পায্যন্নুর পবিত্র মথিরাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পায্যন্নুর পবিত্র মথিরাম
শ্রী সুভ্রামান্য স্বামী মন্দির, পায্যন্নুর

পায্যন্নুর পবিত্র মথিরাম হচ্ছে একধরনের আংটি যা ভারতীয়রা তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের জন্য পড়ে থাকে। এই পবিত্র আংটি ‘’পিথ্রু বলী’’ বা মৃত পূর্বপুরুষের জন্য প্রার্থনার অনুষ্ঠানে পড়া হয়। এই আংটি ঐতিহ্যগতভাবে দুব্রা ঘাস থেকে তৈরি করা হত, তবে আধুনিককালে ‘’’পবিত্র মথিরাম’’’ স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুত করা হয়। আংটিটি আকার আকৃতির দিক দিয়ে অনন্য যা দেখতে গিঁট এর মতো।[১]

এই আংটি তৈরি করতে রোপা ও ব্যবহৃত হয়। মৃত পূর্বপুরুষের জন্য পূজার অনুষ্ঠানে এই আংটি ডান মধ্যমা আঙ্গুলে পড়া হয়।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

এই আংটির উৎপত্তি পায্যন্নুর সুভ্রামান্য মন্দির এর সাথে জড়িত। এই মন্দিরে পবিত্র পূজা অর্চনার জন্য ঘাসের তৈরি এই আংটি পড়তে জোর দেয়া হত। পরবর্তীতে মন্দিরের পুরোহিত স্থায়িত্বের জন্য স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করা শুরু করেন।আংটি তৈরিতে একজন ঐতিহ্যগত কারিগরের পূর্ণ একদিন সময় লেগে যেত। একজন পবিত্র কারিগর হওয়ার জন্য তারা জীবনে কখনো মাংস বা মদ্যপান করতে পারত না।[২]

ঐতিহাসিক পবিত্র আংটি

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

পবিত্রম শব্দের অর্থ পবিত্র এবং মথিরাম অর্থ আংটি। উভয় শব্দ মালায়লাম ভাষা হতে এসেছে যা ভারতের কেরালা রাজ্যের স্থানীয় ভাষা।[৩]

আংটির গঠনপ্রকৃতি[সম্পাদনা]

এই আংটির উপরের পৃষ্ঠতলে তিনটি রেখা আছে যা মানব দেহের তিনটি শিরা (ইডা, পিঙ্গলা এবং সুষুম্না) কে প্রকাশ করে। এই তিনটি শিরার সমন্বয়ে মানব জাতির ‘কুণ্ডলিনী শক্তি’ বা ‘প্রাণ শক্তি’ কে জাগরিত করে।

ত্রিমূর্তি চৈতন্যয়ম[সম্পাদনা]

পায্যন্নুর এর হিন্দুদের মতে, এই আংটি পড়লে হিন্দু ধর্মের তিন দেবতাঃ ব্রহ্মা, শিব এবং বিষ্ণুর শক্তি জাগরিত করে।

শাস্ত্রীয় আচারঅনুষ্ঠান[সম্পাদনা]

এই আংটি তৈরি করতে এবং পড়তে যে কোন ব্যক্তিকে কঠোর বিধিনিষেধ মানতে হয়। তারা কোন ধরনের মাংস খেতে পারেনা এবং মদ্যপান তাদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মহিলাদের ঋতুস্রাবের সময় এটা খুলে রাখতে হয়। পায্যন্নুর এর শুভ্রমান্য মন্দিরে পবিত্র হবার পর খরিদ্দারদের এই আংটি দেয়া হয়।

জনপ্রিয়তা[সম্পাদনা]

[৪]

পায্যন্নুর পবিত্র মথিরাম পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন যাদুঘরে প্রদর্শন করা হয়। ভারতীয় বিখ্যাত স্বাধীনতা যোদ্ধা শ্রী সি ভি কুনহাম্বু পবিত্র এই আংটি তৈরিতে পারদর্শী ছিলেন।

যোগ পালন[সম্পাদনা]

প্রাচীন ভারতীয় যোগশাস্ত্র মতে, মানবদেহে তিনটি শক্তি প্রবাহিণী রয়েছে এবং এই প্রবাহিণীর সঠিক প্রবাহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে মানুষের উন্নতি সাধন করে।

  1. ‘’ পিঙ্গলা’’ দেহের দান দিকে অবস্থিত যা সৌর শক্তিকে নির্দেশ করে।
  1. ইডা মেরুদণ্ডের বাম দিকে অবস্থান করে চান্দ্র শক্তিকে প্রকাশ করে।
  1. ‘’ সুষুম্না’’ মাঝখানে অবস্থান করে সৃষ্টিগত শক্তির প্রতিনিধিত্ব করে।

এই তিনটি প্রবাহিণীর নিচে কুণ্ডলিনী শক্তি অবস্থান করে এবং মানব দেহে শক্তিশালী আবেগের আবির্ভাব ঘটায়।

আংটির ক্ষমতা[সম্পাদনা]

এই আংটির অনবদ্য ডিজাইনের জন্য ভারতীয়রা মনে করে এটি মানুষের স্বর্গীয় ক্ষমতার জাগরিত করে। এটি শুধুমাত্র ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পড়া হয়। এই আংটি যারা পড়ে তাদের কে উত্তম বুদ্ধিমত্তা, সুখী এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়।

ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

[৫]

পায্যন্নুরের পবিত্র আংটি ব্যবসায়িক ভিত্তিতে তৈরি করা শুরু হয়েছে। অনেক স্বর্ণকার প্রকৃত ‘’’পায্যন্নুর পবিত্র আংটি’’’ তৈরি করার কথা বলে থাকেন। বিক্রেতারা দাবি করেন এই আংটি ব্যবহারকারীদের জ্ঞানের উচ্চ শিখরে নিয়ে যায় এবং অনুপ্রেরণা যোগায়।

আংটির মূল্য[সম্পাদনা]

গুণগত মানের উপর ভিত্তি করে একেক টি আংটি $৪০০ থেকে $১৫০০ ডলারের হয়ে থাকে। বরতমানে এই আংটি ২২ কেরেট স্বর্ণের হয়ে থাকে।

কীভাবে পবিত্র মথিরাম পড়তে হয়[সম্পাদনা]

পবিত্র মথিরাম শুধুমাত্র ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পড়া হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, মানুষের প্রতিটি আঙ্গুল বিভিন্ন তাৎপর্য এবং কার্যসম্পাদন করে,যেমন:

  1. সুগন্ধি লাঠি মন্দিরের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে বৃদ্ধাঙ্গুলি বায়ু ও ধূয়া কে উপস্থাপিত করে।
  1. তর্জনী আকাশ ও ফুল কে উপস্থাপন করে।
  1. মধ্যমা আঙ্গুলি অগ্নি ও পবিত্র প্রদীপ কে উপস্থাপন করে।
  1. অনামিকা পানিকে উপস্থাপন করে।
  1. কনিষ্ঠা মৃত্তিকা (মাটি) ও চন্দন কাঠের আঠাকে উপস্থাপন করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. R. Sivaraman। "GI registration for 'Payyannur Pavithra' ring revoked"The Hindu 
  2. "Payyannur Pavithra Mothiram in a Geographical Indication tag ownership tussle"The Times of India 
  3. Market Scene - Payyanur Pavithra Mothiram। ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ – YouTube-এর মাধ্যমে। 
  4. "Pavithra Mothiram" 
  5. "Payyanur Pavithra Mothiram"