শৈবাল সাগর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শৈবাল সাগর

শৈবাল সাগর বা Sargasso Sea হলো সমুদ্রের মাঝে স্রোতহীন অঞ্চল, যেখানে শৈবাল ও অন্যান্য আগাছা জন্মায়। এটা পৃথিবীর একমাত্র 'সাগর' যার কোনো উপকূল নেই। এটা ১,১০৭ কিমি প্রশস্ত এবং ৩,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ।[১]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

"সারগাসো" (Sargasso) শব্দটি পর্তুগিজ শব্দ "সারগাসাম" (Sargassum) থেকে এসেছে, যার অর্থ সামুদ্রিক আগাছা।

সৃষ্টির কারণ[সম্পাদনা]

কয়েকটি সমুদ্রস্রোত পরস্পর মিলনের ফলে চক্রাকার জলাবর্ত সৃষ্টি হয়। আয়ন বায়ু ও পশ্চিমা বায়ুর সন্ধিস্থলে মৃদু বায়ুর প্রাদুর্ভাবের কারণে জলাবর্ত-এর মাঝের স্থান স্রোতহীন ও শান্ত হয়। এরই প্রভাবে শৈবাল সাগরের সৃষ্টি হয়েছে।

  • উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যভাগে উপসাগরীয় স্রোত, ক্যানারি স্রোত, উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ঘড়ির কাটার দিকে চক্রাকারে আবর্তিত হওয়ায় শৈবাল সাগরের সৃষ্টি হয়েছে।
  • এছাড়া উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের জাপান স্রোত,ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত এবং উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত মিলিত হয়ে শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে।
  • স্রোতহীন পানিতে ভাসমান শৈবাল, আগাছা সঞ্চিত হয় এবং সামুদ্রিক উদ্ভিদ জন্মে। এ কারণে একে শৈবাল সাগর বলা হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

সারগাসো নামটি মূলত সমুদ্রে জন্মানো শৈবাল বা "সারগাসাম" শব্দ থেকে এসেছে। পর্তুগিজ ভাষায় "সারগাসাম" অর্থ শৈবাল। ধারণা করা হয় ১৫ শতাব্দীতে পর্তুগীজ নাবিকদের আজোরেস দ্বীপ ভ্রমনের সময় এ সাগর মানুষের মাঝে পরিচিতি পায়। তবে কারো কারো মতে ১৫ শতকের পূর্বের নাবিকরাও হয়তোবা এ সাগর সম্পর্কে জানতো। কেননা ৪র্থ শতাব্দীর জনপ্রিয় কবি রুফুস ফেসটুস আভিয়েনুস তার কবিতায় আটলান্টিক মহাসাগরের কিছু অংশ শৈবালে ডাকা ছিল বলে ধারণা দেয়।

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

  • শৈবাল সাগর পৃথিবীর একমাত্র সাগর যার কোনো উপকূল নেই।
  • এই সাগরের মধ্যে দিয়ে জাহাজ চলাচলে অসুবিধা হয়।
  • এই সাগরের জলের ঘনত্ব ও লবণতা অন্যান্য সাগর অপেক্ষা বেশি হয়।
  • এই সাগর স্রোতহীন, শান্ত প্রকৃতির হয়।
  • উচ্চ তাপমাত্রা ও অধিক বাষ্পীভবনের কারণে শৈবাল সাগর আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে সবচেয়ে লবণাক্ত অঞ্চল (লবণাক্ততা ৩৭‰)।
  • এ সাগরে আগাছার উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। কারো কারো মতে অ্যাজোর ও বাহামার তীরে এগুলোর উৎপত্তি হয় এবং ঢেউ ও বায়ু দ্বারা অন্যত্র বাহিত হয়। অন্যদের মতে, এসব আগাছা মেক্সিকো উপসাগরে সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে উপসাগরীয় স্রোত এগুলো শৈবাল সাগরে নিয়ে জমা করে।-২
  • এই সাগরেই অবস্থিত বারমুদা ট্রায়াঙ্গাল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Administration, US Department of Commerce, National Oceanic and Atmospheric। "What is the Sargasso Sea?"oceanservice.noaa.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-১৯ 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • আলম, কে. আশরাফুল (২০১৪), বৈশ্বিক পরিবেশের প্রাকৃতিক ভূগোল, পারফেক্ট পাবলিকেশন্স, ঢাকা, বাংলাদেশ, পৃ. ৯১৬।