বিভিন্ন ধর্মে উপবাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

অনেক ধর্মে উপবাসের বিধান রয়েছে। নিচে বিভিন্ন ধর্মে উপবাস নিয়ে আলোচনা করা হল।

ইসলাম ধর্ম[সম্পাদনা]

ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের চতুর্থ স্তম্ভ রোজা বা উপবাস। পবিত্র রমজান মাসে সারা জাহানের মুসলমানগণ রোজাব্রত পালন করে থাকেন। ইসলাম ধর্মে রামাদান মাসে ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত পূর্নবয়স্ক সুস্থ সবল নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামুলক। রোজা পালন সময়ে কোন প্রকার খাদ্য গ্রহণ এবং পান সম্পূর্নরূপে নিষিদ্ধ। আল কোরআনে বলা হয়েছে সাওম বা রোজা পালনের মাধ্যমে মুসলমানগণ তাকওয়া অর্জন করে। বিশ্বাস করা হয় রোজা মানুষকে আত্মশুদ্ধি অর্জনে সাহায্য করে এবং পাপ প্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখে। মুসলমানেরা বিশ্বাস করেন রোজা শুধু খাবার ও পানীয় বর্জন নয়। রোজা হচ্ছে কথা ও কর্মে মিথ্যা পরিহার করা, অশোভনীয় ভাষা পরিহার, ঝগড়া ফ্যাসাদ এবং কুপ্রবৃত্তি ও খারাপ চিন্তা থেকে দূরে থাকাই রোজা। তাই সব কিছু মিলিয়ে রমজান মাসে প্রকৃত মুসলমানগণ নিজেদের নৈতিক চরিত্র এবং অভ্যাষের উন্নতি সাধনে কাজ করে চলেন।

রোজা মুসলমানদেরকে ধৈর্য এবং আত্মসংযম শিক্ষা দেয়। ব্যক্তিগত ভুল ভ্রান্তি শোধরাতে সাহায্য করে। রোজা বেহেশত অর্জনে সাহায্য করে।

রমজান মাসে প্রতিটি মুসলমানের জন্য রোজা পালন করা ফরজ বা বাধ্যতামূলক। তবে ইসলামের আরো কিছু দিবসে রোজা পালনে উৎসাহিত করা হয়েছে।

  • আরাফার দিবসে (জুল হজ্ব মাসের ৯ তারিখ) আরাফায় অবস্থানরত হাজীরা এই দিনে রোজ়া পালন করবেন না।
  • আশুরার দিনে( মুহাররম মাসের দশ তারিখ) রোজা পালন করা হয়। সুন্নি মুসলমানেরা এই দিনের আগের দিন ও পরের দিনও রোজা পালন করে। অন্যদিকে শিয়াহ অনুসারীরা শুধু মাত্র এদিনেই রোজা রাখেন।
  • শাওয়াল মাসের ছয়দিন রোজা পালন করা হয় ( রমজানের পরবর্তী মাস)
  • প্রতি চান্দ্র মাসের ১৩,১৪ এবং পনেরো তারিখ
  • প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার
  • নিষিদ্ধ দিন বাদে অন্যান্য সকল দিন ( দাউদ নবীর রোজা নামেও পরিচিত)
  • রজব মাসের ২৭ তারিখ মিরাজ উপলক্ষ্যে
  • শাবান মাসের ১৫ তারিখ শব ই বরাত উপলক্ষ্যে

রোজা রাখার জন্য বছরের কয়েকটি দিন মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

  • ইদ উল ফিতর (শাওয়াল মাসের এক তারিখ)
  • তাশরিক (১১, ১২, ১৩ যিলহজ্ব), সুন্নী মুসলমানেরা অনুসরণ করেন।
  • ইদ উল আযহা (শিয়া মতালম্বীদের কোন কোন শাখা এই দিনে রোজা রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করে)

যাদের জন্য রোজা পালন বাধ্য নয়ঃ

  • হঠাৎ বমি হলে
  • মারাত্বক অসুস্থ ব্যক্তি
  • ঋতুবতী নারী
  • মুসাফির বা পর্যটক
  • সন্তান জন্মদানের চল্লিশ দিন না হওয়া রমনী
  • গর্ভবতী মহিলা
  • মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তি
  • যে সকল পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি রোজা রাখতে অসমর্থ হবে তাদের গরীব ব্যক্তিকে এক বেলার খাবার বা সমপরিমান মূল্যের টাকা দান করতে বলা হয়েছে।

