কোলুভু শ্রীনিবাস
কোলুভু শ্রীনিবাস হল ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের তিরুমালা শহরের বেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বেঙ্কটেশ্বরের একটি বিগ্রহ। এই রৌপ্যনির্মিত বিগ্রহটি মন্দিরের প্রধান বিগ্রহের একটি প্রতিমূর্তি।[১] এই বিগ্রহটিকে মন্দিরের সকল ক্রিয়াকলাপ ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রধান পরিদর্শক মনে করা হয়। তাছাড়া কোলুভু শ্রীনিবাসকে মন্দিরের রক্ষাকারী দেবতা এবং মন্দিরের সকল অর্থনৈতিক বিষয়ের পরিদর্শকও মনে করা হয়। এই বিগ্রহটির অপর নাম বলি বেরা। বলি বেরার কর্তব্যগুলি অনেকটা গৃহস্থের কর্তব্যের অনুরূপ। তিনি অর্থনীতি ও হিসাব ব্যবস্থাপনা করেন এবং বলিপীঠমে গরুড়, হনুমান ও বিশ্বকসেন প্রমুখ নিত্যসূরির নিকট বলি উৎসর্গের পূর্বে তার অনুমতি গ্রহণ করা হয়। মূর্তিটি মন্দিরের একেবারে অভ্যন্তরে ১৬টি স্তম্ভযুক্ত একটি কক্ষে (তিরুমামনি মন্টপম) রাখা থাকে। এই বিগ্রহের কোনো নথিবদ্ধ ইতিহাস পাওয়া যায় না।[২]
এই বিগ্রহ কবে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয়, এটির পরিচয় কী বা এই বিগ্রহকে কেন্দ্র করে প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠানগুলি কবে ও কীভাবে শুরু হয়েছিল, তার কোনো উল্লেখ মন্দিরে নেই।
নিত্যসেবা: কোলুভু[সম্পাদনা]
সকালের তোমল সেবা বা অভিষেকমের (শুক্রবার) পর আগের দিনের হিসাব শেষ করে কোলুভু শ্রীনিবাসের কাছে আনা হয়। এই অনুষ্ঠানটিকে বলা হয় ‘কোলুভু’ বা দরবার। কোলুভু শ্রীনিবাসকে গর্ভগৃহের তিরুমামনি মন্টপমে আনা হয় এবং একটি রুপোর পাতে মোড়া সিংহাসনে বসানো হয়। এই সিংহাসনের উপর একটি একটি গিল্টি-করা ছাতাযুক্ত চন্দ্রাতপ রয়েছে, যেটি মহীশূরের মহারাজা উপহার দিয়েছিলেন।[২] এটি অনুষ্ঠানটি ‘একান্তমে’ আচরিত হয়। কেবলমাত্র পুরোহিত ও তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানমের আধিকারিকরাই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। নিম্নোক্ত অনুষ্ঠানগুলি আচরিত হয়:
- কোলুভু শ্রীনিবাসের উদ্দেশ্যে বিশেষ নৈবেদ্য উৎসর্গিত হয়।
- বেদ, বিষ্ণুসূক্তম্ ও দিব্যপ্রবন্ধম্ থেকে নির্বাচিত অংশ পাঠ করা হয়।
- এরপর দেবতাকে ‘পঞ্চাঙ্গম্’ (পঞ্জিকা) শুনতে অনুরোধ করা হয়। পুরোহিত বলেন, “পঞ্চাঙ্গম আগম্যতাম্”। দিনের পঞ্জিকা পাঠ করে দেবতাকে শোনানো হয় সেই দিন ও পরের দিন কোন কোন অনুষ্ঠান আচরিত হবে। তিরুমালা মন্দির এবং তিরুপতির গোবিন্দরাজা স্বামী ও কোদণ্ডরাম স্বামী মন্দির, তিরুচানুরের পদ্মাবতী দেবী মন্দির, শ্রীকালহস্তীর শ্রীকালহস্তীশ্বর মন্দির এবং অন্যান্য নিকটবর্তী মন্দিরের উৎসব ও অনুষ্ঠানগুলির বিস্তারিত বিবরণ পাঠ করা হয়।
- এরপর তিরুমালা তিরুপতি দেবস্থানমের একজন আধিকারিক আগের দিনের হুন্ডি সংগ্রহের বিস্তারিত বিবরণ তারিখ, সকালের সংগ্রহ, দুপুরের সংগ্রহ এবং সংগৃহীত খুচরোর হিসেব সমেত পড়ে শোনান। এই হিসেবের মধ্যে দান, অর্জিতম ও আয়ের অন্যান্য উৎস গণ্য হয় না। শেষে ঘোষণা করা হয় যে সকল অর্থ শ্রীবারির ভাণ্ডারমে সঞ্চিত হল।
- মাত্রদান: যে ‘অর্চক’গণ (পুরোহিত) শ্লোক ও প্রবন্ধন পাঠ করেন তাঁদের চাল, পিঁয়াজ ও অন্যান্য সামগ্রী পুরস্কার দেওয়া হয়।
বাৎসরিক সেবা: পুষ্প পাল্লাকি[সম্পাদনা]
মন্দিরের অর্থবর্ষের শেষে (জুলাই মাস) অনিবার অষ্টনাম নামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বার্ষিক হিসাবপত্র দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়। পূর্ববর্তী বছরের হিসেবের সঙ্গে সকল প্রধান আধিকারিকের কার্যালয়ের প্রতীকও দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয় এবং তা প্রত্যর্পিত হয়। এটির অর্থ হল, দেবতা প্রত্যেক আধিকারিককে যোগ্য মনে করলেন। পরবর্তী বছরের নথিপত্র রাখার জন্য নতুন বই চালু করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে প্রধান পুরোহিত সকল প্রধান আধিকারিককে দেবতার সন্তুষ্টির প্রতীক হিসেবে তাম্বুলম প্রদান করেন।
এই অনুষ্ঠানটিও ‘একান্ত’ (ব্যক্তিগত)। এটি জনসাধারণকে দেখতে দেওয়া হয় না। এই অনুষ্ঠানের পর উৎসব মূর্তি মালায়াপ্পা স্বামী ও তার দুই পত্নীকে ফুল দিয়ে সাজানো পালকিতে করে বের করা হয়। এটি জনসাধারণ দেখতে পারে।