গুলাম আলী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুলাম আলী
استاد غلام علی
চেন্নাইয়ে গুলাম আলী
চেন্নাইয়ে গুলাম আলী
প্রাথমিক তথ্য
জন্ম (1940-12-05) ৫ ডিসেম্বর ১৯৪০ (বয়স ৮৩)
কালেকি, শিয়ালকোট জেলা, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান পাকিস্তান)
ধরনগজল, ধ্রুপদী সঙ্গীত
পেশাগায়ক
বাদ্যযন্ত্রহারমোনিয়াম
কার্যকাল১৯৬০-বর্তমান

উস্তাদ গুলাম আলী (উর্দু: استاد غلام عل‎‎; জন্ম: ৫ ডিসেম্বর, ১৯৪০) ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণকারী ও পাতিয়ালা ঘরানার বিখ্যাত পাকিস্তানি গজল গায়ক। ভারতের বিখ্যাত শাস্ত্রীয় গায়ক বড়ে গুলাম আলী খান ও পাকিস্তানের ছোটে গুলাম আলীর সাগরেদ তিনি।

তিনি তার সময়কালের অন্যতম সেরা গজল গায়করূপে পরিচিতি পেয়েছেন। গজলে তার গানের ধরন ও ভিন্নতায় অসাধারণত্ব নিয়ে এসেছে। গজলের সাথে হিন্দুস্তানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সংমিশ্রণ তাকে অন্য যে-কোনো গজল গায়কের চেয়ে শীর্ষস্থানে নিয়ে এসেছে। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশনেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহেও তার পরিচিতি রয়েছে। তার অনেকগুলো বিখ্যাত গজল বলিউডের চলচ্চিত্রসমূহে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার জনপ্রিয় গজলগুলো হচ্ছে - চুপকে চুপকে রাত দিন, কাল চৌদভিন খি রাত থি, "হাঙ্গামা হে কিউ বারপা", কিয়া হায় পেয়ার জিসে, মে নজর সে পি রাহা হা হু, মাস্তানা পিয়ে, ইয়ে দিল ইয়ে পাগল দিল, আপনি ধুন মে রেহতা হু অন্যতম। জিমা ২০১৪-এ সেরা গজল এলবাম বিভাগে তার সাম্প্রতিক এলবাম হাসরাতে মনোনীত হয়েছিল।

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

একনিষ্ঠ ভক্ত বড়ে গুলাম আলীর নাম অনুসরণে তার বাবা গুলাম আলী রাখেন। শৈশবেই খানসাহেবের কথা সর্বদাই শুনে আসছিলেন। আফগানিস্তানের কাবুল থেকে ভারতে ফেরার পথে বড়ে গুলাম আলী খান সাহেবকে তার বাবা অনুরোধ করেন যে, তার সন্তানের তামিল দেয়ার জন্য। কিন্তু তিনি জানান যে, শহরে অবস্থান করায় তাকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। পুণঃপুণঃ অনুরোধ জানানোর পর তরুণ গুলাম আলীকে গান গাইতে হয়।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৬০ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান গাইতে শুরু করেন। গজল গাওয়ার পাশাপাশি তার ভজনের সুর তৈরি করতে থাকেন। তার সুরগুলো রাগভিত্তিক ছিল। কখনো এতে বৈজ্ঞানিক সংমিশ্রণ ছিল। গজলে তিনি ঘরানা-গায়কির সংমিশ্রণ ঘটাতেন। এরফলে তার গানগুলো শ্রোতাদের হৃদয়-মন স্পর্শ করতো। এছাড়াও তিনি চমৎকারভাবে পাঞ্জাবি গান গেয়ে থাকেন। আশা ভোঁসলে তার সাথে যৌথভাবে সঙ্গীত এলবাম প্রকাশ করেন।

১৯৮২ সালে বি. আর. চোপড়া'র হিন্দি চলচ্চিত্র নিকাহে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে অংশ নেন।[১] কবি হাসরাত মোহানি'র লেখা চুপকে চুপকে রাত দিন গানটি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করে। অন্যান্য জনপ্রিয় গজলের মধ্যে রয়েছে "হাঙ্গামা হে কিউ বারপা" এবং আওয়ারাগি অন্যতম। জনপ্রিয় কবিদের লিখিত গজলগুলোই তিনি সর্বদা নির্বাচিত করতেন। মসরুর আনোয়ারের লেখা হাম কো কিস কে ঘাম নে মারা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে।

