্ট্রের পুনের সুনিতা কলানিকেতন  ট্রাস্ট দ্বারা (স্মৃতি – দেরী সুনিতা ত্রিম্ভক কুলকার্নি )[১১]
  • ১৯৯২ - নেতৃত্বমূলক সামাজিক অবদানকারী পুরস্কার।
  • সৈয়াদ্রী হিরকাণী পুরস্কার (মারাঠি: सह्याद्रीची हिरकणी पुरस्कार)
  • রাজাই পুরস্কার (মারাঠি: राजाई पुरस्कार)
  • শিবলীলা মহিলা  গৌরব পুরস্কার (মারাঠি: शिवलीला महिला गौरव पुरस्कार)

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

২০১০ সালের  মারাঠি ছায়াছবি অনন্ত মহাদেবন দ্বারা '''মি সিন্ধুতাই সাপকাল''' সিন্ধু সাপকালের সত্য গল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত একটি জীবনীমূলক ছায়াছবি। ৫৪তম লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভালে বিশ্বের প্রিমিয়ারে এই ছায়াছবিটি নির্বাচিত হয়েছিল ।.[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mother of Orphans
  2. "Sindhutai Sapkal"। Homi Bhabha Centre for Science Education,TIFR। 
  3. "Mother of orphans – Sindhu Tai Sapkal – Part 1"। Indya Unlimited। ৯ মার্চ ২০১১। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  4. [/india/nari-shakti-puraskar/articleshow/63203332.cms /india/nari-shakti-puraskar/articleshow/63203332.cms] |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  5. http://www.themuslimtimes.org/2015/03/countries/india/the-2015-ahmadiyya-muslim-prize-for-the-advancement-of-peace-goes-to-sou-sindhutai-sapkal#ixzz3UX1Qxrwk
  6. "Harmony Foundation to host Mother Teresa awards on Nov 9"dna। Diligent Media Corporation Ltd.। ৮ নভেম্বর ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪ 
  7. "Mother Teresa Awards given to promoters of social justice"। Catholic News Agency। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  8.   |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  9. "Real Heroes"। Reliance Foundation। ৩১ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  10. "Sindhutai Sapkal to receive state award child welfare"। ২০১২-১১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৮ 
  11. "Sindhutai Sapkal"। reminderindia.com। ১৭ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  12. "Mee Sindhutai will have its world premiere at the 54th London Film Festival"। ২০১২-১১-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৯-১৮