বাহাই ধর্ম[সম্পাদনা]

বাহাই ধর্মানুসারীদের জন্য বাহাউল্লাহা কিতাবই আকদাসে বাহাই মাস আলা (২ মার্চ- ২০ মার্চ) এ ১৯ দিনের রোজা রাখার বিধানের কথা উল্লেখ করেছেন।[১] সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনরূপ পানাহার এমনকি ধূম্রপান পর্যন্ত নিষিদ্ধ। ১৫ থেকে ৭০ বয়সী[১] সকল বাহাইকে এই রোজা বা উপবাস পালন করতে হবে। অসুস্থ, গর্ভবতী, ঋতুবতী, পর্যটক, কঠোর পরিশ্রমকারীদের জন্য রোজার বিধান শিথিল করা হয়েছে। তবে যারা কঠোর পরিশ্রম করেন তাদেরকে নির্জনে স্বাভাবিকের তুলনায় কম আহার করতে বলা হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্ম[সম্পাদনা]

বৌদ্ধধর্মে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিনয় নীতি অনুসরণ করে যাতে সাধারনত দুপুরের আহারের পরে সেদিন আর কোন খাবার গ্রহণ করে না। যদিও এটাকে উপবাস বলা চলে না। তবুও শৃংখলিত আহার বিধি ধ্যান এবং সুস্বাস্থ অর্জনে সাহায্য করে।[২] গৌতম বুদ্ধ প্রথম জীবনে অর্থ্যাৎ রাজপুত্র সিদ্ধার্থ দুজন শিক্ষকের তত্বাবধানে শিক্ষাগ্রহণ করেন। এসময়ে তিনি খুবই কম খাদ্য গ্রহণ করতেন। পরবর্তীতে তার উপদেশ মালায় তিনি কম খাদ্য গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। বৌদ্ধ ধর্মানুসারীদের সপ্তাহের একটি দিনে অষ্টবিধান অনুসরন করতে বলা হয়েছে যাতে দুপুর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত উপবাসের বিধান রয়েছে।[৩] বজ্রযান অনুসারীরা নুয়াং নে অনুসরণ করে যা তান্ত্রিক অনুশাসন চেনরেজিগের মত[৪][৫][৬]

খ্রিস্টান ধর্ম[সম্পাদনা]

খ্রীষ্টান ধর্মে ঈশ্বরের প্রতি প্রেম, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কোন খাদ্য আহার না করে থাকাকে উপবাস বলে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে অনুসরন করে ৪০ দিন উপবাস পালন করা হয়। সময় নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি প্রেম, ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতা প্রতি গুরুত্ব দেওয়াই উপবাসের প্রধান লক্ষ। তাই কেও চাইলে অর্ধ বেলা পর্যন্ত উপবাস করতে পারেন বা তার সুবিধা মত। সাধারনত সকালে উঠে প্রার্থনা করে হালকা খাবার খেয়ে বা না খেয়ে থাকা, ও সারা দিন কিছু না খেয়ে বিকালে বা সন্ধ্যায় প্রার্থনার পর খাবার খাওয়া হয়। খ্রিস্ট ধর্মের বাইবেল মধ্যে ইসাইয়াহ (৫৮:৬-৭), জাকারিয়াহ (৭:৫-১০), বুক অফ দানিয়েলে উপবাসে কথা বলা হয়েছে। তবে এখানে উপবাসে খাদ্য পানীয় পরিহারের বদলে সৃষ্টিকর্তার আদেশ পূর্ণরূপে প্রতিপালন করতে গরীব এবং দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। বুক অফ দানিয়েলে আংশিক উপবাসের কথা বলা হয়েছে।

খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন শাখা বা চার্চ উপবাস পালন করে থাকে। তবে কিছু শাখা এটাকে পালন করে না। ক্যাথলিক চার্চ এবং ইস্টার্ণ অর্থোডক্স চল্লিশ দিনের আংশিক উপবাস পালন করে থাকে। ইথিওপিয়ান অর্থোডক্স চার্চ বছরে কয়েকবার সপ্তাহব্যাপী আংশিক উপবাস পালন করে। খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন শাখা বা চার্চ উপবাস পালন করে থাকে। এই উপবাসের সময়ে মাছা- মাংস জাতীয় খাবার এবং দুগ্ধ আহার থেকে বিরত থাকা হয়। খ্রিষ্টান ধর্মে বর্তমান সময়েও উপবাস বা ফস্টিং বেশ গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রভু যীশুও ঈশ্বরের বানী প্রচারের কাজ শুরু করার আগে চল্লিশ দিন পর্যন্ত উপবাস থেকেছেন।[৭]

মথি ৪ অধ্যায় : ১ থেকে ৪ পদ

" তখন যীশু, দিয়াবল দ্বারা পরীক্ষিত হইবার জন্য, আত্মা দ্বারা প্রান্তরে নীত হইলেন। আর তিনি চল্লিশ দিবারাত্র অনাহারে থাকিয়া শেষে ক্ষুধিত হইলেন। তখন পরীক্ষক নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, তুমি যদি ঈশ্বরের পুত্র হও, তবে বল, যেন এই পাথরগুলি রুটি হইয়া যায়। কিন্তু তিনি উত্তর করিয়া কহিলেন, লেখা আছে, ‘‘মনুষ্য কেবল রুটিতে বাঁচিবে না, কিন্তু ঈশ্বরের মুখ হইতে যে প্রত্যেক বাক্য নির্গত হয়, তাহাতেই বাঁচিবে।"

যোহন যিনি যীশুর সমসাময়িক ছিলেন, তিনিও উপবাস রাখতেন এবং তার অনুসারীগণের মাঝেও উপবাস রাখার রীতির প্রচলন ছিল। (মার্ক ২:১৮)[৮]

বাইবেল অনুসারে, যীশুর স্বীয় সময়কালে কিছু সংখ্যক উপবাস রাখার অনুমতি বা অবকাশও ছিল। একবার কতিপয় ইহুদী সমবেত হয়ে যীশুর নিকট এই আপত্তি উত্থাপন করলো যে, তোমার অনুসারীরা কেন উপবাস রাখছে না।

মার্ক ২ অধ্যায়: ১৮ থেকে ২১ পদ

"আর যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীরা উপবাস করিতেছিল। আর তাহারা যীশুর নিকটে আসিয়া তাঁহাকে কহিল, যোহনের শিষ্যেরা ও ফরীশীদের শিষ্যেরা উপবাস করে, কিন্তু আপনার শিষ্যেরা উপবাস করে না, ইহার কারণ কি? যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, বর সঙ্গে থাকিতে কি বাসরঘরের লোকে উপবাস করিতে পারে? যাবৎ তাহাদের সঙ্গে বর থাকেন, তাবৎ তাহারা উপবাস করিতে পারে না। কিন্তু এমন সময় আসিবে, যখন তাহাদের নিকট হইতে বর নীত হইবেন; সেই দিন তাহারা উপবাস করিবে। পুরাতন কাপড়ে কেহ নূতন কাপড়ের তালি দেয় না; দিলে সেই নূতন তালিতে ঐ পুরাতন কাপড় ছিঁড়িয়া যায়, এবং আরও মন্দ ছিদ্র হয়।"

যীশু মোশির সময়ের যে উপায়ে উপবাস করা হত  সে উপায়ে নয় ; বরং তিনি তার অনুসারীদেরকে পূর্ণ আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধচিত্ততার সাথে উপবাস রাখার উপদেশ প্রদান করতেন।

মথি ৬ অধ্যায়: ১৬ থেকে ১৮ পদ :

"যখন তোমরা উপবাস কর, তখন ভণ্ডদের মতো মুখ শুকনো করে রেখো না৷ তারা যে উপবাস করেছে তা লোকেদের দেখাবার জন্য, তারা মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়ায়৷ আমি তোমাদের সত্যি বলছি, তারা তাদের পুরস্কার পেয়ে গেছে৷ কিন্তু তুমি যখন উপবাস করবে, তোমার মাথায় তেল দিও আর মুখ ধুয়ো৷ যেন অন্য লোকে জানতে না পারে যে তুমি উপবাস করছ৷ তাহলে তোমার পিতা ঈশ্বর, যাঁকে তুমি চোখে দেখতে পাচ্ছ না, তিনি দেখবেন৷ তোমার পিতা ঈশ্বর যিনি গোপন বিষয়ও দেখতে পান, তিনি তোমায় পুরস্কার দেবেন৷"