এছাড়াও গুলাম আলী বেশ কয়েকটি নেপালী গজল গেয়েছেন। তন্মধ্যে কিনি কিনা তিমরু তাসভীর, গাজালু তি থুলা থুলা আঁখা, লোলাইকাতি থুলা সুপরিচিত নেপালী গায়ক নারায়ণ গোপালের সাথে গেয়েছেন। গানগুলোয় সুরারোপ করেছেন দীপক জঙ্গম ও রচনা করেছেন নেপালের রাজা মহেন্দ্র। ঐ গানগুলো নারায়ণ গোপাল, গুলাম আলী রা মা শিরোনামে এলবাম আকারে প্রকাশিত হয় ও অদ্যাবধি নেপালী সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

পাকিস্তানি পপ গ্রুপগুলো সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন যে, 'প্রকৃতপক্ষে তাদের গানের ধরন দেখে স্তম্ভিত হয়ে যাই। মঞ্চে দৌঁড়ে, লাফিয়ে, শারীরিক কসরতের মাধ্যমে কি করে তারা গান করতে পারে। মঞ্চ মানেই সঙ্গীত প্রদর্শন করা, ব্যায়াম করা নয়।'

তাজমহলে তার অন্যতম স্মরণীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।[২] ভবিষ্যতের গজল গায়কদের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে, ২০১২ সালে বেঙ্গালুরুতে আদিত্য শ্রীনিবাসনের গজল তিনি বেশ উপভোগ করছেন।[৩]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৭৯ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১২ সালে সিতারা-ই-ইমতিয়াজ পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[৪]

সাম্প্রতিককালে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সালে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি বড়ে গুলাম আলী খান পুরস্কার লাভ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন যে, এ পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করায় ভারত সরকারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার গুরুদেবের নামানুসারে প্রদেয় পুরস্কারটি আমার জীবনের সেরা পুরস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এছাড়াও, ২০১৬ সালে কেরালার ত্রিভান্দ্রাম থেকে স্বরলয়া বৈশ্বিক জীবন্ত কিংবদন্তি পুরস্কার লাভ করেন।[৫]

বিতর্ক[সম্পাদনা]

২০০৭ সালে হায়দ্রাবাদে গুলাম আলী

২০১৫ সালে মুম্বইয়ে শিব সেনাদের বিক্ষোভের ফলে তার সঙ্গীতানুষ্ঠান বাতিল হয়ে যায়। এ ঘটনার পর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব তাকে পুনরায় ভারত সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানান।[৬] এরপর লক্ষ্মৌ, নতুন দিল্লি, ত্রিভান্দ্রাম ও কঝিকোদেতে গান পরিবেশন করেন তিনি।[৭]

২০১৫ সালে দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এক প্রতিবদনে জানা যায় যে, ভবিষ্যতে তিনি আর ভারতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে চান না।[৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে গুলাম আলী (ইংরেজি), Ghulam Ali Filmography on IMDb, Retrieved 14 Feb 2016
  2. Ghulam Ali sings in praise of the Taj. The Times of India, published 10 July 2007, Retrieved 14 Feb 2016
  3. "Deccan Chronicle / Music : From the words of Ghalib ..."। Deccan Chronicle। ২১ জুন ২০১৩। ৩ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রু ২০১৬ 
  4. http://www.dawn.com/news/742068/abida-parveen-aleem-dar-among-winners-posthumous-awards-for-manto-mehdi-Hassan, Ghulam Ali's Sitara-i-Imtiaz Award info on Dawn newspaper, Retrieved 18 April 2016
  5. http://www.thehindu.com/news/cities/kozhikode/swaralaya-award-presented-to-ghulam-ali/article8110564.ece?utm_source=RSS_Feed&utm_medium=RSS&utm_campaign=RSS_Syndication, Ghulam Ali award info on The Hindu newspaper, published 15 Jan 2016, Retrieved 14 Feb 2016
  6. "Pakistan Singer Ghulam Ali's Concert in Mumbai Cancelled After Shiv Sena Threat"The Huffington Post। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-০৭ , Retrieved 14 Feb 2016
  7. "Ghulam Ali Performs in Lucknow, Meets Akhilesh Yadav"NDTV.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১০-১২ , Retrieved 14 Feb 2016
  8. "Ghulam Ali doesn't want to be used for political mileage; won't perform in India"Zee News। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-০৪ , Retrieved 14 Feb 2016

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]