আকরের যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আকরের যুদ্ধ

আকরের রাজধানী রিও ব্রাঙ্কোয় রিভল্যুশন আকরিয়ানায় শতবর্ষ পূর্তি উৎসব
তারিখ১৮৯৯-১৯০৩
অবস্থান
ফলাফল ব্রাজিলের জয়; পেত্রোপোলিস চুক্তি মোতাবেক
বিবাদমান পক্ষ
বলিভিয়াবলিভিয়া
সহায়তা:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ব্রাজিল ব্রাজিল
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
বলিভিয়া হোস ম্যানুয়েল পান্দো
বলিভিয়া ফেদেরিকো রোমান
বলিভিয়া নিকোলাস সুয়ারেজ কালাও
বলিভিয়া ব্রুনো রকুয়া
ব্রাজিল ম্যানুয়েল ফারাজ দ্য কাম্পোস সালেস
ব্রাজিল ফ্রান্সিস্কো দ্য পলা রদ্রিগুয়েজ আলভেস
টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত Acre লুইজ গালভেজ রদ্রিগুয়েজ দ্য আরাইজ
ব্রাজিল হোস প্লাসিদো দ্য কাস্ত্রো
ব্রাজিল জেফারসন হোস তোরেস
ব্রাজিল অলিম্পিও দা সিলভেইরা
শক্তি
অজানা অজানা
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অজানা অজানা

আকরের যুদ্ধ (পর্তুগিজ: la Guerra del Acre) বলিভিয়াব্রাজিলের মধ্যে সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের মূলে ছিল দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সংঘাত। ব্রাজিলে এ যুদ্ধটি রিভলুকাও আকরেয়ানো (পর্তুগিজ: "Acreano Revolution") নামে পরিচিত। এ বিতর্কে পেরুর অঞ্চলগুলোতেও প্রভাব পড়েছিল। আকরে অঞ্চল রাবার গাছ সমৃদ্ধ ও মজুদ স্বর্ণখনি এলাকা হিসেবে সবিশেষ পরিচিত ছিল। ১৮৯৯ থেকে ১৯০৩ সময়কালে দুই ধাপে সংঘর্ষ চলে। ব্রাজিলের জয়ের মাধ্যমে সংঘর্ষটি শেষ হয় ও এরফলে পেত্রোপলিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে বলিভিয়ার সার্বভৌমত্ব থেকে এ অঞ্চলটি ব্রাজিলে সংযুক্ত হয়।

কারণসমূহ[সম্পাদনা]

আকরে অঞ্চলটিতে সমৃদ্ধ স্বর্ণখনির মজুদ ভাণ্ডার ছিল। অঞ্চলটি প্রচুর কাঠ, মূলত রাবার গাছ সমৃদ্ধ। ফলে ঊনবিংশ শতকের শেষদিক ও বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিশেষ করে পরিবহন শিল্প, পরিবহন ও রাবার দিয়ে তৈরি করা গাড়ির চাকা প্রস্তুতকারী সংস্থার কাছে এলাকাটির অত্যন্ত গুরুত্ব ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাছাকাছি সময়ে অন্যান্য বিষয়গুলো আবিষ্কৃত হয়। সেজন্যেই এই যুদ্ধকে প্রায়শই রাবারের যুদ্ধ নামে পরিচিতি ঘটানো হয়ে থাকে। এ নামকরণের একটি কারণ রয়েছে। আমাজোনাস রাজ্যের গভর্নর জেফারসন হোসে টরেস রাবার রপ্তানির জন্য কর আদায়ের ব্যবস্থা করেছিলেন।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

এ অঞ্চলে আকরে নামের উৎস নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অঞ্চলের একটি নদীকে স্থানীয় ভাষায় অ্যাকুরি নামে ডাকা হয়। স্পেনীয় ও পর্তুগীজ ভাষায় নদীটি আকরে নদী নামে পরিচিত।

১৭৫০ সালে মাদ্রিদ চুক্তি, ১৭৭৭ সালে স্যান ইল্দেফন্সো-সোয়াপ চুক্তি এবং ১৮০১ সালে বাদাজজ চুক্তি সম্পাদনের ফলে আকরে অঞ্চলে স্পেনীয়দের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এলাকার আয়তন প্রায় ৩,৫৫,২৪২ বর্গকিলোমিটার হিসেবে স্পেনীয়দের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। তারা উড নদীর উপত্যকা থেকে উৎপন্ন ইয়াভারি থেকে পূর্ব পর্যন্ত পানির বহমান মূলধারা পর্তুগীজদের (পরবর্তীতে ব্রাজিল) সাথে সীমিত পর্যায়ে সমান্তরালভাবে ভোগ দখল করে। একই সীমাবদ্ধতায় কমপক্ষে ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত ব্রাজিল পরিচালনা করতো।