বর্তমান সময়ে উপবাস সর্ম্পকে প্রভু যীশুর এই বাক্যগুলোর উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বলা হয় উপবাস হচ্ছে আপনার ও ঈশ্বরের মধ্যকার বিষয়, পিতা ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভালবাসা ও কৃতজ্ঞার বিষয়টি আপনাদের দুই জনের মধ্যই সীমাবদ্ধ রাখার জন্য। আপনি যদি মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে উপবাস করেন তাহলে সেটা ঈশ্বরের জন্য হয় না বরং সেটা আপনার ও আপনার দেখানো মানুষগুলোই হয়। তাই আপনার ভালবাসা ও শ্রদ্ধা শুধু আপনি ও ঈশ্বর জানবে সেই হবে ঈশ্বরপ্রীতি।

বর্তমান সময়ে আরো একটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেটি হল আধ্যাতিক উপবাস। প্রভু যীশু আমাদের মধ্যে যে খাদ্যবানী দিয়েছেন তা আত্বীক, আত্বাকে পরিশুদ্ধ করাই উপবাসের মূল্য লক্ষ্য, তাই আত্বাকে বাদ দিয়ে শুধু জাগতিক বা দেহ কে কষ্ট দিয়ে উপবাস মূল্যহীন। উপবাস শুধু না খেয়ে থাকা নয় বরং মনের মন্দতা ও খারাপ দিকে গুলোকে বর্জন করা। আমি যদি উপবাস থাকি ও মানুষকে ভাল না বাসি, খারপ ব্যবহার করি বা মানুষকে ঠকায় তাহলে সেই উপবাস ঈশ্বরের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না।

আপনি যদি মনে করে, আমি এই উপবাসের মধ্যে আমার একটি খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করবো বা যাদের সাথে বিবাদ তাদের সাথে মীমাংসা করবো বা অসহায় দুঃখী মানুষের সেবা করবো বা অন্য কোন ভাল কাজের করবো তাহলে সেটিও একপ্রকার আত্বীক উপবাস।

উপবাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, আপনি সার বছর যে খাবার খান সেখানে মাছ-মাংস বা দুগ্ধ জাতীয় যে খাবার খান সেই খাবার গুলো উপবাসকালীন সময়ে না খাবার জন্য অনুরোধ করা হয়। এই খাবার গুলো না খেয়ে যে অর্থ জমা হয় তা আলাদা ভাবে জমা রাখুন ও তা চার্চে দান করুন যেন চার্চ সেটা গরীবদের মাঝি দিতে পারে কিংবা আপনি নিজেও তা করতে পারেন। উপবাসের সময়ে বাঁচানো টাকা দিয়ে চিত্তবিনোদন বা আরাম আয়েস উপবাসের মান ক্ষুণ্ণ করে। সেই সাথে উপবাসের সময় অসহায় গরীবদের- দুঃখীদের কষ্ট সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি ও তাদের নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী সাহায্য করতে পারি।

টেমপ্লেট:উপবাস এ মূল্য উদ্দেশ্য

হিন্দু ধর্ম[সম্পাদনা]

হিন্দু ধর্মে উপবাস একটি আনুসংগিক অংশ। ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং আঞ্চলিক রীতিনীতি অনুসারে হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন ধরনের উপবাস প্রচলিত আছে।

