যদুনাথ মজুমদার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
যদুনাথ মজুমদার
জন্ম(১৮৫৯-১০-২৩)২৩ অক্টোবর ১৮৫৯
মৃত্যু২৪ অক্টোবর ১৯৩২(1932-10-24) (বয়স ৭৩)
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয়
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
সঙ্গীপ্রসন্নকুমার মজুমদার

যদুনাথ মজুমদার (২৩ অক্টোবর ১৮৫৯ - ২৪ অক্টোবর ১৯৩২) একজন বাঙালি সম্পাদক, আইনজীবী ও সাহিত্যিক ছিলেন।

প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

যদুনাথ মজুমদার ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত লোহাগড়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রসন্নকুমার মজুমদার যশোরের দেওয়ানি আদালতে কর্মরত ছিলেন। যদুনাথ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এম. এ. ডিগ্রী লাভ করেন ও শিক্ষাশেষে কিছুকাল শিক্ষকতার কাজ করেন।[১]

১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে যদুনাথ মজুমদার ও যোগেন্দ্রনাথ স্মার্তশিরোমণি যৌথভাবে দ্য ইউনাইটেড ইণ্ডিয়া নামক একটি ইংরেজি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সম্পাদনা শুরু করেন। এই সময় তিনি দ্য স্টেটসম্যান, হিন্দু পেট্রিয়টঅমৃতবাজার পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতেন। কিছু সময় পরে তিনি শিক্ষকতার কাজ ত্যাগ করে লাহোর শহরে ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদনার কাজে যোগ দেন। এই সময় নেপালের মন্ত্রী রণদীপ সিং জঙ্গবাহাদুর তাকে নেপালের রাজপ্রাসাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ করেন কিন্তু এই সময় নেপালে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে তিনি পুনরায় লাহোরে ফিরে এসে ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর কাশ্মীরের তৎকালীন মন্ত্রী নীলাম্বর মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে তিনি কাশ্মীর সরকারের রাজস্ব সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি বি.এল পরীক্ষা প্রথম বিভাগে পাশ করে আইনে স্নাতক হন।[১]

সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

আইনে স্নাতক হওয়ার পর যদুনাথ কাশ্মীর থেকে যশোহরে ফিরে এসে ওকালতি শুরু করেন। এই সময় তিনি নীলকর ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে ক্লিষ্ট কৃষকদের পক্ষ অবলম্বন করে মামলা লড়তেন ও বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাদের দুর্দশা সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখতেন। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রাডলী নামক এক নীলকর ব্যবসায়ীর অত্যাচারের কাহিনী ও কৃষকদের কষ্টের কাহিনী উত্থাপন করলে ধীরে ধীরে নীলকরদের অত্যাচার কমে যায়।[১]

১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই সেপ্টেম্বর হতে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে নভেম্বর যদুনাথ যশোর জেলা বোর্ড ও যশোর পুরসভার সভাপতি ছিলেন। এই সময় যশোহর টাউন হল এবং বিশুদ্ধ জল সরবরাহের জন্য জলকল স্থাপিত হয়।[১] এই সময় তিনি ঐ অঞ্চলে বেশ কিছু প্রাথমিক ও উচ্চ বিস্যালয় স্থাপন করেন। ইতিপূর্বে ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যশোহরে সম্মিলনী ইন্সটিটিউশন নামক একটি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তার লোহাগড়ার বাসস্থানে লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় ও যশোহরের বাসস্থানে আদর্শ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এছাড়া তার পৃষ্ঠপোষকতায় লোহাগড়া উচ্চ বিদ্যালয়, যশোহরের সুফলাকাটী হাই স্কুল, রাজঘাট হাই স্কুল, বরিশালের কদমতলা হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। যদুনাথের প্রচেষ্টায় বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের নবম অধিবেশন যশোরে অনুষ্ঠিত হয়।[২]

সম্পাদনা ও সাহিত্য কর্ম[সম্পাদনা]

যদুনাথ সম্মিলনী, বৈশ্যবারুজীবী ও হিন্দু নামক বাংলা পত্রিকা ও ব্রহ্মচারী নামক একটি ইংরেজি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করেন। আমিত্বের প্রসার, ব্রহ্মসূত্র, পরিব্রাজক সূক্তমালা, সাংখ্যকারিকা, শান্ডিল্য সূত্র, নরগাথা, শ্রেয় ও প্রেয়, উপবাস, ‌পল্লী স্বাস্থ্য ইত্যাদি বাংলা গ্রন্থ ও শান্ডিল্যসূত্রের ইংরেজি টীকা তার উল্লেখযোগ্য রচনা।[১]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ রাজের পক্ষ থেকে যদুনাথকে রায়বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়। যদুনাথের পাণ্ডিত্যের কারণে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে বর্ধমান রাজ বিজয়চন্দ্ মহ্‌তাবের সভাপতিত্বে তাকে ‘বেদান্ত বাচস্পতি’ উপাধি প্রদান করা হয়। অসামান্য পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘বিদ্যাবারিধি’ উপাধিও লাভ করেন।[১][২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মজুমদার, রায়বাহাদুর যদুনাথ - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-৩০ 
  2. "রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার / Ray Bahadur Jadunath Majumdar (1859-1932) - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail"www.jessore.info। ২০১৬-০৮-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-৩০