হযরত আলী (বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হযরত আলী
জন্ম১৯৪৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক
দাম্পত্য সঙ্গীনূর জাহান

হযরত আলী (জন্ম: ১৯৪৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

হযরত আলী'র জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের বাউশিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নজরুল ইসলাম এবং মায়ের নাম হাসেবান বিবি। তার স্ত্রীর নাম বেগম নূরজাহান। এ দম্পতির চার ছেলে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

হযরত আলী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন। সে সময়ে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল যশোর সেনানিবাসে। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ বালুচ এবং ২২ এফএফ রেজিমেন্ট তাদের আক্রমণ করে। তখন তারা প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তারা সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে চৌগাছায় সমবেত হন। এরপর ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

হযরত আলী লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ উপজেলার কামালপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেছেন। তিনি মূলত মেশিনগান চালাতেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এক ঘটনা সিলেট জেলার কানাইঘাটের যুদ্ধ। জৈন্তাপুর-জকিগঞ্জ সংযোগ সড়কে সুরমা নদীর তীরেএ উপজেলা সদরের অবস্থান। সীমান্তের নিকটবর্তী হওয়ায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনী উভয়ের কাছেই কানাইঘাট ছিল সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।এ যুদ্ধে হযরত আলী অংশ নেন। তিনি প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত কানাইঘাটে যুদ্ধ হয়। এখানে ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানি, পাকিস্তানি স্কাউটস দলের এক প্লাটুন মিলিশিয়া এবং তাদের সহযোগী বেশ কিছু রাজাকার। ২২ নভেম্বর জেড ফোর্সের অধীন প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গড়া মুক্তিবাহিনী কানাইঘাট-সংলগ্ন গৌরীপুরে পৌঁছে। তখন পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ডিফেন্স ছেড়ে এগিয়ে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘেরাও করে। এরপর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। কয়েক দিন ধরে এখানে যুদ্ধ চলে। পাকিস্তানি বাহিনী প্রচণ্ড প্রতিরোধ করেও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। কানাইঘাটের যুদ্ধে হযরত আলী যথেষ্ট সাহস, দক্ষতা ও রণকৌশল প্রদর্শন করেন। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে ১১ জন শহীদ এবং হযরত আলীসহ ২০ জন আহত হন। অন্যদিকে পাকিস্তানিদের পক্ষে ৫০ জন নিহত, ২০ জন আহত এবং ২৫ জন আত্মসমর্পণ করে। কানাইঘাট মুক্ত হওয়ায় মিত্রবাহিনীর সিলেটের দিকে চূড়ান্ত অভিযান পরিচালনা করা সহজ হয়। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০৪-০৫-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৫০৯। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৬। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  • এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]