  • অনেক হিন্দু মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিন যেমন একাদশী, প্রদোষ অথবা পূর্ণিমাতে উপবাস পালন করেন।
  • সপ্তাহের কয়েকটি দিন নির্দিষ্ট দেবতার জন্য উপবাস পালন করার বিধান আছে অনেক অঞ্চলে। যেমন সোমবার শিবের জন্য, বৃহস্পতিবার বিষ্ণুর জন্য এবং শনিবার আয়াপ্পার জন্য উপবাস পালন করা হয়।
  • মংগলবারে দক্ষিণ ভারত এবং উত্তর পশ্চিম ভারতে উপবাস পালন করা হয়। দক্ষিণের হিন্দু জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে মংগলবার শক্তির দেবী মারিয়াম্মানের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। উপবাসকারীরা সূর্যোদয়ের আগে খাবার গ্রহণ করে মুসলিমরা যেমন সেহেরি খায়। এবং সূর্যাস্তের পরে তারা উপবাস ভংগ করে। তবে এই উপবাসকালীন সময়ে তারা পানীয় জল পান করে থাকে। উত্তর ভারতে মংগলবার দেবতা হনুমানের জন্য নির্দিষ্ট। উপবাসকারীরা এইদিনে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তকালীন সময় পর্যন্ত শুধুমাত্র দুধ এবং ফল খেয়ে থাকেন।
  • উত্তর ভারতের হিন্দু্রা মধ্যে বৃহস্পতিবার উপবাস পালন করে থাকে। উপবাসকারী একটি গল্প বা শ্রুতি শ্রবনের মাধ্যমে উপবাস শুরু করে। বৃহস্পতিবারের উপবাসকারীরা বৃহস্পতি মহাদেবের পূজা করে। তারা হলুদ কাপড় পরে এবং হলুদ রঙের খাবার খেতে পছন্দ করে। এদিন মহিলারা কলা গাছের পূজা করে এবং জল ঢালে। হলুদাভ বর্ণের ঘি দিয়ে খাবার প্রস্তুত করা হয়। বৃহস্পতিবার গুরুর জন্য উৎসর্গ করা হয়। যে সকল হিন্দুরা গুরু মন্ত্র গ্রহণ করে তাদের অনেকেই বৃহস্পতিবার উপবাস পালন করে থাকে।
  • ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষ্যেও উপবাস পালন করা হয়। যেমন মহাশিব রাত্রীতে অধিকাংশ হিন্দু উপবাস পালন করে এবং তারা একবিন্দু জল পর্যন্ত পান করে না। নভরাত্রিতে উপবাস পালন করে। ভারতের অনেক অঞ্চলের বিবাহিত হিন্দু রমনীরা স্বামীর সুস্বাস্থ্য, আয় উন্নতি, দীর্ঘায়ু কামনা করে উপবাস পালন করে থাকে। একটি ঝালরের মাধ্যমে চাঁদ দেখার মধ্য দিয়ে তারা এই উপবাস ভংগ করে। শ্রাবণ মাসে অনেকে শ্রাবন উদযাপন করে। এই সময়ে অনেকেই সপ্তাহের একটি দিন তারা তাদের পছন্দের দেবতার জন্য উপবাস করে। আবার অনেকেই পুরো শ্রাবন মাস উপবাস পালন করেন।
  • অন্ধ্রপ্রদেশে কার্তিক মাসের শুরুর দিনে অনেক হিন্দু বিশেষ করে রমনীরা উপবাস পালন করে থাকে। এ মাসের সোমবার তারা শিবের জন্য, পূর্ন চন্দ্রের দিন কার্তিকের জন্য উপবাস পালন করে থাকে।
  • শ্রী বিদ্যায় উপবাস করতে নিষেধ করা হয়েছে। এই তান্ত্রিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে দেবী মানুষের মধ্যে বাস করেন। তাই কেউ যদি ক্ষুধার্ত থাকে তবে দেবীও ক্ষুধার্ত থাকে। শ্রীবিদ্যায় শুধু মাত্র পিতা মাতার মৃত্যু বার্ষিকীতে উপবাসে কথা বলা হয়েছে।
  • মহাভারতের অনুশাসন পর্বে একাধিকবার উপবাসের কথা বলা হয়েছে। ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে উপদেশ দিয়ে বলেন, "উচ্চজ্ঞানের উপবাস প্রথা পালন করো যার কথা সবাই জানে না"।

জৈন ধর্ম[সম্পাদনা]