১৭৭৬ সালে রিও দে লা প্লাতায় স্পেনীয় সাম্রাজ্যের সুবেদারী প্রথা গড়ে উঠে। এরপর পেরুতে সুবেদারী প্রথা গড়ে উঠলেও পেরুর স্বাধীনতা ঘটায় পেরু ও বলিভিয়া উভয় দেশই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের অধিকার দাবী করে। উভয় দেশের রাজনৈতিক দূর্বলতা লক্ষ্য করে ব্রাজিল সুবিধা গ্রহণ করে। কনফেডারেশনে যোগদানের ফলে ব্রাজিলীয়দের নিয়ন্ত্রণে আমাজোনাস প্রদেশে আকরের অধিকাংশ চলে যায়।

আকরিয়ানা বিপ্লবের পূর্বে ১৮৯৯ সালের মানচিত্রে বলিভীয় অঞ্চল।

পেরু সরকারের অভিমত, ১৮৭০ সালে ব্রাজিলীয় রাষ্ট্রের সাথে পেরুর সীমানা নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু কূটনীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের হস্তক্ষেপ এবং বলিভীয় রাষ্ট্রপতি মারিয়ানো মেলগারেজোর মেনে নেয়ার প্রেক্ষিতে চুক্তিটি বন্ধুত্বপূর্ণ চুক্তি নামে ডাকা হয়ে থাকে। ২৩ নভেম্বর, ১৮৬৭ তারিখে সম্পাদিত এ চুক্তি আয়াকুচো চুক্তি নামে সমধিক পরিচিতি পায়। এরফলে ১,০২,৪০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি ব্রাজিলের অঞ্চলে যুক্ত হয়। প্রধানত মূল আকরের উত্তর-পশ্চিমাংস এতে যুক্ত হলে আমাজন ব্রাজিলিয়ানের অংশ হয়ে দাঁড়ায়।

১৮৬৭ থেকে ১৯০৩ সময়কালে বলিভিয়া আকরে অঞ্চলের ২,৫৩,২৪২ বর্গকিলোমিটার দখল করে রেখেছিল। রাজনৈতিক উপবিভাগ হিসেবে এস্পিনো (উত্তরে), কোকামা (মধ্য) ও মানেতেনেরি বা মানেতেরি হিসেবে দক্ষিণ এবং পূর্বাংশে বিভক্ত করে। এ অঞ্চলগুলো আঞ্চলিক উপনিবেশের অংশ ছিল।

বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত আকরে অঞ্চল (বর্তমান আকরে রাজ্য) বলিভিয়ার অধীনে ছিল। ১৮৭৭ সালে ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বাংশ তীব্রভাবে খড়াকবলিত হলে তৎকালীন বলিভীয় অঞ্চলে অবৈধভাবে ব্রাজিলীয়দের পদচারণা ঘটতে থাকে। ফলে ঐ বছরগুলো ব্রাজিলীয়দের জনসংখ্যা স্ফীত হয় ও তারা রাবার গাছের দিকে নজর দেয় অথবা মজুদকৃত স্বর্ণ, রৌপ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে। সম্পুরক স্বাধীন ব্রাজিলীয় অঞ্চল গঠনের ফলে এ চর্চা পরিত্যক্ত হয়। কারণ, এ অঞ্চলে বলিভিয়ার শক্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

১৮৯৮ সালে সীমানা নির্ধারণ কমিশন ব্রাজিলকে আরও আঞ্চলিক অধিগ্রহণের পক্ষে রায় দেয় যাতে বলিভিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধে নিমগ্ন সেনাবাহিনীর সহায়তায় বলিভিয়া তেমন আন্তর্জাতিক সহায়তা পায়নি ও তাদের কিছুই করার ছিল না। বলিভিয়ায় গৃহযুদ্ধ মারাত্মকভাবে তার সেনাবাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করে যা পুণরাবৃত্তি সম্ভব নয়, কার্যকারিতা উপভোগ ও আকরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয় ছিল।

১৮৯৯ সালে বলিভীয়রা ব্রাজিলের কাছে ছাড়কৃত ভূমি বাদে তাদের নতুন অঞ্চল গঠন করে। তারা সে'সময় এ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের প্রচেষ্টা চালায়। পুয়ের্তো আলোন্সোয় তারা প্রশাসনিক রাজধানী প্রতিষ্ঠা করে। কোচাবাম্বায় পুলিশ বাহিনীকে সংগঠিত করা হয়। লেফটেন্যান্ট ভিক্টর রদমিপেজের নেতৃত্বে তাৎক্ষণিকভাবে চল্লিশ সদস্যের বাহিনী প্রেরণ করা হয়েছিল। পুয়ের্তো আলোন্সো গঠনের পর এটিই প্রথমবার পুলিশ বাহিনী প্রেরণের ঘটনা।

লক্ষ্যণীয় যে, ১৮৯৯ সাল ব্রাজিলীয় বসতি স্থাপনকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য বছর ছিল। ঐ সময় পুরাজ নদী ও আকরের দক্ষিণাংশের সীমান্ত এলাকা তাদের দখলে আসে।

