মদিনা অবরোধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মদীনা অবরোধ
মূল যুদ্ধ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্তর্গত আরব বিদ্রোহ
তারিখজুন ১৯১৬ – জানুয়ারি ১৯১৯
অবস্থান
ফলাফল ব্রিটিশ ও আরবদের বিজয়
বিবাদমান পক্ষ
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ রাজ
আরব বিদ্রোহ আরব বাহিনী
উসমানীয় সাম্রাজ্য উসমানীয় সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
যুক্তরাজ্য টি ই লরেন্স
যুক্তরাজ্য এডমন্ড এলেনবি
আরব বিদ্রোহ ফয়সাল বিন হুসাইন
আরব বিদ্রোহ আবদুল্লাহ বিন হুসাইন
আরব বিদ্রোহ আলী বিন হুসাইন
উসমানীয় সাম্রাজ্য ফখরুদ্দিন পাশা
শক্তি
৩০,০০০ (১৯১৬)[১]
৫০,০০০ (১৯১৮)[২]
৩,০০০ (১৯১৬)[৩]
১১,০০০ (১৯১৮)[৪]
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
অসংখ্য ৮,০০০ জনকে মিশরে সমর্পণ[৪]

মদীনা বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত ইসলামের অন্যতম পবিত্র শহর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় এই শহরটি দীর্ঘ অবরোধের সম্মুখীন হয়। মদীনা এসময় উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। যুদ্ধে উসমানীয়রা অক্ষশক্তির পক্ষাবলম্বন করে। শরিফ হুসাইন খলিফার পক্ষত্যাগ করেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ও খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। সেকুলার ও জাতীয়তাবাদী তরুণ তুর্কিদের কারণে উসমানীয় সাম্রাজ্য খলিফার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয় ও অক্ষশক্তির পক্ষে দাঁড়ায়। হুসাইন এসময় যুক্তরাজ্যের পক্ষে অবস্থান নেন। টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স এই বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হুসাইন মক্কা অধিকার করেন ও মদীনা অবরোধ করেন। ইতিহাসে এটি অন্যতম দীর্ঘ অবরোধ। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও এই অবরোধ চালু ছিল। ফখরুদ্দিন পাশা এসময় মদীনাকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। মদীনার প্রতি আনুগত্যের জন্য ব্রিটিশরা তাকে “মরুভূমির সিংহ” বলত।[৫] এই অবরোধ দুই বছর সাত মাস স্থায়ী হয়।

ঘটনাসমূহ[সম্পাদনা]

১৯১৬ সালের জুন মাসে মক্কার হাশেমি শাসক শরিফ হুসাইন পক্ষত্যাগ করেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ও উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ঘোষণা করেন। এসময় উসমানীয় সাম্রাজ্য তরুণ তুর্কিদের দ্বারা চালিত হচ্ছিল। এসময় সাম্রাজ্য নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদের উত্থান হচ্ছিল ও খলিফার ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছিল। হুসাইনের ইচ্ছা ছিল ইয়েমেন থেকে দামেস্ক পর্যন্ত এলাকা দখল করে একটি হাশেমি খিলাফত কায়েম করা।[৬] মদীনাকে এ উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হত। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে একটি রেলপথের মাধ্যমে মদীনা যুক্ত ছিল। হুসাইনের বাহিনী ১৯১৬ সালে মদীনা অবরোধ করে এবং ১৯১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই অবরোধ স্থায়ী হয়।

হুসাইন বিন আলীর পুত্র প্রথম ফয়সাল ব্রিটিশদের সাহায্য লাভের মাধ্যমে ১৯১৬ এর অক্টোবর মদীনা আক্রমণ করেন। তবে তুর্কিরা সুসজ্জিত থাকায় ও গোলন্দাজ বাহিনীর দ্বারা শক্তিপ্রাপ্ত হওয়ায় আরবরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সহকারে পিছু হটতে বাধ্য হয়। আরব বিদ্রোহ ধীরে ধীরে উত্তরে লোহিত সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হলে মদীনা দখলের জন্য ব্রিটিশ ও আরব পরিকল্পনা পরিবর্তিত হয়। ফয়সাল ও তার উপদেষ্টারা ঠিক করেন যে মদীনাকে দখল না করে আরবরা সুবিধা লাভ করবে। এর ফলে তুর্কিরা মদীনাকে রক্ষা করার জন্য সৈনিকদের ব্যবহার করবে। সেসাথে হেজাজ রেলওয়ে রক্ষার জন্য তাদের সৈনিকরা ব্যস্ত থাকবে। এই রেলপথ দিয়ে শহরে সরবরাহ হত।

এ উদ্দেশ্যে নুরি আস-সাইদ জেনারেল আজিজ আলি আল-মিসরির নির্দেশনায় মক্কায় সামরিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু করে। বেদুইন স্বেচ্ছাসেবক, আরব অফিসার ও উসমানীয় পক্ষত্যাগী আরব সৈনিক যারা আরব বিদ্রোহে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিল তাদের নিয়ে আল-মিসরি তিনটি পদাতিক ব্রিগেড, একটি মাউন্টেড ব্রিগেড, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড ও তিনটি ভিন্ন গোলন্দাজ গ্রুপ গঠন করে। এতে মোট ৩০,০০০ সৈনিক ছিল। আল-মিসরি পুরো বাহিনীকে তিনটি সেনাবাহিনীতে বিভক্ত করার প্রস্তাব দেন