জৈন ধর্মে বিভিন্ন ধরনের উপবাস প্রথা পচলিত আছে। এর একটি হচ্ছে চৌবিহার উপবাস যাতে পরবর্তী দিনের সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন প্রকার খাবার বা জল গ্রহণ করা যায় না। আরেকটি উপবাস ব্রত হচ্ছে ত্রিবিহার উপবাস যেখানে কোন খাবার খাওয়া যায় না কিন্তু ফুটানো পানি পান করা যায়। জৈন ধর্মমতে যে কোন উপবাসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অহিংসা অর্জন। সাধারনত পাজ্জ্যশনে উপবাস পালন করা হয়। কোন ব্যক্তি যদি পাজ্জ্যশনে আটদিন উপবাস পালন করে তবে তাকে বলা হল আত্থাই এবং দশদিন উপবাস করলে বলা হয় দশ লক্ষন। আর মাসব্যাপী উপবাস পালন করলে বলা হয় মশখমন। জৈনদের মধ্যে উপবাস পালন না করে খুবই কম খাবার আহার করার রীতি অতি সাধারণ দৃশ্য। যে সকল ব্যক্তিরা মসুরের ডাল এবং স্বাদহীন খাবার শুধুমাত্র লবণ ও মরিচ দিয়ে খেয়ে থাকেন তাদের বলা হয় আয়ামবলি। জৈনরা দিনে একবার মাত্র খাবার গ্রহণ করে একাসসন নামে উপবাস পালন করে। দিনে দুই বার খাবার খেয়ে বিয়াসন উপবাস পালন করে।

ইহুদি ধর্ম[সম্পাদনা]

ইহুদি ধর্মে উপবাস মানে সকল ধরনের খাবার ও পানি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। ঐতিহ্যগতভাবে ইহুদিরা বছরে ছয়দিন রোজা পালন করে থাকে। ইয়াম কিপ্পুর হচ্ছে ইহুদি বর্ষপঞ্জিকার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন সকল পূর্ণবয়স্ক নারী পুরুষ উপবাস পালন করে থাকে। এই পবিত্র দিনে তারা উপসনার চেয়ে উপবাসকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যদি কেউ উপবাস পালন করে বিছানায় শুয়ে থাকে তবুও সে পূর্ণ ধর্মীয় বিধান পালনের পূণ্য লাভ করবে।

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপবাসের দিন তিশা বাব। আনুমানিক ২৫০০ বছর আগে এই দিনে ব্যবলনিয়া জেরুজালেমের প্রথম পবিত্র মন্দির ধ্বংস করে দেয় এবং প্রায় ২০০০ বছর আগে রোমানরা জেরুজালেমের দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির ধ্বংস করে দেয়। তিশা বাব এ ইহুদিরা বিভিন্ন ট্রাজেডিতে পতিত হয়েছে। সেই উপলক্ষ্যে তারা এই দিনটিকে পালন করে। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধে সংঘটিত হলোকাস্টও এই তিশা বাবের সময়ে সংঘটিত হয়।

শিখ ধর্ম[সম্পাদনা]

শিখধর্মে উপবাস প্রথাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। গুরু গ্রন্থ সাহিবে বলা হয়েছে উপবাস কোন আত্মিক সুবিধা বয়ে আনে না। তাই শরীরকে কষ্ট দিয়ে কোন লাভ নেই। তবে শুধু মাত্র স্বাস্থ্যজনিত কারণে উপবাস করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

"I do not keep fasts, nor do I observe the month of Ramadaan. I serve only the One, who will protect me in the end. ||1||" (Guru Granth Sahib Ji, Ang 1136)

"Fasting on Ekadashi, adoration of Thakurs (stones) one remains away from Hari engaged in the Maya and omens. Without the Guru’s word in the company of Saints one does not get refuge no matter how good one looks." (Bhai Gurdas Ji, Vaar 7)

তাও বাদ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Smith, Peter (২০০০)। "fasting"। A concise encyclopedia of the Bahá'í Faith। Oxford: Oneworld Publications। পৃষ্ঠা 157। আইএসবিএন 1-85168-184-1 
  2. "The Buddhist Monk's Discipline: Some Points Explained for Laypeople"। Accesstoinsight.org। ২০১০-০৮-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-১৮ 
  3. Harderwijk, Rudy (২০১১-০২-০৬)। "The Eight Mahayana Precepts"। Viewonbuddhism.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-১২ 
  4. "Nyung Ne"। Drepung.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-১২ 
  5. "Nyungne Retreat with Lama Dudjom Dorjee"। Ktcdallas.org। ২০১০-১২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-১২ 
  6. Ph.D, Randi Fredricks (২০১২-১২-২০)। Fasting: An Exceptional Human Experience। AuthorHouse। আইএসবিএন 978-1-4817-2379-4 
  7. টেমপ্লেট:বাইবেল উদ্ধৃতি
  8. টেমপ্লেট:বাইবেল উদ্ধৃতি