বেলাশেষে (চলচ্চিত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেলাশেষে
প্রচারণা পোস্টার
পরিচালকনন্দিতা রায়
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
রচয়িতানন্দিতা রায়
শ্রেষ্ঠাংশেসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
অপরাজিতা আঢ্য
মনামি ঘোষ
সোহানী সেনগুপ্ত
শঙ্কর চক্রবর্তী
খরাজ মুখোপাধ্যায়
ইন্দ্রাণী দত্ত
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
সুরকারঅনুপম রায়
অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়
চিত্রগ্রাহকগোপী ভগত
সম্পাদকমলয় লাহা
প্রযোজনা
কোম্পানি
পরিবেশকইরোস ইন্টারন্যাশনাল
পিয়ালী ফিল্মস
মুক্তি
  • ১ মে ২০১৫ (2015-05-01) (পশ্চিমবঙ্গ)
  • ২৬ জুন ২০১৫ (2015-06-26) (ভারতের বাইরে)
স্থিতিকাল১৪১ মিনিট
দেশভারত
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়₹ ১.১ কোটি[১]

বেলাশেষে ২০১৫ সালের ভারতীয় বাংলার পারিবারিক নাট্য চলচ্চিত্র।[২][৩] এটি নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখার্জি দ্বারা পরিচালিত এবং অতনু রায়চৌধুরী দ্বারা উপস্থাপিত। এটি উইন্ডোজ প্রোডাকশন দ্বারা উত্পাদিত এবং ইরোস ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা বিতরণ করা হয় । প্রবীণ অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যাঁদের শেষ দেখা গিয়েছিল তিন দশক আগে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ঘরে বাইরে। ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, মোনামি ঘোষ, ইন্দ্রাণী দত্ত, সোহিনী সেনগুপ্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সুজয় প্রসাদ চ্যাটার্জি, বরুন চন্দ এবং সোহাগ সেন।

কাহিনী[সম্পাদনা]