  • আবদুল্লাহ বিন হুসাইনের অধীন পূর্বাঞ্চলীয় বাহিনী, পূর্ব দিক থেকে মদীনাকে ঘিরে রাখার দায়িত্ব এদেরকে দেয়া হয়।
  • আলী বিন হুসাইনের অধীন দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহিনী, দক্ষিণ দিক থেকে মদীনাকে ঘিরে রাখার দায়িত্ব এদেরকে দেয়া হয়।
  • ফয়সাল বিন হুসাইনের অধীন উত্তরাঞ্চলীয় বাহিনী, উত্তর দিক থেকে মদীনাকে ঘিরে রাখার দায়িত্ব এদেরকে দেয়া হয়।

এ সেনাবাহিনীগুলোতে ব্রিটিশ ও ফরাসি অফিসাররা প্রযুক্তিগত সাহায্য প্রদান করে। টি ই লরেন্স তাদের অন্যতম ছিলেন।

মদীনার উসমানীয় কমান্ডার ফখরুদ্দিন পাশা আরব বাহিনী কর্তৃক অবরুদ্ধ থাকার পরও এই পবিত্র শহরকে রক্ষা করতে থাকেন। মদীনার প্রতিরক্ষার পাশাপাশি তিনি লরেন্স ও তার আরব বাহিনীর কাছ থেকে হেজাজ রেলওয়ে রক্ষার দায়িত্বও পালন করেন। এই রেলপথটির উপর লড়াইয়ের ফলাফল নির্ভর করছিল।[৭] তুর্কি ঘাটিগুলো রাতের বেলা রেলপথের প্রহরা নিয়োজিত থাকে এবং বর্ধমান হামলার বিপক্ষে রেলপথের রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। ১৯১৭ সালে প্রায় ১৩০টি ও ১৯১৮ সালে ১০০টি বড় হামলা রেলপথের উপর চালানো হয়। ১৯১৮ এর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩০০ এরও বেশি বোমা বিস্ফোরিত হয়।[৭]

ফখরুদ্দিন পাশা

১৯১৮ সালে উসমানীয়রা যুদ্ধ পরাজিত হওয়ার পর ফখরুদ্দিন পাশা আত্মসমর্পণ করবেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু উসমানীয় যুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ পাওয়ার পরও তিনি আত্মসমর্পণ করতে রাজি হননি। সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ তাকে পদচ্যুত করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ৭২ দিন তিনি শহরে উসমানীয় পতাকা সমুন্নত রাখেন। অথচ এসময় সবচেয়ে নিকটবর্তী উসমানীয় সেনাদল মদীনা থেকে ১৩০০ কিমি. (৮০৮ মাইল) দূরে অবস্থা করছিল।[৮]

সরবরাহের ঘাটতির কারণে তার লোকেরা খাদ্যাভাবের সম্মুখীন হয়। ৯ জানুয়ারি ফখরুদ্দিন পাশাকে তার নিজের লোকেরা গ্রেপ্তার করে ও আবদুল্লাহর কাছে নিয়ে যায়।[৯] আবদুল্লাহ ও তার সৈন্যবাহিনী ১৩ জানুয়ারি মদীনায় প্রবেশ করে।[৪] আত্মসমর্পণের পর আরব সৈনিকরা ১২ দিন যাবত শহরে লুটপাট চালায়। ফখরুদ্দিন পাশা কর্তৃক তালাবদ্ধ ও সিল করে দেয়া মোট ৪৮৫০ টি বাড়ি জোরপূর্বক খোলা হয় ও লুটপাট করা হয়।[৪]

তুর্কি বাহিনীর প্রায় ৮,০০০ জন (৫১৯ জন অফিসার ও ৭,৫৪৫ জন সৈনিক) সদস্যকে মিশরে পাঠানো হয়।[৪] এদের পাশাপাশি কিছু রোগে মারা যায় ও কিছু গা ঢাকা দেয়।[৪] অস্ত্র ও গোলাবারুদ অবরোধকারীদের দখলে চলে আসে।[৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Spencer C. Tucker, Arab Revolt (1916-1918), The Encyclopedia of World War I, ABC-CLIO, 2005, আইএসবিএন ১-৮৫১০৯-৪২০-২, page 117.
  2. Mehmet Bahadir Dördüncü, Mecca-Medina: the Yıldız albums of Sultan Abdülhamid II, Tughra Books, 2006, আইএসবিএন ১-৫৯৭৮৪-০৫৪-৮, page 29
  3. Polly a. Mohs, Military Intelligence and the Arab Revolt: The first modern intelligence war, Routledge, আইএসবিএন ১-১৩৪-১৯২৫৪-১, page 40
  4. Süleyman Beyoğlu , The end broken point of Turkish - Arabian relations: The evacuation of Medine ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুন ২০১২ তারিখে, Atatürk Atatürk Research Centre Journal (Number 78, Edition: XXVI, November 2010) (তুর্কি)
  5. Defence Of Medina ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, İsmail Bilgin, আইএসবিএন ৯৭৫-২৬৩-৪৯৬-৬, Timas Publishing Group.
  6. Avi Shlaim। Lion of Jordan। page 4: Penguin Books, Ltd। আইএসবিএন 978-0-14-101728-0 
  7. Mesut Uyar, Edward J. Erickson: A Military History of the Ottomans: From Osman to Atatürk, ABC-CLIO, 2009, আইএসবিএন ০-২৭৫-৯৮৮৭৬-৭, page 253.
  8. Başbakan Erdoğan'ın sır konuşması, Sabah, 24.03.2012 (তুর্কি)
  9. Francis E. Peters: Mecca: A Literary History of the Muslim Holy Land, Princeton University Press, 1994, আইএসবিএন ০-৬৯১-০৩২৬৭-X, page 374.
  • "Medina"। Microsoft Encarta Online Encyclopedia। ২০০৭। ১৭ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মে ২০১০  (Sourced through the Wayback Machine)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]