বলিভিয়া থেকে শুরুর দিককার বসতিস্থাপনকারীরা আবুনায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে ও আকরে অঞ্চল দখল করতে শুরু করে। ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে উল্লেখযোগ্য বলিভীয় অধিবাসীদের উপস্থিতি না থাকা স্বত্ত্বেও পুয়ের্তো আলোন্সো কার্যালয় গঠন করা হয়। প্রশাসনিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে এটি সার্বভৌমত্বের বৈধ আইন হিসেবে চিহ্নিত হয়। বলিভীয় ও বিদেশীরা এ অঞ্চল থেকে ক্রমবর্ধমান আঠা আহরণের প্রেক্ষিতে বহিঃশুল্ক বাড়ায়। খুব স্বল্প সময়ই এ কার্যালয়টি পরিচালিত হয়েছিল। আকর্ষণীয় রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রেরণ করা হলেও রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতে পুয়ের্তো আলোন্সো জড়িয়ে পড়ে।

আকরে যুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৮৯৯ সালে আকরে অঞ্চলের প্রশাসনিক রাজধানী হিসেবে পুয়ের্তো আলোন্সো গঠিত হয়। একই শহরে কাস্টমস কার্যালয় ও বলিভিয়া কর্তৃপক্ষ রাবার রপ্তানির উপর কর আরোপ করে। আমাজোনাস রাজ্যের গভর্নর রামালহো জুনিয়র বলিভীয়দের কাস্টমসের বিষয়টি ভালো চোখে দেখেননি। তিনি তার সরকারকে অবৈধভাবে বলিভিয়ার দখলদারীত্বের বিষয়ে অবগত করান। তিনি বলিভীয়দের বিরুদ্ধে চুরি, অপব্যবহার ও ব্রাজিলীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কথা জানান। বলিভীয় কর্তৃপক্ষের দূর্বলতার সুযোগে বিদ্রোহ সুচনা ঘটে। আমাজোনাসের ব্রাজিলীয় গভর্নর রামালহো জুনিয়র স্পেনীয় লুইজ গালভেজ রড্রিগুয়েজ আরাইজকে সরকার উৎখাতে নেতৃত্ব দিতে উৎসাহিত করেন। অন্যদিকে, মানাউশে শক্তিশালী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে। এ আন্দোলনটি আমাজোনাসের গভর্নের আত্মীয় আলবার্তো মোরেইরা জুনিয়রের নেতৃত্বে হয়।

স্থানীয় ও স্বায়ত্বশাসিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রথম বিপ্লব আকরে বা বলিভিয়ায় প্রথম সমরাভিযানের সূত্রপাত ঘটে। রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে দখলকৃত পুয়ের্তো আলোন্সো মুক্ত হয়। বলিভীয় কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে আকরে, পুরাজ এবং ইয়াকুকে বলিভিয়া মুক্ত ঘোষণা করে। স্পেনীয় গালভেজ কিউবার সাবেক সহযোগীদের সহায়তা পেয়েছিলেন।

যুদ্ধটি দুটি সময়ে বা সমরাভিযানে বিভক্ত ছিল। প্রথমটি ১৮৯৯ থেকে শুরু হয়। পুয়ের্তো আলোন্সো পুণরুদ্ধার পর্যন্ত বলিভীয় ব্রাজিলীয়দেরকে চাপ দেয়া হয় এবং পুনরায় বলিভিয়ায় ফেরৎ পাঠানো হয়। দ্বিতীয় রিভল্যুশন আকরেনা বা বলিভিয়ায় দ্বিতীয় সমরাভিযান ৬ আগস্ট, ১৯০২ তারিখে জাপুরি শহর দখলের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবং এপ্রিল, ১৯০৩ সালে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলাকালে আকরেতে ত্রিশ সহস্রাধিক অধিবাসী বসবাস করতো। কি ঘটছে সে সম্পর্কে সকলেই অবগত ছিল। তাই বিদ্রোহ প্রবর্তনকারীরা কার্যালয়গুলোতে পরিপত্র জারী করে ও শূন্যে কর্নেল পদ তৈরী করে। কর্তৃপক্ষের বাড়াবাড়িকে তারা চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়। তা স্বত্ত্বেও বলিভীয়রা আকরের নিয়ন্ত্রণভার ও ব্রাজিলীয় অধিবাসীরা রাবার উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ ঘটায়।

ঐ সময়ে সৈন্যসমাবেশ বেশ কঠিন কাজ হিসেবে বিবেচিত ছিল। সেখানে চলাচল উপযোগী রাস্তা ছিল না, প্রয়োজন অনুসারে যানবাহন ছিল না। ফলে, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবস্থান করে দায়িত্বপ্রাপ্ত বলিভিয়া সামরিকবাহিনী কেন সেনা সমাবেশ ঘটাবে।[১] বলিভীয় সৈনিকেরা তাদের মাতৃভূমির প্রতিরক্ষায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল। তাদের এ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আবহাওয়া, রোগ-শোক ও নৈতিক সহায়তা না থাকা স্বত্ত্বেও তাদের মনোবল অধিকতর তুঙ্গে ছিল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

চিত্রমালা[সম্পাদনা]