উত্তর কলকাতার নিবাসী পুস্তক-প্রকাশক বিশ্বনাথ মজুমদার (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়) ও তার স্ত্রী আরতি (স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত) গত ৪৯ বছর ধরে একসঙ্গে বিবাহিত জীবন যাপন করে এসেছে। তাদের সন্তানরা - বড় ছেলে বারীন (শঙ্কর চক্রবর্তী) ও তিন মেয়ে মালশ্রী ওরফে মিলি (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত), কাবেরী ওরফে বুড়ি (অপরাজিতা আঢ্য) ও পিউ (মনামি ঘোষ), সকলেই বিবাহিত ও নিজেদের জীবনে ভালভাবে অধিষ্ঠিত । কিন্তু ভেতরে ভেতরে তাদের দাম্পত্য জীবনে ইদানীং কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে । বারীনের বউ শর্মিষ্ঠা (ইন্দ্রাণী দত্ত ) নিজে ছোটখাট শাড়ী বিক্রির ব্যবসা চালালেও প্রকাশনা সংস্থায় শ্বশুরের সহকারী স্বামীর আর্থিক অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ এবং সন্দেহ করে যে স্বামী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত আছে । মালশ্রীর স্বামী বিজন (সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়) ধনী পরিবারের সন্তান হলেও পেশায় বেকার, সখের এসরাজ-বাদক ও উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া দক্ষিণ কলকাতায় ৪টি ফ্ল্যাট ও ২টি দোকানঘর ভাড়ায় দিয়ে সেই টাকায় সংসারের খরচ জোগায় বলে মালশ্রী তাকে নিজের জন্য যথেষ্ট স্মার্ট বলে মনে করে না, তাই সে বাইরে একজনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক শুরু করেছে । ৩ সন্তানের মা কাবেরী তার স্বর্ণব্যবসায়ী স্বামী জ্যোতির্ময়ের (খরাজ মুখোপাধ্যায়) ঘনঘন সম্ভোগকামনা পূরণ করতে অনিচ্ছুক হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের প্রতি বিরক্ত । পিউ তার স্বামী, বলিউডে এক ছোট প্রযোজক পলাশের (অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়) সহকারী হলেও কাজের চাপে পলাশ তাকে বেশি সময় দিতে পারছে না । এসবের মধ্যেই বাড়ীতে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত করার জন্য বিশ্বনাথ তার পরিবারের সকল সদস্যদের একত্রিত করে । বিজয়াদশমীর রাতে বিশ্বনাথ তার স্ত্রী, ছেলে, পুত্রবধূ, তিন মেয়ে ও জামাইদের একসঙ্গে ঘরে ডেকে এনে এক বিস্ফোরক সিদ্ধান্ত জানায় । ৫০তম বিবাহবার্ষিকীর প্রাক্কালে বিশ্বনাথ আরতিকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে । সকলের সবরকম প্রচেষ্টা সত্ত্বেও বিশ্বনাথ আরতিকে ডিভোর্স দেওয়ার আসল কারণ সম্পর্কে কিছু বলতে চায়নি । ডিভোর্সের আবেদন আদালতে জমা পড়ে ও তার সুনানি শুরু হয় । আদালতে দাঁড়িয়ে বিশ্বনাথ জানায় যে সে আরতিকে ডিভোর্স দিতে চায় কেননা তার মনে হয় যে তার ও আরতির দাম্পত্যজীবন, নিজের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়াতে, কয়েকটি বাধ্যতামূলক ক্রিয়াকাণ্ডের গতানুগতিক ধারায় পরিণত হয়েছে, তাই সে এই একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চায় । কিন্তু বিচারক তাদেরকে একান্তে পরস্পরের সাথে ১৫ দিনের অবসর পালনের পরামর্শ দেয় ও বলে যে এরপরেও যদি মনে হয়, তাহলে তারা পরস্পরের সম্মতিক্রমে পরস্পরকে ডিভোর্স দিতে পারে । শান্তিনিকেতনের বাসভবনে এই ১৫ দিনব্যাপী অবসর কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । বিশ্বনাথের ব্যাখ্যায় অসন্তুষ্ট বারীন ও তার ৩ শ্যালক আসল কারণ জানবার জন্য শান্তিনিকেতনে বিশ্বনাথ ও আরতির ঘরের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন বসায় ও রাতের বেলায় সস্ত্রীক তাদের কথাবার্তা আড়ি পেতে শুনতে থাকে । বিশ্বনাথ ও আরতির সুদীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-হতাশা, অভাব-অভিযোগের কাহিনী শুনতে শুনতে তারা বুঝতে পারে যে বিশ্বনাথের কর্মব্যস্ততা ও আরতির সাংসারিক চাপের কারণে পরস্পরকে একান্তভাবে সময় না দিতে পারলেও তারা পরস্পরের জন্য দরদী রয়েছে । আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা তাদের সন্তানদের নিজস্ব দাম্পত্যজীবনের প্রতি যে দৃষ্টিকোণ, তা সেই তুলনায় নিতান্তই হুজুগে ও খামখেয়ালি বলে ঠেকে । বিশ্বনাথ ও আরতির কথাবার্তা শুনে ওরা নিজেদের বিচ্যুতি বুঝতে পারে ও নিজেদের দাম্পত্যজীবনের কলহ মিটিয়ে নেয় । কথাবার্তার মধ্যে বিশ্বনাথ অভিযোগ করে যে আরতি কখনো তাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালবাসেনি, বরং সে পারিবারিক জীবন ভালবাসে ও সাংসারিক অভ্যাসের বশবর্তী হয়ে বিশ্বনাথের পরিচর্যা করে । আরতি জানায় যে বিশ্বনাথকে বাদ দিয়ে তার সংসার তৈরি হয়নি ও তার সাংসারিক অভ্যাসগুলিই বিশ্বনাথের প্রতি তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ । আরতি তখন বিশ্বনাথকে সংসারের প্রতি তার উদাসীনতা ও আরতির প্রতি খামখেয়ালিপনার কথা তোলে । বিশ্বনাথ অবশেষে আরতিকে ডিভোর্স দিতে সম্মত করে এই বলে যে ডিভোর্স দিয়ে সে আরতিকে ভবিষ্যতের জন্য কর্মজীবনে স্বাবলম্বী করে তুলতে চায় । আরতি এতে নিমরাজি হয় ও দুজনে আলাদাভাবে থাকতে শুরু করে । কিন্তু ৪ মাস আলাদা থাকার পর বিশ্বনাথ বুঝতে পারে যে আরতি কর্মজীবনে স্বাবলম্বী হতে পারলেও সে নিজে গার্হস্থ্যজীবনে একাকিত্বের সঙ্গে থাকতে পারবে না । দুজনের মধ্যে মিটমাট হয়ে যায় আর সকলে মিলে বিশ্বনাথ ও আরতির ৫০তম বিবাহবার্ষিকী ধুমধাম করে পালন করে ।

অভিনয়[সম্পাদনা]

স্পিন-অফ[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রটির বাণিজ্যিক সাফল্য বেলা শুরু শিরোনামের  একটি স্পিন অফের পথ তৈরি করেছে । চলমান মহামারী পরিস্থিতি এবং দেশের সিনেমা হল বন্ধ থাকার কারণে ছবিটির মুক্তি স্থগিত করা হয়েছিল। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ১৫ নভেম্বর ২০২০-এ কোভিড-১৯ এর কারণে মারা যান । স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত কিডনিজনিত অসুস্থতার কারণে ১৬ জুন ২০২১-এ মারা যান। বেলা শুরু ২০ মে ২০২২ এ মুক্তি পায়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Soumitra Chatterjee's Bela Seshe to get a global release"web.archive.org। ২০১৫-০৬-১৪। ২০১৫-০৬-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৬ 
  2. "Mother-Daughter together in Bela Seshe?"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  3. "বক্স-অফিসে 'বেলাশেষে'র বাজিমাৎ"। ১৬ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৫ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]