গণমাধ্যম সংস্কৃতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সংস্কৃতি অধ্যয়নে গণমাধ্যম সংস্কৃতি (ইংরেজি: Media Culture) হলো গণমাধ্যমের প্রভাবে উন্নীত বর্তমানের পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা।[১][২][৩] শব্দটি মানুষের মতামত, রুচি ও আদর্শের উপর গণমাধ্যমের (বিশেষত টেলিভিশন, তবে সাথে সাথে ছাপাখানা, রেডিও ও চলচ্চিত্রও) সার্বিক প্রভাব ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্দেশনার উপর আলোকপাত করে।

বিকল্প শব্দ গণসংস্কৃতি শব্দটি গণমানুষের নিজের তৈরী সংস্কৃতিকে বুঝায়, যেমন বিংশ শতাব্দীর আগের জনপ্রিয় শিল্পকে গণসংস্কৃতি বলে গণ্য করা যায়। অন্যদিকে গণমাধ্যম সংস্কৃতি হলো গণমাধ্যমের পণ্য। গণমাধ্যম সংস্কৃতির একটি বিকল্প শব্দ আবার "ছবি সংস্কৃতি"।[১][২]

সমালোচকদের মতে, গণমাধ্যম সংস্কৃতি বিজ্ঞাপন ও মানুষের সাথে পরোক্ষ সম্পর্ককে ব্যবহার করে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি ব্যবস্থা হিশেবে কাজ করে।[৪] নোমাইর মতে, করপোরেট মাধ্যম প্রভাবশালী আদর্শ তৈরীতে কাজ করে।[৫] থিওডোর অ্যাডোর্নো নামের এক বুদ্ধিজীবী ১৯৪০-এর দশক থেকে গণমাধ্যম সম্পর্কে এমন ধারণার উন্নয়নের পেছনে বিশেষ অবদান রাখেন।[৪] গণমাধ্যম সংস্কৃতি ভোগবাদের সাথে সরাসরি যুক্ত, তাই একে অনেকে ভোগের সংস্কৃতি বলেও অভিহিত করেন।[১][৩]

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

সংবাদমাধ্যম বিজ্ঞানী এবং জ্ঞানীদের তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করে, এবং মানুষকে অবাক করে বা আকর্ষণ করে এমন সব বিষয়কে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপনা করে। উদাহরণস্বরূপ চীনের জায়ান্ট পান্ডা সংবাদমাধ্যমের জন্য দ্রুত জনপ্রিয় সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে উঠেছে।

হানাহ আরেন্দের ১৯৬১ সালের নিবন্ধ "দ্যা ক্রাইসিস ইন কালচার" (ইংরেজি: The Crisis in Culture)-এ বলেন "বাজার-চালিত গণমাধ্যম বিনোদনের উসিলায় সংস্কৃতি পালটায়"।[৬] সুসান সনতাগের মতে, আমাদের সমাজের অধিকাংশ আদর্শ বিনোদন থেকে আসে, যার ফলে অর্থহীন নৃশংস সংবাদ ও বিষয় আশয় আমাদের জন্য এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে।[৬]

আলদাইড ও স্নোর মতে, গণমাধ্যম সংস্কৃতি বলতে একটি সংস্কৃতির মধ্যে গণমাধ্যম ক্রমাগত অন্য প্রতিষ্ঠানের (যেমন, রাজনীতি, ধর্ম, খেলাধুলা) উপর প্রভাব বিস্তার করে, যেগুলো গণমাধ্যমের যুক্তির দ্বারা পুনর্গঠিত হয়।[৭] ১৯৫০র দশক থেকে জনগনের মতামতকে প্রভাবিত করার অন্যধম মাধ্যম হিশেবে কাজ করে আসছে টেলিভিশন।[৮]

প্রতীকি ভোগ[সম্পাদনা]

ভোক্তারা এখন আর শুধু কার্যকারিতা বিবেচনা করে পণ্য ক্রয় করে না, অনেকসময় পণ্যটির প্রতিকী মূল্য বা কার্যকারিতাও তাদের পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করে। অন্য শব্দে ক্রেতারা এখন নিজের পরিচয় তৈরী করতে পণ্য ক্রয় করে।[৯]

পণ্ডিতরা এ প্রতিকী ভোগকে একটি সামাজিক পুনর্গঠন হিশেবে দেখে। কারণ সমাজের সবাই সমানভাবে কোন পণ্যের প্রতিকী অর্থে বিশ্বাস না করলে, কোন পণ্য কার্যকরীভাবে প্রতিকী অর্থ তৈরী করতে পারে না। বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে ভোক্তাদের মধ্যে এমন বিশ্বাস তৈরী করা হয়।[১০]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. জ্যানসন (২০০২)
  2. থমান (১৯৯২)
  3. থমাস (২০১২) পৃষ্ঠা ৩০
  4. বিগনেল (২০০৭) pp.21-2
  5. নোমাই (২০০৮) পৃষ্ঠা ৫[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], ৪১
  6. "Dumbing down"। Nomuzak.co.uk। ২৯ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১২ 
  7. আলদাইড, ডি. এল., ও স্নো, আর. পি. (১৯৭৯)। Media Logic। বেভারলি হিল, ক্যালিফোর্নিয়া: সেজ। 
  8. ডিগস-ব্রাউন, বারবারা (২০১১) Strategic Public Relations: Audience Focused Practice পৃষ্ঠা ৪৮
  9. ওয়াটানেইজওয়ান, ক্রিটসাডারেট (২০০৫)। "The Self and Symbolic Consumption" (পিডিএফ)Journal of American Academy of Business: ১৭৯। 
  10. হার্শম্যান, এলিজাবেথ (১৯৮১)। "Comprehending Symbolic Consumption: Three Theoretical Issues"। Symbolic Consumer Behavior। ভোক্তা গবেষণা সংঘ। পৃষ্ঠা ৪–৬। 

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • ডানকান, ব্যারি (১৯৮৮)। Mass Media and Popular Culture। টরোন্টো, ওন্ট.: হারকোর্ট, ব্রেস এন্ড কোম্পানি। কানাডা। আইএসবিএন ০-৭৭৪৭-১২৬২-৭